চামড়া ৩০০ টাকা, জুতা ৬০০০! by গোলাম মওলা
আগের
যেকোনও সময়ের চেয়ে এবার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন,
গত ৩০ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম দামে চামড়া বিক্রি হচ্ছে। এ বিষয়টি নিয়ে
ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও সরব। চামড়ার দাম কম কিন্তু
চামড়াজাত জুতার দাম বৃদ্ধি নিয়ে অনেকে সমালোচনা করছেন। তারা বলছেন, মাত্র
৩০০ টাকার চামড়া থেকে তৈরি এক জোড়া জুতা ৬০০০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিষয়টিকে অর্থনৈতিক বৈষম্য হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ। আবার কেউ কেউ ফড়িয়াদের
কাছে চামড়া বিক্রি না করে মাটিতে পুঁতে রেখেছেন বলেও ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে
জানাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, এবারের কোরবানির ঈদের আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে সরকার চামড়ার দাম আগেরবারের চেয়েও কম নির্ধারণ করে দিয়েছিল। অথচ কোরবানির পর এমন হয়েছে যে সেই দরও ঠিক থাকেনি। অর্থাৎ কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচা হয়েছে সরকার-নির্ধারিত দরের চেয়েও কমে। এক লাখ টাকা দামের গরুর চামড়া এক হাজার টাকায়ও বিক্রি হয়নি। অথচ তিন-চার বছর আগে ৫০ হাজার টাকা দামের গরুর চামড়াই কেনাবেচা হতো ২ থেকে ৩ হাজার টাকায়।
জানা গেছে, এক জোড়া জুতা তৈরিতে সাড়ে ৩ বর্গফুট চামড়া লাগে। এছাড়া আরও দেড় বর্গফুট চামড়া লাগে লাইনিংয়ের জন্য। সব মিলিয়ে জুতা তৈরিতে ৫ বর্গফুট চামড়া লাগে। এই ৫ বর্গফুট চামড়ার দামের সঙ্গে সোলের দাম, তার সঙ্গে কস্টিং খরচ, শ্রমিকদের খরচ যুক্ত করে হিসাব করলেই জুতার দাম বের করা সম্ভব।
কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নিয়ে জহিরুল ইসলাম নামে একজন তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘বড়লোকদের ব্যবসায় ঘি ঢালতে ৫০০ টাকার জুতা ৬০০০ করা হয়, আর গরিবদের হক মারতে ৩ হাজার টাকার চামড়া ৩০০!’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যে চামড়া থেকে তৈরি জুতা ছয় হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়, সেই চামড়ার দাম কেন মাত্র ৩০০ টাকা হবে?’
নিউ গ্রিন পার্টির চেয়ারম্যান রাজু আহম্মদ খান তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘যে দেশের জুতার দাম ৬ হাজার টাকা, অথচ চামড়ার দাম ৩০০ টাকা, সে দেশের সত্যিই মেরামত দরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবারের কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য সত্যিই হতাশাজনক।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সেক্রেটারি জেনারেল মোজাম্মেল হক চৌধুরী তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘৮২ হাজার টাকা দামের মহিষের চামড়া ৬০ টাকায় বিক্রি না করে মাটিতে পুঁতে রাখলাম। ভালো করলাম না মন্দ করলাম।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘গত পাঁচ বছরে ক্রমাগত চামড়ার দাম কমলেও জুতার দাম কিন্তু বেড়েই চলেছে। বিষয়টি সত্যি অবাক হওয়ার মতো। পশুর ক্রয়মূল্যের সঙ্গে তার চামড়ার দামের সামঞ্জস্য নেই। আবার চামড়ার সঙ্গে জুতার বিক্রির মূল্যের সঙ্গতি নেই। দেশে দিনে দিনে চামড়ার মূল্য কমলেও জুতার মূল্য বাড়ছে। এটি গরিব ঠকানোর উদ্দেশ্যেই হচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চামড়ার দামের সঙ্গে জুতার দামের কোনও সম্পর্ক নেই। কারণ, কোনও জুতার মালিকই বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরাসরি চামড়া কেনেন না। শুধু তাই নয়, যারা চামড়া কেনেন, তাদের সঙ্গে জুতার মালিকদের কোনও সম্পর্কই নেই।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘চার স্তর পার হয়ে চামড়া ট্যানারি মালিকদের কাছে পৌঁছায়। ফলে পশুর মালিক চামড়া ৫০০ টাকায় বিক্রি করলেও ওই চামড়া ট্যানারি মালিকদের কিনতে হয় এক হাজার টাকার ওপরে। সরাসরি ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনেন না। তিন বা চার হাত পার হয়ে চামড়া যখন ট্যানারিতে আসে, তখন এর প্রসেসিং শুরু হয়। সেখানেই ২০-৩০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। চামড়া প্রসেসিং হলে মাত্র ২০ শতাংশ চামড়া যায় সু ফ্যাক্টরিতে বা জুতা তৈরির কারখানায়। সেই সু ফ্যাক্টরিরও ওয়ার্কার টিম কাজ করে। তাদের বেতনভাতা, সুযোগ-সুবিধাসহ বিভিন্ন ধরনের খরচ করতে হয়। ফ্যাক্টরিতে তারা জুতার যে দাম নির্ধারণ করে, বাজারে সেই দামে পাওয়া যায় না। তাদের কাছ থেকে বড় বড় ব্র্যান্ডের কোম্পানি কিনে নেয়। এখানেও সাত থেকে ১০ স্তর পার করে তারপর সেই জুতা তারা বাজারে ছাড়ে। সেখান থেকে আমি-আপনি সেই জুতা ৫ বা ৬ হাজার টাকায় কিনে আনি।’
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যেসব কোম্পানি জুতা তৈরি করে বিদেশে রফতানি করে, সেই জুতার দামও ৫ হাজার টাকা পড়ে না। রফতানি করা প্রত্যেক জোড়া জুতার দাম পড়ে গড়ে ১৪ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ১২শ' টাকারও কম। ১২০০ টাকারও সেই জুতা বিভিন্ন দেশের বড় বড় কোম্পানি তাদের ব্র্যান্ডে নামে ১০০ ডলারে বা বাংলাদেশি টাকায় ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করে। এখানে বাংলাদেশের চামড়া ব্যবসায়ীদের কী করার আছে? বিদেশিরা ১২০০ টাকার জুতা ৫ হাজার টাকায় কেন বিক্রি করে, তারা ভালো বলতে পারবেন। তবে এটা ঠিক যে তারা যেসব জুতা নেয়, তার সব বিক্রি হয় না। অনেক সময় অবিক্রীত থাকে ৭০ শতাংশ। ফলে ১০০ ডলারে না বিক্রি করলে তারাও লোকসানে পড়তে পারে।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মৌসুমি ব্যবসায়ীরা যে চামড়া ৫০০ টাকায় কেনেন, সেই চামড়া তাদের কাছ থেকে তিন বা চার হাত বদল হয়ে আমাদের কাছে আসে। আমাদের কিন্তু এই চামড়া এক হাজারের ওপরে দাম দিয়ে কিনতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে চামড়া সংগ্রহ করা হয়, তা থেকে জুতা তৈরির জন্য ৩০ শতাংশও পাওয়া যায় না। কারণ, জুতা তৈরিতে উন্নতমানের চামড়া লাগে। আমরা এক হাজার ফুট চামড়া কিনলে সেখান থেকে ৩০০ ফুট চামড়া জুতার জন্য বের করা সম্ভব হয় না।’
সাখাওয়াত উল্লাহ আরও বলেন, ‘বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জুতা কিনতে ৫ হাজার টাকা লাগলেও দেশে স্থানীয় জুতা কিনতে ৫ হাজার টাকা লাগে না। এক হাজার টাকা বা ১২শ টাকায়ও পাওয়া যায়।’
প্রসঙ্গত, এবারের কোরবানির ঈদের আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে সরকার চামড়ার দাম আগেরবারের চেয়েও কম নির্ধারণ করে দিয়েছিল। অথচ কোরবানির পর এমন হয়েছে যে সেই দরও ঠিক থাকেনি। অর্থাৎ কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচা হয়েছে সরকার-নির্ধারিত দরের চেয়েও কমে। এক লাখ টাকা দামের গরুর চামড়া এক হাজার টাকায়ও বিক্রি হয়নি। অথচ তিন-চার বছর আগে ৫০ হাজার টাকা দামের গরুর চামড়াই কেনাবেচা হতো ২ থেকে ৩ হাজার টাকায়।
জানা গেছে, এক জোড়া জুতা তৈরিতে সাড়ে ৩ বর্গফুট চামড়া লাগে। এছাড়া আরও দেড় বর্গফুট চামড়া লাগে লাইনিংয়ের জন্য। সব মিলিয়ে জুতা তৈরিতে ৫ বর্গফুট চামড়া লাগে। এই ৫ বর্গফুট চামড়ার দামের সঙ্গে সোলের দাম, তার সঙ্গে কস্টিং খরচ, শ্রমিকদের খরচ যুক্ত করে হিসাব করলেই জুতার দাম বের করা সম্ভব।
কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নিয়ে জহিরুল ইসলাম নামে একজন তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘বড়লোকদের ব্যবসায় ঘি ঢালতে ৫০০ টাকার জুতা ৬০০০ করা হয়, আর গরিবদের হক মারতে ৩ হাজার টাকার চামড়া ৩০০!’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যে চামড়া থেকে তৈরি জুতা ছয় হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়, সেই চামড়ার দাম কেন মাত্র ৩০০ টাকা হবে?’
নিউ গ্রিন পার্টির চেয়ারম্যান রাজু আহম্মদ খান তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘যে দেশের জুতার দাম ৬ হাজার টাকা, অথচ চামড়ার দাম ৩০০ টাকা, সে দেশের সত্যিই মেরামত দরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবারের কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য সত্যিই হতাশাজনক।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সেক্রেটারি জেনারেল মোজাম্মেল হক চৌধুরী তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘৮২ হাজার টাকা দামের মহিষের চামড়া ৬০ টাকায় বিক্রি না করে মাটিতে পুঁতে রাখলাম। ভালো করলাম না মন্দ করলাম।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘গত পাঁচ বছরে ক্রমাগত চামড়ার দাম কমলেও জুতার দাম কিন্তু বেড়েই চলেছে। বিষয়টি সত্যি অবাক হওয়ার মতো। পশুর ক্রয়মূল্যের সঙ্গে তার চামড়ার দামের সামঞ্জস্য নেই। আবার চামড়ার সঙ্গে জুতার বিক্রির মূল্যের সঙ্গতি নেই। দেশে দিনে দিনে চামড়ার মূল্য কমলেও জুতার মূল্য বাড়ছে। এটি গরিব ঠকানোর উদ্দেশ্যেই হচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চামড়ার দামের সঙ্গে জুতার দামের কোনও সম্পর্ক নেই। কারণ, কোনও জুতার মালিকই বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরাসরি চামড়া কেনেন না। শুধু তাই নয়, যারা চামড়া কেনেন, তাদের সঙ্গে জুতার মালিকদের কোনও সম্পর্কই নেই।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘চার স্তর পার হয়ে চামড়া ট্যানারি মালিকদের কাছে পৌঁছায়। ফলে পশুর মালিক চামড়া ৫০০ টাকায় বিক্রি করলেও ওই চামড়া ট্যানারি মালিকদের কিনতে হয় এক হাজার টাকার ওপরে। সরাসরি ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনেন না। তিন বা চার হাত পার হয়ে চামড়া যখন ট্যানারিতে আসে, তখন এর প্রসেসিং শুরু হয়। সেখানেই ২০-৩০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। চামড়া প্রসেসিং হলে মাত্র ২০ শতাংশ চামড়া যায় সু ফ্যাক্টরিতে বা জুতা তৈরির কারখানায়। সেই সু ফ্যাক্টরিরও ওয়ার্কার টিম কাজ করে। তাদের বেতনভাতা, সুযোগ-সুবিধাসহ বিভিন্ন ধরনের খরচ করতে হয়। ফ্যাক্টরিতে তারা জুতার যে দাম নির্ধারণ করে, বাজারে সেই দামে পাওয়া যায় না। তাদের কাছ থেকে বড় বড় ব্র্যান্ডের কোম্পানি কিনে নেয়। এখানেও সাত থেকে ১০ স্তর পার করে তারপর সেই জুতা তারা বাজারে ছাড়ে। সেখান থেকে আমি-আপনি সেই জুতা ৫ বা ৬ হাজার টাকায় কিনে আনি।’
মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যেসব কোম্পানি জুতা তৈরি করে বিদেশে রফতানি করে, সেই জুতার দামও ৫ হাজার টাকা পড়ে না। রফতানি করা প্রত্যেক জোড়া জুতার দাম পড়ে গড়ে ১৪ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ১২শ' টাকারও কম। ১২০০ টাকারও সেই জুতা বিভিন্ন দেশের বড় বড় কোম্পানি তাদের ব্র্যান্ডে নামে ১০০ ডলারে বা বাংলাদেশি টাকায় ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করে। এখানে বাংলাদেশের চামড়া ব্যবসায়ীদের কী করার আছে? বিদেশিরা ১২০০ টাকার জুতা ৫ হাজার টাকায় কেন বিক্রি করে, তারা ভালো বলতে পারবেন। তবে এটা ঠিক যে তারা যেসব জুতা নেয়, তার সব বিক্রি হয় না। অনেক সময় অবিক্রীত থাকে ৭০ শতাংশ। ফলে ১০০ ডলারে না বিক্রি করলে তারাও লোকসানে পড়তে পারে।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মৌসুমি ব্যবসায়ীরা যে চামড়া ৫০০ টাকায় কেনেন, সেই চামড়া তাদের কাছ থেকে তিন বা চার হাত বদল হয়ে আমাদের কাছে আসে। আমাদের কিন্তু এই চামড়া এক হাজারের ওপরে দাম দিয়ে কিনতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে চামড়া সংগ্রহ করা হয়, তা থেকে জুতা তৈরির জন্য ৩০ শতাংশও পাওয়া যায় না। কারণ, জুতা তৈরিতে উন্নতমানের চামড়া লাগে। আমরা এক হাজার ফুট চামড়া কিনলে সেখান থেকে ৩০০ ফুট চামড়া জুতার জন্য বের করা সম্ভব হয় না।’
সাখাওয়াত উল্লাহ আরও বলেন, ‘বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জুতা কিনতে ৫ হাজার টাকা লাগলেও দেশে স্থানীয় জুতা কিনতে ৫ হাজার টাকা লাগে না। এক হাজার টাকা বা ১২শ টাকায়ও পাওয়া যায়।’
No comments