গণপরিবহন সঙ্কটে রাজধানীবাসী
পুরনো
যানবাহন পাকড়াওয়ের অভিযানে নগরবাসী পড়েছেন গণপরিবহন সঙ্কটে। অভিযান এড়াতে
অনেক মালিক বাস রাস্তায় নামাচ্ছেন না। তবে কয়েকজন মালিক অভিযোগ করেছেন,
যাদের ক্ষমতার দাপট রয়েছে তারা ঠিকই লক্কড়ঝক্কর গাড়ি রাস্তায় নামাচ্ছে।
পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা বলেছেন, সঙ্কট কাটাতে নতুন গাড়ি নামানোর কোনো
বিকল্প নেই। নতুন গাড়ি না নামিয়ে পুরনো গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চালালে
অবশ্যই পথচারীরা ভোগান্তিতে পড়বেন। কিছু দিন ধরেই রাজধানীতে পুরনো গাড়ির
বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। বিশেষ করে ২০ বছরের পুরনো গাড়ির বিরুদ্ধে এ অভিযান।
ঢাকা সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি, জেলা প্রশাসন এবং
মহানগর পুলিশ কখনো যৌথভাবে, আবার কখনো কখনো পৃথক অভিযান চালাচ্ছে পুরনো
গাড়ির বিরুদ্ধে। যেসব গাড়ির বৈধ কাগজপত্র নেই সেগুলোর বিরুদ্ধেও অভিযান
চলছে। একই সাথে যেসব চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, বিআরটিএ আইন অনুযায়ী
ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই, তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন গাড়িচালককে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট
কর্তৃপক্ষ বলেছেন, অসচেতন চালকদের বেপরোয়া আচরণ এবং যেখানে সেখানে
পার্কিংয়ের কারণে রাজধানীতে যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। পুরনো বাসগুলো
নাগরিকদের জীবন হুমকির মুখে ফেলেছে। প্রায়ই দুর্ঘটনায় সাধারণ মানুষের প্রাণ
যাচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন সম্প্রতি এক
অভিযান চলাকালে সাংবাদিকদের বলেন, পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা না ফেরা পর্যন্ত এ
অভিযান চলবে। এ দিকে রাজধানীতে এ অভিযানের কারণে পুরনো গাড়িগুলো চলাচলে
সাবধানতা অবলম্বন করছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা। যে এলাকায় যে দিন অভিযান
চলে ওই এলাকায় সে দিন পুরনো গাড়ি চলে না। ফলে ওই এলাকায় সে দিন পরিবহন
সঙ্কটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েন নাগরিকেরা। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর
মতিঝিল শাপলা চত্বরের চার দিকে কয়েক হাজার মানুষকে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে
দেখা যায়। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন জানালেন,
কয়েক দিন ধরেই এভাবে গাড়ির
জন্য তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। গাড়ি না পাওয়ায় অনেক সময়
তাদের হেঁটে বাসায় যেতে হচ্ছে। পরিবহন মালিক নেতা রুস্তুম আলী খান বলেছেন,
কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না করে এ অভিযানের কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি
হচ্ছে। তিনি বলেন, অভিযানের কারণে অনেক মালিক তাদের গাড়ি বন্ধ রেখেছেন; যে
কারণে রাজধানীতে পরিবহন সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, অভিযানের আগেই গাড়ি
রিপ্লেসেমেন্ট করা উচিত ছিল। গত কয়েক বছরে রাজধানীতে কোনো গাড়ি নামেনি।
যানজটের কারণে পরিবহন ব্যবসা আগের মতো নেই, যে কারণে এ সেক্টরে নতুন
বিনিয়োগ হচ্ছে না। তিনি বলেন, পুরনো গাড়ি উচ্ছেদ করতে হলে আগে নতুন গাড়ি
নামাতে হবে। বিপ্লবী সড়ক পরিবহন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা বলেন,
এভাবে অভিযান চললে গণপরিবহনের তীব্র সঙ্কট হবে। অভিযানের কারণে অনেক গাড়ি
চলছে না। এভাবে চলতে থাকলে শ্রমিকেরাও বেকার হয়ে পড়বেন। আলী রেজা বলেন,
স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ হাসিলের জন্য অনেক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একটি
মহলের অর্থ উপার্জনে এসব সিদ্ধান্ত সহায়ক হয়। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র পরিবহন
ব্যবসায়ী; যাদের দু-চারটি গাড়ি আছে তারা অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বেন। আর
শ্রমিকদের লাইসেন্সের ব্যাপারে তিনি বলেন, লাইসেন্স তো বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের
কারণে অনেকে নিতে পারে না। তিনি বলেন, অনেক সময় বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে
হয় লাইসেন্সের জন্য; যে কারণে চালকেরা বাধ্য হয়ে ভুয়া লাইসেন্স সংগ্রহ
করে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এই ভুয়া লাইসেন্স প্রদানের সাথে
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরই অসৎ কর্তারা জড়িত থাকে।
No comments