নির্ঘুম পতাকা-শ্রমিকরা
বিশ্বকাপ
ফুটবল জ্বরে নির্ঘুম বাংলাদেশ। বিভিন্ন দেশের পতাকা নির্মাণকারী শ্রমিকদের
চোখে ঘুম নেই। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে আগামী কয়েক সপ্তাহে এসব পতাকা
নির্মাণকারী এক বড় ধরনের ব্যবসার আশা করছেন। পতাকার প্রতি এত আগ্রহ থাকলেও
এর মধ্যে নেই নিজ দেশ বাংলাদেশের পতাকা। সবচেয়ে বেশি তৈরি হচ্ছে ফুটবল
তারকা লিয়নেল মেসির আর্জেন্টিনা ও নেইমারের ব্রাজিলের পতাকা। এগুলোর
বিক্রিই শীর্ষে।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, ঢাকার মিরাজনগর এলাকায় এমন একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হোসেন। তার দোকানটি ছোট। গরম ও শ্রমিকরা কাজ করতে গিয়ে ঘেমে যাচ্ছেন। রাশিয়ায় অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে স্থানীয় বাজারে তিনি ছাড়ছেন বড় মাপের পতাকা ও হাতে ধরে রাখা ছোট পতাকা। একটানা উৎপাদনে রয়েছেন তিনি। হোসেন বলেন, গত দু’মাস ধরে আমাকে বিরতিহীন কাজ করে যেতে হচ্ছে। এমনও দিন গেছে যখন আমি দু’ঘণ্টাও ঘুমাতে পারি নি। তার সামনে স্ক্রিন প্রিন্টিং মেশিন। তাতে কাজ করছিলেন তিনি। সেখান থেকে মুখ তুলে এমনভাবেই নিজের কথা প্রকাশ করেন হোসেন। প্রচলিত অর্থে বাংলাদেশ হলো ক্রিকেটের দেশ। কিন্তু প্রতি চার বছর পর পর এ দেশের ১৬ কোটি মানুষ মেতে ওঠেন বিশ্বকাপ ফুটবলে। এ দেশটি ২০২টি দেশের মধ্যে ফুটবলে ১৯৭তম অবস্থানে। এ র্যাঙ্কিং করেছে ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল। তবুও এ দেশটি বিশ্বকাপ নিয়ে মেতে ওঠে। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকা ছেয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট। আগামী ১৪ই জুন মস্কোতে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপের আসর। তার আগে মিরাজনগরের প্রিন্টার থেকে কয়েক লাখ পতাকা তৈরি হবে। কোনো কোনো বাড়িকে প্রিয় দলের রঙে রাঙিয়ে দেয়া হচ্ছে। সারা দেশ থেকে অর্ডার আসছে। তাই পতাকা সেলাইয়ের গতি বেড়ে গেছে। হোসেন বলেন, প্রতিদিন আমরা কয়েক হাজার পতাকা প্রিন্ট করি। সাক্ষাৎকার দেয়ার দিন তিনি বলেন, ওইদিন তিনি আর্জেন্টিনার কমপক্ষে ১১০০০ হাতে ধরা পতাকা তৈরি করেছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রিয় দলের পতাকা হাতে নিয়ে তা দোলাতে দোলাতে র্যালি করছে মানুষ। গত সপ্তাহে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের একটি গ্রুপ ২০০ মিটার লম্বা একটি পতাকা নিয়ে মাদারগঞ্জে র্যালি করে। এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। অনুন্নত দেশটি প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল ম্যাচ সরাসরি উপভোগ করে ১৯৮২ সালে। কিন্তু ১৯৮৬ সালে এসে যেন এক বিস্ফোরণ ঘটে। ওই বিশ্বকাপের ম্যাচে আর্জেন্টিনার তারকা দিয়েগো ম্যারাডোনা গোল করে ট্রফি বিজয় করেন। সেই থেকে ফুটবল যেন বাংলাদেশের মনস্তত্ত্বের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আরেকটি প্রিয় দল। ম্যারাডোনা নেই। কিন্তু তারপরও আর্জেন্টিনা ক্রেজ শক্তিশালী হচ্ছে। এর কারণ, নতুন সুপারস্টার লিয়নেল মেসি। এমনটা বলেছেন পতাকার হকার ফারুক মিয়া। তিনি পতাকা বিক্রি করেন নারায়ণগঞ্জে। গত সপ্তাহে তিনি বিক্রি করেছেন ৫০০ পতাকা। তাতে ভালো লাভ হয়েছে। তাই তার এখন আরো পতাকা দরকার। যদি আর্জেন্টিনা বিজয়ী হয় তাহলে তিনি খুব খুশি হবেন। বিশ্বকাপ জ্বর আগেভাগেই চলে এসেছে বাংলাদেশে। আসর শুরু হওয়ার কয়েক মাস আগে থেকেই তা নিয়ে এই জ্বর ভর করেছে। এজন্য কয়েক লাখ পতাকা বিক্রি করার প্রত্যাশা করছেন কারখানা মালিক সেলিম হাওলাদার। তিনি বলেন, এর আগে ২০১৪ সালে তিনি ৮০ হাজারের বেশি পতাকা বিক্রি করেছেন। এর বেশির ভাগই বিক্রি হয়েছে বিশ্বকাপ চলাকালে অথবা তার আগের দিনগুলোতে। এখন আমি ২০০০ থেকে ২৫০০ বড় মাপের পতাকা বিক্রি করি। হাতে ধরে রাখা পতাকা দিনে বিক্রি করি ১০ হাজার, যদিও বিশ্বকাপ ফুটবল এখনও অনেক দূরে। সেলিম হাওলাদারের অধীনে কাজ করেন ২৫ জন শ্রমিক। এ ছাড়া মিরাজনগরের কারখানাগুলোতে পতাকা তৈরি করছেন প্রায় ২০০০ শ্রমিক। হাওলাদারের অর্ডারের শীর্ষে রয়েছে মেসি ও নেইমার নেতৃত্বাধীন টিম। তারা হলো, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। বাংলাদেশে এই দুটি দল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তিনি বলেন, এমন কি আমি আর্জেন্টিনার ৫০ ফুট লম্বা পতাকা তৈরির অর্ডার পেয়েছি। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পরে বাংলাদেশে জনপ্রিয় দল হলো জার্মানি, স্পেন ও পর্তুগাল। বাংলাদেশে রয়েছে সাড়ে চার হাজার তৈরি পোশাকের কারখানা। তাতে কাজ করেন প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক। তাদের তৈরি পোশাক বিদেশে রপ্তানি করে আয় হচ্ছে শত শত কোটি ডলার। কিন্তু বিশেষজ্ঞ ও অধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো বলছে, গার্মেন্ট শ্রমিকদের জীবনমানের কিছুটা অগ্রগতি হলেও তারা দীর্ঘ সময় কাজ করেন বিপদজনক পরিবেশে। আর পান কম বেতন। হাওলাদারের কারখানায় কাজ করেন মোহাম্মদ ইকবাল। তার স্ত্রী নার্গিস আখতার (২৮) পতাকা তৈরিতে নিয়োজিত। এতে সংসারে বাড়তি অর্থ আসছে। ইকবাল বলেন, গড়ে প্রতিদিন আমরা ৩০০০ টাকার কাজ করি। কিন্তু গড়ে প্রতিটি গার্মেন্ট কারখানা থেকে পুরো মাসের বেতন দেয়া হয় প্রায় ৭০ ডলার। এটি হলো বিশ্বে সবচেয়ে কম মজুরি। নার্গিস আখতার হেসে বলেন, আমার মনে হয় পতাকা নিয়ে এই বাড়াবাড়ি আরো কয়েক মাস থাকবে।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, ঢাকার মিরাজনগর এলাকায় এমন একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হোসেন। তার দোকানটি ছোট। গরম ও শ্রমিকরা কাজ করতে গিয়ে ঘেমে যাচ্ছেন। রাশিয়ায় অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে স্থানীয় বাজারে তিনি ছাড়ছেন বড় মাপের পতাকা ও হাতে ধরে রাখা ছোট পতাকা। একটানা উৎপাদনে রয়েছেন তিনি। হোসেন বলেন, গত দু’মাস ধরে আমাকে বিরতিহীন কাজ করে যেতে হচ্ছে। এমনও দিন গেছে যখন আমি দু’ঘণ্টাও ঘুমাতে পারি নি। তার সামনে স্ক্রিন প্রিন্টিং মেশিন। তাতে কাজ করছিলেন তিনি। সেখান থেকে মুখ তুলে এমনভাবেই নিজের কথা প্রকাশ করেন হোসেন। প্রচলিত অর্থে বাংলাদেশ হলো ক্রিকেটের দেশ। কিন্তু প্রতি চার বছর পর পর এ দেশের ১৬ কোটি মানুষ মেতে ওঠেন বিশ্বকাপ ফুটবলে। এ দেশটি ২০২টি দেশের মধ্যে ফুটবলে ১৯৭তম অবস্থানে। এ র্যাঙ্কিং করেছে ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল। তবুও এ দেশটি বিশ্বকাপ নিয়ে মেতে ওঠে। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকা ছেয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট। আগামী ১৪ই জুন মস্কোতে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপের আসর। তার আগে মিরাজনগরের প্রিন্টার থেকে কয়েক লাখ পতাকা তৈরি হবে। কোনো কোনো বাড়িকে প্রিয় দলের রঙে রাঙিয়ে দেয়া হচ্ছে। সারা দেশ থেকে অর্ডার আসছে। তাই পতাকা সেলাইয়ের গতি বেড়ে গেছে। হোসেন বলেন, প্রতিদিন আমরা কয়েক হাজার পতাকা প্রিন্ট করি। সাক্ষাৎকার দেয়ার দিন তিনি বলেন, ওইদিন তিনি আর্জেন্টিনার কমপক্ষে ১১০০০ হাতে ধরা পতাকা তৈরি করেছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রিয় দলের পতাকা হাতে নিয়ে তা দোলাতে দোলাতে র্যালি করছে মানুষ। গত সপ্তাহে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের একটি গ্রুপ ২০০ মিটার লম্বা একটি পতাকা নিয়ে মাদারগঞ্জে র্যালি করে। এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। অনুন্নত দেশটি প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল ম্যাচ সরাসরি উপভোগ করে ১৯৮২ সালে। কিন্তু ১৯৮৬ সালে এসে যেন এক বিস্ফোরণ ঘটে। ওই বিশ্বকাপের ম্যাচে আর্জেন্টিনার তারকা দিয়েগো ম্যারাডোনা গোল করে ট্রফি বিজয় করেন। সেই থেকে ফুটবল যেন বাংলাদেশের মনস্তত্ত্বের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আরেকটি প্রিয় দল। ম্যারাডোনা নেই। কিন্তু তারপরও আর্জেন্টিনা ক্রেজ শক্তিশালী হচ্ছে। এর কারণ, নতুন সুপারস্টার লিয়নেল মেসি। এমনটা বলেছেন পতাকার হকার ফারুক মিয়া। তিনি পতাকা বিক্রি করেন নারায়ণগঞ্জে। গত সপ্তাহে তিনি বিক্রি করেছেন ৫০০ পতাকা। তাতে ভালো লাভ হয়েছে। তাই তার এখন আরো পতাকা দরকার। যদি আর্জেন্টিনা বিজয়ী হয় তাহলে তিনি খুব খুশি হবেন। বিশ্বকাপ জ্বর আগেভাগেই চলে এসেছে বাংলাদেশে। আসর শুরু হওয়ার কয়েক মাস আগে থেকেই তা নিয়ে এই জ্বর ভর করেছে। এজন্য কয়েক লাখ পতাকা বিক্রি করার প্রত্যাশা করছেন কারখানা মালিক সেলিম হাওলাদার। তিনি বলেন, এর আগে ২০১৪ সালে তিনি ৮০ হাজারের বেশি পতাকা বিক্রি করেছেন। এর বেশির ভাগই বিক্রি হয়েছে বিশ্বকাপ চলাকালে অথবা তার আগের দিনগুলোতে। এখন আমি ২০০০ থেকে ২৫০০ বড় মাপের পতাকা বিক্রি করি। হাতে ধরে রাখা পতাকা দিনে বিক্রি করি ১০ হাজার, যদিও বিশ্বকাপ ফুটবল এখনও অনেক দূরে। সেলিম হাওলাদারের অধীনে কাজ করেন ২৫ জন শ্রমিক। এ ছাড়া মিরাজনগরের কারখানাগুলোতে পতাকা তৈরি করছেন প্রায় ২০০০ শ্রমিক। হাওলাদারের অর্ডারের শীর্ষে রয়েছে মেসি ও নেইমার নেতৃত্বাধীন টিম। তারা হলো, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। বাংলাদেশে এই দুটি দল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তিনি বলেন, এমন কি আমি আর্জেন্টিনার ৫০ ফুট লম্বা পতাকা তৈরির অর্ডার পেয়েছি। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পরে বাংলাদেশে জনপ্রিয় দল হলো জার্মানি, স্পেন ও পর্তুগাল। বাংলাদেশে রয়েছে সাড়ে চার হাজার তৈরি পোশাকের কারখানা। তাতে কাজ করেন প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক। তাদের তৈরি পোশাক বিদেশে রপ্তানি করে আয় হচ্ছে শত শত কোটি ডলার। কিন্তু বিশেষজ্ঞ ও অধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো বলছে, গার্মেন্ট শ্রমিকদের জীবনমানের কিছুটা অগ্রগতি হলেও তারা দীর্ঘ সময় কাজ করেন বিপদজনক পরিবেশে। আর পান কম বেতন। হাওলাদারের কারখানায় কাজ করেন মোহাম্মদ ইকবাল। তার স্ত্রী নার্গিস আখতার (২৮) পতাকা তৈরিতে নিয়োজিত। এতে সংসারে বাড়তি অর্থ আসছে। ইকবাল বলেন, গড়ে প্রতিদিন আমরা ৩০০০ টাকার কাজ করি। কিন্তু গড়ে প্রতিটি গার্মেন্ট কারখানা থেকে পুরো মাসের বেতন দেয়া হয় প্রায় ৭০ ডলার। এটি হলো বিশ্বে সবচেয়ে কম মজুরি। নার্গিস আখতার হেসে বলেন, আমার মনে হয় পতাকা নিয়ে এই বাড়াবাড়ি আরো কয়েক মাস থাকবে।
No comments