পাটগ্রামের ছিটমহল সেজেছে সাধ্যমতো: কাজ বন্ধ রেখে উৎসব by আনোয়ার হোসেন ও এ বি সফিউল আলম
সাধ্যমতো
সেজেছে লালমনিরহাটের পাটগ্রামের কিছু প্রত্যন্ত গ্রাম, যা ছিটমহল নামে এত
দিন পরিচিত ছিল। গতকাল মধ্যরাত থেকে এগুলো বাংলাদেশের ভূখণ্ড, অধিকাংশ
বাসিন্দা বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে গেছেন। বহুল প্রত্যাশিত এই মুহূর্তটিকে
স্মরণীয় করার জন্য দিনভর চলে নানা উৎসব-আয়োজন।
গত শুক্রবার সকালে পাটগ্রামের ২০ নম্বর লোথামারি ছিটমহলে গিয়ে দেখা যায়, একটি বাড়ির উঠোনে শতেক মানুষ বসে পরিকল্পনা করছেন আর কী কী করলে উৎসব পূর্ণতা পাবে। এর পাশেই কামারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছিল মঞ্চ তৈরির কাজ। স্কুলের প্রবেশপথে তৈরি করা হয়েছে গেট। রাতে সেখানে জেনারেটরের সাহায্যে আলোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। দুপুরের দিকে পাটগ্রামের শ্রীরামপুর ও জোংড়া ইউনিয়নের পথে পথে যেসব উৎসব কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে, সেগুলোতে অংশ নেওয়ার জন্য মাইকে আহ্বান করা হয়।
বিকেল চারটার দিকে শ্রীরামপুরের ২০ নম্বর লোথামারিতে একদল শিশু-কিশোর আনন্দ মিছিল করছিল। তাদের হাতে বাংলাদেশের পতাকা। অনেক বয়স্ক মানুষকেও বেশ উৎসাহ নিয়ে এতে অংশ নিতে দেখা যায়। এঁদেরই একজন ২২ নম্বর লোথামারি ছিটমহলের ইমাম হাফেজ রেজাউল করিম। বয়স ৬০। অনুভূতি জানতে চাইলে শিশুর মতো হেসে ওঠেন। বলতে থাকেন, ‘জীবনে কোনো দিন জাতীয় পতাকা হাতে নেওয়ার সুযোগ হয়নি। এই অধিকারও ছিল না। আজ যে আনন্দ করছি, এর বহুগুণ আনন্দ হচ্ছে মনের ভেতরে। যা কেউ দেখতে পাচ্ছে না।’
পাটগ্রামে ছিটমহল আছে ৫৫টি। এগুলোতে বাসিন্দা আছেন প্রায় ৮ হাজার ৪৩৪ জন। এর মধ্যে ১৩৩ জন ভারতে চলে যাওয়ার জন্য নাম লিখিয়েছেন। বাকিরা সবাই এখন বাংলাদেশের নাগরিক।
কথা বলে জানা গেছে, এই বাসিন্দাদের বেশির ভাগই কৃষক। কেউ নিজের জমি, আবার কেউ কেউ অন্যের জমি বর্গা চাষ করেন। দিনমজুরের সংখ্যাও কম নয়। হাতেগোনা কিছু লোক ক্ষুদ্র ব্যবসা কিংবা চাকরি করেন। ৬৮ বছরের এক রকম দেশহীন জীবনের অবসান উপলক্ষে বেশির ভাগ বাসিন্দাই দুদিন ধরে নিজের কাজে যোগ দেননি, নানা রকম উৎসব করেছেন।
অনেক বাড়ির উঠোনে দেখা যায় টং ঘরের মতো বসার স্থান। চারদিকে খোলা, ওপরে ছনের ছাদ। বসার জন্য রয়েছে মাচা। গাছঘেরা এসব স্থানে একসঙ্গে ১০-১৫ জনকে বসে উৎসবের আয়োজন নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়। জমিজমার মালিকানা নিয়ে বিরোধ তৈরি হয় কি না, এমন শঙ্কাও দেখা গেল অনেকের মাঝে।
১৫৩ নম্বর রতনপুর ছিটমহলের বাসিন্দা করমত উল্লাহর বয়স প্রায় ৭০ বছর। তাঁর সঙ্গে কথা হয় এমনই একটি টং ঘরে। তাঁর বসতিটা ভারত সীমান্তের¯খুব কাছেই। করমত বলেন, সামান্য কৃষিকাজ করে দিন চলে। এরই মধ্যে গত ২০ বছরে তিনবার তাঁর বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। একবার তো পরনের বস্ত্রও ছিল না। থানা-পুলিশ করারও অধিকার নেই। সেই সময়টা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এ কথা বলতে বলতেই দুই চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে করমতের। তিনি জানান, কয়েক দিন ধরেই নিজের কাজ ফেলে ছিটমহলবাসীদের নিয়ে নানা আয়োজনের চেষ্টা করছেন।
আনন্দের মধ্যেও কিছুটা অসংগতি আছে। উৎসব, অনুষ্ঠান ও আয়োজনে ছিটমহলের বাসিন্দাদের মধ্যে বেশ কিছু দল-উপদল সৃষ্টি হতে দেখা যায়। তবে সাধারণ বাসিন্দারা এসব বিভেদের মধ্যে জড়াতে আগ্রহী নন।
২০ নম্বর লোথামারি ছিটমহলের বাসিন্দা এবং অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নুরুল আমিন বলেন, ছিটমহলের বাসিন্দা হয়েও পরিচয় গোপন করে অনেকেই বাংলাদেশের নানা সুবিধা নিয়েছেন। তবে এটা ছিল খুবই অসম্মানের। নিজের মধ্যেই খচখচানি লাগত। নতুন প্রজন্মকে সেটা করতে হবে না। আর সরকার এখন স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও ভূমির মালিকানার বিষয়টি ঠিকঠাকভাবে সম্পন্ন করতে পারলেই আনন্দ পূর্ণতা পাবে।
গত শুক্রবার সকালে পাটগ্রামের ২০ নম্বর লোথামারি ছিটমহলে গিয়ে দেখা যায়, একটি বাড়ির উঠোনে শতেক মানুষ বসে পরিকল্পনা করছেন আর কী কী করলে উৎসব পূর্ণতা পাবে। এর পাশেই কামারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছিল মঞ্চ তৈরির কাজ। স্কুলের প্রবেশপথে তৈরি করা হয়েছে গেট। রাতে সেখানে জেনারেটরের সাহায্যে আলোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। দুপুরের দিকে পাটগ্রামের শ্রীরামপুর ও জোংড়া ইউনিয়নের পথে পথে যেসব উৎসব কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে, সেগুলোতে অংশ নেওয়ার জন্য মাইকে আহ্বান করা হয়।
বিকেল চারটার দিকে শ্রীরামপুরের ২০ নম্বর লোথামারিতে একদল শিশু-কিশোর আনন্দ মিছিল করছিল। তাদের হাতে বাংলাদেশের পতাকা। অনেক বয়স্ক মানুষকেও বেশ উৎসাহ নিয়ে এতে অংশ নিতে দেখা যায়। এঁদেরই একজন ২২ নম্বর লোথামারি ছিটমহলের ইমাম হাফেজ রেজাউল করিম। বয়স ৬০। অনুভূতি জানতে চাইলে শিশুর মতো হেসে ওঠেন। বলতে থাকেন, ‘জীবনে কোনো দিন জাতীয় পতাকা হাতে নেওয়ার সুযোগ হয়নি। এই অধিকারও ছিল না। আজ যে আনন্দ করছি, এর বহুগুণ আনন্দ হচ্ছে মনের ভেতরে। যা কেউ দেখতে পাচ্ছে না।’
পাটগ্রামে ছিটমহল আছে ৫৫টি। এগুলোতে বাসিন্দা আছেন প্রায় ৮ হাজার ৪৩৪ জন। এর মধ্যে ১৩৩ জন ভারতে চলে যাওয়ার জন্য নাম লিখিয়েছেন। বাকিরা সবাই এখন বাংলাদেশের নাগরিক।
কথা বলে জানা গেছে, এই বাসিন্দাদের বেশির ভাগই কৃষক। কেউ নিজের জমি, আবার কেউ কেউ অন্যের জমি বর্গা চাষ করেন। দিনমজুরের সংখ্যাও কম নয়। হাতেগোনা কিছু লোক ক্ষুদ্র ব্যবসা কিংবা চাকরি করেন। ৬৮ বছরের এক রকম দেশহীন জীবনের অবসান উপলক্ষে বেশির ভাগ বাসিন্দাই দুদিন ধরে নিজের কাজে যোগ দেননি, নানা রকম উৎসব করেছেন।
অনেক বাড়ির উঠোনে দেখা যায় টং ঘরের মতো বসার স্থান। চারদিকে খোলা, ওপরে ছনের ছাদ। বসার জন্য রয়েছে মাচা। গাছঘেরা এসব স্থানে একসঙ্গে ১০-১৫ জনকে বসে উৎসবের আয়োজন নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়। জমিজমার মালিকানা নিয়ে বিরোধ তৈরি হয় কি না, এমন শঙ্কাও দেখা গেল অনেকের মাঝে।
১৫৩ নম্বর রতনপুর ছিটমহলের বাসিন্দা করমত উল্লাহর বয়স প্রায় ৭০ বছর। তাঁর সঙ্গে কথা হয় এমনই একটি টং ঘরে। তাঁর বসতিটা ভারত সীমান্তের¯খুব কাছেই। করমত বলেন, সামান্য কৃষিকাজ করে দিন চলে। এরই মধ্যে গত ২০ বছরে তিনবার তাঁর বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। একবার তো পরনের বস্ত্রও ছিল না। থানা-পুলিশ করারও অধিকার নেই। সেই সময়টা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এ কথা বলতে বলতেই দুই চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে করমতের। তিনি জানান, কয়েক দিন ধরেই নিজের কাজ ফেলে ছিটমহলবাসীদের নিয়ে নানা আয়োজনের চেষ্টা করছেন।
আনন্দের মধ্যেও কিছুটা অসংগতি আছে। উৎসব, অনুষ্ঠান ও আয়োজনে ছিটমহলের বাসিন্দাদের মধ্যে বেশ কিছু দল-উপদল সৃষ্টি হতে দেখা যায়। তবে সাধারণ বাসিন্দারা এসব বিভেদের মধ্যে জড়াতে আগ্রহী নন।
২০ নম্বর লোথামারি ছিটমহলের বাসিন্দা এবং অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নুরুল আমিন বলেন, ছিটমহলের বাসিন্দা হয়েও পরিচয় গোপন করে অনেকেই বাংলাদেশের নানা সুবিধা নিয়েছেন। তবে এটা ছিল খুবই অসম্মানের। নিজের মধ্যেই খচখচানি লাগত। নতুন প্রজন্মকে সেটা করতে হবে না। আর সরকার এখন স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও ভূমির মালিকানার বিষয়টি ঠিকঠাকভাবে সম্পন্ন করতে পারলেই আনন্দ পূর্ণতা পাবে।
No comments