প্যাকেজ ভ্যাট বাতিল হলে আন্দোলনের হুমকি
নতুন ভ্যাট আইনে ১ জুলাই থেকে সব ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, এর ফলে সেবা ছাড়াও পণ্যমূল্য অনেক বেড়ে যাবে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নতুন আইন সংশোধন করে ট্রেড ভ্যাট, সংকুচিত ভিত্তি মূল্য এবং প্যাকেজ ভ্যাট বহাল রাখার দাবি জানিয়ে তারা বলেছেন, অন্যথায় আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন দেশের ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শক কমিটির ৩৭তম সভায় ব্যবসায়ী নেতারা এসব দাবি জানান। এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। যৌথভাবে সভার আয়োজন করে এফবিসিসিআই ও এনবিআর। মুক্ত আলোচনায় ৩০ জন ব্যবসায়ী অংশ নিয়ে আগামী বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করতে বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার কথা জানায়। যার বেশির ভাগ ছিল নতুন ভ্যাট আইন সংক্রান্ত। মুক্ত আলোচনায় এফবিসিসিআই পরিচালক আবু মোতালেব বলেন, ১ জুলাই থেকে সর্বত্র কার্যকর হচ্ছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। এতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্যাকেজ ভ্যাট বাতিল করলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নতুন ভ্যাট আইনকে স্বাগত জানাবে না। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি এবং প্যাকেজ ভ্যাট বাতিল করা হলে প্রয়োজনে মাঠে নেমে আন্দোলন করা হবে। এ সময় টেবিল চাপড়ে উপস্থিত ব্যবসায়ীরা তার বক্তব্যকে সমর্থন জানান। তিনি আরও বলেন, মুখে এনবিআর পার্টনারশিপের কথা বললেও বাস্তবে তা ভিন্ন। এনবিআরের কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের খাতাপত্র জব্দ করছে। মাঠে-ময়দানে বিভিন্ন জায়গায় অহেতুক হয়রানি করছে। বারবার অভিযোগে জানিয়েও ফল পাওয়া যায়নি। অটো রি-রোলিং মিল অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মাসাদুল আলম মাসুদ বলেন, নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে ব্যবসায়ীরা শংকিত। ২০০৩ সাল থেকে স্টিল শিল্প ট্যারিফের আওতায় ছিল। নতুন আইনে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে। এতে রডের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে।
জুয়েলারি সমিতির সভাপতি কাজী সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্বর্ণালংকার বিক্রির ওপর ভ্যাট আরোপ করায় বিক্রি কমেছে। ১০ লাখ টাকা স্বর্ণের ওপর ৫০ হাজার টাকা ভ্যাট দিতে হয়। ভারতে লাগে ১০ হাজার টাকা। তাই ভারত থেকে স্বর্ণালংকার আসছে। এতে টাকা পাচার বাড়ছে। ভ্যাটহার ২ শতাংশ করলে ভ্যাট আদায় বাড়বে ও ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হবে। সংসদ সদস্য গাজী গোলাম দস্তগীর বলেন, ১৯৯১ সালে ভ্যাট চালুর পর দুই অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান ও শাহ এমএস কিবরিয়া বলেছিলেন পরে ভ্যাট কমিয়ে দেয়া হবে। সেটি এখনও হয়নি। ট্রেড ভ্যাট বহাল রাখার দাবি জানান তিনি। বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির মহাসচিব সুব্রত সরকার বলেন, ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ মুনাফা ধরে কম্পিউটার পণ্য আমদানির সময় ৪ শতাংশ অগ্রিম ট্রেড ভ্যাট (এটিভি) দিয়ে হয়। অথচ বর্তমানে কম্পিউটার পণ্য বিক্রি করে এ পরিমাণ লাভ হয় না। এছাড়া খুচরা পর্যায়ে ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে। যা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অন্তরায়। এসব ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি। চট্টগ্রাম ওমেন চেম্বারের পরিচালক রেখা আলম চৌধুরী মহিলা উদ্যোক্তাদের জন্য স্থাপনা ভাড়ার ওপর ৯ শতাংশ ভ্যাট বাতিলের দাবি জানান। ইন্সুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন পাভেল বলেন, অথচ জীবন বীমা পলিসির বোনাসের ওপর ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) কাটা হয়। বিশ্বের কোথাও এ বিধান নেই। গার্মেন্টস শিল্পের পর সবচেয়ে শ্রমঘন খাত বীমা শিল্প। এছাড়া এজেন্ট কমিশনের ওপর এআইটিসহ ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এর আগে এক উপস্থাপনায় ভ্যাট আইন নিয়ে এফবিসিসিআই ও এনবিআরের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত যৌথ কমিটির সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভ্যাটের একাধিক হার রয়েছে। সব সরবরাহের ক্ষেত্রে টার্নওভার ৩৬ লাখ টাকা নির্ধারণ করে উৎপাদন পর্যায়ে ৩ শতাংশ, ব্যবসা পর্যায়ে ২ শতাংশ নির্ধারণের দাবি জানানো হয়েছে। স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, একদিকে জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে অন্যদিকে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে তা ব্যবসায়িক খরচ কমাতে সহায়ক হবে না। গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত ও বিদ্যুৎ ইউনিট প্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেন তিনি। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম ব্যাপক হারে হ্রাস পাওয়ার ফলে পণ্যের মূল্য কমে এসেছে। কিন্তু চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন কাস্টমস হাউস লোড দিয়ে শুল্কায়ন করার ফলে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন। তাই এসআরও ৫৭ অনুযায়ী শুল্কমূল্য নির্ধারণ করে পণ্য খালাসের ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব দেন তিনি। লিখিত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি উৎপাদনশীল খাতে ঋণের সর্বোচ্চ সুদ হার তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের (কস্ট অব ফান্ড) সঙ্গে ৩ শতাংশ যোগ করে সীমাবদ্ধ রাখা, আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে প্রাপ্ত ঋণের সুদ হার ৩ শতাংশ নির্ধারণ ও প্রত্যেক ব্যাংককে এসএমই ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়ার দাবি জানান।
No comments