প্রতিবন্ধী মিলনের স্বপ্ন পূরণ নিয়ে সংশয় by আবু সাঈদ সরকার
শারীরিক
প্রতিবন্ধী মিলন মিয়ার স্বপ্ন পূরণ নিয়ে সংশয়। তবুও প্রতিনিয়ত এগিয়ে
যাওয়ার স্বপ্ন তাকে তাড়া করে। সীমাহীন দারিদ্র্যতা ও দু’হাত প্রতিবন্ধী
হয়েও অদম্য ইচ্ছা শক্তির জোরে বর্তমানে সে বিএ প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত।
মিলনের স্বপ্ন এমএ পাস করে ভালো চাকরি করা কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও
দরিদ্রতাই প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নেয়ার জন্য একটি
কর্মসংস্থানের আকুতি জানিয়ে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান তার।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের হাজির বাজার নতুন
অনন্তপুর গ্রামের দিনমজুর আইয়ুব আলীর পুত্র মিলন মিয়া (১৯)। জন্মের পর থেকে
শারীরিক প্রতিবন্ধী (দু’হাত প্রতিবন্ধী) হওয়া সত্ত্বেও লেখাপড়ার প্রতি তার
আগ্রহ দেখে মা মমতাজ বেগম ছেলেকে স্থানীয় অনন্তপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
ভর্তি করায়। প্রতিবেশী ও সহপাঠীদের সহযোগিতায় প্রতিবন্ধী হাত দিয়েই সে
লিখতে শুরু করে। এভাবেই সে ধীরে ধীরে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে থাকে। প্রাথমিক
সমাপনী পরীক্ষায় তার সফলতায় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উৎসাহে এবং সহপাঠী ও
প্রতিবেশীদের প্রেরণায় লেখাপড়ার প্রতি তার আগ্রহ বেড়ে যায়। তখন থেকেই সে
স্বপ্ন দেখে লেখাপড়া করে বড় হয়ে সমাজের ১০ জনের মতোই চাকরি করে বাবা-মায়ের
দুঃখ ঘোচাবে। সেই থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও দারিদ্র্যতাকে পাশ কাটিয়ে
স্বপ্ন পূরণ করার পথে এগিয়ে চলা শুরু করে। নতুন অনন্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়
থেকে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৫ সালে মানবিক
বিভাগ থেকে জিপিএ-৪ ও পাঁচপীর ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০১৭ সালে মানবিক বিভাগ
থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় ৩.০৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। বর্তমানে ওই কলেজের বিএ
প্রথম বর্ষের ছাত্র মিলন মিয়া। মিলনের ছোট বোন আদুরী খাতুন নতুন অনন্তপুর
বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। তার বাবা দিনমজুর আইয়ুব
আলী শারীরিকভাবেও অসুস্থ। দুই সন্তানের পড়াশোনার খরচ চালানোর সামর্থ্য নেই
তার। এর ওপর আবার সংসার চালাতে হয়। ফলে খেয়ে না খেয়ে তাদের দিন কাটে।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এগিয়ে গেলেও মিলনের স্বপ্ন পূরনে বাঁধা হয়ে
দাঁড়িয়েছে দরিদ্রতা। পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নেয়ার জন্য একটি কর্মসংস্থানের
আকুতি জানিয়ে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান প্রতিবন্ধী মিলনের।
মিলনের বাবা দিনমজুর আইয়ুব আলী বলেন, জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে
নিয়ে কষ্টের শেষ নেই। ছেলের লেখাপড়ার আগ্রহ দেখে শত কষ্টের মধ্যেও কোনো সময়
কাঠমিস্ত্রির কাজ করে আবার খেত খামারে কাজ করে দু’হাত দিয়ে যতটুকু উপার্জন
করি তাই দিয়ে খেয়ে না খেয়ে ছেলের স্বপ্ন পূরণের আশায় তার পড়াশোনার খরচের
জোগান দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। পাঁচপীর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল আমিন
সরকার জানান, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী হিসাবে কলেজ তাকে পূর্ণ সহযোগিতা করে।
সে ছাত্র হিসেবেও ভালো। আমি চাই মিলন লেখাপড়া শিখে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হোক।
No comments