উপকূল সমৃদ্ধ হলে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হবে by অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। ছোট-বড় অসংখ্য নদী
রয়েছে এদেশে আর এদেশের দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। তাই এদেশে রয়েছে অনেক
উপকূলীয় অঞ্চল বা এলাকা যেগুলোর মাছ, চিংড়ি ও লবণ দেশের জন্য অনেক বেশি
গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। এছাড়াও, উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর কৃষি ও বনায়ন
কার্যক্রমের উপর এদেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধি অনেকাংশে নির্ভরশীল। এক কথায়,
উপকূলীয় অঞ্চল মানেই অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ
এলাকাসমুহ। এই এলাকাগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদানপূর্বক সরকার ও জনগণ
উভয়েরই উপকূলের সকল সমস্যা সমাধানপূর্বক কাক্সিক্ষত মান অর্জনের মাধ্যমে
সার্বিক বিকাশ সাধন করতে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হওয়া উচিত। এতে করে খুব অল্প
সময়েই বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং জাতি উত্তরোত্তর
বৃহত্তর সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল এতোই ব্যাপক ও বি¯তৃত যে, উপকূল ও উপকূলবাসীকে রক্ষার জন্য যথাযথ ও সময়োচিত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে সমৃদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় তিন কোটি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কেননা, জলবায়ুতে উষ্ণতার কারণে যদি সমুদ্রের উচ্চতা ৪৫ সে. মি. বাড়ে, তাহলে বাংলাদেশের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ এলাকা তলিয়ে যাবে। এমন কি, যদি ২১০০ সাল নাগাদ এক মিটার সমুদ্র সমতলের পরিবর্তন ঘটে, তবে বাংলাদেশের তিন মিলিয়ন হেক্টর জমি প্লাবিত হতে পারে। এই প্লাবনযোগ্য অঞ্চলগুলোর সবগুলোই এদেশের উপকূলীয় অঞ্চল। এছাড়া, উপকূলীয় অঞ্চলের উপযুক্ত সুরক্ষা না হলে এদেশের সাত কোটি লোক বিভিন্নভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আক্রান্ত হবে। উপরোক্ত আলোচনা থেকে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের পরিধি এবং গুরুত্ব নিঃসন্দেহে আরো সুস্পষ্ট হয়ে গেছে।
দুঃখের বিষয়, আমরা উপকূলও বুঝি না, উপকূলের গুরুত্বও বুঝি না। তাই আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে এখনো উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব বিরাজ করছে। এছাড়াও, অপরিকল্পিত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বসতবাড়ি নির্মাণের মারাত্মক প্রভাব পড়ছে কৃষিজমির উপর। শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অপর্যাপ্ততার কারণে সঠিক ও যুগোপযোগী শিক্ষার অভাবে উপকূলীয় অঞ্চলের লোকেরা বিরাজমান সমস্যাবলির কাক্সিক্ষত সমাধান করতে সক্ষম হচ্ছে না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অপর্যাপ্ত ব্যবহার ও প্রয়োগের কারণে উন্নত চাষাবাদ কিংবা সুপরিকল্পিত বিজ্ঞানসম্মত বনায়ন-কিছুতেই কাক্সিক্ষত সাফল্য ও অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে না। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে হলে প্রয়োজন যুগ ও বিশ্বের সাথে তাল মেলানো উন্নয়নমুখী গতিশীলতা এবং এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ গতিশীলতার জন্য সরকারের আন্তরিক ও গতিশীল পদক্ষেপ অপরিহার্য।
বাংলাদেশের উপকূলভাগ অনেক ব্যাপক এবং বি¯তৃত। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো এই উপকূলভাগেই অবস্থিত। মাছ, চিংড়ি, লবণ, কৃষি ও বনায়ন, পর্যটন ও বিনোদন এলাকা - সব দিক দিয়ে দেশের জাতীয় আয় ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে এগুলো সর্বোচ্চ সহায়ক। অথচ দেশের সবচেয়ে উপেক্ষিত অঞ্চলও এই উপকূলীয় অঞ্চলসমুহ। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো - প্রভৃতিতে আক্রান্ত হয়ে জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি হওয়া এ অঞ্চলগুলোর নৈমিত্তিক বৈশিষ্ট্য। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এই এলাকাসমুহের উন্নয়ন সাধন ও সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ, সর্বোপরি শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে উপকূলবাসীকে সুপ্রতিষ্ঠিতকরণ সময়ের দাবি।
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল এদেশের উপকূলীয় অঞ্চলসমুহের উপর বয়ে যাওয়া প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের কথা এদেশের মানুষ ভোলেনি, ভুলে যাওয়ার কথাও নয়। এ প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দেশের ১৬টি জেলার ৪৭টি উপজেলা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ৪ লক্ষাধিক মানুষ ও অসংখ্য গবাদি পশু প্রাণ হারায়। এই অসংখ্য মানুষের মৃত্যু এবং অগুন্ত সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি জনম জনম ধরে এদেশের উপকূলবাসীর জন্য এক মর্মন্তুদ ও করুণ ইতিহাস হয়ে থাকবে। অথচ ২৯ এপ্রিল যে শিক্ষা উপকূলবাসীসহ এদেশের মানুষকে দিয়েছে সে শিক্ষা অনুসারে এখনো পর্যন্ত নেয়া হয়নি কোন কার্যকরী পদক্ষেপ। ১৯৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ের পর বয়ে গেল ১৯৯৭ এর ঘূর্ণিঝড়সহ সাম্প্রতিক প্রলয়ংকরী মর্মান্তিক সিডর যার ভিকটিমেরা এখনো বঞ্চিত ও উপেক্ষিত অবস্থায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। উপকূলীয় মানুষদের জন্য ঘূর্ণিঝড়, সিডর ইত্যাদি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত রক্ষণাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অদূর ভবিষ্যতে আরো অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলবাসী সর্বশান্ত হবে। অতীতেও বিভিন্ন সময়ে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস ইত্যাদির আক্রমণে উপকূলীয় অঞ্চলের জান-মাল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৯৫৪, ১৯৬৮, ১৯৭৪, ১৯৮৭, ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যা ছিল নিকট অতীতের ভয়াবহতম। ১৯৭৪ সালের বন্যার কারণে ফসলহানিতে সংঘটিত ভয়ংকর দুর্ভিক্ষ লক্ষ লক্ষ প্রাণ সংহার করেছে। ১৯৮৮ সালের বন্যা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহতম। দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫৩টি এ বন্যায় ডুবে যায়, ৩০০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং ৪৫ লাখ হেক্টর জমির ফসল ধ্বংস হয়। ১৯৯৮ সালের বন্যা ছিল ইতিহাসের দীর্ঘতম। ৩ মাস স্থায়ী এ বন্যায় দেশের ৫৪টি জেলা জলমগ্ন হয়। ২০০৪ সালের বন্যায় দেশের ৫৬টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারি প্রাথমিক হিসাব মোতাবেক এ বন্যায় মোট ৪২ হাজার কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল এ বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার মানুষের নিকট এক মূর্তিমান আতঙ্ক। গত ১৮৫ বছরে অন্তত ৫১ বার ভয়ংকর জলোচ্ছ্বাসের হামলায় পড়েছে বাংলাদেশ। তবে ১৯৬০, ১৯৭০, ১৯৮৫, ১৯৯১ এবং ১৯৯৭ সালের জলোচ্ছ্বাস ছিল বিভীষিকাময়। ১৯৭০ সালের সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস উপকূলীয় বিশাল এলাকাকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছিল এবং এতে ৫ লাখের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। ১৯৮৫ সালের ঘূর্ণিঝড়ে উড়িরচর নামক জনপদ সম্পূর্ণ জনশূন্য হয়ে পড়ে।
এটা সকলেরই নিকট সুবিদিত যে, উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর মাছ, চিংড়ি এবং লবণ এদেশের অর্থনীতির জন্য অতীব অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এদেশের মানুষের জীবন, জীবিকা ও অর্থনীতির সাথে এগুলোর সম্পর্ক নিবিড় ও অবিচ্ছেদ্য। অথচ বেশ অবাক লাগে যখন দেখি এই উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর উন্নয়নের ব্যাপারে সরকারের উদাসীনতা বিদ্যমান। পক্ষান্তরে, পার্বত্য অঞ্চলগুলোর পক্ষ থেকে অনুরূপ কোন অবদান না থাকলেও সরকারি সহযোগিতায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় দিন দিন এগুলো সমৃদ্ধ হতে সমৃদ্ধতর হয়ে যাচ্ছে। আসলে আমরা যে আমাদের প্রকৃত লাভ-ক্ষতি বুঝি না, এটা আমাদের জাতীয় দোষ। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি সবক্ষেত্রেই এটি সন্দেহাতীতভাবে সত্য। এখন সময় এসেছে, অতীতের ব্যর্থতা ভুলে গিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর যথার্থ মানোন্নয়নের মাধ্যমে দেশ ও জাতির কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জন করা। এ অগ্রগতি অর্জনের বিস্তারিত উপায় সম্পর্কে আমাদেরকে অবশ্যই ভাবতে হবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে সরকারি রেস্ট হাউজ নির্মাণপূর্বক যদি সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীকে সেগুলো টেন্ডার দেওয়া হতো, তাহলে একদিকে যেমন উপকূলীয় এলাকার বিকাশের পথ সুগম হতো, অপরদিকে উত্তরোত্তর বিকাশ ও সমৃদ্ধির ফলে জাতীয় আয়ও বৃদ্ধি পেতো। এছাড়াও, উপকূলীয় এলাকাগুলো সরকারের øেহচ্ছায়ায় নিয়ন্ত্রিত হতো বিধায় উপকূলের মানুষ উৎসাহ-উদ্দীপনা লাভের মাধ্যমে সৃষ্টিশীল অভিযাত্রায় পরিকল্পিত উপায়ে এলাকার কাক্সিক্ষত বিকাশ ও মানোন্নয়নে মনোনিবেশ করতো , ফলশ্র“তিতে অতি দ্রুত বদলে যেতো উপকূলীয় মানুষের জীবন। উদাহরণস্বরূপ, মগনামা, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার, আনোয়ারা, বাঁশখালী, মহেশখালী ও হাতিয়ায় সরকারি রেস্ট হাউজ স্থাপিত হলে উক্ত এলাকার অনেক অগ্রগতি অর্জিত হতো, সরকারেরও আয় বাড়তো। উপকূলীয় এলাকাগুলোতে যে সমস্ত খাস জমি পড়ে আছে, সেগুলোকে ভূমিহীন, দরিদ্র ও অসহায় মানুষদেরকে বরাদ্দ দিলে ভালো হয়; এক্ষেত্রে কোন এনজিওর মাধ্যমে এটি কার্যকর না করে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে করলেই ভালো হয়। এছাড়াও, খাসজমিগুলোর বরাদ্দসহ যে কোন সরকারি দান-অনুদান বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের দখলদারিত্ব ঠেকাতে হলে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজনীয় মনে করছি। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, ১৯৯১-এর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের শুমারি এখনো পর্যন্ত হয়নি। ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকেই অদ্যাবধি চরম দুর্দশায় জীবনযাপন করছেন। অবিলম্বে উক্ত শুমারি সম্পন্ন করে তাঁদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করা প্রয়োজন।
উপকূলীয় এলাকাগুলোর বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল সরকার কর্তৃক একটি উপকূলীয় মন্ত্রণালয় এবং একটি উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড গঠিত হওয়া। এদেশে রয়েছে অনেকগুলো উপকূলীয় জেলা এবং দেশের সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস হলো এই উপকূলীয় অঞ্চলগুলো। মাছ, চিংড়ি, লবণ, পর্যটন ও বিনোদন এলাকা - সর্বদিক দিয়ে দেশের জাতীয় আয় ও উৎপাদন অনেকাংশেই এগুলোর উপর নির্ভরশীল। অবাক হই যখন দেখি পার্বত্য এলাকাগুলো থেকে অনুরূপ কোন আয় ও উৎপাদন না পাওয়া সত্ত্বেও সব সময় পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয় যে কোন সরকার কর্তৃক গঠিত হয় অথচ উপকুলের মতো অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে কোন সরকারের আমলেই কোন মন্ত্রণালয় গঠিত হয় না, এমনকি, কোন উপকূলের উন্নয়ন বোর্ডও গঠন করা হয় না। কিন্তু এটা সুস্পষ্ট যে, এ ধরনের মন্ত্রণালয় ও বোর্ড গঠিত হলে জাতীয় আয়, উৎপাদন ও সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতো।
উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে শিক্ষার উন্নয়ন ঘটাতে হবে, বাড়াতে হবে শিক্ষার হার। আরো অনেক স্কুল ও কলেজ স্থাপন করতে হবে। কক্সবাজারে শিক্ষার প্রসারের জন্য এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়। সুন্দরবন, কুয়াকাটা, নিঝুম দ্বীপ ও সেন্ট মার্টিনসহ দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও প্রসারকে ত্বরান্বিত করতে হবে। কক্সবাজার ইনানী বীচকে করতে হবে আরো সমৃদ্ধ ও আকর্ষণীয়। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে, এতে বৈদেশিক আয় অনেক বেশি বাড়বে। ভারত ও মায়ানমার সংশ্লিষ্ট সমুদ্র সীমার বিজয়টিকে কাজে লাগাতে হবে এবং এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন ও আয় বাড়াতে হবে। উপকূলবাসীকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় উৎসাহিত ও পুরস্কৃতকরণমূলক বনায়ন কার্যক্রমটিকে আরো জোরদার করতে হবে যাতে উপকূলীয় অঞ্চলসমূহ সব ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে নিরাপদ থাকতে পারে।
পরিশেষে বলবো, উপকূলীয় অঞ্চল মানেই অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসমুহ। বাংলাদেশের প্রকৃত ও কাক্সিক্ষত উন্নয়ন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলোর উপর নির্ভরশীল। তাই এই এলাকাগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদানপূর্বক সরকার ও জনগণ উভয়কেই আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হতে হবে উপকূলের সকল সমস্যা সমাধানপূর্বক কাক্সিক্ষত মান অর্জনের মাধ্যমে সার্বিক বিকাশ সাধন করতে। এতে করে খুব অল্প সময়েই বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং জাতি উত্তরোত্তর বৃহত্তর সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাবে।
অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্
অধ্যক্ষ, মেরন সান কলেজ; চেয়ারম্যান, মেরিট বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন;
সভাপতি, সার্ক কালচারাল ফোরাম বাংলাদেশ;
সহসভাপতি, উপকূলীয় উন্নয়ন ফাউন্ডেশন।
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল এতোই ব্যাপক ও বি¯তৃত যে, উপকূল ও উপকূলবাসীকে রক্ষার জন্য যথাযথ ও সময়োচিত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে সমৃদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় তিন কোটি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কেননা, জলবায়ুতে উষ্ণতার কারণে যদি সমুদ্রের উচ্চতা ৪৫ সে. মি. বাড়ে, তাহলে বাংলাদেশের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ এলাকা তলিয়ে যাবে। এমন কি, যদি ২১০০ সাল নাগাদ এক মিটার সমুদ্র সমতলের পরিবর্তন ঘটে, তবে বাংলাদেশের তিন মিলিয়ন হেক্টর জমি প্লাবিত হতে পারে। এই প্লাবনযোগ্য অঞ্চলগুলোর সবগুলোই এদেশের উপকূলীয় অঞ্চল। এছাড়া, উপকূলীয় অঞ্চলের উপযুক্ত সুরক্ষা না হলে এদেশের সাত কোটি লোক বিভিন্নভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আক্রান্ত হবে। উপরোক্ত আলোচনা থেকে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের পরিধি এবং গুরুত্ব নিঃসন্দেহে আরো সুস্পষ্ট হয়ে গেছে।
দুঃখের বিষয়, আমরা উপকূলও বুঝি না, উপকূলের গুরুত্বও বুঝি না। তাই আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে এখনো উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব বিরাজ করছে। এছাড়াও, অপরিকল্পিত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বসতবাড়ি নির্মাণের মারাত্মক প্রভাব পড়ছে কৃষিজমির উপর। শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অপর্যাপ্ততার কারণে সঠিক ও যুগোপযোগী শিক্ষার অভাবে উপকূলীয় অঞ্চলের লোকেরা বিরাজমান সমস্যাবলির কাক্সিক্ষত সমাধান করতে সক্ষম হচ্ছে না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অপর্যাপ্ত ব্যবহার ও প্রয়োগের কারণে উন্নত চাষাবাদ কিংবা সুপরিকল্পিত বিজ্ঞানসম্মত বনায়ন-কিছুতেই কাক্সিক্ষত সাফল্য ও অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে না। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে হলে প্রয়োজন যুগ ও বিশ্বের সাথে তাল মেলানো উন্নয়নমুখী গতিশীলতা এবং এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ গতিশীলতার জন্য সরকারের আন্তরিক ও গতিশীল পদক্ষেপ অপরিহার্য।
বাংলাদেশের উপকূলভাগ অনেক ব্যাপক এবং বি¯তৃত। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো এই উপকূলভাগেই অবস্থিত। মাছ, চিংড়ি, লবণ, কৃষি ও বনায়ন, পর্যটন ও বিনোদন এলাকা - সব দিক দিয়ে দেশের জাতীয় আয় ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে এগুলো সর্বোচ্চ সহায়ক। অথচ দেশের সবচেয়ে উপেক্ষিত অঞ্চলও এই উপকূলীয় অঞ্চলসমুহ। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো - প্রভৃতিতে আক্রান্ত হয়ে জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি হওয়া এ অঞ্চলগুলোর নৈমিত্তিক বৈশিষ্ট্য। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এই এলাকাসমুহের উন্নয়ন সাধন ও সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ, সর্বোপরি শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে উপকূলবাসীকে সুপ্রতিষ্ঠিতকরণ সময়ের দাবি।
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল এদেশের উপকূলীয় অঞ্চলসমুহের উপর বয়ে যাওয়া প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের কথা এদেশের মানুষ ভোলেনি, ভুলে যাওয়ার কথাও নয়। এ প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দেশের ১৬টি জেলার ৪৭টি উপজেলা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ৪ লক্ষাধিক মানুষ ও অসংখ্য গবাদি পশু প্রাণ হারায়। এই অসংখ্য মানুষের মৃত্যু এবং অগুন্ত সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি জনম জনম ধরে এদেশের উপকূলবাসীর জন্য এক মর্মন্তুদ ও করুণ ইতিহাস হয়ে থাকবে। অথচ ২৯ এপ্রিল যে শিক্ষা উপকূলবাসীসহ এদেশের মানুষকে দিয়েছে সে শিক্ষা অনুসারে এখনো পর্যন্ত নেয়া হয়নি কোন কার্যকরী পদক্ষেপ। ১৯৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ের পর বয়ে গেল ১৯৯৭ এর ঘূর্ণিঝড়সহ সাম্প্রতিক প্রলয়ংকরী মর্মান্তিক সিডর যার ভিকটিমেরা এখনো বঞ্চিত ও উপেক্ষিত অবস্থায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। উপকূলীয় মানুষদের জন্য ঘূর্ণিঝড়, সিডর ইত্যাদি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত রক্ষণাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অদূর ভবিষ্যতে আরো অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলবাসী সর্বশান্ত হবে। অতীতেও বিভিন্ন সময়ে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস ইত্যাদির আক্রমণে উপকূলীয় অঞ্চলের জান-মাল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৯৫৪, ১৯৬৮, ১৯৭৪, ১৯৮৭, ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যা ছিল নিকট অতীতের ভয়াবহতম। ১৯৭৪ সালের বন্যার কারণে ফসলহানিতে সংঘটিত ভয়ংকর দুর্ভিক্ষ লক্ষ লক্ষ প্রাণ সংহার করেছে। ১৯৮৮ সালের বন্যা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহতম। দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫৩টি এ বন্যায় ডুবে যায়, ৩০০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং ৪৫ লাখ হেক্টর জমির ফসল ধ্বংস হয়। ১৯৯৮ সালের বন্যা ছিল ইতিহাসের দীর্ঘতম। ৩ মাস স্থায়ী এ বন্যায় দেশের ৫৪টি জেলা জলমগ্ন হয়। ২০০৪ সালের বন্যায় দেশের ৫৬টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারি প্রাথমিক হিসাব মোতাবেক এ বন্যায় মোট ৪২ হাজার কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল এ বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার মানুষের নিকট এক মূর্তিমান আতঙ্ক। গত ১৮৫ বছরে অন্তত ৫১ বার ভয়ংকর জলোচ্ছ্বাসের হামলায় পড়েছে বাংলাদেশ। তবে ১৯৬০, ১৯৭০, ১৯৮৫, ১৯৯১ এবং ১৯৯৭ সালের জলোচ্ছ্বাস ছিল বিভীষিকাময়। ১৯৭০ সালের সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস উপকূলীয় বিশাল এলাকাকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছিল এবং এতে ৫ লাখের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। ১৯৮৫ সালের ঘূর্ণিঝড়ে উড়িরচর নামক জনপদ সম্পূর্ণ জনশূন্য হয়ে পড়ে।
এটা সকলেরই নিকট সুবিদিত যে, উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর মাছ, চিংড়ি এবং লবণ এদেশের অর্থনীতির জন্য অতীব অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এদেশের মানুষের জীবন, জীবিকা ও অর্থনীতির সাথে এগুলোর সম্পর্ক নিবিড় ও অবিচ্ছেদ্য। অথচ বেশ অবাক লাগে যখন দেখি এই উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর উন্নয়নের ব্যাপারে সরকারের উদাসীনতা বিদ্যমান। পক্ষান্তরে, পার্বত্য অঞ্চলগুলোর পক্ষ থেকে অনুরূপ কোন অবদান না থাকলেও সরকারি সহযোগিতায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় দিন দিন এগুলো সমৃদ্ধ হতে সমৃদ্ধতর হয়ে যাচ্ছে। আসলে আমরা যে আমাদের প্রকৃত লাভ-ক্ষতি বুঝি না, এটা আমাদের জাতীয় দোষ। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি সবক্ষেত্রেই এটি সন্দেহাতীতভাবে সত্য। এখন সময় এসেছে, অতীতের ব্যর্থতা ভুলে গিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর যথার্থ মানোন্নয়নের মাধ্যমে দেশ ও জাতির কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জন করা। এ অগ্রগতি অর্জনের বিস্তারিত উপায় সম্পর্কে আমাদেরকে অবশ্যই ভাবতে হবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে সরকারি রেস্ট হাউজ নির্মাণপূর্বক যদি সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীকে সেগুলো টেন্ডার দেওয়া হতো, তাহলে একদিকে যেমন উপকূলীয় এলাকার বিকাশের পথ সুগম হতো, অপরদিকে উত্তরোত্তর বিকাশ ও সমৃদ্ধির ফলে জাতীয় আয়ও বৃদ্ধি পেতো। এছাড়াও, উপকূলীয় এলাকাগুলো সরকারের øেহচ্ছায়ায় নিয়ন্ত্রিত হতো বিধায় উপকূলের মানুষ উৎসাহ-উদ্দীপনা লাভের মাধ্যমে সৃষ্টিশীল অভিযাত্রায় পরিকল্পিত উপায়ে এলাকার কাক্সিক্ষত বিকাশ ও মানোন্নয়নে মনোনিবেশ করতো , ফলশ্র“তিতে অতি দ্রুত বদলে যেতো উপকূলীয় মানুষের জীবন। উদাহরণস্বরূপ, মগনামা, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার, আনোয়ারা, বাঁশখালী, মহেশখালী ও হাতিয়ায় সরকারি রেস্ট হাউজ স্থাপিত হলে উক্ত এলাকার অনেক অগ্রগতি অর্জিত হতো, সরকারেরও আয় বাড়তো। উপকূলীয় এলাকাগুলোতে যে সমস্ত খাস জমি পড়ে আছে, সেগুলোকে ভূমিহীন, দরিদ্র ও অসহায় মানুষদেরকে বরাদ্দ দিলে ভালো হয়; এক্ষেত্রে কোন এনজিওর মাধ্যমে এটি কার্যকর না করে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে করলেই ভালো হয়। এছাড়াও, খাসজমিগুলোর বরাদ্দসহ যে কোন সরকারি দান-অনুদান বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের দখলদারিত্ব ঠেকাতে হলে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজনীয় মনে করছি। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, ১৯৯১-এর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের শুমারি এখনো পর্যন্ত হয়নি। ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকেই অদ্যাবধি চরম দুর্দশায় জীবনযাপন করছেন। অবিলম্বে উক্ত শুমারি সম্পন্ন করে তাঁদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করা প্রয়োজন।
উপকূলীয় এলাকাগুলোর বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল সরকার কর্তৃক একটি উপকূলীয় মন্ত্রণালয় এবং একটি উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড গঠিত হওয়া। এদেশে রয়েছে অনেকগুলো উপকূলীয় জেলা এবং দেশের সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস হলো এই উপকূলীয় অঞ্চলগুলো। মাছ, চিংড়ি, লবণ, পর্যটন ও বিনোদন এলাকা - সর্বদিক দিয়ে দেশের জাতীয় আয় ও উৎপাদন অনেকাংশেই এগুলোর উপর নির্ভরশীল। অবাক হই যখন দেখি পার্বত্য এলাকাগুলো থেকে অনুরূপ কোন আয় ও উৎপাদন না পাওয়া সত্ত্বেও সব সময় পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয় যে কোন সরকার কর্তৃক গঠিত হয় অথচ উপকুলের মতো অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে কোন সরকারের আমলেই কোন মন্ত্রণালয় গঠিত হয় না, এমনকি, কোন উপকূলের উন্নয়ন বোর্ডও গঠন করা হয় না। কিন্তু এটা সুস্পষ্ট যে, এ ধরনের মন্ত্রণালয় ও বোর্ড গঠিত হলে জাতীয় আয়, উৎপাদন ও সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতো।
উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে শিক্ষার উন্নয়ন ঘটাতে হবে, বাড়াতে হবে শিক্ষার হার। আরো অনেক স্কুল ও কলেজ স্থাপন করতে হবে। কক্সবাজারে শিক্ষার প্রসারের জন্য এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়। সুন্দরবন, কুয়াকাটা, নিঝুম দ্বীপ ও সেন্ট মার্টিনসহ দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও প্রসারকে ত্বরান্বিত করতে হবে। কক্সবাজার ইনানী বীচকে করতে হবে আরো সমৃদ্ধ ও আকর্ষণীয়। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে, এতে বৈদেশিক আয় অনেক বেশি বাড়বে। ভারত ও মায়ানমার সংশ্লিষ্ট সমুদ্র সীমার বিজয়টিকে কাজে লাগাতে হবে এবং এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন ও আয় বাড়াতে হবে। উপকূলবাসীকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় উৎসাহিত ও পুরস্কৃতকরণমূলক বনায়ন কার্যক্রমটিকে আরো জোরদার করতে হবে যাতে উপকূলীয় অঞ্চলসমূহ সব ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে নিরাপদ থাকতে পারে।
পরিশেষে বলবো, উপকূলীয় অঞ্চল মানেই অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসমুহ। বাংলাদেশের প্রকৃত ও কাক্সিক্ষত উন্নয়ন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলোর উপর নির্ভরশীল। তাই এই এলাকাগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদানপূর্বক সরকার ও জনগণ উভয়কেই আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হতে হবে উপকূলের সকল সমস্যা সমাধানপূর্বক কাক্সিক্ষত মান অর্জনের মাধ্যমে সার্বিক বিকাশ সাধন করতে। এতে করে খুব অল্প সময়েই বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং জাতি উত্তরোত্তর বৃহত্তর সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাবে।
অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ |
অধ্যক্ষ, মেরন সান কলেজ; চেয়ারম্যান, মেরিট বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন;
সভাপতি, সার্ক কালচারাল ফোরাম বাংলাদেশ;
সহসভাপতি, উপকূলীয় উন্নয়ন ফাউন্ডেশন।
No comments