বৃটেনের সঙ্গে স্ট্র্যাটেজিক সংলাপে নিরাপত্তা ও ব্রেক্সিট মুখ্য আলোচ্য by মিজানুর রহমান
বৃটেনের
সঙ্গে প্রথমবারের মতো স্ট্র্যাটেজিক বা কৌশলগত সংলাপে বসছে বাংলাদেশ।
আগামী ২৮শে মার্চ ঢাকায় ওই সংলাপ হবে। সেখানে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র
সচিব এম শহীদুল হক আর বৃটেনের পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার
সেক্রেটারি স্যার সাইমন ম্যাকডোনাল্ড নেতৃত্ব দেবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন সংলাপে ঢাকার তরফে বৃটেনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক
বিশেষত ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে দেশটির বেরিয়ে যাওয়া (ব্রেক্সিট) প্রশ্নে
গণরায় এবং তা কার্যকর হওয়ার পর ইইউ’র মতো বৃটেনের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের
বাণিজ্য সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় আসবে। বাংলাদেশের
বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ঢাকা থেকে সরাসরি লন্ডনে
কার্গ পরিবহন নিষিদ্ধ করে বৃটেন। নিষেধাজ্ঞা জারির পর বৃটেনসহ বৈশ্বিক
উদ্বেগ নিরসন এবং হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা
পরিস্থিতির উন্নয়নে চটজলদি বৃটেনের প্রতিষ্ঠান ‘রেডলাইন’কে দায়িত্ব দেয়
বাংলাদেশ। তাদের সুপারিশ মতে বিমানবন্দরে নিরাপত্তাও ঢেলে সাজানো হয়। একই
সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে দেশটির সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে দেন-দরবার অব্যাহত
রয়েছে। সেগুনবাগিচার কর্মকর্তারা ঢাকা-লন্ডন স্ট্র্যাটেজিক বা কৌশলগত
সংলাপে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও উদ্বেগ প্রশ্নে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ আলোচনা
হওয়ার আভাস দিয়েছেন। এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মানবজমিনকে
গতকাল বলেন, ‘এটি স্ট্র্যাটেজিক সংলাপ। সুতরাং এখানে উভয়ের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা
এবং আকাঙক্ষার বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হবে।’ সংলাপের তিনটি সেশন থাকবে।
প্রথম সেশনে রাজনৈতিক, পররাষ্ট্র নীতি ও ২০৩০ সাল পর্যন্ত উন্নয়ন এজেন্ডা;
দ্বিতীয় সেশনে ব্রেক্সিট ও এর প্রভাব, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, বিনিয়োগ,
অভিবাসন এবং তৃতীয় সেশনে নিরাপত্তা, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা, সামরিক
সহযোগিতা, সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে আলোচনা করা হবে জানিয়ে ওই কূটনীতিক বলেন, গত
দেড় দশক ধরে অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের প্রতি
আগ্রহ বাড়ছে বৃটেনসহ বিভিন্ন দেশের। কয়েক মাস আগে ডিপি রেল নামে বৃটেনের
একটি কোম্পানি পায়রাবন্দরের সঙ্গে ঢাকার রেল সংযোগের কাজ পেয়েছে। এ নিয়ে
শুরুতে খানিক বিতর্ক ওঠলেও উভয় সরকারের চেষ্টায় তা নিরসন সম্ভব হয়েছে।
এছাড়া গত বছর বৃটেনের রোলস রয়েস ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক যৌথভাবে
তাদের কাছ থেকে বিমানের ইঞ্জিন কেনার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে, যা বাংলাদেশ
সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। ব্রেক্সিট পরিস্থিতির ওপর তীক্ষ্ন
পর্যবেক্ষণ রয়েছে ঢাকার এমন এক কূটনীতিক বলেন, ইইউ জোটের সদস্য হিসেবে
বৃটেনের বাজারে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা ভোগ করে আসছে। ইউরোপিয়ান
ইউনিয়ন থেকে বৃটেন বেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশ যেন এ সুবিধা পায়, বরং সেই
সুবিধা যেন আরো বাড়ে সেই চেষ্টাই চালাচ্ছে ঢাকা। বৃটেনে ‘অবৈধভাবে’ যাওয়া
কিংবা বৈধভাবে গিয়ে কোনো কারণে ‘অবৈধ’ হয়ে পড়া বাংলাদেশের ফেরানোর চাপ
রয়েছে ঢাকার ওপর। সংলাপে সেই বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে বলে মনে করেন
এখানকার কর্মকর্তারা। উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে আচমকা ঢাকা সফর করেন বৃটেনের
এশিয়া ও প্রশাস্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক মন্ত্রী অলোক শর্মা। এখানে তার
সফরটি ছিল ৩ দিনের। ওই সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আবুল হাসান মাহমুদ আলী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম
খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী সমপ্রদায়ের
প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ, সংখ্যালঘুসহ নানা ধর্ম-বিশ্বাসের লোকজনের সঙ্গে
বৈঠক করেন তিনি। শিভেনিং অ্যান্ড কমনওয়েলথ অ্যালামনাই প্রতিনিধিদের সঙ্গেও
সাক্ষাৎ হয়েছে তার। ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে
কোনো ধরনের আগাম ঘোষণা ছাড়াই বৃটিশ মন্ত্রী ঢাকা সফর করেছেন। তার সফরে
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে অগ্রগতি হয়েছে তা হলো বাংলাদেশ ও বৃটেন কৌশলগত
সংলাপে সম্মত হওয়া। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকে
ওই সংলাপের কাঠামোও চূড়ান্ত করেন বৃটিশ মন্ত্রী। মন্ত্রীর সফরের সিদ্ধান্ত
মতে ঢাকা ও লন্ডনের মধ্যে নিয়মিতভাবে সেই সংলাপ হবে। প্রথম সংলাপটি হবে
ঢাকায়। পরবর্তীতে অল্টারনেটিভ ভেন্যুতে (একবার লন্ডনে অন্য বছর ঢাকায়)
সংলাপটি হবে। বৃটিশ মন্ত্রী ঢাকা সফর এবং বৃটেনের সঙ্গে বাংলাদেশের
কূটনৈতিক সম্পর্ক দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিন্ন
ইতিহাসের অংশীদার বাংলাদেশ ও বৃটেনের সম্পর্ক শক্তিশালী বন্ধুত্বের ওপর
প্রতিষ্ঠিত। বিদ্যমান সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় ও সমপ্রসারণে নিয়মিত সংলাপ
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বৃটিশ
মন্ত্রীও সেই আশাবাদ ব্যক্ত করে গেছেন।
No comments