বাংলাদেশ–ভারত ছিটমহল বিনিময়: শিকল ভাঙা উল্লাসে মুক্তির নিশ্বাস
প্রায়
সাত দশক। যাঁদের বয়স ৬৮ বছরের বেশি, তাঁরা দু-দুবার দেশ স্বাধীন হতে
দেখেছেন, কিন্তু কোনো নাগরিকত্বের পরিচয় পাননি। তারপর যাঁদের জন্ম,
তাঁরাও বঞ্চিত ছিলেন ওই জাতীয় পরিচয় থেকে, মৌলিক সব নাগরিক অধিকার থেকে।
জন্মনিবন্ধন থেকে মৃত্যুসনদ, স্কুলে ভর্তি থেকে চাকরিবাকরি, জমি কেনাবেচা
থেকে বিয়ে-শাদি—সবকিছুতেই মিথ্যা আর ভুল ঠিকানা। এবার এ মিথ্যারই শিকল
ভাঙলেন তাঁরা। আর শিকল ভাঙার উল্লাসে, মুক্তির নিশ্বাসে প্রথম সূর্যোদয়ও
দেখলেন তাঁরা।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তির পর গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে বিনিময় হয়েছে দুই দেশের মধ্যে থাকা ১৬২টি ছিটমহল। সেই সঙ্গে মিথ্যা ছেড়ে সত্যের আলোয় পথ চলা শুরু করেছেন এখানকার বাসিন্দারাও। এখন মুক্ত আকাশে নিশ্বাস নিতে পারছেন তাঁরা।
ভারতের ভেতর ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহল ও বাংলাদেশের ভেতর ১১১টি ভারতীয় ছিটমহল বিনিময় হওয়ার ফলে বাংলাদেশের ভেতর থাকা ছিটমহলবাসীরা পাচ্ছেন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আর ভারতের ভেতর থাকা ছিটমহলবাসীরা পাচ্ছেন ভারতের নাগরিকত্ব।
নতুন দেশ, নতুন পতাকা, নতুন জাতীয়তা, স্বাধীন পরিচয়—এ সবই এবার পাচ্ছেন দেশের মাটিতে পরগাছা হয়ে থাকা ছিটমহলবাসী। তাই তো এত সব পাওয়ার আনন্দে ঐতিহাসিক এ মাহেন্দ্রক্ষণকে তাঁরা বরণ করে নিলেন নেচে-গেয়ে, মিছিল-স্লোগানে মুখরিত করে। হাতে পতাকা, হৃদয়ে দেশপ্রেম ধারণ করে বিভিন্ন ছিটমহলে রাতভর এ মুক্তির উৎসবে মেতে ওঠেন তাঁরা। কেউ যত্নের সঙ্গে মাথায় বাঁধেন পতাকা।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তির পর গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে বিনিময় হয়েছে দুই দেশের মধ্যে থাকা ১৬২টি ছিটমহল। সেই সঙ্গে মিথ্যা ছেড়ে সত্যের আলোয় পথ চলা শুরু করেছেন এখানকার বাসিন্দারাও। এখন মুক্ত আকাশে নিশ্বাস নিতে পারছেন তাঁরা।
ভারতের ভেতর ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহল ও বাংলাদেশের ভেতর ১১১টি ভারতীয় ছিটমহল বিনিময় হওয়ার ফলে বাংলাদেশের ভেতর থাকা ছিটমহলবাসীরা পাচ্ছেন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আর ভারতের ভেতর থাকা ছিটমহলবাসীরা পাচ্ছেন ভারতের নাগরিকত্ব।
নতুন দেশ, নতুন পতাকা, নতুন জাতীয়তা, স্বাধীন পরিচয়—এ সবই এবার পাচ্ছেন দেশের মাটিতে পরগাছা হয়ে থাকা ছিটমহলবাসী। তাই তো এত সব পাওয়ার আনন্দে ঐতিহাসিক এ মাহেন্দ্রক্ষণকে তাঁরা বরণ করে নিলেন নেচে-গেয়ে, মিছিল-স্লোগানে মুখরিত করে। হাতে পতাকা, হৃদয়ে দেশপ্রেম ধারণ করে বিভিন্ন ছিটমহলে রাতভর এ মুক্তির উৎসবে মেতে ওঠেন তাঁরা। কেউ যত্নের সঙ্গে মাথায় বাঁধেন পতাকা।
আনন্দে
উদ্বেলিত ছিটের মানুষেরা ওড়ান ফানুস, পোড়ান আতশবাজি। করেন ব্যান্ড পার্টির
তালেতালে নাচ। হয় মশাল মিছিলও। উৎসবের এ জোয়ারে যোগ দেন ছেলে-বুড়ো,
কিশোর-যুবা, তরুণ-তরুণীনির্বিশেষে সবাই।
রংবেরঙের কাগজ, রঙিন বাতিতে সাজানো হয়েছে ছিটমহলগুলোর বাসাবাড়ি, স্কুল, হাট-বাজার, মেলামাঠ। রাত ১২টায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার প্রতিটি ছিটমহলেই প্রজ্বালন করা হয় ৬৮টি মোমবাতি। ৬৮ বছরের বন্দিজীবন অবসানের প্রতীক ছিল এসব মোমবাতি। মুক্তির আনন্দের বহুল প্রত্যাশিত এ মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে এর আগে চলে নানা উৎসব-আয়োজন। হয় হা-ডু-ডু, লাঠিখেলা। কোথাও বা নৌকাবাইচ।
ছিটমহলগুলোর বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করা হয় সুদৃশ্য তোরণ। করা হয় বর্ণিল আলোকসজ্জা। বসানো হয়েছে উৎসবমঞ্চ। আজ শনিবার সেখান থেকে বিজয় সমাবেশ শেষে শোভাযাত্রা হওয়ার কথা আছে। সারা দিন ছিটমহলগুলোর নাগরিক কমিটির উদ্যোগে বিভিন্ন খেলাধুলা, গান ও নাটকসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে।
আনুষ্ঠানিকভাবে বিনিময় হওয়ার পরপরই অনেক ছিটমহলে ওড়ানো হয়েছে জাতীয় পতাকা। গতকাল জুমার নামাজের পর ছিটমহলের মসজিদে মসজিদে দোয়া ও শোকরানা আদায় করেন মুসল্লিরা। আর সকাল থেকেই মন্দিরগুলোতে দল বেঁধে পূজা-অর্চনা করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
গত রাতে ছিটমহল বিনিময়ের পর এখানকার বাসিন্দারা নতুন করে জীবন উপভোগের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন। দীর্ঘ প্রায় সাত দশক স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই রয়ে গেলেও এখন সেটা বাস্তবে রূপ নেওয়ার হাতছানি দিচ্ছে তাঁদের। অন্য দেশের বেষ্টনীতে পরগাছা হয়ে আর থাকতে হবে না তাঁদের।
একই আলো-বাতাসে মানুষ হলেও ৬৮ বছর ছিটমহলবাসী পাননি স্বাধীনতার স্বাদ। খাঁচার পাখির বন্দিজীবনের মতোই এতটা বছর কাটিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এক ভয়ানক জীবনযাপন করেছেন।
নিজ দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এসব ছিটমহলের সরাসরি কোনো যোগাযোগ না থাকায় এখানকার বাসিন্দাদের ওপর রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ছিল না। ভিনদেশের সীমানায় হওয়ায় হাসপাতাল, বিদ্যুৎ, স্কুল-কলেজ বা বিচার-প্রশাসনও ছিল না। ফলে বাসিন্দাদের ইচ্ছা থাকলেও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানোর সুযোগ ছিল সীমিত। অনেকেই বাংলাদেশি বা ভারতীয় ঠিকানা ব্যবহার করে লেখাপড়া করলেও ছিটমহলের বাসিন্দা হওয়ায় চাকরির সুযোগ তাঁদের এত দিন হয়নি। তবে এবার সবই হবে বলে আশা তাঁদের।
এদিকে সুদীর্ঘ বঞ্চনা অবসানের আনন্দ ঘোরাফেরা করার মাঝেও ভারত, না বাংলাদেশ—ভিটেমাটি ছেড়ে ভূখণ্ড বেছে নেওয়ার এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে অনেক খণ্ড খণ্ড কষ্ট-যন্ত্রণাও জমাট বেঁধেছে ছিটমহলগুলোতে। যাঁরা ভারতে চলে যাওয়ার জন্য নাম লিখিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে চলছে অন্য রকম প্রস্তুতি।
জমিজমাসহ স্থাবর সম্পত্তি গতকাল পর্যন্ত বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। তবে অদরকারি আসবাব, গাছ ও গবাদিপশু বিক্রি করে দিচ্ছেন বাসিন্দারা। নতুন পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার যেমন উচ্ছ্বাস দেখা গেছে, তেমনি জন্মভিটা ছেড়ে গিয়ে ঠিকমতো আবাস গড়ে তুলতে পারবেন কি না, সে শঙ্কাও দেখা গেছে অনেকের মধ্যে। পরিবার ভেঙে যাচ্ছে নানা বাস্তবতায়, আর্থিক অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কের টানাপোড়েনে।
{প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন: প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা}
রংবেরঙের কাগজ, রঙিন বাতিতে সাজানো হয়েছে ছিটমহলগুলোর বাসাবাড়ি, স্কুল, হাট-বাজার, মেলামাঠ। রাত ১২টায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার প্রতিটি ছিটমহলেই প্রজ্বালন করা হয় ৬৮টি মোমবাতি। ৬৮ বছরের বন্দিজীবন অবসানের প্রতীক ছিল এসব মোমবাতি। মুক্তির আনন্দের বহুল প্রত্যাশিত এ মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে এর আগে চলে নানা উৎসব-আয়োজন। হয় হা-ডু-ডু, লাঠিখেলা। কোথাও বা নৌকাবাইচ।
ছিটমহলগুলোর বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করা হয় সুদৃশ্য তোরণ। করা হয় বর্ণিল আলোকসজ্জা। বসানো হয়েছে উৎসবমঞ্চ। আজ শনিবার সেখান থেকে বিজয় সমাবেশ শেষে শোভাযাত্রা হওয়ার কথা আছে। সারা দিন ছিটমহলগুলোর নাগরিক কমিটির উদ্যোগে বিভিন্ন খেলাধুলা, গান ও নাটকসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে।
আনুষ্ঠানিকভাবে বিনিময় হওয়ার পরপরই অনেক ছিটমহলে ওড়ানো হয়েছে জাতীয় পতাকা। গতকাল জুমার নামাজের পর ছিটমহলের মসজিদে মসজিদে দোয়া ও শোকরানা আদায় করেন মুসল্লিরা। আর সকাল থেকেই মন্দিরগুলোতে দল বেঁধে পূজা-অর্চনা করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
গত রাতে ছিটমহল বিনিময়ের পর এখানকার বাসিন্দারা নতুন করে জীবন উপভোগের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন। দীর্ঘ প্রায় সাত দশক স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই রয়ে গেলেও এখন সেটা বাস্তবে রূপ নেওয়ার হাতছানি দিচ্ছে তাঁদের। অন্য দেশের বেষ্টনীতে পরগাছা হয়ে আর থাকতে হবে না তাঁদের।
একই আলো-বাতাসে মানুষ হলেও ৬৮ বছর ছিটমহলবাসী পাননি স্বাধীনতার স্বাদ। খাঁচার পাখির বন্দিজীবনের মতোই এতটা বছর কাটিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এক ভয়ানক জীবনযাপন করেছেন।
নিজ দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এসব ছিটমহলের সরাসরি কোনো যোগাযোগ না থাকায় এখানকার বাসিন্দাদের ওপর রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ছিল না। ভিনদেশের সীমানায় হওয়ায় হাসপাতাল, বিদ্যুৎ, স্কুল-কলেজ বা বিচার-প্রশাসনও ছিল না। ফলে বাসিন্দাদের ইচ্ছা থাকলেও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানোর সুযোগ ছিল সীমিত। অনেকেই বাংলাদেশি বা ভারতীয় ঠিকানা ব্যবহার করে লেখাপড়া করলেও ছিটমহলের বাসিন্দা হওয়ায় চাকরির সুযোগ তাঁদের এত দিন হয়নি। তবে এবার সবই হবে বলে আশা তাঁদের।
এদিকে সুদীর্ঘ বঞ্চনা অবসানের আনন্দ ঘোরাফেরা করার মাঝেও ভারত, না বাংলাদেশ—ভিটেমাটি ছেড়ে ভূখণ্ড বেছে নেওয়ার এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে অনেক খণ্ড খণ্ড কষ্ট-যন্ত্রণাও জমাট বেঁধেছে ছিটমহলগুলোতে। যাঁরা ভারতে চলে যাওয়ার জন্য নাম লিখিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে চলছে অন্য রকম প্রস্তুতি।
জমিজমাসহ স্থাবর সম্পত্তি গতকাল পর্যন্ত বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। তবে অদরকারি আসবাব, গাছ ও গবাদিপশু বিক্রি করে দিচ্ছেন বাসিন্দারা। নতুন পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার যেমন উচ্ছ্বাস দেখা গেছে, তেমনি জন্মভিটা ছেড়ে গিয়ে ঠিকমতো আবাস গড়ে তুলতে পারবেন কি না, সে শঙ্কাও দেখা গেছে অনেকের মধ্যে। পরিবার ভেঙে যাচ্ছে নানা বাস্তবতায়, আর্থিক অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কের টানাপোড়েনে।
{প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন: প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা}
No comments