চারদিকে উদ্বেগ-অস্থিরতা
দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত জাপানি হোশি কুনিওর ময়নাতদন্ত শেষে হাসপাতাল থেকে পুলিশ পাহারায় বেরিয়ে আসছেন দুই জাপানি অপরাধ বিশেষজ্ঞ |
সবকিছু
ঠিকঠাকই চলছিল। ভ্রমণ যন্ত্রণা সত্ত্বেও ঈদের আনন্দে শামিল হয়েছিল কোটি
কোটি মানুষ। তবে আনন্দের রেশ কাটার আগেই দুঃসংবাদ পাওয়া শুরু করে বাংলাদেশ।
হঠাৎ করেই খবর এলো অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর নিয়ে তৈরি হয়েছে
অনিশ্চয়তা। বলা হলো, জঙ্গি হামলার আশঙ্কার কথা। পরিস্থিতি দেখতে
অস্ট্রেলিয়ান নিরাপত্তা প্রতিনিধিদল এলো ঢাকায়। এরই মধ্যে ঘটলো আরও খারাপ
ঘটনা। খোদ রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকায় খুন হলেন ইতালীয় নাগরিক সিজার তাভেলা। এ
ঘটনায় তোলপাড় তৈরি হয় সারা দুনিয়ায়। পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ
সতর্কতা জারি করে বাংলাদেশে। নিরাপত্তা শঙ্কার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ সফর
স্থগিত করে অস্ট্রেলিয়া। সর্বশেষ শনিবার রংপুরে গুলি করে হত্যা করা হলো
জাপানি নাগরিক হোশি কুনিওকে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুটি হত্যায়
যোগসূত্র রয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, আইএস তাদের টুইটার
অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশে জাপানি নাগরিক হত্যার দায় স্বীকার করেছে। এ ধরনের
আরও হামলার হুমকি দিয়েছে আইএস। এর আগে ইতালির নাগরিক সিজার তাভেলা হত্যার
দায়ও স্বীকার করেছিল আইএস। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল
দাবি করেছেন, বাংলাদেশে আইএসের তৎপরতা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও
গতকাল একই কথা বলেছেন।
তবে ঘটনা হলো, দুই বিদেশী খুন, আইএসের দায় স্বীকার এবং আরও হামলার হুমকি চারদিকে তৈরি করেছে অস্থিরতা, অস্বস্তি। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নতুন করে চ্যালেঞ্জ করেছে এইসব ঘটনা। এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত অবশ্য দুটি ঘটনারই মোটিভের ব্যাপারে খোলাসা করে কিছু বলতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জড়িত কাউকে গ্রেপ্তারও করতে পারেনি। হত্যাকাণ্ডের পরপরই অপরাধীদের ধরতে না পারাটা খুব উদ্বেগের বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ধরা এখন বাংলাদেশের জন্য খুব দরকারি বলে মনে করছেন, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. আবদুর রব খান। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, এতে করে বিদেশী নাগরিকদের আশ্বস্ত করা যেতো। তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বাংলাদেশকে এখন খুব সাবধানে এগুতে হবে। যাতে করে কোন ভীতি ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকে নজর রাখতে হবে। তার মতে পর পর দুটি হত্যার ধরন ও ইসলামিক স্টেটের মতো সংগঠনের এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করাটা বিশেষ করে আরও বেশি উদ্বেগের। এটি বাংলাদেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে তিনি মনে করেন। বাংলাদেশ ধীরে ধীরে আইএসের জালে জড়িয়ে পড়ছে কি-না সে নিয়েও একটি আশংকা তৈরি হচ্ছে।
সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ইতালিয়ান নাগরিক ছিলেন একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার কর্মী। জাপানি নাগরিক ছিলেন কৃষি উন্নয়ন কাজের সঙ্গে যুক্ত। এ দুই হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশে কাজ করা অন্যান্য এনজিও কর্মীদের মনেও ভীতি তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেছেন, এ দুটি হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশে যেসব উন্নয়ন সংস্থা রয়েছে তারা তাদের কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবছেন। কর্মীরা নিজেরাও সাবধান হয়ে চলাফেরা করছেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের নিরাপত্তা বিশ্লেষক শাফকাত মুনির বৃটেনের দ্যা গার্ডিয়ানকে বলেছেন, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে কোন পশ্চিমা নাগরিককে হত্যা বা টার্গেট করা হয়নি। সর্বশেষ এমন ঘটনা ঘটেছিল ২০০৪ সালে। তখন বাংলাদেশে বৃটিশ হাইকমিশনার ছিলেন আনোয়ার চৌধুরী। তার ওপর সিলেটে হামলা চালিয়েছিল হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী। তারপর থেকেই জঙ্গি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে আইএস ও আল কায়েদাসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে বেশকিছু ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শাফকাত মুনির বলেন, বাংলাদেশে যেসব গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে অভিযান চালাচ্ছে তারা সব সময়ই সক্রিয় ছিল এবং এখনও আছে। এর কারণ, বিশ্বজুড়ে জঙ্গি সহিংসতার উত্থান। তারাও এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করেছে। আগস্টে দেশের আধা-সামরিক বাহিনী আইএসের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে এক বৃটিশসহ মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করে। শাফকাত মুনির বলেন, উচ্চ নিরাপত্তামূলক সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও এসব গ্রুপ হামলা চালাতে সক্ষম। এটা চরম উদ্বেগের বিষয়। সিজার তাভেলাকে হত্যা একটি সতর্ক বার্তা। তিনি বলেন, আমার মনে হয় সতর্কতা উচ্চপর্যায়ে রয়েছে। আমার ভয় হলো- এই ধারা থামবে না। এটা চলতেই থাকবে এবং তা বৃদ্ধিও পেতে পারে।
দুই হত্যার পর আতঙ্কের কারণে অনেক বিদেশী বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছেন। বিশেষ করে অনেক পোশাক ক্রেতা তাদের নির্ধারিত সফরে আসেননি। বেশির ভাগ বিদেশী বাংলাদেশে তাদের চলাফেরা সীমিত করেছেন। সাবধানে চলাচল করছেন তারা। সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিরাজ করছে আতঙ্ক। দেশের ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি কেমন হবে এ নিয়ে উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছেন তারা। বাংলাদেশ আসলেই জঙ্গিবাদের হুমকির মধ্যে পড়েছে কি-না এ প্রশ্ন এখন আলোচিত হচ্ছে সর্বত্র। দেশে আইএসের অস্তিত্ব নিয়েও বিতর্ক চলছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এখনও পৃথিবীর সবচেয়ে কম জঙ্গি তৎপরতার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত। অথচ গত কয়েক বছর ধরে প্রশাসনিকভাবেই জঙ্গিবাদের জিকির তোলা হয়েছে। কয়েকদিন পরপরই কাউকে কাউকে ধরে এনে মিডিয়ার সামনে হাজির করা হয়েছে। বলা হয়েছে, অমুক, অমুক জঙ্গি সংগঠনের সমন্বয়ক, আহ্বায়ক ইত্যাদি। এতে শেষ পর্যন্ত দেশের ইমেজেরই ক্ষতি হয়েছে।
তবে ঘটনা হলো, দুই বিদেশী খুন, আইএসের দায় স্বীকার এবং আরও হামলার হুমকি চারদিকে তৈরি করেছে অস্থিরতা, অস্বস্তি। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নতুন করে চ্যালেঞ্জ করেছে এইসব ঘটনা। এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত অবশ্য দুটি ঘটনারই মোটিভের ব্যাপারে খোলাসা করে কিছু বলতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জড়িত কাউকে গ্রেপ্তারও করতে পারেনি। হত্যাকাণ্ডের পরপরই অপরাধীদের ধরতে না পারাটা খুব উদ্বেগের বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ধরা এখন বাংলাদেশের জন্য খুব দরকারি বলে মনে করছেন, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. আবদুর রব খান। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, এতে করে বিদেশী নাগরিকদের আশ্বস্ত করা যেতো। তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বাংলাদেশকে এখন খুব সাবধানে এগুতে হবে। যাতে করে কোন ভীতি ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকে নজর রাখতে হবে। তার মতে পর পর দুটি হত্যার ধরন ও ইসলামিক স্টেটের মতো সংগঠনের এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করাটা বিশেষ করে আরও বেশি উদ্বেগের। এটি বাংলাদেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে তিনি মনে করেন। বাংলাদেশ ধীরে ধীরে আইএসের জালে জড়িয়ে পড়ছে কি-না সে নিয়েও একটি আশংকা তৈরি হচ্ছে।
সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ইতালিয়ান নাগরিক ছিলেন একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার কর্মী। জাপানি নাগরিক ছিলেন কৃষি উন্নয়ন কাজের সঙ্গে যুক্ত। এ দুই হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশে কাজ করা অন্যান্য এনজিও কর্মীদের মনেও ভীতি তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেছেন, এ দুটি হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশে যেসব উন্নয়ন সংস্থা রয়েছে তারা তাদের কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবছেন। কর্মীরা নিজেরাও সাবধান হয়ে চলাফেরা করছেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের নিরাপত্তা বিশ্লেষক শাফকাত মুনির বৃটেনের দ্যা গার্ডিয়ানকে বলেছেন, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে কোন পশ্চিমা নাগরিককে হত্যা বা টার্গেট করা হয়নি। সর্বশেষ এমন ঘটনা ঘটেছিল ২০০৪ সালে। তখন বাংলাদেশে বৃটিশ হাইকমিশনার ছিলেন আনোয়ার চৌধুরী। তার ওপর সিলেটে হামলা চালিয়েছিল হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী। তারপর থেকেই জঙ্গি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে আইএস ও আল কায়েদাসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে বেশকিছু ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শাফকাত মুনির বলেন, বাংলাদেশে যেসব গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে অভিযান চালাচ্ছে তারা সব সময়ই সক্রিয় ছিল এবং এখনও আছে। এর কারণ, বিশ্বজুড়ে জঙ্গি সহিংসতার উত্থান। তারাও এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করেছে। আগস্টে দেশের আধা-সামরিক বাহিনী আইএসের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে এক বৃটিশসহ মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করে। শাফকাত মুনির বলেন, উচ্চ নিরাপত্তামূলক সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও এসব গ্রুপ হামলা চালাতে সক্ষম। এটা চরম উদ্বেগের বিষয়। সিজার তাভেলাকে হত্যা একটি সতর্ক বার্তা। তিনি বলেন, আমার মনে হয় সতর্কতা উচ্চপর্যায়ে রয়েছে। আমার ভয় হলো- এই ধারা থামবে না। এটা চলতেই থাকবে এবং তা বৃদ্ধিও পেতে পারে।
দুই হত্যার পর আতঙ্কের কারণে অনেক বিদেশী বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছেন। বিশেষ করে অনেক পোশাক ক্রেতা তাদের নির্ধারিত সফরে আসেননি। বেশির ভাগ বিদেশী বাংলাদেশে তাদের চলাফেরা সীমিত করেছেন। সাবধানে চলাচল করছেন তারা। সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিরাজ করছে আতঙ্ক। দেশের ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি কেমন হবে এ নিয়ে উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছেন তারা। বাংলাদেশ আসলেই জঙ্গিবাদের হুমকির মধ্যে পড়েছে কি-না এ প্রশ্ন এখন আলোচিত হচ্ছে সর্বত্র। দেশে আইএসের অস্তিত্ব নিয়েও বিতর্ক চলছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এখনও পৃথিবীর সবচেয়ে কম জঙ্গি তৎপরতার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত। অথচ গত কয়েক বছর ধরে প্রশাসনিকভাবেই জঙ্গিবাদের জিকির তোলা হয়েছে। কয়েকদিন পরপরই কাউকে কাউকে ধরে এনে মিডিয়ার সামনে হাজির করা হয়েছে। বলা হয়েছে, অমুক, অমুক জঙ্গি সংগঠনের সমন্বয়ক, আহ্বায়ক ইত্যাদি। এতে শেষ পর্যন্ত দেশের ইমেজেরই ক্ষতি হয়েছে।
No comments