ঈদ ও কোরবানি by শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
ঈদ মানে আনন্দ। মুসলমানের দুটি ঈদ—ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদ এবং ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। আজহা অর্থ হলো কোরবানি, জবাই বা জবেহ করা অথবা কোরবানির পশু; আজহার আরেক অর্থ হলো ছাগল, তাই একে বকরি ঈদও বলা হয়। কোরবানি অর্থ নৈকট্য, কোরবানি অর্থ ত্যাগ-তিতিক্ষা। যেকোনো ত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনই হলো কোরবানি। পরিভাষায় কোরবানি হলো জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বপর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট জন্তু জবাই করা। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম কোরবানি করেন বাবা আদম (আ.)-এর দুই ছেলে হাবিল (রা.) ও কাবিল। হাবিল কোরবানি দিয়েছিলেন দুম্বা আর কাবিল কোরবানি দিয়েছিলেন কিছু খাদ্যশস্য। সেকালে কোরবানি কবুল হলে আসমানি আগুন এসে তা পুড়ে ভস্ম করে দিত আর কবুল না হলে তা হতো না। হাবিলের কোরবানি কবুল হয়েছিল, কাবিলের হয়নি। আল্লাহ তাআলা বলেন: আদম (আ.)-এর পুত্রদ্বয়ের বৃত্তান্ত আপনি তাদের শোনান। যখন তারা উভয়ে কোরবানি করেছিল, তখন একজনের কোরবানি কবুল হলো আর অন্যজনেরটা কবুল হলো না। অবশ্যই আল্লাহ মুয়াজ্জিনদের কোরবানি কবুল করেন। (সুরা মায়িদা, আয়াত: ২৭)।
কালক্রমে যুগপরম্পরায় বিভিন্ন রূপে এই কোরবানির প্রচলন চালু ছিল। হজরত ইব্রাহিম (আ.) আদিষ্ট হয়েছিলেন প্রিয় বস্তু কোরবানি করার জন্য। এই আদেশ পালন করে প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তিনি সকল প্রকার আয়োজন সম্পন্ন করেছিলেন প্রিয় পুত্র |ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার। প্রভুপ্রেমের পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হলেন সফলতার সঙ্গে। কোরবানি হলো বেহেশতি দুম্বা। কোরবানি ইসলামি ঐতিহ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, (হে নবী! সা.) আপনি আপনার রবের উদ্দেশে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন। (সুরা কাওসার, আয়াত: ২)। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারেকাছে না আসে। (ইবনে মাজা)। কোরবানির ইতিহাস পবিত্র কোরআনে এভাবে এসেছে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এক নেক সন্তান দান করুন। অতঃপর আমি তাকে এক সহিষ্ণু পুত্রের সুসংবাদ দিলাম, অতঃপর সে যখন তার পিতার সঙ্গে কাজ করার বয়সে উপনীত হলো, তখন ইব্রাহিম (আ.) বললেন, “হে বত্স! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে তোমাকে আমি জবাই করছি, তোমার অভিমত কী?” সে বলল, “হে আমার পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন, তা-ই করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।” যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহিম (আ.) তাঁর পুত্রকে কাত করে শোয়ালেন, তখন আমি তাঁকে ডাক দিয়ে বললাম, “হে ইব্রাহিম! আপনি তো স্বপ্নাদেশ সত্যই পালন করলেন!” এভাবেই আমি সত্কর্মশীল ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয় এটা ছিল এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তাঁকে মুক্ত করলাম এক মহান কোরবানির বিনিময়ে। আমি এটা পরবর্তী বংশধরদের স্মরণে রেখে দিলাম। ইব্রাহিম (আ.)-এর জন্য অভিবাদন! আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি ও শুভেচ্ছা।’ (সুরা সাফফাত, আয়াত: ১০০-১১০)।
কোরবানি সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরাম প্রিয় নবীজি (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কোরবানি কী? এটা কোথা থেকে এসেছে? প্রিয় নবী (সা.) উত্তরে বললেন, এটা হলো তোমাদের পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সুন্নত বা আদর্শ। এই আদর্শকে অনুসরণের জন্যই আল্লাহ পাক তোমাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব করেছেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) আবার জিজ্ঞেস করলেন, এতে আমাদের জন্য কী রয়েছে? উত্তরে মহানবী (সা.) বললেন, কোরবানি জন্তুর প্রতিটি পশমে তোমরা একটি করে নেকি পাবে। সাহাবায়ে কেরাম বিস্মিত হয়ে জানতে চাইলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা যদি ভেড়া কোরবানি করি? ভেড়ার তো অনেক বেশি পশম, এর বিনিময়েও কি আল্লাহ আমাদের ছাওয়াব দেবেন? নবী করিম (সা.) বললেন, আল্লাহর ভান্ডার অফুরন্ত। কেউ যদি তাকওয়ার সঙ্গে আল্লাহর নামে ভেড়া কোরবানি করে, তাহলে তার বিনিময়ে তাকে সে পরিমাণ ছাওয়াব আল্লাহ অবশ্যই দান করবেন। কোরবানি করার সময় হলো ১০ জিলহজ ঈদের দিন ঈদের নামাজের পর থেকে ১১ জিলহজ ও ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্বপর্যন্ত। এই তিন দিন (১০ জিলহজ সুবহে সাদিক থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্বপর্যন্ত) সময়ের মধ্যে যদি কেউ সাহেবে নিসাব বা মালিকে নিসাব (সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা এর সমমূল্যের নগদ টাকা বা ব্যবসাপণ্যের মালিক) থাকেন বা হন, তাহলে তাঁর নিজের পক্ষ থেকে একটি কোরবানি আদায় করা ওয়াজিব। কোরবানির জন্য ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স এক বছর হতে হয়; গরু ও মহিষের বয়স দুই বছর এবং উটের বয়স পাঁচ বছর হতে হবে।
একটি কোরবানি হলো একটি ছাগল, একটি ভেড়া বা একটি দুম্বা অথবা গরু, মহিষ ও উটের সাত ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ একটি গরু, মহিষ বা উট সাতজন শরিক হয়ে বা সাত নামে, অর্থাৎ সাতজনের পক্ষ থেকে কোরবানি করা যায়। শুধু গৃহপালিত হালাল পশুই কোরবানি করা যায়, বন্য পশু নয়। যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়, তিনি ইচ্ছা করলে নফল কোরবানি দিতে পারবেন। ওয়াজিব কোরবানির পাশাপাশিও নফল কোরবানি দেওয়া যায়। একজনের কোরবানি আরেকজন প্রদান করলেও আদায় হবে। কোরবানির পশু নিজ হাতে জবাই করা উত্তম; অন্য কেউ জবাই দিলেও হবে, নাবালক এবং নারীরাও কোরবানির পশু জবাই করতে পারবেন। ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে জবাই করলেই কোরবানি শুদ্ধ হবে। তবে নির্দিষ্ট দোয়া জানা থাকলে পড়া উত্তম। ইবাদত মহান আল্লাহ তাআলার জন্য, মোমিন বান্দা তার কোনো ইবাদতে অন্য কাউকে শরিক করবে না। অর্থাৎ ইবাদত হতে হবে সকল প্রকার শিরকমুক্ত, শুধু এক আল্লাহর উদ্দেশে। মহান রাব্বুল আলামিন হজরত ইব্রহিম (আ.)-কে সে শিক্ষাই দিয়েছেন। এরশাদ হচ্ছে: ‘বলুন, নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন এবং আমার মৃত্যু সমগ্র জগতের প্রতিপালক আল্লাহর
জন্যই নিবেদিত।’ এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গেল কোরবানি শুধু আল্লাহর উদ্দেশেই হতে হবে। লৌকিকতা বা সামাজিকতার উদ্দেশে নয়। সুতরাং কেউ যদি লাখ টাকার গরু দিয়ে লোক দেখানোর জন্য অথবা নিজের দম্ভ ও অহংকার প্রকাশের জন্য কোরবানি দেন, তা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, আল্লাহর কাছে ওদের গোশত, রক্ত পৌঁছায় না; বরং পৌঁছায় তাঁর কাছে তোমাদের তাকওয়া। (সুরা হজ, আয়াত: ৩৭)। ঈদের দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা, ফজরের নামাজ মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করা, সকালে গোসল করা, মিসওয়াক করা, সম্ভব হলে নতুন জামা অথবা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করা, আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করা, ঈদগাহে এক রাস্তায় যাওয়া এবং অন্য রাস্তায় ফিরে আসা, আসা-যাওয়ার সময় তাকবির (আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ) বলা, খোলা মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করা ইত্যাদি। কোরবানির গোশত আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা সুন্নত ও অতি উত্তম আমল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সে প্রকৃত মুমিন নয় যে নিজে পেটপুরে খায়; কিন্তু তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে। (তিরমিজি)।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।
smusmangonee@gmail.com
কালক্রমে যুগপরম্পরায় বিভিন্ন রূপে এই কোরবানির প্রচলন চালু ছিল। হজরত ইব্রাহিম (আ.) আদিষ্ট হয়েছিলেন প্রিয় বস্তু কোরবানি করার জন্য। এই আদেশ পালন করে প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তিনি সকল প্রকার আয়োজন সম্পন্ন করেছিলেন প্রিয় পুত্র |ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার। প্রভুপ্রেমের পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হলেন সফলতার সঙ্গে। কোরবানি হলো বেহেশতি দুম্বা। কোরবানি ইসলামি ঐতিহ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, (হে নবী! সা.) আপনি আপনার রবের উদ্দেশে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন। (সুরা কাওসার, আয়াত: ২)। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারেকাছে না আসে। (ইবনে মাজা)। কোরবানির ইতিহাস পবিত্র কোরআনে এভাবে এসেছে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এক নেক সন্তান দান করুন। অতঃপর আমি তাকে এক সহিষ্ণু পুত্রের সুসংবাদ দিলাম, অতঃপর সে যখন তার পিতার সঙ্গে কাজ করার বয়সে উপনীত হলো, তখন ইব্রাহিম (আ.) বললেন, “হে বত্স! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে তোমাকে আমি জবাই করছি, তোমার অভিমত কী?” সে বলল, “হে আমার পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন, তা-ই করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।” যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহিম (আ.) তাঁর পুত্রকে কাত করে শোয়ালেন, তখন আমি তাঁকে ডাক দিয়ে বললাম, “হে ইব্রাহিম! আপনি তো স্বপ্নাদেশ সত্যই পালন করলেন!” এভাবেই আমি সত্কর্মশীল ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয় এটা ছিল এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তাঁকে মুক্ত করলাম এক মহান কোরবানির বিনিময়ে। আমি এটা পরবর্তী বংশধরদের স্মরণে রেখে দিলাম। ইব্রাহিম (আ.)-এর জন্য অভিবাদন! আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি ও শুভেচ্ছা।’ (সুরা সাফফাত, আয়াত: ১০০-১১০)।
কোরবানি সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরাম প্রিয় নবীজি (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কোরবানি কী? এটা কোথা থেকে এসেছে? প্রিয় নবী (সা.) উত্তরে বললেন, এটা হলো তোমাদের পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সুন্নত বা আদর্শ। এই আদর্শকে অনুসরণের জন্যই আল্লাহ পাক তোমাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব করেছেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) আবার জিজ্ঞেস করলেন, এতে আমাদের জন্য কী রয়েছে? উত্তরে মহানবী (সা.) বললেন, কোরবানি জন্তুর প্রতিটি পশমে তোমরা একটি করে নেকি পাবে। সাহাবায়ে কেরাম বিস্মিত হয়ে জানতে চাইলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা যদি ভেড়া কোরবানি করি? ভেড়ার তো অনেক বেশি পশম, এর বিনিময়েও কি আল্লাহ আমাদের ছাওয়াব দেবেন? নবী করিম (সা.) বললেন, আল্লাহর ভান্ডার অফুরন্ত। কেউ যদি তাকওয়ার সঙ্গে আল্লাহর নামে ভেড়া কোরবানি করে, তাহলে তার বিনিময়ে তাকে সে পরিমাণ ছাওয়াব আল্লাহ অবশ্যই দান করবেন। কোরবানি করার সময় হলো ১০ জিলহজ ঈদের দিন ঈদের নামাজের পর থেকে ১১ জিলহজ ও ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্বপর্যন্ত। এই তিন দিন (১০ জিলহজ সুবহে সাদিক থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্বপর্যন্ত) সময়ের মধ্যে যদি কেউ সাহেবে নিসাব বা মালিকে নিসাব (সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা এর সমমূল্যের নগদ টাকা বা ব্যবসাপণ্যের মালিক) থাকেন বা হন, তাহলে তাঁর নিজের পক্ষ থেকে একটি কোরবানি আদায় করা ওয়াজিব। কোরবানির জন্য ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স এক বছর হতে হয়; গরু ও মহিষের বয়স দুই বছর এবং উটের বয়স পাঁচ বছর হতে হবে।
একটি কোরবানি হলো একটি ছাগল, একটি ভেড়া বা একটি দুম্বা অথবা গরু, মহিষ ও উটের সাত ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ একটি গরু, মহিষ বা উট সাতজন শরিক হয়ে বা সাত নামে, অর্থাৎ সাতজনের পক্ষ থেকে কোরবানি করা যায়। শুধু গৃহপালিত হালাল পশুই কোরবানি করা যায়, বন্য পশু নয়। যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়, তিনি ইচ্ছা করলে নফল কোরবানি দিতে পারবেন। ওয়াজিব কোরবানির পাশাপাশিও নফল কোরবানি দেওয়া যায়। একজনের কোরবানি আরেকজন প্রদান করলেও আদায় হবে। কোরবানির পশু নিজ হাতে জবাই করা উত্তম; অন্য কেউ জবাই দিলেও হবে, নাবালক এবং নারীরাও কোরবানির পশু জবাই করতে পারবেন। ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে জবাই করলেই কোরবানি শুদ্ধ হবে। তবে নির্দিষ্ট দোয়া জানা থাকলে পড়া উত্তম। ইবাদত মহান আল্লাহ তাআলার জন্য, মোমিন বান্দা তার কোনো ইবাদতে অন্য কাউকে শরিক করবে না। অর্থাৎ ইবাদত হতে হবে সকল প্রকার শিরকমুক্ত, শুধু এক আল্লাহর উদ্দেশে। মহান রাব্বুল আলামিন হজরত ইব্রহিম (আ.)-কে সে শিক্ষাই দিয়েছেন। এরশাদ হচ্ছে: ‘বলুন, নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন এবং আমার মৃত্যু সমগ্র জগতের প্রতিপালক আল্লাহর
জন্যই নিবেদিত।’ এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গেল কোরবানি শুধু আল্লাহর উদ্দেশেই হতে হবে। লৌকিকতা বা সামাজিকতার উদ্দেশে নয়। সুতরাং কেউ যদি লাখ টাকার গরু দিয়ে লোক দেখানোর জন্য অথবা নিজের দম্ভ ও অহংকার প্রকাশের জন্য কোরবানি দেন, তা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, আল্লাহর কাছে ওদের গোশত, রক্ত পৌঁছায় না; বরং পৌঁছায় তাঁর কাছে তোমাদের তাকওয়া। (সুরা হজ, আয়াত: ৩৭)। ঈদের দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা, ফজরের নামাজ মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করা, সকালে গোসল করা, মিসওয়াক করা, সম্ভব হলে নতুন জামা অথবা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করা, আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করা, ঈদগাহে এক রাস্তায় যাওয়া এবং অন্য রাস্তায় ফিরে আসা, আসা-যাওয়ার সময় তাকবির (আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ) বলা, খোলা মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করা ইত্যাদি। কোরবানির গোশত আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা সুন্নত ও অতি উত্তম আমল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সে প্রকৃত মুমিন নয় যে নিজে পেটপুরে খায়; কিন্তু তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে। (তিরমিজি)।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।
smusmangonee@gmail.com
No comments