আপনারা কিং ফিশদের ধরতে পারেন না -বেসিক ব্যাংক মামলার শুনানিতে হাইকোর্ট
বেসিক
ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির মামলার তদন্ত কাজ আড়াই বছরেও শেষ না হওয়ায় উষ্মা
প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশিদ
আলম খান ও সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আপনারা যদি
চার্জশিট দিতে না পারেন তাহলে সরে দাঁড়ান। আদালত আরো বলেছেন, আপনারা ‘কিং
ফিস’ দের ধরতে পারেন না। তাদেরকে টেলিভিশন টকশোতে দেখা যায়, বিভিন্ন
রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যায়। আদালত আরো বলেন, দুদক একটি বিধিবদ্ধ রাষ্ট্রীয়
সংস্থা। এই রাষ্ট্রীয় সংস্থার কাজ নিয়ে আমরা আর কত কথা বলব। এখন মনে হয়
লজ্জায় কালো কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকি। গতকাল শুনানি শেষে মামলার দুই আসামির
জামিনের বিষয়ে আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার (আজ) নির্ধারণ করেন বিচারপতি এম
ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। এর
আগে গত ২৩শে মে এক আদেশে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের সাড়ে তিন হাজার কোটি
টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির ৫৬ মামলার সকল তদন্ত কর্মকর্তাদের তলব করেন হাইকোর্ট।
বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির এসব মামলায় ওই দিন কয়েকজন আসামির জামিন
শুনানিতে নির্ধারিত সময়ে তদন্ত শেষ করতে না পারার বিষয়টি উঠে আসে। এসব
মামলার তদন্ত কার্যক্রম বিগত আড়াই বছরেও শেষ করতে না পারায় তাদের তলব করা
হয়। গতকাল তদন্ত কর্মকর্তারা আদালতে হাজির হন।
গতকাল শুনানিতে দুদকের আইনজীবী, খুরশিদ আলম খান আদালতকে এই বলে অবহিত করেন যে, এসব মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। দ্রুতই চার্জশিট দিয়ে দেয়া হবে।
শুনানির একপর্যায়ে দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, আপনি যখন দায়িত্ব নিচ্ছেন তখন আপনি বোর্ডের (বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ) কাউকে আসামি করলেন না কেন? ব্যাংকের ক্রেডিট কমিটি লোনের ব্যাপারে নেগেটিভ ফাইন্ডিং দেয়ার পরও তাদেরকে আসামি করা হয়নি। আপনি আইওদের সার্টিফিকেট দিচ্ছেন। বোর্ড যদি এপ্রোভাল দেয় তাহলে বোর্ডের একটা লোকও কেন আসলেন না।
আদালত দুদকের আইনজীবী ও তদন্ত কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ৫৬ মামলার মধ্যে আড়াই বছরে একটি মামলারও চার্জশিট দিতে পারলেন না। আপনারা যদি ৫৬টি মামলা না নিয়ে ৫টি মামলা নিতেন তাহলে হয়তো দ্রুত চার্জশিট দিতেন।
একপর্যায়ে দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে আদালতের এক মন্তব্যের জবাবে খুরশিদ আলম খান আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তার করা হলেও তারা কোর্টে এসে জামিন পেয়ে যায়। আদালত বলেন, জামিন পেলেও আইনের আওতার ভিত্তিতেই জামিন পায়। তদন্তের ধীরগতির কারণেই তারা জামিন পায়।
শুনানির সময় আদালত আরো বলেন, লোন দেয়া হলো। এখানে নেগেটিভ পজিটিভ ছিল কি না, এখন বলা হচ্ছে তদন্ত করতে গেলে টাকাটা কোথায় গেল সেটা খুঁজে বের করতে হবে। এই মামলায় টাকা খুঁজতে হবে কেন? এটা তো মানি লন্ডারিং এর মামলা নয়।
একপর্যায়ে এসব মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, আপনারা যদি চার্জশিট দিতে না পারেন তাহলে সরে দাঁড়ান। আদালত আরো বলেন, যদি কোনো কৃষক ৫ হাজার টাকা লোন নিত তাহলে তাকে মাজায় দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে আসা হতো। আপনারা ‘কিং ফিস’দের ধরতে পারেন না। অনেকে ব্যবসা বাণিজ্য করছে, টকশোতে কথা বলছে, তারা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও অংশ নিচ্ছে।
বেসিক ব্যাংকের ওই ৫৬ মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সৈয়দ ইকবাল হোসেনের উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, আমরা তো অনেক অবজারভেশন দিলাম কিন্তু আপনারা গুরুত্ব দিলেন না। আপনাদের সমস্যা কোথায়? আমরা হতাশ। আপনাদের ব্যর্থতার কারণে আসামিদের জামিন দিতে হয়। একই লোক ভিন্ন ভিন্ন নামে রাষ্ট্রের এতগুলো টাকা নিয়ে গেল। রাষ্ট্রের এতগুলো টাকা চলে গেল, আমাদেরও তো দায়িত্ব আছে। এখন মনে হচ্ছে কমিশন আগে যা বলেছে তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আদালত বলেন, দুদক একটি বিধিবদ্ধ রাষ্ট্রীয় সংস্থা। রাষ্ট্রীয় সংস্থার কাজ নিয়ে আমরা আর কত কথা বলব। এখন মনে হয় লজ্জায় কালো কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকি। কেন এত কথা বললাম।
শুনানির পর দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, আমরা আদালতে বলেছি আমাদের তদন্ত কাজ শেষ হতে চলেছে। দ্রুত আমরা চার্জশিট দেব। তিনি জানান, এ দুই মামলার আসামি ফজলুল সোবহান ও শিপার আহমেদের জামিন প্রশ্নে বৃহস্পতিবার আদেশের জন্য রেখেছেন আদালত।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের রাজধানীর গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে বিতরণের অভিযোগ ওঠে। পরে এ বিষয়ে তদন্তে নামে দুদক। ঋণপত্র যাচাই বাছাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দানসহ বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে। অনুসন্ধান শেষে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে রাজধানীর গুলশান, পল্টন ও মতিঝিল থানায় ১৫৬ জনকে আসামি করে ৫৬টি মামলা দায়ের করে দুদক। এসব মামলায় মোট দুই হাজার ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় আসামির বিরুদ্ধে। আসামিদের মধ্যে ২৬ জন ওই ব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলেন। অন্যরা ঋণ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক জরিপ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। তবে, এ সব মামলার আসামির তালিকায় বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু কিংবা ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের কেউ না থাকায় দুদকের অনুসন্ধান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে দুদকে তলব করে তাকে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। এছাড়া বেসিক ব্যাংকের সাবেক ১০ পরিচালককে ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক।
গতকাল শুনানিতে দুদকের আইনজীবী, খুরশিদ আলম খান আদালতকে এই বলে অবহিত করেন যে, এসব মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। দ্রুতই চার্জশিট দিয়ে দেয়া হবে।
শুনানির একপর্যায়ে দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, আপনি যখন দায়িত্ব নিচ্ছেন তখন আপনি বোর্ডের (বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ) কাউকে আসামি করলেন না কেন? ব্যাংকের ক্রেডিট কমিটি লোনের ব্যাপারে নেগেটিভ ফাইন্ডিং দেয়ার পরও তাদেরকে আসামি করা হয়নি। আপনি আইওদের সার্টিফিকেট দিচ্ছেন। বোর্ড যদি এপ্রোভাল দেয় তাহলে বোর্ডের একটা লোকও কেন আসলেন না।
আদালত দুদকের আইনজীবী ও তদন্ত কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ৫৬ মামলার মধ্যে আড়াই বছরে একটি মামলারও চার্জশিট দিতে পারলেন না। আপনারা যদি ৫৬টি মামলা না নিয়ে ৫টি মামলা নিতেন তাহলে হয়তো দ্রুত চার্জশিট দিতেন।
একপর্যায়ে দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে আদালতের এক মন্তব্যের জবাবে খুরশিদ আলম খান আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তার করা হলেও তারা কোর্টে এসে জামিন পেয়ে যায়। আদালত বলেন, জামিন পেলেও আইনের আওতার ভিত্তিতেই জামিন পায়। তদন্তের ধীরগতির কারণেই তারা জামিন পায়।
শুনানির সময় আদালত আরো বলেন, লোন দেয়া হলো। এখানে নেগেটিভ পজিটিভ ছিল কি না, এখন বলা হচ্ছে তদন্ত করতে গেলে টাকাটা কোথায় গেল সেটা খুঁজে বের করতে হবে। এই মামলায় টাকা খুঁজতে হবে কেন? এটা তো মানি লন্ডারিং এর মামলা নয়।
একপর্যায়ে এসব মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, আপনারা যদি চার্জশিট দিতে না পারেন তাহলে সরে দাঁড়ান। আদালত আরো বলেন, যদি কোনো কৃষক ৫ হাজার টাকা লোন নিত তাহলে তাকে মাজায় দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে আসা হতো। আপনারা ‘কিং ফিস’দের ধরতে পারেন না। অনেকে ব্যবসা বাণিজ্য করছে, টকশোতে কথা বলছে, তারা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও অংশ নিচ্ছে।
বেসিক ব্যাংকের ওই ৫৬ মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সৈয়দ ইকবাল হোসেনের উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, আমরা তো অনেক অবজারভেশন দিলাম কিন্তু আপনারা গুরুত্ব দিলেন না। আপনাদের সমস্যা কোথায়? আমরা হতাশ। আপনাদের ব্যর্থতার কারণে আসামিদের জামিন দিতে হয়। একই লোক ভিন্ন ভিন্ন নামে রাষ্ট্রের এতগুলো টাকা নিয়ে গেল। রাষ্ট্রের এতগুলো টাকা চলে গেল, আমাদেরও তো দায়িত্ব আছে। এখন মনে হচ্ছে কমিশন আগে যা বলেছে তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আদালত বলেন, দুদক একটি বিধিবদ্ধ রাষ্ট্রীয় সংস্থা। রাষ্ট্রীয় সংস্থার কাজ নিয়ে আমরা আর কত কথা বলব। এখন মনে হয় লজ্জায় কালো কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকি। কেন এত কথা বললাম।
শুনানির পর দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, আমরা আদালতে বলেছি আমাদের তদন্ত কাজ শেষ হতে চলেছে। দ্রুত আমরা চার্জশিট দেব। তিনি জানান, এ দুই মামলার আসামি ফজলুল সোবহান ও শিপার আহমেদের জামিন প্রশ্নে বৃহস্পতিবার আদেশের জন্য রেখেছেন আদালত।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের রাজধানীর গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে বিতরণের অভিযোগ ওঠে। পরে এ বিষয়ে তদন্তে নামে দুদক। ঋণপত্র যাচাই বাছাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দানসহ বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে। অনুসন্ধান শেষে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে রাজধানীর গুলশান, পল্টন ও মতিঝিল থানায় ১৫৬ জনকে আসামি করে ৫৬টি মামলা দায়ের করে দুদক। এসব মামলায় মোট দুই হাজার ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় আসামির বিরুদ্ধে। আসামিদের মধ্যে ২৬ জন ওই ব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলেন। অন্যরা ঋণ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক জরিপ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। তবে, এ সব মামলার আসামির তালিকায় বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু কিংবা ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের কেউ না থাকায় দুদকের অনুসন্ধান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে দুদকে তলব করে তাকে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। এছাড়া বেসিক ব্যাংকের সাবেক ১০ পরিচালককে ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক।
No comments