ইউজিসির ক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন -বিশেষ সাক্ষাৎকারে: নজরুল ইসলাম by মশিউল আলম
নজরুল ইসলাম |
নানা
অনিয়ম ও অব্যবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
এই প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলামের মুখোমুখি হয় প্রথম আলো।
প্রথম আলো : পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ ও শিক্ষার মানের অনেক অবনতি ঘটেছে। আপনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান ছিলেন। এ ব্যাপারে ইউজিসির কি কিছু করার নেই?
নজরুল ইসলাম : পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাপারে ইউজিসির খুব বেশি কিছু করার নেই। কারণ, এগুলো চলে নিজস্ব আইন অনুযায়ী। চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য রয়েছে সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসনের বিধান। আইনত তাদের স্বায়ত্তশাসন প্রাপ্য এবং তারা তা ভোগ করে। বাকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও প্রতিটি নিজস্ব আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তারাও স্বায়ত্তশাসিত, স্বাধীন।
প্রথম আলো : অর্থায়নের ক্ষেত্রে তো ইউজিসির ভূমিকা থাকে?
নজরুল ইসলাম : হ্যাঁ, থাকে। কিন্তু দেখা যায়, একটি বিশ্ববিদ্যালয় আদর্শভাবে পরিচালনার জন্য যে পরিমাণ অর্থায়নের প্রয়োজন হয়, তার ধারেকাছেও আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হয় না। সেই হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেওয়া খুবই কঠিন। মঞ্জুরি কমিশন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য অর্থ বণ্টন করে দেয়। আর শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য কতগুলো জিনিস করে দিয়েছে; যেমন শিক্ষকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা সামগ্রিকভাবে নির্ধারণ করা আছে, পদোন্নতির ক্ষেত্রে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্রিয়া ও মান একই রকম। তবে ন্যূনতম মাপকাঠিগুলো আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় বেশ শিথিল। যেমন, একজন শিক্ষকের পিএইচডি ডিগ্রি থাকলে তাঁর চাকরির বয়স ১২ বছর হলে তিনি অধ্যাপক হতে পারেন এবং হচ্ছেনও। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা অসম্ভব।
প্রথম আলো : ইউজিসি এটা বন্ধ করতে পারে না?
নজরুল ইসলাম : ইউজিসি ন্যূনতম সূচকগুলো নির্ধারণ করে দেয়। এ ছাড়া কোনো আর্থিক বা নৈতিক অব্যবস্থার ক্ষেত্রে ইউজিসি মাঝেমধ্যে হস্তক্ষেপ করতে পারে, অথবা ইউজিসির দেওয়া টাকাপয়সা তারা ঠিকমতো ব্যবহার করছে কি না, এ ক্ষেত্রে একধরনের তদারকি ইউজিসি করতে পারে, কিন্তু সাধারণত করে না, স্বাধীনতা দেয়। সেই হিসেবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপরে ইউজিসির তদারকি বা খবরদারি একেবারেই ন্যূনতম, ভারতে এর চেয়ে একটু বেশি আছে।
প্রথম আলো : বেশি হওয়া উচিত কি না?
নজরুল ইসলাম : আমরা যদি মনে করি যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বাধীন, স্বায়ত্তশাসিত হবে, তাহলে দায়দায়িত্বটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপরেই ছেড়ে দেওয়া উচিত।
প্রথম আলো : তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রয়োজনীয়তা কী?
নজরুল ইসলাম : মঞ্জুরি কমিশন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অর্থায়নের প্রতিষ্ঠান। অর্থায়ন ছাড়াও মঞ্জুরি কমিশন মাঝেমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য, শিক্ষকসহ ঊর্ধ্বতন যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা-মতবিনিময়ে বসতে পারে, অর্থাৎ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের মান উন্নত করে নিক।
প্রথম আলো : আপনার সময় কি এটা করা হতো?
নজরুল ইসলাম : আমার সময় আমরা এটা অনেক করেছি।
প্রথম আলো : আপনারা কি কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন, বা সুপারিশ করেছিলেন?
নজরুল ইসলাম : হ্যাঁ, আমরা অনেক পরামর্শ দিয়েছি, বেশ কিছু সুপারিশও করেছি।
প্রথম আলো : সুপারিশগুলো কি বাস্তবায়ন করা হয়েছে?
নজরুল ইসলাম : অনেক ক্ষেত্রে হয়েছে। যেমন, এখন প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে নারী নির্যাতনসংক্রান্ত সেল আছে, এটা হয়েছে ইউজিসির কারণে। ইউজিসি থেকে নিয়ম করে দেওয়া হয়েছে যে প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী নির্যাতনসংক্রান্ত সেল থাকবে। আরেকটা হলো, শিক্ষার মান বৃদ্ধি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষ থেকে উদ্যোগী হয়ে গবেষণা-সহায়তা দেওয়া।
প্রথম আলো : মানে কি অর্থায়ন করা?
নজরুল ইসলাম : অর্থায়ন করা এবং গবেষণা পদ্ধতি বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া। এটা ইউজিসি মাঝে মাঝেই করে। আমার সময় ইউজিসি একটি উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ৬৮১ কোটি টাকার এই প্রকল্প আমার সময় শুরু হয়। এখন এই প্রকল্প তৃতীয় পর্যায়ে চলে এসেছে, এই প্রকল্পে এখন মোট বরাদ্দ প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।
প্রথম আলো : ফল কী?
নজরুল ইসলাম : আমি আমার সময়ে ফল দেখে আসতে পারিনি, তবে ফল নিশ্চয়ই ভালো হবে।
প্রথম আলো : আপনি কী বলতে চাইছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা হতাশাব্যঞ্জক নয়?
নজরুল ইসলাম : মোটেও নয়। যেমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদে সারাক্ষণ ল্যাবরেটরিতে কাজ হচ্ছে, কোনো ক্লাস কামাই যায় না, বন্ধ থাকে না...
প্রথম আলো : কিন্তু রাজনীতি আছে, অনেক শিক্ষার্থী হলে থাকতে পারে না...
নজরুল ইসলাম : এটা একটা বড় সমস্যা, কিন্তু ছাত্রদের সমস্যা। শিক্ষকদের জন্য অত বেশি সমস্যা নেই।
প্রথম আলো : কিন্তু শিক্ষকেরা তো রাজনীতি করেন?
নজরুল ইসলাম : সবাই তো করেন না। একটি দলকে সমর্থন দেন, ভোট চাইতে এলে ভোট দিতে যান, কিছু শিক্ষক নির্বাচনে অংশ নেন। দুই হাজার শিক্ষকের মধ্যে কতজন নির্বাচন অংশ নেন? বাকিরা তো নিজ নিজ কাজ করছেন।
প্রথম আলো : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান কেমন?
নজরুল ইসলাম : দশ-বারোটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক মান ও ক্যাম্পাস মোটামুটি গ্রহণযোগ্য। অধিকাংশই মানহীন বলা উচিত।
প্রথম আলো : রাজনৈতিক ও আর্থিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেওয়া হয়?
নজরুল ইসলাম : হ্যাঁ, এভাবে হচ্ছে, তবে ন্যূনতম ক্রাইটেরিয়া সবাইকেই মানতে হয়।
প্রথম আলো : কিন্তু ইউজিসিকে পাশ কাটিয়ে তো কেউ অনুমোদন পেতে পারে না?
নজরুল ইসলাম : না, সেটা হয় না।
প্রথম আলো : তাহলে ইউজিসির ওপরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো হয়?
নজরুল ইসলাম : কেউ যদি ইউজিসির ওপরে প্রভাব খাটাতে পারে তাহলে খাটাবে, অথবা মন্ত্রণালয়ে প্রভাব খাটাবে।
প্রথম আলো : ইউজিসির কার্যকারিতা যদি আমরা মাপি, তাহলে সেটা কতটা?
নজরুল ইসলাম : যথেষ্ট নয়। ইউজিসি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক মান বিবেচনা করে, পর্যালোচনা করে সুপারিশ করতে পারে, এটা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এই সুপারিশ যাবে মন্ত্রণালয়ে, মন্ত্রণালয় সেই সুপারিশ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারে, না-ও পারে। মন্ত্রণালয় বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলে আদালতে মামলা হয়, আদালত স্থগিতাদেশ দেন, এভাবে দিনের পর দিন বিশ্ববিদ্যালয় চলতে থাকে। আদালতের স্থগিতাদেশের অবসান ঘটানোর দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের, সে ক্ষেত্রে তাদের অতটা তাগিদ থাকে না। তারপরেও প্রশাসনিকভাবে ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়া যায়, সেটা হচ্ছেও। ইউজিসি অবশ্য একটা কাজ করতে পারে, নতুন বিভাগ খুলতে না দেওয়া।
প্রথম আলো : ইউজিসিকে আরও কার্যকর করা যায় কীভাবে?
নজরুল ইসলাম : বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের সংস্কার করা প্রয়োজন। এটা এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অর্থ দেয় আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনুমোদন দেয়, তদারকি করে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য তো এটা অর্থ প্রদানের কর্তৃপক্ষ নয়। তাই এর নাম হওয়া উচিত উচ্চশিক্ষা কমিশন, আর এর ক্ষমতা হওয়া উচিত আরেকটু বেশি। যেন উচ্চশিক্ষা কমিশন নিজেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে, মন্ত্রণালয়ে যেতে না হয়। এর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন করা প্রয়োজন, যে কাউন্সিল অনেকগুলো সূচকের ভিত্তিতে সরকারি ও বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিং করবে।
প্রথম আলো : আপনাকে ধন্যবাদ।
নজরুল ইসলাম : ধন্যবাদ।
প্রথম আলো : পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ ও শিক্ষার মানের অনেক অবনতি ঘটেছে। আপনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান ছিলেন। এ ব্যাপারে ইউজিসির কি কিছু করার নেই?
নজরুল ইসলাম : পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাপারে ইউজিসির খুব বেশি কিছু করার নেই। কারণ, এগুলো চলে নিজস্ব আইন অনুযায়ী। চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য রয়েছে সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসনের বিধান। আইনত তাদের স্বায়ত্তশাসন প্রাপ্য এবং তারা তা ভোগ করে। বাকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও প্রতিটি নিজস্ব আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তারাও স্বায়ত্তশাসিত, স্বাধীন।
প্রথম আলো : অর্থায়নের ক্ষেত্রে তো ইউজিসির ভূমিকা থাকে?
নজরুল ইসলাম : হ্যাঁ, থাকে। কিন্তু দেখা যায়, একটি বিশ্ববিদ্যালয় আদর্শভাবে পরিচালনার জন্য যে পরিমাণ অর্থায়নের প্রয়োজন হয়, তার ধারেকাছেও আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হয় না। সেই হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেওয়া খুবই কঠিন। মঞ্জুরি কমিশন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য অর্থ বণ্টন করে দেয়। আর শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য কতগুলো জিনিস করে দিয়েছে; যেমন শিক্ষকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা সামগ্রিকভাবে নির্ধারণ করা আছে, পদোন্নতির ক্ষেত্রে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্রিয়া ও মান একই রকম। তবে ন্যূনতম মাপকাঠিগুলো আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় বেশ শিথিল। যেমন, একজন শিক্ষকের পিএইচডি ডিগ্রি থাকলে তাঁর চাকরির বয়স ১২ বছর হলে তিনি অধ্যাপক হতে পারেন এবং হচ্ছেনও। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা অসম্ভব।
প্রথম আলো : ইউজিসি এটা বন্ধ করতে পারে না?
নজরুল ইসলাম : ইউজিসি ন্যূনতম সূচকগুলো নির্ধারণ করে দেয়। এ ছাড়া কোনো আর্থিক বা নৈতিক অব্যবস্থার ক্ষেত্রে ইউজিসি মাঝেমধ্যে হস্তক্ষেপ করতে পারে, অথবা ইউজিসির দেওয়া টাকাপয়সা তারা ঠিকমতো ব্যবহার করছে কি না, এ ক্ষেত্রে একধরনের তদারকি ইউজিসি করতে পারে, কিন্তু সাধারণত করে না, স্বাধীনতা দেয়। সেই হিসেবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপরে ইউজিসির তদারকি বা খবরদারি একেবারেই ন্যূনতম, ভারতে এর চেয়ে একটু বেশি আছে।
প্রথম আলো : বেশি হওয়া উচিত কি না?
নজরুল ইসলাম : আমরা যদি মনে করি যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বাধীন, স্বায়ত্তশাসিত হবে, তাহলে দায়দায়িত্বটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপরেই ছেড়ে দেওয়া উচিত।
প্রথম আলো : তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রয়োজনীয়তা কী?
নজরুল ইসলাম : মঞ্জুরি কমিশন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অর্থায়নের প্রতিষ্ঠান। অর্থায়ন ছাড়াও মঞ্জুরি কমিশন মাঝেমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য, শিক্ষকসহ ঊর্ধ্বতন যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা-মতবিনিময়ে বসতে পারে, অর্থাৎ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের মান উন্নত করে নিক।
প্রথম আলো : আপনার সময় কি এটা করা হতো?
নজরুল ইসলাম : আমার সময় আমরা এটা অনেক করেছি।
প্রথম আলো : আপনারা কি কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন, বা সুপারিশ করেছিলেন?
নজরুল ইসলাম : হ্যাঁ, আমরা অনেক পরামর্শ দিয়েছি, বেশ কিছু সুপারিশও করেছি।
প্রথম আলো : সুপারিশগুলো কি বাস্তবায়ন করা হয়েছে?
নজরুল ইসলাম : অনেক ক্ষেত্রে হয়েছে। যেমন, এখন প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে নারী নির্যাতনসংক্রান্ত সেল আছে, এটা হয়েছে ইউজিসির কারণে। ইউজিসি থেকে নিয়ম করে দেওয়া হয়েছে যে প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী নির্যাতনসংক্রান্ত সেল থাকবে। আরেকটা হলো, শিক্ষার মান বৃদ্ধি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষ থেকে উদ্যোগী হয়ে গবেষণা-সহায়তা দেওয়া।
প্রথম আলো : মানে কি অর্থায়ন করা?
নজরুল ইসলাম : অর্থায়ন করা এবং গবেষণা পদ্ধতি বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া। এটা ইউজিসি মাঝে মাঝেই করে। আমার সময় ইউজিসি একটি উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ৬৮১ কোটি টাকার এই প্রকল্প আমার সময় শুরু হয়। এখন এই প্রকল্প তৃতীয় পর্যায়ে চলে এসেছে, এই প্রকল্পে এখন মোট বরাদ্দ প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।
প্রথম আলো : ফল কী?
নজরুল ইসলাম : আমি আমার সময়ে ফল দেখে আসতে পারিনি, তবে ফল নিশ্চয়ই ভালো হবে।
প্রথম আলো : আপনি কী বলতে চাইছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা হতাশাব্যঞ্জক নয়?
নজরুল ইসলাম : মোটেও নয়। যেমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদে সারাক্ষণ ল্যাবরেটরিতে কাজ হচ্ছে, কোনো ক্লাস কামাই যায় না, বন্ধ থাকে না...
প্রথম আলো : কিন্তু রাজনীতি আছে, অনেক শিক্ষার্থী হলে থাকতে পারে না...
নজরুল ইসলাম : এটা একটা বড় সমস্যা, কিন্তু ছাত্রদের সমস্যা। শিক্ষকদের জন্য অত বেশি সমস্যা নেই।
প্রথম আলো : কিন্তু শিক্ষকেরা তো রাজনীতি করেন?
নজরুল ইসলাম : সবাই তো করেন না। একটি দলকে সমর্থন দেন, ভোট চাইতে এলে ভোট দিতে যান, কিছু শিক্ষক নির্বাচনে অংশ নেন। দুই হাজার শিক্ষকের মধ্যে কতজন নির্বাচন অংশ নেন? বাকিরা তো নিজ নিজ কাজ করছেন।
প্রথম আলো : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান কেমন?
নজরুল ইসলাম : দশ-বারোটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক মান ও ক্যাম্পাস মোটামুটি গ্রহণযোগ্য। অধিকাংশই মানহীন বলা উচিত।
প্রথম আলো : রাজনৈতিক ও আর্থিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেওয়া হয়?
নজরুল ইসলাম : হ্যাঁ, এভাবে হচ্ছে, তবে ন্যূনতম ক্রাইটেরিয়া সবাইকেই মানতে হয়।
প্রথম আলো : কিন্তু ইউজিসিকে পাশ কাটিয়ে তো কেউ অনুমোদন পেতে পারে না?
নজরুল ইসলাম : না, সেটা হয় না।
প্রথম আলো : তাহলে ইউজিসির ওপরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো হয়?
নজরুল ইসলাম : কেউ যদি ইউজিসির ওপরে প্রভাব খাটাতে পারে তাহলে খাটাবে, অথবা মন্ত্রণালয়ে প্রভাব খাটাবে।
প্রথম আলো : ইউজিসির কার্যকারিতা যদি আমরা মাপি, তাহলে সেটা কতটা?
নজরুল ইসলাম : যথেষ্ট নয়। ইউজিসি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক মান বিবেচনা করে, পর্যালোচনা করে সুপারিশ করতে পারে, এটা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এই সুপারিশ যাবে মন্ত্রণালয়ে, মন্ত্রণালয় সেই সুপারিশ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারে, না-ও পারে। মন্ত্রণালয় বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলে আদালতে মামলা হয়, আদালত স্থগিতাদেশ দেন, এভাবে দিনের পর দিন বিশ্ববিদ্যালয় চলতে থাকে। আদালতের স্থগিতাদেশের অবসান ঘটানোর দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের, সে ক্ষেত্রে তাদের অতটা তাগিদ থাকে না। তারপরেও প্রশাসনিকভাবে ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়া যায়, সেটা হচ্ছেও। ইউজিসি অবশ্য একটা কাজ করতে পারে, নতুন বিভাগ খুলতে না দেওয়া।
প্রথম আলো : ইউজিসিকে আরও কার্যকর করা যায় কীভাবে?
নজরুল ইসলাম : বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের সংস্কার করা প্রয়োজন। এটা এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অর্থ দেয় আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনুমোদন দেয়, তদারকি করে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য তো এটা অর্থ প্রদানের কর্তৃপক্ষ নয়। তাই এর নাম হওয়া উচিত উচ্চশিক্ষা কমিশন, আর এর ক্ষমতা হওয়া উচিত আরেকটু বেশি। যেন উচ্চশিক্ষা কমিশন নিজেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে, মন্ত্রণালয়ে যেতে না হয়। এর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন করা প্রয়োজন, যে কাউন্সিল অনেকগুলো সূচকের ভিত্তিতে সরকারি ও বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিং করবে।
প্রথম আলো : আপনাকে ধন্যবাদ।
নজরুল ইসলাম : ধন্যবাদ।
No comments