মৃত্যুদন্ড শিথিলের আহ্বান অ্যামনেস্টির
সর্বোচ্চ
শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডঅব্যাহত রাখায় বাংলাদেশের নিন্দা জানিয়েছে
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তারা
বলেছে, এ বছরের শুধু নভেম্বরে এ দেশে কমপক্ষে ৫০টি মৃত্যুদন্ডদেয়া হয়েছে।
সংস্থাটি সব রকম মৃত্যুদন্ডকে শিথিল করে যাবজ্জীবন শাস্তি করার জন্য বাংলাদেশ
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। বলেছে, সব মামলাই যেন সুষ্ঠু হয় তা
নিশ্চিত করতে হবে। ‘বাংলাদেশ: দ্য ডেথ পেনাল্টি ডাজ নট ইকুয়েট টু জাস্টিস’
শীর্ষক তিন পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। গতকাল প্রকাশিত ওই
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব অপরাধে এসব ব্যক্তিকে এ শাস্তি দেয়া হয়েছে তা
অত্যন্ত গুরুতর ও এক্ষেত্রে ন্যায় বিচার দিতেই হবে। তবে ফাঁসি দেয়ার
মাধ্যমে আরেক জনের জীবন নেয়া নিষ্ঠুর, অমানবিক শাস্তি। প্রতিটি মানুষের
মৌলিক অধিকার তার জীবন রক্ষার। তাই মৃত্যুদন্ডসেই অধিকারকে লঙ্ঘন করে। এতে
বলা হয়, মৃত্যুদন্ডএমন একটি শাস্তি যা পরে আর পরিবর্তন বা ভুল হলে তা
শুধরানোর কোন পথ থাকে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভুল বিচারে মৃত্যুদন্ডদেয়া
হয়েছে। আবার নিরপরাধের কারণে মৃত্যুদন্ডপাওয়া অনেক আসামীকে প্রতি বছর
মুক্তি দেয়া হচ্ছে। ঐশী রহমানকে তার পিতামাতা হত্যার কারণে এ বছরের ১২ই
নভেম্বর ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে। তবে এমনও রিপোর্ট আছে যে, সে যখন ওই অপরাধ
করেছিল তখন সে ছিল কিশোরী। অপরাধের সময় ঐশীর বয়স ১৮ বছরের ওপরে ছিল এটা
নির্ধারণের ক্ষেত্রে যদি কোন ভুল হয়ে থাকে, সে আপিলে ব্যর্থ হয় ও তার ফাঁসি
কার্যকর হয় তাহলে তার এ বিষয়ে প্রতিকার পাওয়ার আর কোন পথ থাকবে না।
উপরন্তু অপরাধের জন্য যাদেরকে মৃত্যুদন্ডদেয়া হয় তাদেরকে সম্ভাব্য সংশোধন ও
সমাজে পুনর্বাসনের সুযোগও অস্বীকার করা হয় এ শাস্তির কারণে, যেখানে
পুনর্জাগরণের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক আইন রয়েছে। আইসিসিপিআর-এর অধীনে শাস্তি
হিসেবে মৃত্যুদন্ডব্যবহার না করার ক্ষেত্রে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে
বাংলাদেশের। একই সঙ্গে এ শাস্তি বাতিলের ক্ষেত্রে তাদের বাধ্যবাধকতা আছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কিন্তু এ অবস্থান থেকে নিজেকে অনেক দূরে রেখেছে
বাংলাদেশ। যারা আরও ফাঁসির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার
কার্যকরভাবে তাদের পক্ষ অবলম্বন করেছে। বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে মৃতুদ-ের
পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এ শাস্তি থেকে বিরত থাকা ও বাতিল
করার আহ্বানের প্রতি তারা ইতিবাচক সাড়া দেয় নি। ব্যতিক্রম ছাড়া সব
ক্ষেত্রেই শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদ-ের বিরোধী অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
বাংলাদেশ ও বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার কর্মী ও সুশীল সমাজের সংগঠনগুলো, যারা
মৃত্যুদন্ডবাতিল চেয়ে কাজ করছেন, তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে অ্যামনেস্টি
ইন্টারন্যাশনাল। ১৯৭৭ সাল থেকে চীন, ইরান, পাকিস্তান, সৌদি আরব,
যুক্তরাষ্ট্র সহ যেসব দেশে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডবাতিলের দাবিতে কাজ
করছে, সেখানে মৃত্যুদন্ডবাতিলের দাবিতে কাজ করছে এ সংগঠন। ২০১৪ সালে
বাংলাদেশে কোন ফাঁসির রেকর্ড নেই অ্যামনেস্টির কাছে। তবে এ দেশে কমপক্ষে
১৪১ জন পুরুষ ও একজন নারীকে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডদেয়া হয়েছে। ওই বছরের
শেষ নাগাদ বাংলাদেশে ফাঁসি কার্যকরের অপেক্ষায় ছিলেন ১২৩৫ জন মানুষ। ২০১৫
সালের শেষ নাগাদ এ সংখ্যা অনেক বেশি হবে।
No comments