ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে ১০ কোটি মানুষ
বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সংখ্যা বাড়লেও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কম। এখন ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১৩ কোটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। তবে মোবাইল ফোন ব্যবহারে অন্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও ইন্টারনেট ব্যবহারে অনেক পিছিয়ে। দেশে এখনও ১০ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারের বাইরে রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ‘ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০১৬ : ডিজিটাল ডিভিডেন্ট’ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। সোমবার রাজধানীর গুলশানের হোটেল আমারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। এসময় ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফান ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক এসএম আশরাফ“ল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত প্রতিবেদনের কো-ডিরেক্টর দিপক মিশরা। পরবর্তীতে প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, তথ্য প্রযুক্তি খাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন শিগগিরই মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। তিনি জানান, বাংলাদেশে এখন রফতানিতে প্রথম অবস্থানে আছে পোশাক খাত। ধীরে ধীরে প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার রফতানিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রযুক্তি রফতানির আশা করছে সরকার। প্রযুক্তিতে গত ছয় বছরে সরকারের নেয়া বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, আমরা সাত হাজার ইন্টারনেট বেজই চাকরিজীবী তৈরি করেছি। মানবসম্পদ উন্নয়নে ২৫ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে এখন ৬৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী তরুণ। বাংলাদেশে এখন জনসংখ্যার বোনাসকাল চলছে। বিশ্বের যে কোনো দেশ এ সুযোগ একবারই পায়। সত্তরের দশকে দক্ষিণ কোরিয়া ও নাইজেরিয়া একসঙ্গে এ সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু চার দশক পর এখন দেখা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়া তাদের জনসংখ্যার বোনাসকালকে কাজে লাগাতে পেরেছে।
কিন্তু নাইজেরিয়া সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। তবে নাইজেরিয়ার মতো ভুল বাংলাদেশ করবে না। এ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে বর্তমান সরকার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। এরমধ্যে সরকার গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্ক তৈরি করছে। সারা দেশে ৫ হাজার ইউনিয়ন পরিষদে তথ্য সেবা নিশ্চিত করেছে। আইসিটি খাতে সব বাধা দূর করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় তথ্য প্রযুক্তি খাত উন্নয়নের উদ্যোগ শুরু হয়েছে। মন্ত্রী জানান, সরকার এখন উচ্চগতির ইন্টারনেটের দিকে নজর দিচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বে কম ইন্টারনেট ব্যবহার করা দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত দেশের মধ্যে সবার উপরে রয়েছে ভারতের নাম। সেখানে এখনও ১০০ কোটি মানুষ ইন্টারনেট সেবার বাইরে। এরপর যথাক্রমে রয়েছে চীন (৭৫ কোটি), ইন্দোনেশিয়া (২১ কোটি) এবং পাকিস্তান (১৬ কোটি)। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের সংখ্যা কম হলেও এখানে মোবাইল ফোনে খরচের হার অনেক কম। প্রতি মাসে মোবাইল ফোনে কম টাকা খরচ করা দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। এখানে প্রতি মাসে মোবাইল ফোনে গড় খরচ হয় ১ ডলারের মতো। প্রথম অবস্থানে আছে শ্রীলংকা। এখানে খরচ হয় গড়ে প্রায় হাফ ডলার। এছাড়া মোবাইল ফোনে কম টাকা খরচের মধ্যে অন্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে ইরান, নেপাল,
ভুটান, উজবেকিস্তান ও ভারত। সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ হয় ব্রাজিলে, প্রায় ৫০ ডলার। এছাড়া ডিজিটাল প্রযুক্তির বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে উচ্চ শুল্কের বিষয়টি উঠে এসেছে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, মোবাইল ফোন আমদানিতে সবচেয়ে বেশি শুল্ক দিতে হয়, এমন ১৫টি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। এ তালিকার শীর্ষে আছে ফিজি। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, বিশ্বে এখন ৭৪০ কোটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে ৭০০ কোটি। ইন্টারনেট সুবিধার আওতায় আছে ৩২০ কোটি। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধার আওতায় আছে ১০০ কোটি মানুষ। বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, আমাদের অবশ্যই প্রত্যেক মানুষকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। ডিজিটাল লভ্যাংশ সবার মাঝে সমানভাবে ভাগ করে দিতে হবে। বাংলাদেশের কম্পিউটার কাউন্সিল প্রযুক্তি সংক্রান্ত শিল্প গড়ে তুলতে কাজ করছে। বিশ্বব্যাংক ইতিমধ্যে অনলাইন কেনাকাটা বাস্তবায়নে সহায়তা দিয়ে আসছে। সেইসঙ্গে বেসরকারি খাতেও সহায়তা দিচ্ছে। তিনি বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তার মতো সেবাগুলোতে প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়াতে হবে।
No comments