‘ব্রিগেডিয়ার আমীন জানিয়েছিলেন, জামায়াত নিবন্ধন ও নির্বাচন দুটোই করবে’
আমি
জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান জানার চেষ্টা করলাম। তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার আমীনের
সাথে আমার অনানুষ্ঠানিক আলাপচারিতায় জেনেছিলাম যে, জামায়াতে ইসলামী
নিবন্ধন এবং নির্বাচন দুটোই করবে। আইনের প্রণয়নে প্রয়োজনে গঠনতন্ত্রও
পরিবর্তন করবে। তাদেরকে নির্বাচন কমিশনের আইন মেনে চলতেই পরামর্শ দেয়া
হয়েছিল। এসব রাজনৈতিক দলের ওপরে গোয়েন্দা সংস্থার রাজনৈতিক শাখার কতখানি
প্রভাব রয়েছে তা আমার অল্পবিস্তর জানা ছিল।
সাবেক নির্বাচন কমিশনের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন তার ‘নির্বাচন কমিশনে পাঁচ বছর’ শীর্ষক বইয়ে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার প্রেক্ষাপটে এসব কথা লিখেছেন। তিনি আরও লিখেছেন, সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বেশ সময় হাতে থাকতেই জামায়াতে ইসলামির আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী মিডিয়াকে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধিত হবার কথা জানালেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তাদের কেন্দ্রীয় শূরার মাধ্যমে হবে তাও জানালেন। প্রয়োজনে গঠনতন্ত্রে পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন।
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের কোন একদিন সকালে জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম নীতিনির্ধারক ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আমার সঙ্গে কথা বলে RPO-1972 (amended) একটি কপি নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি আমাকে জামায়াতে ইসলামীর সিদ্ধান্ত জানালেন। আলোচনার এক ফাঁকে ইসলামী দলের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন যে, ইউরোপেও ধর্মীয় নামে দল রয়েছে। আমি উত্তরে বলেছিলাম, বিশ্বের প্রায় ত্রিশটির ওপরে দেশে ‘ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি’ নামে দল রয়েছে কিন্তু আমার জানা মতে ওই দলগুলো এখন সবার জন্য উন্মুক্ত। কাজেই নামে সামান্য সমস্যা থাকলেও গঠনতন্ত্রে সমস্যা রয়েছে। আমরা সেখানে পরিবর্তন চাই।’ অনেকে ওই দলের প্রতীক দাড়িপাল্লা রদ করার কথাও আমাদেরকে জানিয়েয়েছিলেন। তাদের মন্তব্য ছিল যেহেতু ওই প্রতীক আদালত ব্যবহার করে সে কারণে রহিত করা হোক। আমরা তাদেরকে আদালতের আদেশ আনতে অনুরোধ করেছিলাম। এ বিষয়ে মামলাও হয়েছিল কিন্তু আদালতের কোন নির্দিষ্ট আদেশ পাওয়া যায়নি। জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে তৎপরতাতে আমার মনে হতো- ১৯৭১ সালে এই দলের হানাদার সম্পৃক্ততার এত প্রমাণ থাকা সত্বেও- যা ওই সময়ে বহু আলেঅচিত ছিল ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় কেন দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেনি? যুদ্ধ অপরাধীর বিচার যখন হবে তখন কি এই দলকে নিষিদ্ধ করা হবে? কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের নেই। দল নিষিদ্ধ করার এখতিয়ার সরকারের। ওই সময়কার প্রেক্ষিতে যে কোন দলের গঠনতন্ত্রে তেমন অসঙ্গতি থাকলে নিবন্ধন না দেবার যৌক্তিকতা থাকত। নিবন্ধন না দেবার মানে নিষিদ্ধকরণ নয়। দল নিবন্ধিত না হয়েও রাজনীতি করতে পারে। এ বির্তক সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পরেও উঠেছিল। খোদ আইন বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ কয়েকবার বলেছিলেন যে, দল নিষিদ্ধকরণের এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের। তার এ বক্তেব্যের জবাবে আমরা তাকে আইনের সূত্র দিতে বলেছি। তিনি এ নিয়ে পরে আর উচ্চবাচ্য করেননি। যাই হোক, আমার সাথে আলাপ করার পরের দিন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সুস্পষ্টভাবে মিডিয়াতে বক্তব্য দিয়ে বলেন যে, জামায়াতে ইসলামী তাদের গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আনবে। গঠনতন্ত্রে RPO মোতাবেক মহিলাদের অন্তুভূক্ত এবং অমুসলিম নাগরিকদের জন্য দলকে উন্মুক্ত করে মৌলিক পরিবর্তন আনা হবে। ইতোপূর্বে দলের গঠনতন্ত্রে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত ছিল যে, দলের সদস্য হতে হলে একজনকে মুসলমান হতে হবে। একই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর নামে পরিবর্তন আনবার ইঙ্গিত দিয়েছিলে।
জামায়াতে ইসলামীর এ পরিবর্তন আমাদের নিকট বেশ বড় অর্জন মনে হয়েছিল। জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছিল ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ । গঠনতন্ত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিলো। আমরা একাধীকবার তাদের গঠনতন্ত্রের বিভিন্ন দিক পরিবর্তন করতে বলেছিলাম। যথেষ্ট মৌলিক পরিবর্তন করেছিল যদিও চুলচেরা বিশ্লেষণে আরও কিছু করার জন্য বাধ্য করা যেত, তবে ঐ ধরনের অসামঞ্জস্য প্রায় দলের গঠনতন্ত্রেই রয়েছে। আমি মনে করি, ভবিষ্যতে এসব অসামঞ্জস্যতার বিষয়গুলো নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন দলের নজরে আনবে। জামায়াতে ইসলামীর পথ ধরে অন্যান্য, তথাকথিত, ইসলামী দলগুলোর দলগুলোর গঠনতন্ত্রে যথেষ্ট পরিবর্তন এনেছিল।
সাবেক নির্বাচন কমিশনের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন তার ‘নির্বাচন কমিশনে পাঁচ বছর’ শীর্ষক বইয়ে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার প্রেক্ষাপটে এসব কথা লিখেছেন। তিনি আরও লিখেছেন, সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বেশ সময় হাতে থাকতেই জামায়াতে ইসলামির আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী মিডিয়াকে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধিত হবার কথা জানালেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তাদের কেন্দ্রীয় শূরার মাধ্যমে হবে তাও জানালেন। প্রয়োজনে গঠনতন্ত্রে পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন।
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের কোন একদিন সকালে জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম নীতিনির্ধারক ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আমার সঙ্গে কথা বলে RPO-1972 (amended) একটি কপি নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি আমাকে জামায়াতে ইসলামীর সিদ্ধান্ত জানালেন। আলোচনার এক ফাঁকে ইসলামী দলের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন যে, ইউরোপেও ধর্মীয় নামে দল রয়েছে। আমি উত্তরে বলেছিলাম, বিশ্বের প্রায় ত্রিশটির ওপরে দেশে ‘ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি’ নামে দল রয়েছে কিন্তু আমার জানা মতে ওই দলগুলো এখন সবার জন্য উন্মুক্ত। কাজেই নামে সামান্য সমস্যা থাকলেও গঠনতন্ত্রে সমস্যা রয়েছে। আমরা সেখানে পরিবর্তন চাই।’ অনেকে ওই দলের প্রতীক দাড়িপাল্লা রদ করার কথাও আমাদেরকে জানিয়েয়েছিলেন। তাদের মন্তব্য ছিল যেহেতু ওই প্রতীক আদালত ব্যবহার করে সে কারণে রহিত করা হোক। আমরা তাদেরকে আদালতের আদেশ আনতে অনুরোধ করেছিলাম। এ বিষয়ে মামলাও হয়েছিল কিন্তু আদালতের কোন নির্দিষ্ট আদেশ পাওয়া যায়নি। জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে তৎপরতাতে আমার মনে হতো- ১৯৭১ সালে এই দলের হানাদার সম্পৃক্ততার এত প্রমাণ থাকা সত্বেও- যা ওই সময়ে বহু আলেঅচিত ছিল ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় কেন দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেনি? যুদ্ধ অপরাধীর বিচার যখন হবে তখন কি এই দলকে নিষিদ্ধ করা হবে? কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের নেই। দল নিষিদ্ধ করার এখতিয়ার সরকারের। ওই সময়কার প্রেক্ষিতে যে কোন দলের গঠনতন্ত্রে তেমন অসঙ্গতি থাকলে নিবন্ধন না দেবার যৌক্তিকতা থাকত। নিবন্ধন না দেবার মানে নিষিদ্ধকরণ নয়। দল নিবন্ধিত না হয়েও রাজনীতি করতে পারে। এ বির্তক সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পরেও উঠেছিল। খোদ আইন বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ কয়েকবার বলেছিলেন যে, দল নিষিদ্ধকরণের এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের। তার এ বক্তেব্যের জবাবে আমরা তাকে আইনের সূত্র দিতে বলেছি। তিনি এ নিয়ে পরে আর উচ্চবাচ্য করেননি। যাই হোক, আমার সাথে আলাপ করার পরের দিন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সুস্পষ্টভাবে মিডিয়াতে বক্তব্য দিয়ে বলেন যে, জামায়াতে ইসলামী তাদের গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আনবে। গঠনতন্ত্রে RPO মোতাবেক মহিলাদের অন্তুভূক্ত এবং অমুসলিম নাগরিকদের জন্য দলকে উন্মুক্ত করে মৌলিক পরিবর্তন আনা হবে। ইতোপূর্বে দলের গঠনতন্ত্রে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত ছিল যে, দলের সদস্য হতে হলে একজনকে মুসলমান হতে হবে। একই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর নামে পরিবর্তন আনবার ইঙ্গিত দিয়েছিলে।
জামায়াতে ইসলামীর এ পরিবর্তন আমাদের নিকট বেশ বড় অর্জন মনে হয়েছিল। জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছিল ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ । গঠনতন্ত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিলো। আমরা একাধীকবার তাদের গঠনতন্ত্রের বিভিন্ন দিক পরিবর্তন করতে বলেছিলাম। যথেষ্ট মৌলিক পরিবর্তন করেছিল যদিও চুলচেরা বিশ্লেষণে আরও কিছু করার জন্য বাধ্য করা যেত, তবে ঐ ধরনের অসামঞ্জস্য প্রায় দলের গঠনতন্ত্রেই রয়েছে। আমি মনে করি, ভবিষ্যতে এসব অসামঞ্জস্যতার বিষয়গুলো নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন দলের নজরে আনবে। জামায়াতে ইসলামীর পথ ধরে অন্যান্য, তথাকথিত, ইসলামী দলগুলোর দলগুলোর গঠনতন্ত্রে যথেষ্ট পরিবর্তন এনেছিল।
No comments