কামারুজ্জামানের কবরে হাজারো মানুষের ঢল

কামারুজ্জামানের কবরে হাজারো মানুষের ঢল
এখানেই দাফন করা হয় কামারুজ্জামানকে
আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর করা নিরাপত্তাবেষ্টনি
কান্নায় ভেঙে পড়েন গ্রাম পুলিশের এক সদস্য
মুনাজাতে কান্নায় ভেঙে পড়েন দুই যুবক
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের দাফনের পর আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কড়াকড়ি শিথিল করলে তার কবরের পাশে মানুষের ঢল নামে। তারা কামারুজ্জামানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করেন। এ সময় শোকাতুর এলাকাবাসীর আহাজারিতে সেখানে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এলাকাবাসীর মাতম দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্যের চোখও অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে।
এর আগে আজ রোববার সকাল ৫টা ২০ মিনিটে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তার প্রতিষ্ঠিত শেরপুর সদর উপজেলার কুমরী বাজিতখিলা এতিমখানার পাশের জমিতে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে রোববার ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে এতিমখানা মাঠে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে কামারুজ্জামানের ৪/৫জন আত্মীয়সহ শতাধিক মানুষ অংশ নেন। এ সময় আশেপাশে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হলেও আইনশৃংঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা বেষ্টনির কারণে তারা জানাজায় অংশ নিতে পারেননি। দাফনস্থলে গণমাধ্যম কর্মীসহ স্থানীয়দেরকে যেতে দেয়া হয়নি।
শনিবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে জেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে কুমরী বাজিতখিলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে। তিনস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়। রোববার ভোর ৪টা ১৬ মিনিটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কামারুজ্জামানের লাশ কুমরী বাজিতখিলা গ্রামে এসে পৌঁছে। এ সময় তাঁর বড় ভাই মো. কফিল উদ্দিন প্রশাসনের নিকট থেকে লাশ গ্রহণ করেন। পরে কুমরী বাজিতখিলা এতিমখানা মাঠে অনুষ্ঠিত নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন বাজিতখিলা দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার ও কামারুজ্জামানের ভাগ্নি জামাই মাওলানা আব্দুল হামিদ।
রোববার ভোর ছয়টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কড়াকড়ি শিথিল করলে কামারুজ্জামানের কবরস্থানে হাজার হাজার নারী-পুরুষের ঢল নামে। তারা কামারুজ্জামানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করেন। এ সময় শোকাতুর এলাকাবাসীর আহাজারিতে সেখানে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এলাকাবাসীর মাতম দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্যের চোখও অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে।
বাজিতখিলা ইউনিয়নের মধ্যকুমরী গ্রামের মজিবর রহমান (৪০) ও আব্দুল কুদ্দুস বলেন, তারা নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনুমতি না দেয়ায় জানাযায় অংশ নিতে পারেননি।
বাজিতখিলা গ্রামের কামরুল ইসলাম বলেন, কামারুজ্জামানের জানাজায় অংশ নিতে কয়েক হাজার মানুষ এতিমখানার আশপাশে সমবেত হয়েছিলেন কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের জানাজাস্থলে আসতে দেয়নি।
কুমরী বাজিতখিলা এতিমখানার পরিচালক নূরুল আমিন জানিয়েছেন, জানাজায় শতাধিক মানুষ অংশ নিয়েছেন।
কামারুজ্জামানের বড় ভাই আলমাছ আলী (৬৮) কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমার ভাই কামারুজ্জামান ছিলেন নিরপরাধ ও নির্দোষ। বিচারের নামে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এজন্য যারা দায়ী আল্লাহর কাছে তাঁদের বিচার চাই।’
কামারুজ্জামানের আরেক বড় ভাই মো. কফিল উদ্দিন বলেন, তার (কামারুজ্জামানের) শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মরদেহ কুমরী বাজিতখিলা এতিমখানার পাশে দাফন করা হয়।
এদিকে রোববার ভোর থেকে এ রিপোর্ট (সকাল সাড়ে ৮টা) লিখা পর্যন্ত বাজিতখিলা ইউনিয়নের বিভিন্নস্থানে ৯টি গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এসব জানাজায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জতউল্লাহ, ড. ছামিউল হক ফারুকী, শেরপুর জেলা আমির ডা. মোহাম্মদ শাহাদত হোসাইন, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা মো: হাফিজুর রহমানসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
দাফনস্থলে কর্তব্যরত গণমাধ্যম কর্মীদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে জানতে চাইলে শেরপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে নিরাপত্তাজনিত কারণে সাময়িকভাবে সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.