পানামায় ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবা- ৫০ বছরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে প্রথম বৈঠক

ঐতিহাসিক করমর্দন। পানামায় এসওএ শীর্ষ সম্মেলনের পাশাপাশি
অনুষ্ঠিত বৈঠকের সময় হাত মেলান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন
কেরি ও কিউবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রদ্রিগেস l ছবি: এএফপি
৫০ বছরের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে প্রথম বৈঠক করল যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবা। মধ্য আমেরিকার দেশ পানামায় আয়োজিত আমেরিকা মহাদেশের শীর্ষ সম্মেলনের অংশ হিসেবে এই ঐতিহাসিক বৈঠক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও কিউবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রদ্রিগেস। খবর এএফপি, সিএনএন, বিবিসি ও রয়টার্সের।
পশ্চিম গোলার্ধের নেতারা জড়ো হয়েছেন মধ্য আমেরিকার দেশ পানামায়। সেখানে গতকাল শুক্রবার উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর দুই দিনব্যাপী শীর্ষ সম্মেলন (এসওএ—সামিট অব দি আমেরিকাস) শুরু হয়েছে। ৩০টি দেশের প্রেসিডেন্টরা যোগ দিয়েছেন এতে। তবে সবাই তাকিয়ে আছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রোর দিকে। কারণ, তাঁরা সম্মেলনে মুখোমুখি হবেন এবং এক ফাঁকে বৈঠকও করতে পারেন। শেষ পর্যন্ত বৈঠকটি হলে তা হবে আরেক দফা ঐতিহাসিক ঘটনা। ওবামা-কাস্ত্রো আলোচনার মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের বরফ অনেকটাই গলতে পারে। এসওএ সম্মেলনে কমিউনিস্ট কিউবার অংশগ্রহণ এবারই প্রথম।
স্নায়ুযুদ্ধকালীন দীর্ঘ বৈরিতার ইতি টেনে যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবা গত জানুয়ারি থেকে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করে।
পানামা সিটিতে গত বৃহস্পতিবার রাতে জন কেরি ও ব্রুনো রদ্রিগেস রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বলা হয়েছে, দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে ‘দীর্ঘ ও গঠনমূলক’ আলোচনা হয়েছে।
কাস্ত্রো এবং ওবামার মধ্যে স্বল্প সময়ের জন্য দেখা হয়েছিল ২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্ণবাদবিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে। তবে পানামায় তাঁদের সাক্ষাৎ আরও বেশিক্ষণ স্থায়ী ও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গতকাল রাতে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র বেন রোডস বলেন, ‘আমরা নিশ্চিতভাবে প্রত্যাশা করতে পারি, সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন কাল (আজ শনিবার) তাঁদের একে অপরের সঙ্গে দেখা হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমরা তাঁদের মধ্যে একটি আলোচনারও প্রত্যাশা করি।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, গত বুধবার এই সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশে ওয়াশিংটন ছাড়ার আগে প্রেসিডেন্ট ওবামা রাউল কাস্ত্রোর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, দুই নেতার নিছক করমর্দন বা স্বাভাবিক কুশল বিনিময়ও সবার নজর কাড়বে। একে দুই দেশের বৈরী অতীতকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত হিসেবেই বিবেচনা করা হবে।
এদিকে এমন প্রেক্ষাপটে আরেক বড় ঘটনায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ইতিমধ্যে সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক দেশগুলোর তালিকা থেকে কিউবার নাম বাদ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছে। পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক মার্কিন সিনেট কমিটির সদস্য সিনেটর বেন কারডিন এ কথা জানিয়েছেন। কিউবাকে ওই তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রাখা না-রাখার প্রশ্নে মার্কিন কংগ্রেস ৪৫ দিন সময় পাবে। আর বিষয়টি চূড়ান্ত হলে দুটি দেশের পারস্পরিক দূতাবাস আবার চালু করার পথ সুগম হবে। পাশাপাশি কিউবার ওপর থেকে বেশ কিছু অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেওয়া সহজ হবে। মার্কিন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোও কিউবায় গিয়ে সহজে কাজ করতে পারবে।
কিউবা-যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছিল ১৯৫৯ সালে। কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো এবং তখনকার মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ওই আলোচনায় অংশ নেন। এর দুই বছর পরই দুটি দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়। কয়েক দশক পর গত বছর বারাক ওবামা ও রাউল কাস্ত্রোর ঘোষণার মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের ‘নতুন অধ্যায়’ শুরু করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওবামা তখন বলেন, কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন রাখার নীতি অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.