কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংস্কারসহ ১০ প্রস্তাব
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে বড় ধরনের সংস্কার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর অডিট পরিচালনাসহ ১০ দফা সুপারিশ করেছেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদকরা। রোববার অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নানের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এই সুপারিশ করেছেন। অন্য সুপারিশগুলো হচ্ছে- প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিনিয়োগ বাড়ানো, দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ, নিউজ প্রিন্ট শিল্পের আমদানিকৃত কাগজের ওপর ভ্যাট ও ডিউট প্রত্যাহার, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না দেয়া, টিভির জন্য পৃথক বিজ্ঞাপন নীতিমালা ও মেইন স্ট্রিমের জাতীয় দৈনিক শনাক্ত করতে কমিটি গঠন। বৈঠকে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো নিয়ে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। এ ব্যাংকগুলো সংস্কার করা হবে। তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এটি তাদের মতো করে গড়ে উঠুক। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রাক-বাজেট আলোচনায় প্রারম্ভিক বক্তব্যে বলেন, আগামী বাজেটের আকার হবে ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা।
ঘাটতি ৫ শতাংশ রেখেই প্রণয়ন করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে আগামী বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। ওই আলোচনায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান, পরিকল্পনা কমিশনের সবিচ মেজবা উদ্দিন ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। প্রাক-বাজেট আলোচনায় দৈনিক ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকার সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে না পারলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে না। ইতিমধ্যে সরকারি বিনিয়োগ কমেছে। বেসরকারি বিনিয়োগও আশানুরূপ হচ্ছে না। বিনিয়োগ বাড়াতে নীতিগুলোর সমন্বয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সহায়তা দরকার। একই সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মতে দেশী বিনিয়োগকারীদের সুবিধা দিতে হবে। প্রকল্প ব্যয় বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেল পথের ব্যয় এক হাজার কোটি থেকে বেড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। সরকারের মনিটরিং অবস্থা ভালো হলে এমন অবস্থা হতো না। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন জরুরি। করের টাকা দিয়ে ব্যাংকের তহবিল পুনর্গঠন করা হচ্ছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর অবস্থা ভালো নয়। তিনি শেয়ার বাজারে প্রণোদনা, মনিটরিং সেল শক্তিশালী করার সুপারিশ করেন। এদিকে বৈঠকে আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম বলেন, সংবাদপত্রে রাষ্ট্রের সহায়তা দরকার। তিনি আরও বলেন, বিজ্ঞাপন নিয়ে লুটতরাজ ও বিল নিয়ে আটকে দেয়া বন্ধ করতে হবে। এক শ্রেণীর পত্রিকা বিজ্ঞাপনের টাকা লুণ্ঠন করছে। ঘুষ দিয়ে বিজ্ঞাপন বিল তুলে নিচ্ছে।
এ জন্য মেইন স্ট্রিমের পত্রিকা শনাক্ত করতে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। নিউজ টুডে পত্রিকার সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, দুর্নীতি কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দুদক ধরছে চুনোপুঠি। কিন্তু রুই-কাতলা ধরছে না। তিনি আরও বলেন, সোনালী ও বেসিক ব্যাংক থেকে ৯ হাজার কোটি টাকা বেরিয়ে গেছে। তা উদ্ধার করতে হবে। রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধারে ফিলিপাইনের তৎপরতা থাকলেও বাংলাদেশে তা দেখা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আরও তৎপর হতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অবস্থা খারাপ। খেলাপির অর্থ আদায় না হওয়ায় ঘাটতি মূলধন পরিশোধ হচ্ছে করের টাকায়। এটি অর্থনীতির জন্য খারাপ দিক। প্রাক-বাজেট আলোচনায় দৈনিক সমকাল ও টিভি চ্যানেল নিউজ টুয়েন্টি ফোর-এর স্বত্বাধিকারী একে আজাদ বলেন, নিউজ প্রিন্ট আমদানিতে ভ্যাট ও ট্যাক্স মিলে ২১ শতাংশ পরিশোধ করতে হচ্ছে। বিষয়টি ভালোভাবে দেখা দরকার। কারণ দেশে গুণগত মানের কোনো কাগজ নেই নিউজ প্রিন্ট শিল্পে ব্যবহারের জন্য। তিনি আরও বলেন, শিল্প না হলে রাজস্ব আদায় হবে না। গত বছর মূলধনী যন্ত্রাংশ আমদানি প্রবৃদ্ধি ১৯ শতাংশ হলেও এ বছর হচ্ছে ১৫ শতাংশ। বিনিয়োগ না থাকায় মূলধনী যন্ত্রাংশ আমদানি কমছে। তিনি বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংক সুবিধা দিতে হবে। কিন্তু বেসিক ব্যাংকের ৬ হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। এ জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে সংস্কার করতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত লোকসানি প্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার সুপারিশ করেন তিনি।
এছাড়া কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না দেয়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর অডিট পরিচালনা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকও সংস্কার করতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ আনা দরকার। বৈঠকে এটিএন বাংলার উপদেষ্টা মীর মোতাহার হোসেন বলেন, টিভি মিডিয়ার জন্য বিজ্ঞাপন নীতিমালা দরকার। না হলে গুটি কয়েক মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন চলে গেলে অন্য মিডিয়াগুলো হুমকির মধ্যে পড়বে। প্রত্যেক মিডিয়াতে অনেক কর্মী কাজ করছে। এছাড়া আরটিভির সিইউ সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, নতুন বাজেটে অবকাঠামো খাতে জোর দিতে হবে। না হলে বিনিয়োগ আসবে না। তিনি আরও বলেন, দেশের অনেক বিজ্ঞাপন বিদেশী টিভিতে প্রচার হচ্ছে। বিজ্ঞাপনের এই অর্থ সঠিক ভাবে দেশের বাইরে যাচ্ছে কিনা তা বের করা দরকার। দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম বলেন, পত্রিকার জন্য নিউজ প্রিন্ট আমদানিতে ৫ শতাংশ কাস্টম ডিউটি ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। আগামী বাজেটে কাস্টম ডিউটি কমিয়ে শূন্য শতাংশ করতে হবে। নিউজ প্রিন্ট আমদানিতে ভ্যাট দেয়া হলে পত্রিকা বিক্রির পর তা সমন্বয় করা হয় না। নিউজ প্রিন্ট শিল্পের জন্য ভালো নয়।
No comments