আমরা তালা মারতে পারি না, পারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় -বিশেষ সাক্ষাৎকার: আবদুল মান্নান by মিজানুর রহমান খান
আবদুল মান্নান |
নানা
অনিয়ম ও অব্যবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
এই প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানের মুখোমুখি হয় প্রথম আলো।
প্রথম আলো : আপনি মনে করেন যে মুদি ও গার্মেন্টসের মতো বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। এরা কারা? কীভাবে চলছে?
আবদুল মান্নান : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ২০১০ আইনে তারা কতগুলো শর্ত মেনে অনুমোদন নেয়। পরে দেখা যায়, কেউ কেউ শর্ত মানেন না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়া, নিজস্ব ভবন নেই, ভাড়া করা ভবনে শুরু করেছিল, তাদের নিজস্ব ভবনে ফিরে যাওয়ার শর্ত পূরণ করা। আইনে আছে কোনো আউটার ক্যাম্পাস হবে না। কেউ কেউ এসব বাধ্যবাধকতার ব্যত্যয় ঘটিয়ে তারা কেবল ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরেও আউটার ক্যাম্পাস করেছে।
প্রথম আলো : ২০০৬ সালে কিশোরগঞ্জে প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে এ রকম পদক্ষেপ আর নিতে দেখি না। নেতৃত্বের ব্যর্থতা নয় কি?
আবদুল মান্নান : দেখা যায় না তা ঠিক নয়। কমিশন এমন উদ্যোগ নিলেই সাধারণত উচ্চ আদালতে রিট করে। বর্তমানে এ রকম প্রায় ২০টি মামলা আছে।
প্রথম আলো : এগুলোর যাতে দ্রুত শুনানি হয় সে জন্য আপনি কি প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ চাইবেন?
আবদুল মান্নান : আমরা বিশেষ চেষ্টা করে ইতিমধ্যে ১০টি মামলাকে একটি বেঞ্চে এনেছি, বাকিগুলোও আনার চেষ্টা চলছে। এর একটির সুরাহা হলেই বাকিগুলোর সুরাহা সহজ হতে পারে। এর বেশির ভাগই আউটার ক্যাম্পাস এবং মালিকানার দ্বন্দ্ব-সংক্রান্ত। আমি গত মে মাসে যোগদানের আগেই এটা করা হয়েছিল। কিন্তু এখনো এর শুনানি শুরু হয়নি।
প্রথম আলো : বর্তমানে ৮টি বেসরকারি, ৩৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। আরও ১০৮টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দরখাস্ত পাইপলাইনে আছে? কতটি আপনারা বিবেচনা করবেন?
আবদুল মান্নান : বিবেচনার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের। তবে নতুনরা যখন অনুমোদনের জন্য দরখাস্ত করে, মন্ত্রণালয় আমাদের কাছে পাঠায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শর্ত পূরণ করে কি না দেখার জন্য।
প্রথম আলো : এটা প্রতিষ্ঠার আগে না পরে? আগে হলে আপনাদের সুপারিশ গ্রাহ্য বা অগ্রাহ্য করার অনুপাত কেমন?
আবদুল মান্নান : আগে। মন্ত্রণালয় বলে এই দরখাস্তকারীরা পূর্বশর্ত পালন করেছে কি না, তা যাচাই করে আমাদের বলুন। কমিশন যদি না বলে তাহলে সরকার কিন্তু অনুমোদন দেয় না। প্রাথমিক শর্ত মানলে তবে অনুমতি দেওয়া হয়।
প্রথম আলো : তাহলে আপনি নিজেই যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে মুদি দোকান বলছেন, সেগুলো কি প্রতিষ্ঠার পরে মুদি দোকানে পরিণত হয়েছে নাকি তাদের অনেকে শুরুই করেছিল মুদি দোকান হয়েই?
আবদুল মান্নান : কেউ কেউ ভাড়া নিয়েছে একটি দালান। আমি মুদি দোকান ওই অর্থে বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয়কে যে আঙ্গিকে সৃষ্টি করা হয়, তার উদ্দেশ্য থাকে এগুলো অ-মুনাফাভোগী থাকবে। এসব প্রতিষ্ঠানের বোর্ডে যাঁরা থাকেন, তাঁদের বলা হয় ট্রাস্টি। তার মানে একটি ট্রাস্ট আইনের আওতায় তারা চলে। এখন দেখা যায়, একটি দালানের নিচে মুদি দোকান, ওপরে বিশ্ববিদ্যালয় চালু করেছে। বছরের পর বছর ধরে এটা চলছে, সেখানে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা নেই। তারা নানা অজুহাতে অর্থ তুলে নিচ্ছে। যারা এটা করছে তাদের সংখ্যা একেবারে কম নয়।
প্রথম আলো : আপনি কি একটি সমীক্ষা করবেন যে এ রকম মুদি দোকানরূপী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কত? তাদের চিঠি দেবেন?
আবদুল মান্নান : হ্যাঁ, দেব। ঈদের পরে পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে এই উদ্যোগ নেব। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান এবং উপাচার্যকে নিয়ে তিন থেকে চারটি পর্যায়ে বৈঠকে বসব।
প্রথম আলো : আপনি বলছেন আদালতের রায় ছাড়া অবৈধ ক্যাম্পাস বন্ধ করতে পারবেন না। কিন্তু অনেকের মতে, এটা নেতৃত্বের প্রশ্ন। আপনারা আইন প্রয়োগ করে তালাবদ্ধ করে দিতে পারেন। যাঁরা প্রতিবাদী হবেন, তাঁরা বৈধতার সনদ দেখিয়ে খুলিয়ে নেবেন।
আবদুল মান্নান : আমরা তালা মারতে পারি না। পারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আমরা সব সময় কিন্তু বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাপারে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে থাকি।
প্রথম আলো : তার মানে দাঁড়াল, শিক্ষা মন্ত্রণালয় তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ?
আবদুল মান্নান : ব্যর্থ আমি বলব না। তার নানা কারণ থাকতে পারে। মন্ত্রণালয়ের তো অনেক কাজ, তার মধ্যে এটা অন্যতম। সেখানে পর্যাপ্ত লোকবল না থাকতে পারে। তবে মন্ত্রণালয় যদি আরও একটু সক্রিয় হয়, তাহলে আমরা যৌথভাবে একটা উত্তরণ ঘটাতে পারব।
প্রথম আলো : শিক্ষার মানের অধঃপতিত দশা চলছে? বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত নিচে।
আবদুল মান্নান : এক শ ভাগ একমত। আমরা শিক্ষার মানের গভীরতা বাড়াতে পারিনি। তবে যেভাবে র্যাঙ্কিং করা হয়, তাতে আমরা কখনো ওপরে উঠব না। পাঁচটি সূচকের অন্যতম হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির মিথস্ক্রিয়া কেমন? ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে গবেষণা করে তোমরা কত টাকা পাও? গবেষণার জন্য শিল্পসমূহ তোমাদের নিয়োগ করে কি না? আমরা সবে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকল্প দিয়ে এই কাজে হাত দিয়েছি। এই মুহূর্তে আমাদের বড় ফোকাস হচ্ছে উচ্চশিক্ষায় মান উন্নয়ন ও যুগোপযোগী করা। এ জন্য সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্প চলছে, ২০১৮ সালের মধ্যে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে এর আওতায় আনা হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোয়ালিটি নিশ্চয়তা সেল থাকবে।
প্রথম আলো : সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেমন চলছে? সবচেয়ে বড় সমস্যা কী?
আবদুল মান্নান : এখানে আবার অন্য রকম সমস্যা। সব থেকে বড় সমস্যা ছাত্র নামধারী কিছু সংগঠন, যারা নিয়মিত বিরতি দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
প্রথম আলো : সরকারদলীয় ছাত্রলীগ ছাড়া এখন আর কার কথা বলবেন?
আবদুল মান্নান : আমি ছাত্রলীগ বা ছাত্রদল কিছুই বলব না। আরেকটি বড় সমস্যা যা পাবলিক ও প্রাইভেট উভয়ের জন্য প্রযোজ্য, তা হলো তারা আর শিক্ষক নিয়োগে মেধা আকর্ষণ করতে পারে না।
প্রথম আলো : তার কারণ দলীয় ও আত্মীয়স্বজন বিবেচনায় বিপুলসংখ্যক, এমনকি কৃত্রিম পদ সৃষ্টি করে অতিরিক্ত নিয়োগ ঘটছে, শিক্ষামন্ত্রী অনেক উন্নতির দাবি করেন। অথচ বহু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এই কারণে ভারাক্রান্ত। বাড়তি নিয়োগের খরচ মেটাতে তারা উন্নয়ন খাত থেকে টাকা নিচ্ছে। কতটা সত্যি?
আবদুল মান্নান : দলীয় বিবেচনায় মেধাবীর চেয়ে অ-মেধাবী নেওয়া অনেক বেশি গর্হিত মনে করব। আর নির্দিষ্টভাবে বলব, আগে কিছুটা ছিল এখন নিয়োগে বাইরের হস্তক্ষেপ খুবই উদ্বেগজনক। অনেক সময় বাইরের হস্তক্ষেপের কারণে উপাচার্যদের অপ্রীতিকর সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। আর উন্নয়ন খাত থেকে নেওয়ার সুযোগ নেই, নেওয়া হচ্ছে পৌনঃপুনিক খাত থেকে। অতিরিক্ত পদে নিয়োগ দিতে গিয়ে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘাটতি হচ্ছে। কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘাটতি ৩০-৪০ কোটি টাকা পর্যন্ত হয়েছে।
প্রথম আলো : আইন বলছে, মঞ্জুরি কমিশনের আগাম অনুমোদন ছাড়া নতুন পদ সৃষ্টি করা যাবে না। তাই এই যে তথাকথিত ঘাটতি তা বৈধ নয়।
আবদুল মান্নান : বৈধ নয় বলব না, অনাকাঙ্ক্ষিত বলব।
প্রথম আলো : তার মানে কোনো রুলস বা আপনার আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে না?
আবদুল মান্নান : তা হচ্ছে।
প্রথম আলো : তাহলে এত বড় বেআইনি কাজকে আপনি বেআইনি বলবেন না কেন? জনগণের টাকার অপব্যবহার ফৌজদারি অপরাধ।
আবদুল মান্নান : (হাসি) না। নিশ্চয় বেআইনি বলব। এটি একেবারেই প্রত্যাশিত নয়, গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রথম আলো : আপনাকে ধন্যবাদ।
আবদুল মান্নান : ধন্যবাদ।
প্রথম আলো : আপনি মনে করেন যে মুদি ও গার্মেন্টসের মতো বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। এরা কারা? কীভাবে চলছে?
আবদুল মান্নান : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ২০১০ আইনে তারা কতগুলো শর্ত মেনে অনুমোদন নেয়। পরে দেখা যায়, কেউ কেউ শর্ত মানেন না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়া, নিজস্ব ভবন নেই, ভাড়া করা ভবনে শুরু করেছিল, তাদের নিজস্ব ভবনে ফিরে যাওয়ার শর্ত পূরণ করা। আইনে আছে কোনো আউটার ক্যাম্পাস হবে না। কেউ কেউ এসব বাধ্যবাধকতার ব্যত্যয় ঘটিয়ে তারা কেবল ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরেও আউটার ক্যাম্পাস করেছে।
প্রথম আলো : ২০০৬ সালে কিশোরগঞ্জে প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে এ রকম পদক্ষেপ আর নিতে দেখি না। নেতৃত্বের ব্যর্থতা নয় কি?
আবদুল মান্নান : দেখা যায় না তা ঠিক নয়। কমিশন এমন উদ্যোগ নিলেই সাধারণত উচ্চ আদালতে রিট করে। বর্তমানে এ রকম প্রায় ২০টি মামলা আছে।
প্রথম আলো : এগুলোর যাতে দ্রুত শুনানি হয় সে জন্য আপনি কি প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ চাইবেন?
আবদুল মান্নান : আমরা বিশেষ চেষ্টা করে ইতিমধ্যে ১০টি মামলাকে একটি বেঞ্চে এনেছি, বাকিগুলোও আনার চেষ্টা চলছে। এর একটির সুরাহা হলেই বাকিগুলোর সুরাহা সহজ হতে পারে। এর বেশির ভাগই আউটার ক্যাম্পাস এবং মালিকানার দ্বন্দ্ব-সংক্রান্ত। আমি গত মে মাসে যোগদানের আগেই এটা করা হয়েছিল। কিন্তু এখনো এর শুনানি শুরু হয়নি।
প্রথম আলো : বর্তমানে ৮টি বেসরকারি, ৩৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। আরও ১০৮টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দরখাস্ত পাইপলাইনে আছে? কতটি আপনারা বিবেচনা করবেন?
আবদুল মান্নান : বিবেচনার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের। তবে নতুনরা যখন অনুমোদনের জন্য দরখাস্ত করে, মন্ত্রণালয় আমাদের কাছে পাঠায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শর্ত পূরণ করে কি না দেখার জন্য।
প্রথম আলো : এটা প্রতিষ্ঠার আগে না পরে? আগে হলে আপনাদের সুপারিশ গ্রাহ্য বা অগ্রাহ্য করার অনুপাত কেমন?
আবদুল মান্নান : আগে। মন্ত্রণালয় বলে এই দরখাস্তকারীরা পূর্বশর্ত পালন করেছে কি না, তা যাচাই করে আমাদের বলুন। কমিশন যদি না বলে তাহলে সরকার কিন্তু অনুমোদন দেয় না। প্রাথমিক শর্ত মানলে তবে অনুমতি দেওয়া হয়।
প্রথম আলো : তাহলে আপনি নিজেই যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে মুদি দোকান বলছেন, সেগুলো কি প্রতিষ্ঠার পরে মুদি দোকানে পরিণত হয়েছে নাকি তাদের অনেকে শুরুই করেছিল মুদি দোকান হয়েই?
আবদুল মান্নান : কেউ কেউ ভাড়া নিয়েছে একটি দালান। আমি মুদি দোকান ওই অর্থে বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয়কে যে আঙ্গিকে সৃষ্টি করা হয়, তার উদ্দেশ্য থাকে এগুলো অ-মুনাফাভোগী থাকবে। এসব প্রতিষ্ঠানের বোর্ডে যাঁরা থাকেন, তাঁদের বলা হয় ট্রাস্টি। তার মানে একটি ট্রাস্ট আইনের আওতায় তারা চলে। এখন দেখা যায়, একটি দালানের নিচে মুদি দোকান, ওপরে বিশ্ববিদ্যালয় চালু করেছে। বছরের পর বছর ধরে এটা চলছে, সেখানে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা নেই। তারা নানা অজুহাতে অর্থ তুলে নিচ্ছে। যারা এটা করছে তাদের সংখ্যা একেবারে কম নয়।
প্রথম আলো : আপনি কি একটি সমীক্ষা করবেন যে এ রকম মুদি দোকানরূপী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কত? তাদের চিঠি দেবেন?
আবদুল মান্নান : হ্যাঁ, দেব। ঈদের পরে পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে এই উদ্যোগ নেব। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান এবং উপাচার্যকে নিয়ে তিন থেকে চারটি পর্যায়ে বৈঠকে বসব।
প্রথম আলো : আপনি বলছেন আদালতের রায় ছাড়া অবৈধ ক্যাম্পাস বন্ধ করতে পারবেন না। কিন্তু অনেকের মতে, এটা নেতৃত্বের প্রশ্ন। আপনারা আইন প্রয়োগ করে তালাবদ্ধ করে দিতে পারেন। যাঁরা প্রতিবাদী হবেন, তাঁরা বৈধতার সনদ দেখিয়ে খুলিয়ে নেবেন।
আবদুল মান্নান : আমরা তালা মারতে পারি না। পারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আমরা সব সময় কিন্তু বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাপারে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে থাকি।
প্রথম আলো : তার মানে দাঁড়াল, শিক্ষা মন্ত্রণালয় তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ?
আবদুল মান্নান : ব্যর্থ আমি বলব না। তার নানা কারণ থাকতে পারে। মন্ত্রণালয়ের তো অনেক কাজ, তার মধ্যে এটা অন্যতম। সেখানে পর্যাপ্ত লোকবল না থাকতে পারে। তবে মন্ত্রণালয় যদি আরও একটু সক্রিয় হয়, তাহলে আমরা যৌথভাবে একটা উত্তরণ ঘটাতে পারব।
প্রথম আলো : শিক্ষার মানের অধঃপতিত দশা চলছে? বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত নিচে।
আবদুল মান্নান : এক শ ভাগ একমত। আমরা শিক্ষার মানের গভীরতা বাড়াতে পারিনি। তবে যেভাবে র্যাঙ্কিং করা হয়, তাতে আমরা কখনো ওপরে উঠব না। পাঁচটি সূচকের অন্যতম হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির মিথস্ক্রিয়া কেমন? ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে গবেষণা করে তোমরা কত টাকা পাও? গবেষণার জন্য শিল্পসমূহ তোমাদের নিয়োগ করে কি না? আমরা সবে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকল্প দিয়ে এই কাজে হাত দিয়েছি। এই মুহূর্তে আমাদের বড় ফোকাস হচ্ছে উচ্চশিক্ষায় মান উন্নয়ন ও যুগোপযোগী করা। এ জন্য সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্প চলছে, ২০১৮ সালের মধ্যে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে এর আওতায় আনা হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোয়ালিটি নিশ্চয়তা সেল থাকবে।
প্রথম আলো : সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেমন চলছে? সবচেয়ে বড় সমস্যা কী?
আবদুল মান্নান : এখানে আবার অন্য রকম সমস্যা। সব থেকে বড় সমস্যা ছাত্র নামধারী কিছু সংগঠন, যারা নিয়মিত বিরতি দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
প্রথম আলো : সরকারদলীয় ছাত্রলীগ ছাড়া এখন আর কার কথা বলবেন?
আবদুল মান্নান : আমি ছাত্রলীগ বা ছাত্রদল কিছুই বলব না। আরেকটি বড় সমস্যা যা পাবলিক ও প্রাইভেট উভয়ের জন্য প্রযোজ্য, তা হলো তারা আর শিক্ষক নিয়োগে মেধা আকর্ষণ করতে পারে না।
প্রথম আলো : তার কারণ দলীয় ও আত্মীয়স্বজন বিবেচনায় বিপুলসংখ্যক, এমনকি কৃত্রিম পদ সৃষ্টি করে অতিরিক্ত নিয়োগ ঘটছে, শিক্ষামন্ত্রী অনেক উন্নতির দাবি করেন। অথচ বহু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এই কারণে ভারাক্রান্ত। বাড়তি নিয়োগের খরচ মেটাতে তারা উন্নয়ন খাত থেকে টাকা নিচ্ছে। কতটা সত্যি?
আবদুল মান্নান : দলীয় বিবেচনায় মেধাবীর চেয়ে অ-মেধাবী নেওয়া অনেক বেশি গর্হিত মনে করব। আর নির্দিষ্টভাবে বলব, আগে কিছুটা ছিল এখন নিয়োগে বাইরের হস্তক্ষেপ খুবই উদ্বেগজনক। অনেক সময় বাইরের হস্তক্ষেপের কারণে উপাচার্যদের অপ্রীতিকর সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। আর উন্নয়ন খাত থেকে নেওয়ার সুযোগ নেই, নেওয়া হচ্ছে পৌনঃপুনিক খাত থেকে। অতিরিক্ত পদে নিয়োগ দিতে গিয়ে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘাটতি হচ্ছে। কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘাটতি ৩০-৪০ কোটি টাকা পর্যন্ত হয়েছে।
প্রথম আলো : আইন বলছে, মঞ্জুরি কমিশনের আগাম অনুমোদন ছাড়া নতুন পদ সৃষ্টি করা যাবে না। তাই এই যে তথাকথিত ঘাটতি তা বৈধ নয়।
আবদুল মান্নান : বৈধ নয় বলব না, অনাকাঙ্ক্ষিত বলব।
প্রথম আলো : তার মানে কোনো রুলস বা আপনার আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে না?
আবদুল মান্নান : তা হচ্ছে।
প্রথম আলো : তাহলে এত বড় বেআইনি কাজকে আপনি বেআইনি বলবেন না কেন? জনগণের টাকার অপব্যবহার ফৌজদারি অপরাধ।
আবদুল মান্নান : (হাসি) না। নিশ্চয় বেআইনি বলব। এটি একেবারেই প্রত্যাশিত নয়, গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রথম আলো : আপনাকে ধন্যবাদ।
আবদুল মান্নান : ধন্যবাদ।
No comments