অশুভ ইঙ্গিতের অকাল মধুচন্দ্রিমা by মাকসুদুল আলম
সার্চ কমিটির বাছাইকৃত এলিট টিম। অসংখ্য
ঘটনার উৎপত্তি স্থল। হাজারো সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু। সামপ্রতিক রাজনৈতিক
তর্ক-বিতর্কের সৃষ্টিকারী রাষ্ট্রীয় এক প্রতিষ্ঠান। পক্ষে বিপক্ষে বাজারে
চাউর আছে নানা কথা। কেউ বলেন মেরুদণ্ড সোজা নেই।
সাদাসিধে
কথায় মাজাভাঙা। আবার কারও মতে রাষ্ট্রের স্বাধীন সাংবিধানিক কমিশন। বিরোধী
১৯ দলীয় জোট নেতাদের ভাষায়, সরকারের আজ্ঞাবহ নির্লজ্জ ক্রীতদাস। তাদের মতে,
সরকারের নীলনকশার এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী দলদাস। কে কি বলে সমালোচনা করে তা
বড় কথা নয়। সভ্য রাষ্ট্রে নিজেদের আচার-আচরণ ও কাজের মাধ্যমেই রাষ্ট্রীয়
প্রতিষ্ঠানের স্বকীয়তা প্রকাশ পায়। অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালন ও ক্ষমতার
সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমেই কেবলমাত্র সর্বজনের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করা সম্ভব।
বলে কয়ে কুৎসা রটিয়ে কারও চরিত্র হনন করা যায় না। কাউকে ছোটও করা যায় না।
বর্তমানে কয়েক ধাপে দেশব্যাপী চলছে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। নানারকম
অনিয়মের অভিযোগের মধ্যেই দুই দফার নির্বাচন শেষ হয়েছে। প্রথম দফায় সরকার
সমর্থিত প্রার্থীদের ভরাডুবির পর তৃণমূলে জনসমর্থন বিষয়ে দেশব্যাপী
সমালোচনার মুখে পড়ে ক্ষমতাসীন দল। প্রশ্নের মুখে পড়ে সরকারের মন্ত্রীদের
তথাকথিত পাঁচ বছরের ম্যান্ডেট। জনগণের দোহাই। দেরিতে হলেও টনক নড়ে সরকারি
দলের। বিদ্রোহী প্রার্থীদের বাগে এনে পরিস্থিতি সামাল দেয়া হয়। দ্বিতীয়
দফায় বিজয় ছিনিয়ে নিতে অনেকটা বেপরোয়া হয়ে পড়ে। আদাজল খেয়ে মাঠে নামে।
বিভিন্ন উপজেলায় প্রার্থীরা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে প্রচারণা চালায়।
যেখানে সেখানে চলে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি থেকে
সহজেই অনুমান করা যায়, দ্বিতীয় দফার নির্বাচন অনেকটা ভোটকেন্দ্র দখলের
উৎসবে পরিণত হয়েছিল। ব্যাপক কারচুপি, ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও জালভোট সহ বেশ
কয়েকটি কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারদের বের করে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছিল।
তথ্য সবার জানা থাকলেও উল্লেখ করা যেতে পারে, যশোরের চৌগাছায় আইনশৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চোখের সামনেই সশস্ত্র দলীয় ক্যাডারদের হামলায়
রক্তাক্ত হয়েছিলেন বিরোধীপক্ষ সমর্থিত প্রার্থী। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের একটি
কেন্দ্রে ১০৭% এরও বেশি ভোট কাস্টিং হয়েছিল। এ ছাড়াও বেশ কিছু কেন্দ্রে
ভোট জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছিল।
সমপ্রতি অভিযোগ উঠেছে, ভোট জালিয়াতি রোধে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যথেষ্ট ক্ষমতা থাকলেও তা প্রয়োগ করা হচ্ছে না। কোন কোন ক্ষেত্রে ক্ষমতা প্রয়োগে কমিশন সচিবালয়ের এখতিয়ার সীমিত বলে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজের মতে ‘সব উপজেলায় নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর সহিংসতার কারণ খতিয়ে দেখবে নির্বাচন কমিশন। কোন ধরনের সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না।’ ততদিনে হয়তো আমজনতার ঘোর কেটে যাবে। প্রকাশিত হয়ে যাবে সরকারি গেজেট- যা অর্থহীন হয়ে পড়বে। ভোট ডাকাতি আর জাল ভোটের মহোৎসবেও নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা প্রয়োগ করা না হলে তা আর কোনদিন প্রয়োগ হবে বলে বিশ্বাস করা কঠিন। আগামী ১৫, ২৩ ও ৩১শে মার্চ সারা দেশে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপের স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ক্ষমতা প্রয়োগে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অনীহা পরবর্তী ধাপের নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ও ভোটকেন্দ্র দখলকারীদের আরও বেশি উৎসাহিত করতে পারে। নির্বাচন কমিশন এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে সহিংসতা আরও বাড়তে পারে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যা মোটেই কারও কাম্য হতে পারে না। দ্বিতীয় ধাপের ফলাফলও প্রায় একই রকম। কোনভাবেই ঠেকানো সম্ভব হয়নি ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয়। রাষ্ট্রশক্তি আর পেশিশক্তির সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ও ভরাডুবি থেকে রেহাই পাওয়া যায়নি। কারণ যা-ই হোক না কেন সত্যিকার অর্থে চমক দেখিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবন্ধন বাতিলকৃত এ দল সমর্থিত ২০ জন প্রার্থী দু’ধাপে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এটি অপ্রত্যাশিত হলেও তা বাস্তব। যা দেশবাসীকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। অনেকের ধারণা, ক্ষমতাসীনদের নির্যাতন-নিপীড়নে তাদের প্রতি জনগণের সহানুভূতি বেড়েছে। অন্যদিকে গর্তের নিচে চলে গেছে সুযোগ-সুবিধার হিসাব-নিকাশ মেলাতে ব্যস্ত থাকা ত্রিখণ্ডিত জাতীয় পার্টি। কেউ বলেন, নামসর্বস্ব জাতীয় সংসদে অবৈধ এ বিরোধী দলটির জ্যান্ত কবর রচিত হয়েছে। কথায় বলে, অতি চালাকের গলায় দড়ি। নির্বাচনী সহিংসতা ও ভোটকেন্দ্র দখলের একই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে উপজেলা নির্বাচনের পরবর্তী ধাপগুলোতে নৈরাজ্য চরম আকার ধারণ করতে পারে। দলীয় ক্যাডারদের সন্ত্রাসী হামলায় সার্বিক পরিস্থিতি পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হতে পারে। অথবা গায়ের জোরে ফলাফল বদলে দেয়ার ষড়যন্ত্র কঠোর রূপ ধারণ করতে পারে। এতে উপজেলা নির্বাচনকে ইস্যু করে বাড়তে পারে রাজনৈতিক অস্থিরতা।
সমপ্রতি খবরে প্রকাশ, উপজেলা নির্বাচন শেষ না হতেই দেড় মাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। মাত্র ১৪৭ আসনে ৫ই জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনে ক্লান্ত না হলেও উপজেলা পরিষদের দু’দফা নির্বাচন করেই হাঁপিয়ে উঠেছেন তিনি। স্বস্তির হাওয়া খেতে এখন নাকি নিউ ইয়র্কে রয়েছেন তিনি। এপ্রিলের মধ্যভাগে তার দেশে ফেরার কথা। ততদিনে বিলকুল ঠাণ্ডা হয়ে যেতে পারে সব কিছু। উপর্যুপরি পরাজয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা যখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন, সরকার যখন আইন পরিবর্তন করে প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ চিরতরে বাতিল করে দিতে চাইছে, এ অবস্থায় পরবর্তী ধাপগুলোর নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী সিইসির দেড় মাসব্যাপী বিদেশ সফর নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হবে- এটাই স্বাভাবিক। বেশির ভাগ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন বাকি রেখেই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ব্যক্তিগত এ সফর নিয়ে ইতিমধ্যে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক সচেতন মহলে। সিইসি’র দীর্ঘমেয়াদি এ সফরে বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। হতে পারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অনেক বেশি ক্লান্ত। রাষ্ট্রের বা সরকারের কাছে থাকতে পারে তার দীর্ঘ দিনের পাওনা ছুটি। কোন জরুরি প্রয়োজনে বা অল্প সময়ের জন্য প্রমোদ ভ্রমণ হলেও তা বেমানান হতো না। সৃষ্টি হতো না জল্পনা-কল্পনার। ভোট কারচুপি রোধে যথেষ্ট ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ক্ষমতা প্রয়োগে অনীহা, উপজেলা নির্বাচনে যত্রতত্র নির্বাচনী প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘন, ব্যাপক ভোট ডাকাতি, হামলা-ভাঙচুর ও ভোট কেন্দ্র দখলের হিড়িকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন যখন প্রশ্নবিদ্ধ ঠিক তখনই তার দেড় মাসব্যাপী সস্ত্রীক আমেরিকা ভ্রমণ কোন অদৃশ্য শক্তির ইশারায় কিনা জানা নেই। এ অকাল মধুচন্দ্রিমা নির্বাহী বিভাগের কলকাঠিতে কিনা বা তা কোন অশুভ ইঙ্গিত বহন করে কিনা হলফ করে বলতে পারছি না। তবে রাষ্ট্রের সঙ্কটময় মুহূর্তে দীর্ঘমেয়াদি ব্যক্তিগত প্রমোদ ভ্রমণ কতটা গ্রহণযোগ্য তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। বিবেকের কাছে নিজেকে অপরাধী বলে মনে হতে পারে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের প্রতি যথেষ্ট সম্মান রেখেই বলছি। বিশেষ করে জনগণের কষ্টার্জিত আয়করের টাকায় যাদের বেতন ভাতাদি হয় তাদের বেলায় এ সফর কতটা সমর্থনযোগ্য তা নিয়ে জবাবদিহির প্রশ্ন উঠতেই পারে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদে আসীন ব্যক্তির এমন গা-ছাড়া মনোভাব কতটা যুক্তিযুক্ত তা দেশের সাধারণ জনগণ ও পাঠকই ভাল বলতে পারবেন। সামান্য আদার বেপারি হয়ে জাহাজের খবর নিতে চাই না।
সমপ্রতি অভিযোগ উঠেছে, ভোট জালিয়াতি রোধে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যথেষ্ট ক্ষমতা থাকলেও তা প্রয়োগ করা হচ্ছে না। কোন কোন ক্ষেত্রে ক্ষমতা প্রয়োগে কমিশন সচিবালয়ের এখতিয়ার সীমিত বলে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজের মতে ‘সব উপজেলায় নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর সহিংসতার কারণ খতিয়ে দেখবে নির্বাচন কমিশন। কোন ধরনের সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না।’ ততদিনে হয়তো আমজনতার ঘোর কেটে যাবে। প্রকাশিত হয়ে যাবে সরকারি গেজেট- যা অর্থহীন হয়ে পড়বে। ভোট ডাকাতি আর জাল ভোটের মহোৎসবেও নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা প্রয়োগ করা না হলে তা আর কোনদিন প্রয়োগ হবে বলে বিশ্বাস করা কঠিন। আগামী ১৫, ২৩ ও ৩১শে মার্চ সারা দেশে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপের স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ক্ষমতা প্রয়োগে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অনীহা পরবর্তী ধাপের নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ও ভোটকেন্দ্র দখলকারীদের আরও বেশি উৎসাহিত করতে পারে। নির্বাচন কমিশন এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে সহিংসতা আরও বাড়তে পারে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যা মোটেই কারও কাম্য হতে পারে না। দ্বিতীয় ধাপের ফলাফলও প্রায় একই রকম। কোনভাবেই ঠেকানো সম্ভব হয়নি ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয়। রাষ্ট্রশক্তি আর পেশিশক্তির সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ও ভরাডুবি থেকে রেহাই পাওয়া যায়নি। কারণ যা-ই হোক না কেন সত্যিকার অর্থে চমক দেখিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবন্ধন বাতিলকৃত এ দল সমর্থিত ২০ জন প্রার্থী দু’ধাপে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এটি অপ্রত্যাশিত হলেও তা বাস্তব। যা দেশবাসীকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। অনেকের ধারণা, ক্ষমতাসীনদের নির্যাতন-নিপীড়নে তাদের প্রতি জনগণের সহানুভূতি বেড়েছে। অন্যদিকে গর্তের নিচে চলে গেছে সুযোগ-সুবিধার হিসাব-নিকাশ মেলাতে ব্যস্ত থাকা ত্রিখণ্ডিত জাতীয় পার্টি। কেউ বলেন, নামসর্বস্ব জাতীয় সংসদে অবৈধ এ বিরোধী দলটির জ্যান্ত কবর রচিত হয়েছে। কথায় বলে, অতি চালাকের গলায় দড়ি। নির্বাচনী সহিংসতা ও ভোটকেন্দ্র দখলের একই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে উপজেলা নির্বাচনের পরবর্তী ধাপগুলোতে নৈরাজ্য চরম আকার ধারণ করতে পারে। দলীয় ক্যাডারদের সন্ত্রাসী হামলায় সার্বিক পরিস্থিতি পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হতে পারে। অথবা গায়ের জোরে ফলাফল বদলে দেয়ার ষড়যন্ত্র কঠোর রূপ ধারণ করতে পারে। এতে উপজেলা নির্বাচনকে ইস্যু করে বাড়তে পারে রাজনৈতিক অস্থিরতা।
সমপ্রতি খবরে প্রকাশ, উপজেলা নির্বাচন শেষ না হতেই দেড় মাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। মাত্র ১৪৭ আসনে ৫ই জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনে ক্লান্ত না হলেও উপজেলা পরিষদের দু’দফা নির্বাচন করেই হাঁপিয়ে উঠেছেন তিনি। স্বস্তির হাওয়া খেতে এখন নাকি নিউ ইয়র্কে রয়েছেন তিনি। এপ্রিলের মধ্যভাগে তার দেশে ফেরার কথা। ততদিনে বিলকুল ঠাণ্ডা হয়ে যেতে পারে সব কিছু। উপর্যুপরি পরাজয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা যখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন, সরকার যখন আইন পরিবর্তন করে প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ চিরতরে বাতিল করে দিতে চাইছে, এ অবস্থায় পরবর্তী ধাপগুলোর নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী সিইসির দেড় মাসব্যাপী বিদেশ সফর নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হবে- এটাই স্বাভাবিক। বেশির ভাগ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন বাকি রেখেই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ব্যক্তিগত এ সফর নিয়ে ইতিমধ্যে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক সচেতন মহলে। সিইসি’র দীর্ঘমেয়াদি এ সফরে বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। হতে পারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অনেক বেশি ক্লান্ত। রাষ্ট্রের বা সরকারের কাছে থাকতে পারে তার দীর্ঘ দিনের পাওনা ছুটি। কোন জরুরি প্রয়োজনে বা অল্প সময়ের জন্য প্রমোদ ভ্রমণ হলেও তা বেমানান হতো না। সৃষ্টি হতো না জল্পনা-কল্পনার। ভোট কারচুপি রোধে যথেষ্ট ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ক্ষমতা প্রয়োগে অনীহা, উপজেলা নির্বাচনে যত্রতত্র নির্বাচনী প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘন, ব্যাপক ভোট ডাকাতি, হামলা-ভাঙচুর ও ভোট কেন্দ্র দখলের হিড়িকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন যখন প্রশ্নবিদ্ধ ঠিক তখনই তার দেড় মাসব্যাপী সস্ত্রীক আমেরিকা ভ্রমণ কোন অদৃশ্য শক্তির ইশারায় কিনা জানা নেই। এ অকাল মধুচন্দ্রিমা নির্বাহী বিভাগের কলকাঠিতে কিনা বা তা কোন অশুভ ইঙ্গিত বহন করে কিনা হলফ করে বলতে পারছি না। তবে রাষ্ট্রের সঙ্কটময় মুহূর্তে দীর্ঘমেয়াদি ব্যক্তিগত প্রমোদ ভ্রমণ কতটা গ্রহণযোগ্য তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। বিবেকের কাছে নিজেকে অপরাধী বলে মনে হতে পারে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের প্রতি যথেষ্ট সম্মান রেখেই বলছি। বিশেষ করে জনগণের কষ্টার্জিত আয়করের টাকায় যাদের বেতন ভাতাদি হয় তাদের বেলায় এ সফর কতটা সমর্থনযোগ্য তা নিয়ে জবাবদিহির প্রশ্ন উঠতেই পারে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদে আসীন ব্যক্তির এমন গা-ছাড়া মনোভাব কতটা যুক্তিযুক্ত তা দেশের সাধারণ জনগণ ও পাঠকই ভাল বলতে পারবেন। সামান্য আদার বেপারি হয়ে জাহাজের খবর নিতে চাই না।
৫ই মার্চ ২০১৪, টোকিও
No comments