পাঁচ জেলায় এক ছটাকও ধান সংগ্রহ হয়নি
দেশব্যাপী বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় এক ছটাক ধানও সংগ্রহ করেনি খাদ্য বিভাগ। খাদ্য বিভাগের এক শ্রেণীর কর্মকর্তার উদাসীনতা ও ধান ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্রের সঙ্গে গোপন সমঝোতা করে কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ না করায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ন্যায্যম্যূল্যে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে কৃষককে উৎসাহিত করা ও উৎপাদিত ফসল ক্রয়ের যে সরকারি উদ্যোগ তা ভেস্তে যেতে বসেছে। অভিযোগে জানা গেছে,
মাঠপর্যায়ে কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়ে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের উৎসাহ কম। কারণ এখন সরকারিভাবে ধান ক্রয় মূল্য কেজিপ্রতি ২৩ টাকা। যা ৪০ কেজি মণ দরে দাঁড়ায় ৯২০ টাকা। কিন্তু উত্তরের জেলাগুলোতে ধান ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্র ধানের বাজারদর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। তারা খাদ্য বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন সমঝোতা করে গুদামে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় করতে দিচ্ছে না। ফলে এখন বাজারে ধানের প্রচুর সরবরাহ থাকায় বাজারে ধানের দামও নিুমুখী। প্রতি মণ ধানের দাম এলাকা ভেদে ৩৮০ টাকা থেকে ৫শ’ টাকা পর্যন্ত ওঠা-নামা করছে। সরকারিভাবে ধান ক্রয় না করার ফলে বাজারে ধানের সরবরাহ বেশি থাকায় ধানের দামও মারাত্মকভাবে কমে গেছে। এমতাবস্থায় আমন ধান উৎপাদনের জন্য জমি প্রস্তুত করতে এবং অন্য ফসল উৎপাদনের জন্য এ অঞ্চলের প্রান্তিক চাষী ও ক্ষুদ্র চাষীদের ধান বিক্রি করে আর্থিক জোগান দেয়া ছাড়া উপায় নেই। কারণ এ অঞ্চলের কৃষি পরিবারগুলো কৃষি অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। তারা এক ফসলের আয় থেকে আর একটি ফসল উৎপাদনের খরচ জোগান দেন। তাই এখন কৃষকরা সরাসরি ধান সরকারের কাছে বিক্রি করতে না পারলে তা কম দামে কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করবে ধান ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্র। প্রতি বছরের মতো তারা এবারও কম দামে ধান ক্রয় করে ধানের মজুদ গড়ে তা আবার সরকারের দেয়া উচ্চমূল্যে সরকারি গুদামে সরবরাহ করে থাকে।
ফলে প্রতি বছরের মতো এবারও কৃষকরা সরকারিভাবে ধানের দেয়া দাম থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশংকা করছে। এ জন্য সরকারের এখনি উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। কেন মাঠপর্যায়ে কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হচ্ছে না তার কার্যকরী মনিটরিং করা প্রয়োজন বলে কৃষকরা মনে করেন। এ অবস্থায় খাদ্য বিভাগের রংপুর আঞ্চলিক খাদ্যনিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের ৮ জেলার মধ্যে রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায় ধান ক্রয় অভিযানের ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও এক ছটাক ধান ক্রয় করেনি খাদ্য বিভাগ। ওই পরিসংখ্যানে আরও জানা গেছে, রংপুর জেলায় এবারে ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯৮১৬ টন, পর্যায়ক্রমে একইভাবে লালমনিরহাটে ৮১৭৮, নীলফামারীতে ১২৬৩৮, পঞ্চগড়ে৪৬৪৯ ও ঠাকুরগাঁওয়ে ৮২৪৮ টন। এসব জেলায় এই সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এক ছটাক ধান ক্রয় করা হয়নি। কৃষি বিভাগের সূত্র মতে, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবার ১৬ লাখ হেক্টরের ওপর বোরোর আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৪ টন করে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সেই হিসাবে এবার ৬৪ লাখ টন ধান উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ মেজবাহুল ইসলাম জানান, রোববার পর্যন্ত ৯০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। বাদবাকি ধান কাটতে আরও সপ্তাহ দুয়েক লাগবে। খাদ্য বিভাগের রংপুর সহকারী আঞ্চলিক খাদ্যনিয়ন্ত্রক আনিসুর রহমান যুগান্তরকে জানান, তাদের তিন জেলায় এ পর্যন্ত ৩৭ টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। রংপুর বিভাগের বাকি ৫ জেলায় এ পর্যন্ত ধান ক্রয় করা যায়নি।
কেন সম্ভব হয়নি তা তিনি নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি। তবে তিনি জানিয়েন, ধান সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয়ের জন্য তারা মাঠপর্যায়ে তদারকি করছেন। কেন কোনো উপজেলায় খাদ্য কর্মকর্তারা ধান সংগ্রহ করতে পারেনি তাও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। বগুড়ায় কেনা হচ্ছে ধান : বগুড়ায় সোমবার সরকারিভাবে কৃষকের কাছে ২৩ টাকা কেজি দরে বোরো ধান কেনা শুরু হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন সোমবার শহরের চকসূত্রাপুরে সদর খাদ্য গুদামে এ ক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্র জানায়, বগুড়ার ২৩টি লোকাল সাপ্লাই ডিপো (এলএসডি) বা স্থানীয় খাদ্য সরবরাহ কেন্দ্র এবং একটি সেন্ট্রাল স্টোরেজ ডিপো (সিএসডি) বা কেন্দ্র খাদ্য সংরক্ষণাগারে মোট ৪০ হাজার ৬১৪ টন ধান কেনা হবে। ন্যায্যমূল্য দাবিতে বিক্ষোভ ঢাবিতে : কৃষকের ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে জোটের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি কলা ভবন, ডাকসু হয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে গিয়ে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। জোটের কেন্দ্রীয় নেতা আহনাফ আতিকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদসহ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্রঐক্যের নেতারা। সমাবেশে বক্তারা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নির্ধারণ এবং কৃষিতে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন রুখে দেয়ার আহ্বান জানান। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে কৃষি ব্যবস্থার কারণেই। অথচ সেই কৃষকদের ধানের ন্যায্যমূল্য দেয়া হচ্ছে না। তাদের জীবন আজ হুমকির সম্মুখীন। তারা ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারণে পরিবারের জন্য আয় করতে পারে না। কৃষকদের জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি বাড়নোর দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, বর্তমানে শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি পাঁচ হাজার তিনশ’ টাকা। বাংলাদেশে বসবাসের জন্য এটা কোনো শ্রমিকের ন্যায্যমূল্য হতে পারে না। এটি বাড়াতে হবে।
No comments