এবারও বিশেষ ট্রেন বরাদ্দের বাইরে রংপুর: দুর্ভোগ বাড়বে ঘরমুখো মানুষের by জাভেদ ইকবাল
ঈদে
ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাত্রার অন্যতম মাধ্যম রেল। নির্বিঘ্নে প্রিয়জনদের
সঙ্গে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে ৭ জোড়া বিশেষ
ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বিশেষ ট্রেন বিভাগীয় নগরী রংপুরের ভাগে
একটিও পড়েনি। এতে করে ঘরমুখো মানুষের যাত্রায় দুর্ভোগ বাড়বে। ঈদ করতে ঘরে
আসা এবং পুনরায় কর্মস্থলে ফিরে যাওয়া প্রত্যাশী মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ
করছে। পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ ট্রেনের মধ্যে রয়েছে
দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল (ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা), চাঁদপুর স্পেশাল-১
(চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম), চাঁদপুর স্পেশাল-২
(চট্টগ্রাম-চঁদপুর-চট্টগ্রাম), রাজশাহী স্পেশাল (রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী),
পার্বতীপুর স্পেশাল (পার্বতীপুর-ঢাকা-পার্বতীপুর) শোলাকিয়া স্পেশাল-১
(ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব) এবং শোলাকিয়া স্পেশাল-২
(ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ)। ঈদের আগে ১৩ থেকে ১৫ এবং ঈদের পর ১৮ থেকে
২৪ জুন পর্যন্ত এই টেন চলাচল করবে। এর মধ্যে রংপুর বিভাগের দেড়কোটি মানুষ
পাবে একটি ট্রেন। সেটি হলো পার্বতীপুর-ঢাকা-পার্বতীপুর রুটে পার্বতীপুর
স্পেশাল ট্রেন। তবে বিভাগীয় শহর রংপুর থেকে কোন বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে না।
ফলে রংপুরের পাশাপাশি লালমনিরহাট,কুড়িগ্রাম,গাইবান্ধা, নীলফামারী জেলার
মানুষ বঞ্চিত হবে ঈদে ট্রেন যাত্রা থেকে। রেল সূত্র জানায় রংপুর এক্সপ্রেস,
বরেন্দ্র এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, নীলসাগরসহ ৪২ টি আন্ত নগর ট্রেন
চলাচল করছে উত্তরাঞ্চলে। এসব ট্রেনে প্রতিদিন গড়ে ৪’শ যাত্রী যাতাযাত করেন।
প্রতিটি ট্রেনে কম পক্ষে বগি থাকে ৯টি। উত্তরাঞ্চলের এই ৪২ টি ট্রেনে
প্রতিদিন ১৬ থেকে ১৭ হাজার যাত্রী রাজধানিসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন।
রেলওয়ের একটি সূত্র জানায় ঈদ উপলক্ষে যাত্রী সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
যাত্রীদের চাপ কমাতে উদ্যোগ নেয়া হয় বিশেষ ট্রেনের। রাজধানীসহ দেশের
বিভিন্ন স্থান থেকে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের বেশির ভাগই উত্তরাঞ্চলেরও হলেও এই
বিশেষ ট্রেনের বরাদ্দের সময় বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। রংপুর মেট্রোপলিটন
চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট রেজাউল ইসলাম মিলন জানান, ১৪টি বিশেষ
ট্রেনের মধ্যে কম পক্ষে ১ টি ট্রেন রংপুরে দেয়া উচিত ছিল। অনেক নিম্ন আয়ের
মানুষ স্বাচ্ছন্দে ট্রেনে চলাচল করতে পারতো। কিন্তু ট্রেনের সংখ্যা সীমিত
হওয়ায় অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসের ছাদে করে ঘরে ফিরবেন।
এছাড়া সড়ক পথে বাস ড্রাইভারদের যাত্রী আনা নেয়ার চাপে প্রতি বছরই ঈদের সময়
সড়ক দূর্ঘটনা অধিক পরিমাণে ঘটে। সেই দিক হতে ট্রেন যাত্রা অত্যন্ত নিরাপদ।
তিনি রেল বিভাগের কাছে ট্রেন বৃদ্ধির দাবি জানান। নগরীর ব্যবসায়ী আজগার
আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উত্তরাঞ্চলে দুটি বিভাগীয় শহর কিন্তু এর একটি
রংপুর বিশেষ ট্রেনের আওতায় পড়েনি। রেলের এ ধরনের সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষের
মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বলে তিনি জানান। ঢাকায় একটি বেসরকারী কোম্পানীতে
কর্মরত ইঞ্জিনিয়ার এম. এ কায়েস জানান, প্রতি বছর বাড়ি ঈদ করতে আসি।
সড়কগুলোর বেহাল অবস্থার কারণে বাসে বাড়ি ফিরতে অনেক দূর্ভোগ পোহাতে হয়।
আবার ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরতে ভোগান্তি তো আছেই। তাই ঈদে বিশেষ রেল হলে
আমাদের যাত্রাও নিরাপদ হয় সেই সাথে সঠিক সময়ে কর্মস্থলে পৌছানোর সম্ভাবনাও
থাকে। তাই দ্রুত কর্তৃপক্ষ বিশেষ ট্রেন রংপুরে বরাদ্দ দিবে এমনটাই আমরা আশা
করছি। রংপুর রেলস্টেশন মাস্টার সারওয়ার হোসেন জানান, ঈদ উপলক্ষে রংপুরে
এখন পর্যন্ত কোন বাড়তি কোন ট্রেনের সুবিধা পায়নি। রংপুর এক্সপ্রেসে এখন ৯
টি বগি নিয়ে চলাচল করছে। ঈদ উপলক্ষে আলাদা বগি বাড়ার সম্ভবনা ক্ষীণ।
পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (সিসিএম) মিহির কান্তি গুহ
জানান, বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্ত। এখানে পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলের করার কিছু
নেই। তিনি জানান রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে আরো একটি বিশেষ ট্রেন হলে ভালো
হতো।
No comments