টঙ্গীর কারখানায় বিস্ফোরণ
ঈদুল আজহার ছুটি কাটানোর আনন্দঘন মুহূর্তে টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীতে একটি অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল প্যাকেজিং কারখানার বিয়োগান্ত দুর্ঘটনায় আমরা মর্মাহত। ২৫ জনের অকাল মৃত্যু, আরও অন্তত ১০ জনের নিখোঁজ থাকা ও ৫০ জনের আহত হওয়ার ঘটনা আমাদের এই অপ্রিয় সত্য স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, আমাদের কলকারখানাগুলো এখন পর্যন্ত মেহনতি শ্রমিকের নিরাপদ কর্মস্থলে পরিণত হওয়া থেকে অনেক দূরে রয়েছে। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বিস্ফোরণের পরে আগুনের ঘটনায় দায়ীদের শাস্তির কথা বলেছেন। আমরা আশা করব একই সঙ্গে কারখানাগুলোর নিরাপত্তা তদারকির বিষয়টি জোরদার করারও উদ্যোগ নেওয়া হবে। সারা দেশের জন্য অনধিক ১০ জন বয়লার পরিদর্শক থাকা কোনো কাজের কথা নয়। বিস্ফোরণের পর সংশ্লিষ্ট ভবনটির অংশবিশেষ যেভাবে উড়ে গেছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা আমাদের রানা প্লাজার বিয়োগান্ত স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
নির্মাণে বড় ধরনের ত্রুটির কারণে রানা প্লাজা ধসে পড়েছিল। আর এক সাবেক সাংসদের মালিকানাধীন টাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেডের যে ভবনে মূল দুর্ঘটনা, সেটি ৪৫ বছরের পুরোনো। একটিমাত্র ফটকনির্ভর এই পাঁচতলা কারখানা বিসিক নগরীতে কী করে নিয়মনীতি না মেনে এতকাল চলেছে, সেটি একটি জ্বলন্ত প্রশ্ন। ভবনটিতে জরুরি নির্গমন পথ ছিল না। উপযোগী ভবন ও কর্মীদের যথা প্রশিক্ষণ থাকলে হয়তো প্রাণহানি কম হতো। শিল্প মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শক মো. শরাফত আলী তাঁর রিপোর্টে বয়লার বিস্ফোরণ বিষয়ে গণমাধ্যমের খবরের সত্যতা নাকচ করেছেন। কারণ, বয়লার অক্ষত রয়েছে। আশা করব ঘটনার তদন্তে গঠিত দুটি সরকারি কমিটি তাদের রিপোর্ট দ্রুত জমা দেবে, যার আলোকে ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ নিরূপণ হওয়া উচিত। আর দুর্ঘটনার দিনেই বয়লার পরিদর্শক তঁার সরকারি প্রতিবেদন ই–মেইলে গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন, জবাবদিহির এই মনোভাবকে আমরা স্বাগত জানাই। এখন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উচিত দুর্ঘটনাকবলিত কারখানা টাম্পাকো ফয়েলসের গ্যাস নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে দ্রুত রিপোর্ট প্রকাশ করা।
No comments