সরব প্রচারণা আওয়ামী শিবিরে মাঠ গোছাচ্ছেন বুলবুল by আসলাম-উদ-দৌলা
আগামী
৩০শে জুলাই রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সিইসির ঘোষণা অনুযায়ী ওইদিন
রাজশাহীসহ তিন সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে ঘোষণার আগে থেকে
রাজশাহীতে প্রস্তুতি ও প্রচারণা বেশ জোরেশোরেই চলছে। আর প্রচারণায় এগিয়ে
রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কার্যত রাজশাহী সদর আসনে সরকারদলীয় জোটের শরিক
দল ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি।
অন্যদিকে নগরপিতার আসনে মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিষয়টিকে ‘ক্ষমতায় থেকেও ক্ষমতার বাইরে’ হিসেবে
দেখছেন। তাই সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। সরব
প্রচারণা কখনো আবার উত্তাপ ছড়াচ্ছে। বিপরীতে মেয়র হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন
মহানগর বিএনপি সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর
মামলা ও বরখাস্ত আদেশের কারণে অর্ধেকের বেশি সময় তিনি চেয়ারের বাইরে।
দায়িত্ব ফিরে পেতেও দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে নামতে হয় বুলবুলকে। স্বল্প সময়ের
মধ্যে জনগণের আকাঙ্ক্ষা-নির্বাচনী ওয়াদা পূরণে দিন-রাত মেয়রের কর্মযজ্ঞ
চোখে পড়ার মতো। প্রতিনিয়ত সরাসরি জনগণের দোরগোড়ায় যাচ্ছেন, ভোটারদের
আশ্বস্ত করছেন। কৌশলী প্রচারণায় তিনি অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন।
বিএনপির ভেতর থেকেও তার প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আসন্ন নির্বাচনে মূল লড়াই
হবে পুরনো দুই প্রার্থী বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও আওয়ামী লীগের
এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের মধ্যে।
এছাড়া জামায়াত-জাতীয় পার্টি প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াত মহানগর সেক্রেটারি সিদ্দিক হোসাইন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। জাতীয় পার্টিও আনুষ্ঠানিকভাবে সিটি করপোরেশনে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মহানগর কমিটির জরুরি সভায় রাসিক নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী হিসেবে সর্বসম্মতিক্রমে মহানগর জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি ও মহানগর যুবসংহতি সভাপতি ওয়াসিউর রহমান দোলনের নাম ঘোষণা করে। সিটিতে জাতীয় পার্টির বড় ভোট ব্যাংক না থাকলেও ভোট ফ্যাক্টরে জামায়াতের প্রার্থী শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকলে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। অবশ্য গত ১২ই মার্চ রাজশাহীতে এসে দলটির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত আমীর মুজিবুর রহমানের সঙ্গে জামায়াতের প্রার্থী সিদ্দিক হোসাইন গ্রেপ্তার হন। তবে সেটাকে সমস্যা হিসেবে দেখছেন না দলটি।
জামায়াত নেতারা বলছেন, সিটি করপোরেশনগুলোতে বারবার তারা বিএনপিকে ছাড় দিচ্ছেন। কিন্তু তাদের একটি না একটিতে বিএনপির ছাড় দেয়া উচিত। পাঁচ নগরে ভোটের আনুপাতিক হারে রাজশাহীতেই জামায়াত সবচেয়ে শক্তিশালী। এই বিবেচনায় রাসিকে তাদের দাবি জোরালো। তবে শেষ পর্যন্ত তারা বিএনপিকে ছাড় দেবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে ভোটের লড়াইয়ের আগেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নির্বাচনের মাঠ। জিরো টলারেন্স অবস্থান সমর্থকদের মাঝে। সম্প্রতি পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার এলাকায় সবুজ নগরী গড়ার, পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানিয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের বাণী ও ছবি সংবলিত বিলবোর্ড সরিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বিলবোর্ড টাঙ্গানোর ঘটনায় দুইপক্ষের সমর্থকদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রতিবাদে গত ২২শে মে সড়কে বসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। খবর পেয়ে বিএনপি-ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত হন। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নেয় এবং মেয়র বুলবুলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। বিষয়টি পুরোপুরি সুরাহা হয় নি। এরইমধ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণায় প্রচারণার বহর বেড়েছে। সেইসঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গন যেকোনো সময় উত্তপ্ত হয়ে ওঠার শঙ্কাও থাকছে।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বরে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে দলের মেয়রপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন। তারপর থেকে রাজশাহী নগরীতে প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ, সদস্য পদ নবায়নসহ বিভিন্ন দলীয় কার্যক্রমের সঙ্গে সিটি নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছে ক্ষমতাসীন দলটি। নগরীতে ওয়ার্ড পর্যায়ে এমনকি মহল্লায় মহল্লায় গিয়ে উঠান বৈঠকের আয়োজন করে। সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম এখন শেষ পর্যায়ে। চলছে মহল্লা কমিটি গঠনের কার্যক্রম। আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটি এবং ভোটকেন্দ্র কমিটি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে গঠন শেষ করা হবে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এরই মধ্যে লিটনের পক্ষে স্টিকার, পোস্টার বিতরণ ও লাগানো শুরু হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনা করে ব্যানার ও বিলবোর্ডও লাগানো হয়েছে। সেই সঙ্গে দলীয় মেয়রপ্রার্থীসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে লিটনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মহানগর সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন জানান, শেখ হাসিনার কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরপরই আমিসহ দলের নেতাকর্মীরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে মাঠে নেমেছি। বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ, সেমিনার থেকে শুরু করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছাতে যা কিছু করা দরকার তা করেছি এবং সেগুলো এখনো অব্যাহত রেখেছি। মোটকথা, রাজশাহীতে সিটি নির্বাচনের আবহ পুরোপুরি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। ভোটারদের মাঝেও বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনকেন্দ্রিক কার্যক্রমগুলো আরো বেশি গতিশীল করা হয়েছে।
অপরপক্ষে কৌশলী প্রচারণার অংশ হিসেবে প্রায় বছরখানেকের বেশি সময় ধরে বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করছেন। তবে খুলনা সিটি নির্বাচনের পর এই নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আদৌ থাকবে কিনা সে নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
সূত্রমতে, প্রার্থিতা দৌড়ে বিএনপি থেকে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের কোনো প্রতিপক্ষ তৈরি হয় নি। কিন্তু বিগত খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপি রানিং মেয়রদের প্রার্থী করা হয়নি। সেদিক বিবেচনায় বিএনপি আসন্ন রাজশাহী সিটি নির্বাচনেও প্রার্থী পরিবর্তনের গুঞ্জন উঠে। বুলবুল না দিয়ে সাবেক রাসিক মেয়র বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুকে মেয়রপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হতে পারে বলে মনে করছিলেন অনেকেই। তবে সে গুঞ্জন হালে পানি পায় নি। রাজশাহী প্রেক্ষাপট পুরোটাই ভিন্ন। তিন হেভিওয়েট নেতার অন্যতম সাবেক মহানগর সভাপতি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন ‘তিনি মেয়র হিসেবে নির্বাচন করছেন না’। অপর মহানগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের বিএনপির প্রার্থী হিসেবে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। সে হিসেবেই তিনি মাঠ গোছাচ্ছেন।
মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ বলেন, সিটি নির্বাচনে কে প্রার্থী হবেন, সে ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি ঠিকই, তবে কারাবরণের আগে দলের চেয়ারপারসন বর্তমান মেয়র বুলবুলকে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে আমরা প্রার্থী ধরে রেখেছি। বিএনপির মেয়র প্রার্থী হিসেবে বুলবুলের বিকল্পও নেয়।
মহানগর বিএনপি সভাপতি রাসিক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল মানবজমিনকে বলেন, উদার গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি এই সরকারের অধীনে সবগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। খুলনা সিটি নির্বাচনেও অংশ নেয়। কিন্তু খুলনা সিটি নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে ভোটকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। এই অবস্থায় গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আগে থেকে অংশ নেয়ার কথা থাকায় সেখানে বিএনপি প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। ওই নির্বাচনের পর রাজশাহী সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তা কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এছাড়া জামায়াত-জাতীয় পার্টি প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াত মহানগর সেক্রেটারি সিদ্দিক হোসাইন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। জাতীয় পার্টিও আনুষ্ঠানিকভাবে সিটি করপোরেশনে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মহানগর কমিটির জরুরি সভায় রাসিক নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী হিসেবে সর্বসম্মতিক্রমে মহানগর জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি ও মহানগর যুবসংহতি সভাপতি ওয়াসিউর রহমান দোলনের নাম ঘোষণা করে। সিটিতে জাতীয় পার্টির বড় ভোট ব্যাংক না থাকলেও ভোট ফ্যাক্টরে জামায়াতের প্রার্থী শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকলে বিএনপির মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। অবশ্য গত ১২ই মার্চ রাজশাহীতে এসে দলটির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত আমীর মুজিবুর রহমানের সঙ্গে জামায়াতের প্রার্থী সিদ্দিক হোসাইন গ্রেপ্তার হন। তবে সেটাকে সমস্যা হিসেবে দেখছেন না দলটি।
জামায়াত নেতারা বলছেন, সিটি করপোরেশনগুলোতে বারবার তারা বিএনপিকে ছাড় দিচ্ছেন। কিন্তু তাদের একটি না একটিতে বিএনপির ছাড় দেয়া উচিত। পাঁচ নগরে ভোটের আনুপাতিক হারে রাজশাহীতেই জামায়াত সবচেয়ে শক্তিশালী। এই বিবেচনায় রাসিকে তাদের দাবি জোরালো। তবে শেষ পর্যন্ত তারা বিএনপিকে ছাড় দেবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে ভোটের লড়াইয়ের আগেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নির্বাচনের মাঠ। জিরো টলারেন্স অবস্থান সমর্থকদের মাঝে। সম্প্রতি পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার এলাকায় সবুজ নগরী গড়ার, পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানিয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের বাণী ও ছবি সংবলিত বিলবোর্ড সরিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বিলবোর্ড টাঙ্গানোর ঘটনায় দুইপক্ষের সমর্থকদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রতিবাদে গত ২২শে মে সড়কে বসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। খবর পেয়ে বিএনপি-ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত হন। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নেয় এবং মেয়র বুলবুলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। বিষয়টি পুরোপুরি সুরাহা হয় নি। এরইমধ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণায় প্রচারণার বহর বেড়েছে। সেইসঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গন যেকোনো সময় উত্তপ্ত হয়ে ওঠার শঙ্কাও থাকছে।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বরে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে দলের মেয়রপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন। তারপর থেকে রাজশাহী নগরীতে প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ, সদস্য পদ নবায়নসহ বিভিন্ন দলীয় কার্যক্রমের সঙ্গে সিটি নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছে ক্ষমতাসীন দলটি। নগরীতে ওয়ার্ড পর্যায়ে এমনকি মহল্লায় মহল্লায় গিয়ে উঠান বৈঠকের আয়োজন করে। সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম এখন শেষ পর্যায়ে। চলছে মহল্লা কমিটি গঠনের কার্যক্রম। আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটি এবং ভোটকেন্দ্র কমিটি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে গঠন শেষ করা হবে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এরই মধ্যে লিটনের পক্ষে স্টিকার, পোস্টার বিতরণ ও লাগানো শুরু হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনা করে ব্যানার ও বিলবোর্ডও লাগানো হয়েছে। সেই সঙ্গে দলীয় মেয়রপ্রার্থীসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে লিটনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মহানগর সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন জানান, শেখ হাসিনার কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরপরই আমিসহ দলের নেতাকর্মীরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে মাঠে নেমেছি। বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ, সেমিনার থেকে শুরু করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছাতে যা কিছু করা দরকার তা করেছি এবং সেগুলো এখনো অব্যাহত রেখেছি। মোটকথা, রাজশাহীতে সিটি নির্বাচনের আবহ পুরোপুরি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। ভোটারদের মাঝেও বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনকেন্দ্রিক কার্যক্রমগুলো আরো বেশি গতিশীল করা হয়েছে।
অপরপক্ষে কৌশলী প্রচারণার অংশ হিসেবে প্রায় বছরখানেকের বেশি সময় ধরে বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করছেন। তবে খুলনা সিটি নির্বাচনের পর এই নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আদৌ থাকবে কিনা সে নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
সূত্রমতে, প্রার্থিতা দৌড়ে বিএনপি থেকে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের কোনো প্রতিপক্ষ তৈরি হয় নি। কিন্তু বিগত খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপি রানিং মেয়রদের প্রার্থী করা হয়নি। সেদিক বিবেচনায় বিএনপি আসন্ন রাজশাহী সিটি নির্বাচনেও প্রার্থী পরিবর্তনের গুঞ্জন উঠে। বুলবুল না দিয়ে সাবেক রাসিক মেয়র বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুকে মেয়রপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হতে পারে বলে মনে করছিলেন অনেকেই। তবে সে গুঞ্জন হালে পানি পায় নি। রাজশাহী প্রেক্ষাপট পুরোটাই ভিন্ন। তিন হেভিওয়েট নেতার অন্যতম সাবেক মহানগর সভাপতি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন ‘তিনি মেয়র হিসেবে নির্বাচন করছেন না’। অপর মহানগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের বিএনপির প্রার্থী হিসেবে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। সে হিসেবেই তিনি মাঠ গোছাচ্ছেন।
মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ বলেন, সিটি নির্বাচনে কে প্রার্থী হবেন, সে ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি ঠিকই, তবে কারাবরণের আগে দলের চেয়ারপারসন বর্তমান মেয়র বুলবুলকে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে আমরা প্রার্থী ধরে রেখেছি। বিএনপির মেয়র প্রার্থী হিসেবে বুলবুলের বিকল্পও নেয়।
মহানগর বিএনপি সভাপতি রাসিক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল মানবজমিনকে বলেন, উদার গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি এই সরকারের অধীনে সবগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। খুলনা সিটি নির্বাচনেও অংশ নেয়। কিন্তু খুলনা সিটি নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে ভোটকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। এই অবস্থায় গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আগে থেকে অংশ নেয়ার কথা থাকায় সেখানে বিএনপি প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। ওই নির্বাচনের পর রাজশাহী সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তা কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
No comments