মেয়রদের প্রতি আমাদের নজরদারি থাকবে -সাক্ষাৎকারে : সৈয়দ শামসুল হক by এ কে এম জাকারিয়া
বিশেষ সাক্ষাৎকার: ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে
সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হকের নেতৃত্বে সহস্র নাগরিক কমিটি এবং
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এমাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে আদর্শ ঢাকা আন্দোলন কমিটি
গঠিত হয়। কমিটি দুটি দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর পক্ষে সক্রিয় ছিল। এখানে
দুই কমিটির দুই নেতা সিটি নির্বাচন ও নির্বাচনোত্তর রাজনীতি নিয়ে কথা
বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে।
প্রথম আলো : কেমন হলো তিন সিটির নির্বাচন?
সৈয়দ শামসুল হক : এই নির্বাচনটি জরুরি ছিল। টানা ৯৩ দিন দেশে যে পরিস্থিতি বিরাজ করেছে, তা থেকে মুক্তির একটি পথ করে দিয়েছে এই সিটি নির্বাচন। এ সময় মানুষ পুড়িয়ে মারা হয়েছে, মানুষের জীবন-জীবিকা বিপর্যস্ত হয়েছে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নষ্ট হয়েছে, চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের অর্থনীতি। এসব কারণে মানুষ শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য উদ্গ্রীব ছিল। এই অবস্থায় সিটি নির্বাচনকে আমি ইতিবাচক ও দিক পরিবর্তনকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছি। নির্বাচনে নাগরিকেরা ভোট দিয়েছেন। ঢাকা মহানগরের দুই অংশে দুজন মেয়র, চট্টগ্রামে একজন মেয়র ও ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলররা নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রথম আলো : কিন্তু নির্বাচন নিয়ে অনিয়মের যেসব অভিযোগ উঠেছে ও বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে যেসব ঘটনা ঘটেছে...
সৈয়দ শামসুল হক : মোটা দাগে বলছি, ঢাকায় মোট ভোটকেন্দ্র ছিল দুই হাজার বা তারচেয়ে কিছু বেশি। এত কেন্দ্রের মধ্যে যদি ৫০-৫৫টি কেন্দ্রে গোলযোগ, অনিয়ম ও উচ্ছৃঙ্খলা হয়ে থাকে, তাহলে সেটাকে এতটা বড় করে দেখা ঠিক হবে বলে আমি মনে করি না। যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তার জন্য আমি দুঃখিত ও বিচলিত। অভিযোগ দাখিলের ভিত্তিতে আমি এর তদন্ত দাবি করি এবং তদন্তের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশা করি। তবে একই সঙ্গে নির্বাচনের সময়ের এই দুই ভাগ উচ্ছৃঙ্খলাতাকে মিডিয়ায় এতটা প্রাধান্য দেওয়া দেখেও বিচলিত বোধ করছি। বাকি কেন্দ্রগুলোতে যে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হলো, তার কোনো প্রতিফলন গণমাধ্যমে না দেখে আমি হতাশ হয়েছি। মানুষ শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায়, নির্বাচনের আগে ও পরে সেটাই আমি অনুভব করেছি।
প্রথম আলো : নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল বা জাল ভোট দেওয়ার ঘটনা অতীতে বাংলাদেশে ঘটেছে, কিন্তু সেসব দিন তো আমরা অনেকটাই পার করে এসেছি। নির্বাচনের সময় রাজধানীর মতো জায়গায় ভোটকেন্দ্র বা বুথ দখল, জাল ভোট ও ব্যালট পেপারে গণসিল দেওয়ার ঘটনা কি গ্রহণযোগ্য?
সৈয়দ শামসুল হক : এ ধরনের যেসব ঘটনা কিছু ঘটেছে তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত ছিল না। আসলে আমাদের দেশ বা আমাদের মতো দেশগুলোর নির্বাচনে এ ধরনের কিছু ঘটা নতুন নয়। আমি অবশ্যই এর নিন্দা করি এবং ঘটনাগুলোর তদন্ত দাবি করি। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটতে না পারে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানাই।
প্রথম আলো : বিভিন্ন কেন্দ্রে সাংবাদিকদের সঙ্গে যে আচরণ করা হলো?
সৈয়দ শামসুল হক : এসব ঘটনা খুবই দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনের সময় যেন এমন না ঘটে, সে জন্য সবার সতর্ক থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।
প্রথম আলো : আপনি বলেছেন, দেশে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছিল তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এই নির্বাচন জরুরি ছিল। নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলর ছাড়া এই নির্বাচন থেকে আর কোনো প্রাপ্তি কি এসেছে?
সৈয়দ শামসুল হক : যে দিকটি বিশেষভাবে লক্ষ করা দরকার তা হচ্ছে, নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পরস্পরের প্রতি সৌহার্দ্যমূলক আচরণ। প্রতিপক্ষকে কেউ বাক্যবাণে জর্জরিত করেননি। আমি মনে করি, এটা ভবিষ্যতের নির্বাচনের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। আরেকটি বিষয় আমাকে আশান্বিত করেছে, তা হচ্ছে তারুণ্যের জাগরণ। এই নির্বাচনের অধিকাংশ প্রার্থীই ছিলেন তরুণ ও মধ্য তরুণ বয়সের। ঢাকার নির্বাচিত দুই মেয়রসহ সব প্রার্থীর কথা বিবেচনায় নিয়েই বলছি, তাঁদের পূর্ব অভিজ্ঞতা হয়তো নেই। কিন্তু তাঁদের মধ্যে যে বিশ্বাস, সংকল্প ও প্রাণশক্তি দেখেছি, তাতে আমার মনে হয়েছে অচিরেই একটি শুভ ও সুস্থ পরিবেশ এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে কাজ করার প্রত্যাশা জোরদার হয়েছে।
প্রথম আলো : নির্বাচন শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিল। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
সৈয়দ শামসুল হক : আমি মনে করি কাজটি করে বিএনপি দূরদর্শিতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়নি।
প্রথম আলো : আপনি কি মনে করেন বিএনপির এই নির্বাচন বর্জন পূর্বপরিকল্পিত ছিল?
সৈয়দ শামসুল হক : এতটা অনুমান করতে চাই না। তবে নির্বাচন শুরুর তিন ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রামে এবং চার ঘণ্টার মধ্যে ঢাকায় নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিএনপির নির্বাচন বর্জনে আমি অত্যন্ত হতাশ হয়েছি। কারণ, ভোটের আগের দিন পর্যন্ত তারা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়েছে।
প্রথম আলো : তিন সিটি নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে সহস্র নাগরিক কমিটির উদ্যোগ নিলেন কেন? শত নাগরিক কমিটির পাল্টা হিসেবেই কি এটা করা হয়েছে?
সৈয়দ শামসুল হক : এটা হঠাৎ নয়। আমি রাজনীতি করি না, সাহিত্য করি। দেশের নাগরিক হিসেবে একটা উত্তরণ চেয়েছি, স্থিতিশীলতা চেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধজাত এই দেশে একটি সুস্থ, সুন্দর ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ চেয়েছি। নির্বাচনে জয়-পরাজয় আছে, আদর্শে-আদর্শে সংঘাত আছে, কিন্তু দেশ বড়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধরেই আমাদের চলতে হবে, এগোতে হবে। এই নির্বাচনকে আমরা একটি সুযোগ হিসেবে নিয়েছি। আর সব দায়িত্ব তো সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। সেই হিসেবেই আমরা উদ্যোগ নিয়েছি এবং দুজন প্রার্থীকে আমরা সমর্থন দিয়েছি। তাঁদের ব্যাপারে আমাদের আস্থা রয়েছে যে তাঁরা ভালো কাজ করবেন। সেই ১৯৪৮ সালের মার্চ থেকে ঢাকায় আছি, দীর্ঘদিনে অনেক কিছু দেখেছি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নির্বিঘ্ন করতে দীর্ঘদিনের নাগরিক হিসেবে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।
প্রথম আলো : আপনারা যে প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেছেন, সরকারি দলও তাঁদের সমর্থন দিয়েছে। আপনারা কি সরকারের হয়ে কাজ করলেন?
সৈয়দ শামসুল হক : সবকিছুকে এভাবে দেখলে তো হবে না। আমরা যে প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেছি, তাঁরা আমাদের বিবেচনায় যোগ্য, কর্মঠ ও আদর্শে উন্নত। সরকার বা সরকারি দল তাঁদের সমর্থন দিল কি দেয়নি, তা বড় নয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বললে বা বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানালেই কেউ আওয়ামী লীগ হয়ে যাবেন, ব্যাপারটি তা নয়। তেমনি সরকার সমর্থন দিল বলেই আমি সরকারের লোক হয়ে গেলাম, এমন ভাবনা ভুল। এটা অবৈধ চিন্তা। দেশ, মুক্তিযুদ্ধ—এসব সব সময়েই আমার কাছে বড় বিষয়।
প্রথম আলো : যাঁরা নির্বাচিত হলেন, তাঁরা সামনে কী কাজ করেন বা তাঁদের কাজকর্মে ভবিষ্যতে সহস্র নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে আপনাদের কোনো নজরদারি থাকবে কি?
সৈয়দ শামসুল হক : আমরা যাঁদের সমর্থন দিয়েছি, তাঁরা বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচিত মেয়ররা নাগরিকদের অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এসব যথাযথভাবে পালন হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে অবশ্যই আমাদের নজরদারি থাকবে। কী করলে ও কীভাবে করলে ভালো হয়, সেই পরামর্শও থাকবে। নির্বাচনের সময় তাঁদের পক্ষ নিলাম আর পরে বসে পড়লাম, তা তো হয় না। আমরা নগরের প্রশাসন ও নাগরিকদের মধ্যে একটি সাঁকো হিসেবে কাজ করতে চাই।
প্রথম আলো : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সৈয়দ শামসুল হক : ধন্যবাদ।
প্রথম আলো : কেমন হলো তিন সিটির নির্বাচন?
সৈয়দ শামসুল হক : এই নির্বাচনটি জরুরি ছিল। টানা ৯৩ দিন দেশে যে পরিস্থিতি বিরাজ করেছে, তা থেকে মুক্তির একটি পথ করে দিয়েছে এই সিটি নির্বাচন। এ সময় মানুষ পুড়িয়ে মারা হয়েছে, মানুষের জীবন-জীবিকা বিপর্যস্ত হয়েছে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নষ্ট হয়েছে, চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের অর্থনীতি। এসব কারণে মানুষ শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য উদ্গ্রীব ছিল। এই অবস্থায় সিটি নির্বাচনকে আমি ইতিবাচক ও দিক পরিবর্তনকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছি। নির্বাচনে নাগরিকেরা ভোট দিয়েছেন। ঢাকা মহানগরের দুই অংশে দুজন মেয়র, চট্টগ্রামে একজন মেয়র ও ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলররা নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রথম আলো : কিন্তু নির্বাচন নিয়ে অনিয়মের যেসব অভিযোগ উঠেছে ও বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে যেসব ঘটনা ঘটেছে...
সৈয়দ শামসুল হক : মোটা দাগে বলছি, ঢাকায় মোট ভোটকেন্দ্র ছিল দুই হাজার বা তারচেয়ে কিছু বেশি। এত কেন্দ্রের মধ্যে যদি ৫০-৫৫টি কেন্দ্রে গোলযোগ, অনিয়ম ও উচ্ছৃঙ্খলা হয়ে থাকে, তাহলে সেটাকে এতটা বড় করে দেখা ঠিক হবে বলে আমি মনে করি না। যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তার জন্য আমি দুঃখিত ও বিচলিত। অভিযোগ দাখিলের ভিত্তিতে আমি এর তদন্ত দাবি করি এবং তদন্তের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশা করি। তবে একই সঙ্গে নির্বাচনের সময়ের এই দুই ভাগ উচ্ছৃঙ্খলাতাকে মিডিয়ায় এতটা প্রাধান্য দেওয়া দেখেও বিচলিত বোধ করছি। বাকি কেন্দ্রগুলোতে যে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হলো, তার কোনো প্রতিফলন গণমাধ্যমে না দেখে আমি হতাশ হয়েছি। মানুষ শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায়, নির্বাচনের আগে ও পরে সেটাই আমি অনুভব করেছি।
প্রথম আলো : নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল বা জাল ভোট দেওয়ার ঘটনা অতীতে বাংলাদেশে ঘটেছে, কিন্তু সেসব দিন তো আমরা অনেকটাই পার করে এসেছি। নির্বাচনের সময় রাজধানীর মতো জায়গায় ভোটকেন্দ্র বা বুথ দখল, জাল ভোট ও ব্যালট পেপারে গণসিল দেওয়ার ঘটনা কি গ্রহণযোগ্য?
সৈয়দ শামসুল হক : এ ধরনের যেসব ঘটনা কিছু ঘটেছে তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত ছিল না। আসলে আমাদের দেশ বা আমাদের মতো দেশগুলোর নির্বাচনে এ ধরনের কিছু ঘটা নতুন নয়। আমি অবশ্যই এর নিন্দা করি এবং ঘটনাগুলোর তদন্ত দাবি করি। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটতে না পারে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানাই।
প্রথম আলো : বিভিন্ন কেন্দ্রে সাংবাদিকদের সঙ্গে যে আচরণ করা হলো?
সৈয়দ শামসুল হক : এসব ঘটনা খুবই দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনের সময় যেন এমন না ঘটে, সে জন্য সবার সতর্ক থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।
প্রথম আলো : আপনি বলেছেন, দেশে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছিল তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এই নির্বাচন জরুরি ছিল। নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলর ছাড়া এই নির্বাচন থেকে আর কোনো প্রাপ্তি কি এসেছে?
সৈয়দ শামসুল হক : যে দিকটি বিশেষভাবে লক্ষ করা দরকার তা হচ্ছে, নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পরস্পরের প্রতি সৌহার্দ্যমূলক আচরণ। প্রতিপক্ষকে কেউ বাক্যবাণে জর্জরিত করেননি। আমি মনে করি, এটা ভবিষ্যতের নির্বাচনের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। আরেকটি বিষয় আমাকে আশান্বিত করেছে, তা হচ্ছে তারুণ্যের জাগরণ। এই নির্বাচনের অধিকাংশ প্রার্থীই ছিলেন তরুণ ও মধ্য তরুণ বয়সের। ঢাকার নির্বাচিত দুই মেয়রসহ সব প্রার্থীর কথা বিবেচনায় নিয়েই বলছি, তাঁদের পূর্ব অভিজ্ঞতা হয়তো নেই। কিন্তু তাঁদের মধ্যে যে বিশ্বাস, সংকল্প ও প্রাণশক্তি দেখেছি, তাতে আমার মনে হয়েছে অচিরেই একটি শুভ ও সুস্থ পরিবেশ এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে কাজ করার প্রত্যাশা জোরদার হয়েছে।
প্রথম আলো : নির্বাচন শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিল। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
সৈয়দ শামসুল হক : আমি মনে করি কাজটি করে বিএনপি দূরদর্শিতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়নি।
প্রথম আলো : আপনি কি মনে করেন বিএনপির এই নির্বাচন বর্জন পূর্বপরিকল্পিত ছিল?
সৈয়দ শামসুল হক : এতটা অনুমান করতে চাই না। তবে নির্বাচন শুরুর তিন ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রামে এবং চার ঘণ্টার মধ্যে ঢাকায় নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিএনপির নির্বাচন বর্জনে আমি অত্যন্ত হতাশ হয়েছি। কারণ, ভোটের আগের দিন পর্যন্ত তারা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়েছে।
প্রথম আলো : তিন সিটি নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে সহস্র নাগরিক কমিটির উদ্যোগ নিলেন কেন? শত নাগরিক কমিটির পাল্টা হিসেবেই কি এটা করা হয়েছে?
সৈয়দ শামসুল হক : এটা হঠাৎ নয়। আমি রাজনীতি করি না, সাহিত্য করি। দেশের নাগরিক হিসেবে একটা উত্তরণ চেয়েছি, স্থিতিশীলতা চেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধজাত এই দেশে একটি সুস্থ, সুন্দর ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ চেয়েছি। নির্বাচনে জয়-পরাজয় আছে, আদর্শে-আদর্শে সংঘাত আছে, কিন্তু দেশ বড়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধরেই আমাদের চলতে হবে, এগোতে হবে। এই নির্বাচনকে আমরা একটি সুযোগ হিসেবে নিয়েছি। আর সব দায়িত্ব তো সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। সেই হিসেবেই আমরা উদ্যোগ নিয়েছি এবং দুজন প্রার্থীকে আমরা সমর্থন দিয়েছি। তাঁদের ব্যাপারে আমাদের আস্থা রয়েছে যে তাঁরা ভালো কাজ করবেন। সেই ১৯৪৮ সালের মার্চ থেকে ঢাকায় আছি, দীর্ঘদিনে অনেক কিছু দেখেছি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নির্বিঘ্ন করতে দীর্ঘদিনের নাগরিক হিসেবে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।
প্রথম আলো : আপনারা যে প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেছেন, সরকারি দলও তাঁদের সমর্থন দিয়েছে। আপনারা কি সরকারের হয়ে কাজ করলেন?
সৈয়দ শামসুল হক : সবকিছুকে এভাবে দেখলে তো হবে না। আমরা যে প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেছি, তাঁরা আমাদের বিবেচনায় যোগ্য, কর্মঠ ও আদর্শে উন্নত। সরকার বা সরকারি দল তাঁদের সমর্থন দিল কি দেয়নি, তা বড় নয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বললে বা বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানালেই কেউ আওয়ামী লীগ হয়ে যাবেন, ব্যাপারটি তা নয়। তেমনি সরকার সমর্থন দিল বলেই আমি সরকারের লোক হয়ে গেলাম, এমন ভাবনা ভুল। এটা অবৈধ চিন্তা। দেশ, মুক্তিযুদ্ধ—এসব সব সময়েই আমার কাছে বড় বিষয়।
প্রথম আলো : যাঁরা নির্বাচিত হলেন, তাঁরা সামনে কী কাজ করেন বা তাঁদের কাজকর্মে ভবিষ্যতে সহস্র নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে আপনাদের কোনো নজরদারি থাকবে কি?
সৈয়দ শামসুল হক : আমরা যাঁদের সমর্থন দিয়েছি, তাঁরা বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচিত মেয়ররা নাগরিকদের অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এসব যথাযথভাবে পালন হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে অবশ্যই আমাদের নজরদারি থাকবে। কী করলে ও কীভাবে করলে ভালো হয়, সেই পরামর্শও থাকবে। নির্বাচনের সময় তাঁদের পক্ষ নিলাম আর পরে বসে পড়লাম, তা তো হয় না। আমরা নগরের প্রশাসন ও নাগরিকদের মধ্যে একটি সাঁকো হিসেবে কাজ করতে চাই।
প্রথম আলো : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সৈয়দ শামসুল হক : ধন্যবাদ।
No comments