ব্যতিক্রমী স্বীকারোক্তিতে সম্পাদকের বিরুদ্ধে ৭৯ মামলা by মেহের সাত্তার
হিসাবটা
শুধু বাংলাদেশে ইংরেজি ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ
আনামের জন্য একটি হতবিহ্বল অভিজ্ঞতা। ফেব্রুয়ারি থেকে তার বিরুদ্ধে মামলা
হয়েছে ৭৯টি। এর মধ্যে ৬২টি মানহানি ও ১৭টি রাষ্ট্রদ্রোহের। যদি সব মামলায়
তিনি অভিযুক্ত হন তাহলে ১৭৫ বছর পর্যন্ত তার জেল হতে পারে। এরই মধ্যে তাকে
দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫০টিতে শুনানির জন্য বাধ্যবাধকতার অংশ হিসেবে ছুটে
বেড়াতে হচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের কাছে এসব মামলাকে
একীভূত করার আবেদন জানিয়ে যাচ্ছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, যেমনটা তিনি এক
সাক্ষাৎকারে বলেছেন, একই দিনে একাধিক স্থানে আমাকে সশরীরে হাজির হতে হচ্ছে।
সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, এসব মামলার নেপথ্যে তারা নেই। তবে বেশির ভাগ মামলাই করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। কমপক্ষে একটি মামলা করেছেন একজন পাবলিক প্রসিকিউটর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অসমর্থিত অভিযোগ নিজের পত্রিকা, দ্য ডেইলি স্টারে কয়েক বছর আগে তিনি প্রকাশ করার কারণে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। তার এ স্বীকারোক্তি ছিল ব্যতিক্রমী। এর পর থেকেই তার বিরুদ্ধে এসব মামলা করা হয়েছে।
২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। এ নির্বাচনে কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। তারপর থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা। ওই জাতীয় নির্বাচন বিএনপি ও এর নেতাকর্মীদের প্রান্তিক পর্যায়ের দিকে নিয়ে গিয়েছে। গত বছর সহিংস প্রতিবাদের ফলে শতাধিক মানুষ মারা যাওয়া সত্ত্বেও তারা টিকে আছেন।
রাজনৈতিক বিরোধিতা ক্ষীণ হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের সমালোচনামূলক রিপোর্ট প্রকাশ ক্রমাগত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দ্য ডেইলি স্টারের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশে বাংলা ভাষার দ্বিতীয় জনপ্রিয় পত্রিকা প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ২৫টি মানহানির মামলা চলমান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, এসব মামলা বাংলাদেশের সুশীল সমাজকে আরও দুর্বল করে দেবে। মামলাগুলো শুধু মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধেই কঠোর সংকেত নয়। একই সঙ্গে তা সকল মিডিয়ার জন্যও। যে সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে, যদি আপনি তা অতিক্রম করেন তাহলে আপনার বিরুদ্ধেও রাষ্ট্রদ্রোহের বিচার হতে পারে।
এ দুটি পত্রিকার বিরুদ্ধে চাপ আগে থেকেই বাড়ানো হয়েছে। গত আগস্টে পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা ৫ জনকে হত্যা করে বলে রিপোর্ট প্রকাশ করে প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার। তারপর থেকেই এ দুটি পত্রিকায় বড় বড় বেসরকারি বিজ্ঞাপনী সংস্থার বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করা হয়। এর ফলে বিজ্ঞাপন থেকে যে রাজস্ব আসে দ্রুততার সঙ্গে তার পতন ঘটে। একজন নির্বাহী বলেছেন, সরকার থেকে বিজ্ঞাপনদাতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। নাইজেরিয়ান কোম্পানি টেলিনর গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট টর ওডল্যান্ড ওই সময় এক বিবৃতিতে বলেন, টেলিনরের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ বিষয়ক কোম্পানি গ্রামীণফোন অন্য বৃহৎ করপোরেশনের পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে একটি নির্দেশনা পেয়েছে। তাতে বাংলাদেশের এ দুটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে বলা হয়েছে। তবে এমন নির্দেশনার কথা অস্বীকার করেছেন বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা। তারপর থেকেই দ্য ডেইলি স্টারে একবারের জন্য মাঝে মাঝে বিজ্ঞাপন দিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণফোন।
গত মাসে যখন দ্য ডেইলি স্টার তার ২৫তম বার্ষিকী পালন করে তখনই উত্তেজনা ফিরে আসে। একটি টেলিভিশনের টক শোতে প্রশ্নের জবাবে ২০০৭ সালের একটি সিদ্ধান্তের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। ওই সময়ে বাংলাদেশে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায়। মাহফুজ আনাম স্বীকার করেন, সামরিক গোয়েন্দা বিষয়ক কর্মকর্তাদের দেয়া অভিযোগ তিনি যাচাই না করেই প্রকাশ করেছিলেন। এসব দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতেই বর্তমানের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তখন গ্রেপ্তার করে ১১ মাস আটকে রাখা হয়েছিল। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকেই আটক করা হয়েছিল।
মাহফুজ আনামের এই স্বীকারোক্তির পর পরই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখান শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি ওই পোস্টে মাহফুজ আনামের জেল দাবি করেন এবং রাষ্ট্রদ্রোহের বিচার করার আহ্বান জানান।
তার ওই পোস্ট দেয়ার পর পরই শুরু হয় মানহানি মামলা। কখনও কখনও এক দিনে এ মামলার হার ৫ বা তারও বেশি হয়ে যায়। বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, এসব মামলা করার পেছনে সরকার নেই। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে এসব সরকার করছে না। মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে জনগণ। তিনি আরও বলেন, মামলা হওয়ার পর থেকে সরকারের সমালোচনামূলক লেখা প্রকাশ অব্যাহত রেখেছে দ্য ডেইলি স্টার। তাতে সরকারের কোন সমস্যা নেই। এখানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মাহফুজ আনামের বিচার চাওয়ার অধিকার আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দাবি, মাহফুজ আনাম তার পত্রিকা থেকে পদত্যাগ করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড়ান। এক সরকারি আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যেমন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি সেরকমই বিচার হবে এসব সম্পাদকের।
নিজের বিরুদ্ধে এসব মামলায় নিজেই স্তম্ভিত মাহফুজ আনাম। তিনি বলেন, ২০০৭ সালে যেসব সংবাদ ছাপা হয়েছিল সেগুলো ছিল ‘জাতীয় সংবাদ। তা সবাই প্রকাশ করেছিল’। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এখনও পুলিশ বা অন্য কোন সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে লড়াইয়ে বেসামরিক মানুষ মারা যাওয়ার বিষয়ে তারা যেসব তথ্য দেয় তা প্রকাশ করতে সাংবাদিকদের ওপর চাপ রয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের যেসব তথ্য দেয়া হচ্ছে তা কতটুকু বাস্তবনির্ভর তা যাচাই করতে আমাদের কি কোন সুযোগ আছে? আমাদের তা নেই।
মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে প্রথম রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ওই পত্রিকা যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তা ‘ওই পরিবার’কে নির্মূল করে দেয়ার উদ্দেশে করা হয়েছে। মিথ্যা তথ্য ছেপে এ দেশকে নষ্টচক্রের অধীনে ঠেলে দেয়ার প্রয়াস সেটা।
তার কাছে উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতির রিপোর্টিং সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি দু’হাত উঁচু করলেন। করতল দেখালেন। এর অর্থ যেন এটাই যে, এমন রিপোর্ট করার কোন দরকার নেই। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতা, বাংলাদেশের প্রথম নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে দরদী একটি ডাকনামে ডাকেন। বলেন, আপনি কি বলতে চাইছেন যে, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কেউ আইন বহির্ভূত কিছু করেছেন? তার পরিবার কখনও তেমন কিছু করতে পারেন না। তেমন পরিবার হতে পারে না বঙ্গবন্ধুর পরিবার।
(নয়া দিল্লি থেকে যৌথভাবে রিপোর্ট করেছেন ইলেন বেরি।)
(যুক্তরাষ্ট্রের দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ)
সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, এসব মামলার নেপথ্যে তারা নেই। তবে বেশির ভাগ মামলাই করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। কমপক্ষে একটি মামলা করেছেন একজন পাবলিক প্রসিকিউটর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অসমর্থিত অভিযোগ নিজের পত্রিকা, দ্য ডেইলি স্টারে কয়েক বছর আগে তিনি প্রকাশ করার কারণে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। তার এ স্বীকারোক্তি ছিল ব্যতিক্রমী। এর পর থেকেই তার বিরুদ্ধে এসব মামলা করা হয়েছে।
২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। এ নির্বাচনে কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। তারপর থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা। ওই জাতীয় নির্বাচন বিএনপি ও এর নেতাকর্মীদের প্রান্তিক পর্যায়ের দিকে নিয়ে গিয়েছে। গত বছর সহিংস প্রতিবাদের ফলে শতাধিক মানুষ মারা যাওয়া সত্ত্বেও তারা টিকে আছেন।
রাজনৈতিক বিরোধিতা ক্ষীণ হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের সমালোচনামূলক রিপোর্ট প্রকাশ ক্রমাগত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দ্য ডেইলি স্টারের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশে বাংলা ভাষার দ্বিতীয় জনপ্রিয় পত্রিকা প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ২৫টি মানহানির মামলা চলমান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, এসব মামলা বাংলাদেশের সুশীল সমাজকে আরও দুর্বল করে দেবে। মামলাগুলো শুধু মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধেই কঠোর সংকেত নয়। একই সঙ্গে তা সকল মিডিয়ার জন্যও। যে সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে, যদি আপনি তা অতিক্রম করেন তাহলে আপনার বিরুদ্ধেও রাষ্ট্রদ্রোহের বিচার হতে পারে।
এ দুটি পত্রিকার বিরুদ্ধে চাপ আগে থেকেই বাড়ানো হয়েছে। গত আগস্টে পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা ৫ জনকে হত্যা করে বলে রিপোর্ট প্রকাশ করে প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার। তারপর থেকেই এ দুটি পত্রিকায় বড় বড় বেসরকারি বিজ্ঞাপনী সংস্থার বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করা হয়। এর ফলে বিজ্ঞাপন থেকে যে রাজস্ব আসে দ্রুততার সঙ্গে তার পতন ঘটে। একজন নির্বাহী বলেছেন, সরকার থেকে বিজ্ঞাপনদাতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। নাইজেরিয়ান কোম্পানি টেলিনর গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট টর ওডল্যান্ড ওই সময় এক বিবৃতিতে বলেন, টেলিনরের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ বিষয়ক কোম্পানি গ্রামীণফোন অন্য বৃহৎ করপোরেশনের পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে একটি নির্দেশনা পেয়েছে। তাতে বাংলাদেশের এ দুটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে বলা হয়েছে। তবে এমন নির্দেশনার কথা অস্বীকার করেছেন বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা। তারপর থেকেই দ্য ডেইলি স্টারে একবারের জন্য মাঝে মাঝে বিজ্ঞাপন দিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণফোন।
গত মাসে যখন দ্য ডেইলি স্টার তার ২৫তম বার্ষিকী পালন করে তখনই উত্তেজনা ফিরে আসে। একটি টেলিভিশনের টক শোতে প্রশ্নের জবাবে ২০০৭ সালের একটি সিদ্ধান্তের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। ওই সময়ে বাংলাদেশে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায়। মাহফুজ আনাম স্বীকার করেন, সামরিক গোয়েন্দা বিষয়ক কর্মকর্তাদের দেয়া অভিযোগ তিনি যাচাই না করেই প্রকাশ করেছিলেন। এসব দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতেই বর্তমানের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তখন গ্রেপ্তার করে ১১ মাস আটকে রাখা হয়েছিল। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকেই আটক করা হয়েছিল।
মাহফুজ আনামের এই স্বীকারোক্তির পর পরই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখান শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি ওই পোস্টে মাহফুজ আনামের জেল দাবি করেন এবং রাষ্ট্রদ্রোহের বিচার করার আহ্বান জানান।
তার ওই পোস্ট দেয়ার পর পরই শুরু হয় মানহানি মামলা। কখনও কখনও এক দিনে এ মামলার হার ৫ বা তারও বেশি হয়ে যায়। বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, এসব মামলা করার পেছনে সরকার নেই। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে এসব সরকার করছে না। মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে জনগণ। তিনি আরও বলেন, মামলা হওয়ার পর থেকে সরকারের সমালোচনামূলক লেখা প্রকাশ অব্যাহত রেখেছে দ্য ডেইলি স্টার। তাতে সরকারের কোন সমস্যা নেই। এখানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মাহফুজ আনামের বিচার চাওয়ার অধিকার আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দাবি, মাহফুজ আনাম তার পত্রিকা থেকে পদত্যাগ করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড়ান। এক সরকারি আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যেমন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি সেরকমই বিচার হবে এসব সম্পাদকের।
নিজের বিরুদ্ধে এসব মামলায় নিজেই স্তম্ভিত মাহফুজ আনাম। তিনি বলেন, ২০০৭ সালে যেসব সংবাদ ছাপা হয়েছিল সেগুলো ছিল ‘জাতীয় সংবাদ। তা সবাই প্রকাশ করেছিল’। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এখনও পুলিশ বা অন্য কোন সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে লড়াইয়ে বেসামরিক মানুষ মারা যাওয়ার বিষয়ে তারা যেসব তথ্য দেয় তা প্রকাশ করতে সাংবাদিকদের ওপর চাপ রয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের যেসব তথ্য দেয়া হচ্ছে তা কতটুকু বাস্তবনির্ভর তা যাচাই করতে আমাদের কি কোন সুযোগ আছে? আমাদের তা নেই।
মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে প্রথম রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ওই পত্রিকা যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তা ‘ওই পরিবার’কে নির্মূল করে দেয়ার উদ্দেশে করা হয়েছে। মিথ্যা তথ্য ছেপে এ দেশকে নষ্টচক্রের অধীনে ঠেলে দেয়ার প্রয়াস সেটা।
তার কাছে উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতির রিপোর্টিং সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি দু’হাত উঁচু করলেন। করতল দেখালেন। এর অর্থ যেন এটাই যে, এমন রিপোর্ট করার কোন দরকার নেই। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতা, বাংলাদেশের প্রথম নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে দরদী একটি ডাকনামে ডাকেন। বলেন, আপনি কি বলতে চাইছেন যে, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কেউ আইন বহির্ভূত কিছু করেছেন? তার পরিবার কখনও তেমন কিছু করতে পারেন না। তেমন পরিবার হতে পারে না বঙ্গবন্ধুর পরিবার।
(নয়া দিল্লি থেকে যৌথভাবে রিপোর্ট করেছেন ইলেন বেরি।)
(যুক্তরাষ্ট্রের দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ)
No comments