রাজধানীতে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
রাজধানীতে
ডেঙ্গু জ্বর ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত
হয়ে নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৭ জন। গত আগস্ট মাসেই গড়ে
প্রতিদিন ৪৪ জন করে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
সরকারি হিসাবে জানুয়ারি থেকে ৩০শে আগস্ট পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন আক্রান্ত
হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১০ জন। এর মধ্যে আগস্ট মাসে ৩ জন, জুলাই মাসে ৪
জন এবং জুন মাসে ৩ জন মারা যান। বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন
রয়েছেন ১৩২ জন। এর মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৭৩ জন এবং সরকারি
হাসপাতালে ৫৯ জন। বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে ধানমন্ডির সেন্ট্রাল হাসপাতালে
৩০ জন, ইবনে সিনায় ১৩ জন, স্কায়ার হাসপাতালে ১১জন, পুরান ঢাকার সালাউদ্দিন
মেডিকেলে ৯ জন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (মিটফোর্ড) ২০
জন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ জন ভর্তি রয়েছেন। স্বাস্থ্য
অধিদপ্তরের ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে
এই তথ্য জানা গেছে।
ডেঙ্গু জ্বরে আগস্ট মাসে ১৩২৭ জন, জুলাই মাসে ৮৮৫ জন এবং জুন মাসে ২৭৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। বর্ষা মৌসুম শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা মানবজমিনকে বলেন, এবার রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে বেশি। এটা উদ্বেগের বিষয়। জুলাই-আগস্টে প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। ডেঙ্গু জ্বরের রোগী বৃদ্ধিতে এ বছর গাইডলাইন পরিবর্তন করা হয়েছে। তিনি বলেন, এবার দশজন মারা গেছেন। তারা যখন হাসপাতালে এসেছেন, তখন আর করার কিছু ছিল না। পরিচালক পরামর্শ দিয়ে বলেন, জ্বর হলে চিকিৎসকের কাছে যাবেন। তিনি বলেন, এডিস মশার কামড়ে এবার বেশিরভাগ রোগীই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। জ্বর চলে যাওয়ার পরও আক্রান্ত ব্যক্তি বিভিন্ন জটিলতায় ভুগতে পারেন, সেটা মনে রাখতে হবে। বেশি বেশি পানি খেতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে।
এদিকে ডেঙ্গু বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ালেও প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেই দুই সিটি করপোরেশনের। নগরবাসীর অভিযোগ- ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে দুই সিটি করপোরেশনের জোর তৎপরতা থাকা দরকার। কিন্তু সে ধরনের কোনো কার্যক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস ছড়ায় এডিস মশার মাধ্যমে। আর এই মশা জন্ম নেয় স্বচ্ছ পানিতে। জমে থাকা পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ার পর তিন থেকে ৫ দিনের মধ্যে নতুন মশা জন্ম নেয়। এসব মশা জন্ম থেকে সর্বোচ্চ ৫ সপ্তাহ বেঁচে থাকে। এর মধ্যে ২ সপ্তাহের বেশি কামড়াতে পারে না। আর কামড়ায় শুধু মেয়ে মশা। একটি মেয়ে মশা রক্ত খেতে পারলে তার ডিমগুলো পোক্ত হয় এবং নতুন করে বংশ বিস্তার করে। তারা আরো জানান, যেকোনো ভাবে কোথাও স্বচ্ছ পানি জমে থাকলে সেখানে ডেঙ্গুর বিস্তার হয়ে থাকে। তবে প্রতি বছর বর্ষার মৌসুমে এর প্রকোপ বাড়ে। এর অন্যতম কারণ- কয়েকদিন পরপর বৃষ্টি হলে ডেঙ্গু প্রজনন সুবিধা হয়। চলতি বছর থেমে থেমে কয়েকদিন পরপর বৃষ্টি হওয়ায় নগরীতে এডিস মশার প্রজনন বাড়ছে।
আর এ কারণেই এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। জুন-জুলাই-আগস্ট মাসে ডেঙ্গু মশার উপদ্রব বাড়ে। বাড়ি বা বাড়ির আঙিনার কোথাও যেন পরিষ্কার পানি জমে না থাকে সে ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তদের সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হবে। এ ছাড়া যথেষ্ট পরিমাণে পানি, শরবত ও অন্যান্য তরল খাবার খেতে হবে। জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামল জাতীয় ব্যথার ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তবে অ্যাসপিরিন বা ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ব্যথার ওষুধ খাওয়া যাবে না। এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। ৪ থেকে ৫ দিন জ্বর থাকলে ঘরে বসে না থেকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ মানবজমিনকে বলেন, জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে। এবার রোগী একটু বেশি আসছে। শীতের সময়ে কমে আসবে। তিনি বলেন, এই সময় জ্বর বা গায়ে ব্যথা হলে ডেঙ্গুর কথা মাথায় রাখতে হবে। সাধারণত ডেঙ্গু জ্বর তেমন মারাত্মক রোগ নয়। অধ্যাপক আবদুল্লাহ বলেন, সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরের রোগীর যখন বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের প্রমাণ (যেমন মাড়ি বা নাক থেকে রক্তক্ষরণ, মলের সঙ্গে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি) মেলে তখন একে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বলা হয়। অধিক রক্তক্ষরণের ফলে শরীরের জলীয় উপাদান কমে যায়। এতে রক্তচাপ কমে। এটাই ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। ৪ থেকে ৫ দিন জ্বর থাকলে ঘরে বসে না থেকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরে আগস্ট মাসে ১৩২৭ জন, জুলাই মাসে ৮৮৫ জন এবং জুন মাসে ২৭৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। বর্ষা মৌসুম শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা মানবজমিনকে বলেন, এবার রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে বেশি। এটা উদ্বেগের বিষয়। জুলাই-আগস্টে প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। ডেঙ্গু জ্বরের রোগী বৃদ্ধিতে এ বছর গাইডলাইন পরিবর্তন করা হয়েছে। তিনি বলেন, এবার দশজন মারা গেছেন। তারা যখন হাসপাতালে এসেছেন, তখন আর করার কিছু ছিল না। পরিচালক পরামর্শ দিয়ে বলেন, জ্বর হলে চিকিৎসকের কাছে যাবেন। তিনি বলেন, এডিস মশার কামড়ে এবার বেশিরভাগ রোগীই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। জ্বর চলে যাওয়ার পরও আক্রান্ত ব্যক্তি বিভিন্ন জটিলতায় ভুগতে পারেন, সেটা মনে রাখতে হবে। বেশি বেশি পানি খেতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে।
এদিকে ডেঙ্গু বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ালেও প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেই দুই সিটি করপোরেশনের। নগরবাসীর অভিযোগ- ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে দুই সিটি করপোরেশনের জোর তৎপরতা থাকা দরকার। কিন্তু সে ধরনের কোনো কার্যক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস ছড়ায় এডিস মশার মাধ্যমে। আর এই মশা জন্ম নেয় স্বচ্ছ পানিতে। জমে থাকা পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ার পর তিন থেকে ৫ দিনের মধ্যে নতুন মশা জন্ম নেয়। এসব মশা জন্ম থেকে সর্বোচ্চ ৫ সপ্তাহ বেঁচে থাকে। এর মধ্যে ২ সপ্তাহের বেশি কামড়াতে পারে না। আর কামড়ায় শুধু মেয়ে মশা। একটি মেয়ে মশা রক্ত খেতে পারলে তার ডিমগুলো পোক্ত হয় এবং নতুন করে বংশ বিস্তার করে। তারা আরো জানান, যেকোনো ভাবে কোথাও স্বচ্ছ পানি জমে থাকলে সেখানে ডেঙ্গুর বিস্তার হয়ে থাকে। তবে প্রতি বছর বর্ষার মৌসুমে এর প্রকোপ বাড়ে। এর অন্যতম কারণ- কয়েকদিন পরপর বৃষ্টি হলে ডেঙ্গু প্রজনন সুবিধা হয়। চলতি বছর থেমে থেমে কয়েকদিন পরপর বৃষ্টি হওয়ায় নগরীতে এডিস মশার প্রজনন বাড়ছে।
আর এ কারণেই এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। জুন-জুলাই-আগস্ট মাসে ডেঙ্গু মশার উপদ্রব বাড়ে। বাড়ি বা বাড়ির আঙিনার কোথাও যেন পরিষ্কার পানি জমে না থাকে সে ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তদের সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হবে। এ ছাড়া যথেষ্ট পরিমাণে পানি, শরবত ও অন্যান্য তরল খাবার খেতে হবে। জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামল জাতীয় ব্যথার ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তবে অ্যাসপিরিন বা ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ব্যথার ওষুধ খাওয়া যাবে না। এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। ৪ থেকে ৫ দিন জ্বর থাকলে ঘরে বসে না থেকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ মানবজমিনকে বলেন, জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে। এবার রোগী একটু বেশি আসছে। শীতের সময়ে কমে আসবে। তিনি বলেন, এই সময় জ্বর বা গায়ে ব্যথা হলে ডেঙ্গুর কথা মাথায় রাখতে হবে। সাধারণত ডেঙ্গু জ্বর তেমন মারাত্মক রোগ নয়। অধ্যাপক আবদুল্লাহ বলেন, সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরের রোগীর যখন বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের প্রমাণ (যেমন মাড়ি বা নাক থেকে রক্তক্ষরণ, মলের সঙ্গে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি) মেলে তখন একে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বলা হয়। অধিক রক্তক্ষরণের ফলে শরীরের জলীয় উপাদান কমে যায়। এতে রক্তচাপ কমে। এটাই ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। ৪ থেকে ৫ দিন জ্বর থাকলে ঘরে বসে না থেকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
No comments