বিদেশি স্বামীদের ফেলে যাওয়া ভারতীয় স্ত্রীদের দুর্দশা by হাসনাইন মেহেদী
ভারতের
চন্ডিগড়ে গোপন কোনো স্থানে চলছে বিশেষ এক বৈঠক। পাঞ্জাবের বিভিন্ন স্থান
থেকে নারীরা প্রাদেশিক রাজধানীতে জড়ো হয়েছেন। ‘হেলপিং হেল্পলেস’ নামের একটি
দাতব্য সংস্থার প্রধান আমানজোত কর রামুওয়ালিয়ার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন
তারা। ভাগ্যহত এসব নারীকে ফেলে চলে গেছে তাদের বিদেশি স্বামীরা।
রামুওয়ালিয়ার সংস্থাটি নারীদের জন্য কাজ করে। তিনি জানালেন, রাজ্যজুড়ে এমন
পরিস্থিতির শিকার ১৫ হাজারেরও বেশি নারী। রামুওয়ালিয়া সপ্তাহে স্বামী ফেলে
যাওয়া ১৫ জনের মতো নারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সংখ্যা বাড়ছে বলে তিনি
জানান। বিবিসির ইনসাইড আউটকে তিনি বলেন, ‘অনেক সুন্দরী, শিক্ষিতা নারীকে
আমি দেখি। তারা বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। স্বামী পরিত্যক্তা স্ত্রী হিসেবে
সমাজে বাস করতে তারা হীনম্মন্যতায় ভোগেন। আমি বিশ্বাস করি এটা মানবাধিকারের
বড় এক লঙ্ঘন।’
ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের এই নারীদের দুর্দশার ঘটনা উঠে এসেছে বিবিসির ইনসাইড আউট অনুষ্ঠানের বিশেষ একটি পর্বে। সোমবার বিবিসি ওয়ার্ল্ড লন্ডনে অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারিত হয়। বিবিসি ওয়ার্ল্ডে তা পুনঃপ্রচার হবে ৪ঠা মার্চ। ‘আউটকাস্ট ওয়াইভস: অ্যান ইনসাইড আউট স্পেশাল’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটির সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয় বিবিসির এক প্রতিবেদনে।
এতে বলা হয়, এসব নারীর স্বামীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিক। তবে, প্রধানত ওইসব দেশ থেকে বেশি যেখানে দক্ষিণ এশিয়ানদের বসবাস রয়েছে যেমন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা। নারীরা বিদেশে উন্নত জীবনের আশায় বিয়েতে রাজি হয়। তবে, পাত্রদের আগ্রহ বেশি থাকে অর্থের দিকে, ভালোবাসা নয়। ধারণা করা হয়, এমন পুরুষদের এক-তৃতীয়াংশ বৃটেন থেকে যাওয়া। রামুওয়ালিয়া বলেন, ‘পাত্ররা এখানে আসে আর মোটা অঙ্কের যৌতুক দাবি করে। এরপর বিয়ে করে। যৌতুকের অর্থ নিয়ে মধুচন্দ্রিমা উপভোগ করে। আর কখনো ফিরে আসে না তারা।’
১৯৬১ সালে যৌতুক নিষিদ্ধ করা হলেও ভারতের অনেক স্থানে এখনো পাত্রকে পাত্রীপক্ষের অর্থ বা উপহার দেয়ার চল রয়েছে। কখনো কখনো যৌতুকের অঙ্ক হাজার হাজার পাউন্ডও হয়ে থাকে। চন্ডিগড়ে এদিনের গোপন বৈঠকে যোগ দেয়া এক নারী এসেছেন পাঞ্জাবের প্রত্যন্ত এক গ্রাম থেকে। কমলজিত কর নামের ওই নারী তিন বছর আগে ইতালি থেকে আসা এক পুরুষকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু বিয়ের কয়েক মাস পরই সে কমলজিতকে রেখে চলে যায়। সে সময় অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন কমলজিত। তিনি বলছিলেন, ‘বিয়ের পর পরই যৌতুক নিয়ে অভিযোগ করা শুরু করে সে। সে বলতো, তার পরিবার আমাকে নিয়ে খুশি নয়।’ এক পর্যায়ে কমলজিতের স্বামী ভারতে তাদের পারিবারিক বাড়ি ছেড়ে ইতালি ফেরত যায়। এরপর আর তাকে দেখেনি কমলজিত। তাদের কন্যা সন্তান জন্ম নেয় গুরুতর স্বাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে। কিন্তু শ্বশুর বাড়ির লোকজন কোনো প্রকার সহায়তা করতে অস্বীকৃতি জানায়।
কমলজিত বলেন, ‘তারা বলতো, বাচ্চা প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নিয়েছে। আমরা তাকে চাই না। আমাদের সম্পর্ক শেষ।’ দুর্দশার এখানেই শেষ নয়। কয়েক মাস পর কমলজিতের মেয়েটি মারা যায়। তার স্বামী তার সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ করেনি।
এমন পরিস্থিতির শিকার নারী ও তাদের পরিবারের জন্য দুর্ভোগের আরো একটি কারণ হলো- ভারতে বিদেশি নাগরিককে ডিভোর্স দেয়া অত্যন্ত জটিল ও ব্যয়বহুল এক প্রক্রিয়া। এছাড়া, অনেক ক্ষেত্রেই ভুক্তোভোগী নারীর পরিবারকে নানাভাবে বিপর্যস্ত হতে হয়।
দর্শন নামের এক পিতা তার মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন ১৯৯৭ সালে। তার মেয়ের কপালেও ওই একই পরিণতি হয়। স্বামী ফেলে চলে যায়। এখনো ওই বিবাহবিচ্ছেদ চূড়ান্ত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে পরিবারটি। তিনি বলেন, ‘সে চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কিছুই বলেনি। যাওয়ার সময় সে বলে যে, বিদেশে আমি বিবাহিত। আমার এক ছেলে আর এক মেয়ে আছে। কাজেই আমি আপনার মেয়েকে নিতে পারবো না। আপনারা যা পারেন করেন।’ দর্শন জানান, তারা আইনি পদক্ষেপ নেন। তবে ১৬ বছর ধরে একই ঘূর্ণাবর্তে ঘুরছেন। কোনো সমাধা হয়নি।
নন-রেসিডেন্ট ইন্ডিয়ান কমিশন অব পাঞ্জাবের একজন আইনজীবী দলজিত কর বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের আইনি ব্যবস্থা একটু ধীরগতির। আর রায় পেতে কয়েক বছর লেগে যায়। কয়েক রকম জটিলতা রয়েছে। তার ওপর আইনি ব্যবস্থার খরচ বহন করার মতো অর্থ এই মেয়েদের নেই।’
ওদিকে, চন্ডিগড়ে এই পরিস্থিতির শিকার একদল নারীকে পরামর্শ দিচ্ছেন আমানজোত কর রামুওয়ালিয়া। কিন্তু তিনি যে সহায়তা দিতে সক্ষম তা সীমিত। ভারতে স্ত্রীকে ফেলে চলে যাওয়া অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হলেও বিদেশি নাগরিক একবার দেশের গণ্ডি পেরিয়ে গেলে তাদের বিচারের আওতায় আনা অত্যন্ত কঠিন। রামুওয়ালিয়া বলেন, তার শোনা কিছু কিছু ঘটনা অত্যন্ত মর্মবিদারক। তিনি বলছিলেন, ‘এক মেয়ের বিয়ে হয়। তার স্বামী নিয়মিত তাকে ধর্ষণ করতো। শেষে তার গর্ভে বাচ্চা দিয়ে তাকে রেখে চলে যায়। জোরালো কোন আইন নেই যা আপনাকে এর প্রতিকার দেবে। মেয়েটিকে তার সারা জীবন পরিত্যক্তা স্ত্রী হওয়ার লজ্জা নিয়ে বাচতে হবে।’ রামুওয়ালিয়া মনে করেন, অন্য দেগুলোকে তাদের দেশের নাগরিকদের এমন কর্মকান্ড নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত এবং দোষীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে ভারতীয় সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করা উচিত। কিন্তু, তেমনটা সত্যি হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতারণার স্বীকার ভারতীয় স্ত্রীদের বাস্তবতা হলো তাদের জীবন অবহেলার ঘেরাটোপে।
ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের এই নারীদের দুর্দশার ঘটনা উঠে এসেছে বিবিসির ইনসাইড আউট অনুষ্ঠানের বিশেষ একটি পর্বে। সোমবার বিবিসি ওয়ার্ল্ড লন্ডনে অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারিত হয়। বিবিসি ওয়ার্ল্ডে তা পুনঃপ্রচার হবে ৪ঠা মার্চ। ‘আউটকাস্ট ওয়াইভস: অ্যান ইনসাইড আউট স্পেশাল’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটির সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয় বিবিসির এক প্রতিবেদনে।
এতে বলা হয়, এসব নারীর স্বামীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিক। তবে, প্রধানত ওইসব দেশ থেকে বেশি যেখানে দক্ষিণ এশিয়ানদের বসবাস রয়েছে যেমন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা। নারীরা বিদেশে উন্নত জীবনের আশায় বিয়েতে রাজি হয়। তবে, পাত্রদের আগ্রহ বেশি থাকে অর্থের দিকে, ভালোবাসা নয়। ধারণা করা হয়, এমন পুরুষদের এক-তৃতীয়াংশ বৃটেন থেকে যাওয়া। রামুওয়ালিয়া বলেন, ‘পাত্ররা এখানে আসে আর মোটা অঙ্কের যৌতুক দাবি করে। এরপর বিয়ে করে। যৌতুকের অর্থ নিয়ে মধুচন্দ্রিমা উপভোগ করে। আর কখনো ফিরে আসে না তারা।’
১৯৬১ সালে যৌতুক নিষিদ্ধ করা হলেও ভারতের অনেক স্থানে এখনো পাত্রকে পাত্রীপক্ষের অর্থ বা উপহার দেয়ার চল রয়েছে। কখনো কখনো যৌতুকের অঙ্ক হাজার হাজার পাউন্ডও হয়ে থাকে। চন্ডিগড়ে এদিনের গোপন বৈঠকে যোগ দেয়া এক নারী এসেছেন পাঞ্জাবের প্রত্যন্ত এক গ্রাম থেকে। কমলজিত কর নামের ওই নারী তিন বছর আগে ইতালি থেকে আসা এক পুরুষকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু বিয়ের কয়েক মাস পরই সে কমলজিতকে রেখে চলে যায়। সে সময় অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন কমলজিত। তিনি বলছিলেন, ‘বিয়ের পর পরই যৌতুক নিয়ে অভিযোগ করা শুরু করে সে। সে বলতো, তার পরিবার আমাকে নিয়ে খুশি নয়।’ এক পর্যায়ে কমলজিতের স্বামী ভারতে তাদের পারিবারিক বাড়ি ছেড়ে ইতালি ফেরত যায়। এরপর আর তাকে দেখেনি কমলজিত। তাদের কন্যা সন্তান জন্ম নেয় গুরুতর স্বাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে। কিন্তু শ্বশুর বাড়ির লোকজন কোনো প্রকার সহায়তা করতে অস্বীকৃতি জানায়।
কমলজিত বলেন, ‘তারা বলতো, বাচ্চা প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নিয়েছে। আমরা তাকে চাই না। আমাদের সম্পর্ক শেষ।’ দুর্দশার এখানেই শেষ নয়। কয়েক মাস পর কমলজিতের মেয়েটি মারা যায়। তার স্বামী তার সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ করেনি।
এমন পরিস্থিতির শিকার নারী ও তাদের পরিবারের জন্য দুর্ভোগের আরো একটি কারণ হলো- ভারতে বিদেশি নাগরিককে ডিভোর্স দেয়া অত্যন্ত জটিল ও ব্যয়বহুল এক প্রক্রিয়া। এছাড়া, অনেক ক্ষেত্রেই ভুক্তোভোগী নারীর পরিবারকে নানাভাবে বিপর্যস্ত হতে হয়।
দর্শন নামের এক পিতা তার মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন ১৯৯৭ সালে। তার মেয়ের কপালেও ওই একই পরিণতি হয়। স্বামী ফেলে চলে যায়। এখনো ওই বিবাহবিচ্ছেদ চূড়ান্ত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে পরিবারটি। তিনি বলেন, ‘সে চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কিছুই বলেনি। যাওয়ার সময় সে বলে যে, বিদেশে আমি বিবাহিত। আমার এক ছেলে আর এক মেয়ে আছে। কাজেই আমি আপনার মেয়েকে নিতে পারবো না। আপনারা যা পারেন করেন।’ দর্শন জানান, তারা আইনি পদক্ষেপ নেন। তবে ১৬ বছর ধরে একই ঘূর্ণাবর্তে ঘুরছেন। কোনো সমাধা হয়নি।
নন-রেসিডেন্ট ইন্ডিয়ান কমিশন অব পাঞ্জাবের একজন আইনজীবী দলজিত কর বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের আইনি ব্যবস্থা একটু ধীরগতির। আর রায় পেতে কয়েক বছর লেগে যায়। কয়েক রকম জটিলতা রয়েছে। তার ওপর আইনি ব্যবস্থার খরচ বহন করার মতো অর্থ এই মেয়েদের নেই।’
ওদিকে, চন্ডিগড়ে এই পরিস্থিতির শিকার একদল নারীকে পরামর্শ দিচ্ছেন আমানজোত কর রামুওয়ালিয়া। কিন্তু তিনি যে সহায়তা দিতে সক্ষম তা সীমিত। ভারতে স্ত্রীকে ফেলে চলে যাওয়া অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হলেও বিদেশি নাগরিক একবার দেশের গণ্ডি পেরিয়ে গেলে তাদের বিচারের আওতায় আনা অত্যন্ত কঠিন। রামুওয়ালিয়া বলেন, তার শোনা কিছু কিছু ঘটনা অত্যন্ত মর্মবিদারক। তিনি বলছিলেন, ‘এক মেয়ের বিয়ে হয়। তার স্বামী নিয়মিত তাকে ধর্ষণ করতো। শেষে তার গর্ভে বাচ্চা দিয়ে তাকে রেখে চলে যায়। জোরালো কোন আইন নেই যা আপনাকে এর প্রতিকার দেবে। মেয়েটিকে তার সারা জীবন পরিত্যক্তা স্ত্রী হওয়ার লজ্জা নিয়ে বাচতে হবে।’ রামুওয়ালিয়া মনে করেন, অন্য দেগুলোকে তাদের দেশের নাগরিকদের এমন কর্মকান্ড নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত এবং দোষীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে ভারতীয় সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করা উচিত। কিন্তু, তেমনটা সত্যি হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতারণার স্বীকার ভারতীয় স্ত্রীদের বাস্তবতা হলো তাদের জীবন অবহেলার ঘেরাটোপে।
No comments