স্বল্পশিক্ষিতদের হাতেই সচল অর্থনীতি by জাহাঙ্গীর শাহ
বাংলাদেশের
অর্থনীতিতে উচ্চশিক্ষিত শ্রমশক্তির অবদান সামান্যই। বরং দেশের অর্থনীতি
টিকে আছে অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত বিশাল এক শ্রমশক্তির শ্রমের ওপর।
স্বাধীনতার পর প্রথম তিন দশকে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) গড়
প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৪ দশমিক ৯ শতাংশ।
সেখান
থেকে প্রায় এক দশক ধরে বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৮
শতাংশ। আর এই প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রধান চালিকাশক্তি তাঁরাই, যাঁদের আদৌ
কোনো শিক্ষা নেই অথবা কেবল প্রাথমিক শিক্ষা পেয়েছেন।
সামগ্রিকভাবে
বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হলো নিম্ন
উৎপাদনশীলতার রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প, বিদেশে অদক্ষ শ্রমিক রপ্তানি
এবং নিম্ন প্রযুক্তির ক্ষুদ্র উদ্যোগ। এঁরা মূলত অশিক্ষিত বা কম শিক্ষিত।
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের শ্রমশক্তি জরিপ বিশ্লেষণ করে বলেছে, দেশে প্রায় পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ শ্রমিক রয়েছেন। এর মধ্যে দুই কোটি ৩২ লাখ বা ৪১ শতাংশের কোনো ধরনের শিক্ষাই নেই। আর এক কোটি ৩০ লাখ শ্রমিক প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি পার হননি। বাকিদের মধ্যে মাত্র ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন। আর দশমিক ২ শতাংশ শ্রমিকের রয়েছে কারিগরি ডিপ্লোমা ডিগ্রি।
সব মিলিয়ে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাত মিলিয়ে বাংলাদেশের মোট শ্রমিকের ৯৬ শতাংশের মাধ্যমিক শিক্ষা নেই। অর্থাৎ শ্রমবাজারে উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিদের অংশীদারি নিতান্তই কম। নারী-পুরুষনির্বিশেষে এই চিত্র উঠে এসেছে। মূলত জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরাই এই শ্রমশক্তির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। আর গ্রামের প্রায় অর্ধেক বা ৪৫ শতাংশ শ্রমিকের কোনো ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। এ চিত্র শহরে কিছুটা ভালো, শহরে এই হার ২৮ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংক মনে করে, এই শ্রমশক্তি নিয়ে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতে পারবে না বাংলাদেশ। স্বল্প দক্ষতা-অল্প মজুরি-কম উৎপাদনশীলতা-নিম্ন প্রবৃদ্ধির ফাঁদে আটকে গেছে বাংলাদেশ। কারণ, এখানে শ্রমিকেরা কম শিক্ষিত ও অদক্ষ, ফলে উৎপাদনশীলতা কম, আর দক্ষতার অভাবে মজুরি পানও কম। আর এ কারণে অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধিও কম।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ মনে করেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চশিক্ষার চাহিদা বাড়ে। উচ্চশিক্ষা ব্যক্তিগতভাবে লাভজনক হলেও অনেক সময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়তা করে না। উচ্চশিক্ষার ডিগ্রি যদি শুধু চাকরি পাওয়ার যোগ্যতার মাপকাঠি হয় কিন্তু উৎপাদনশীলতা না বাড়ায়, তাতে লাভ নেই। অনেক ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা কেবল অনুৎপাদনশীল খাতে অবৈধ আয়-রোজগারের সুবিধা করে দেয়।
বিশ্বব্যাংক গত মঙ্গলবার বাংলাদেশের শিক্ষা খাত নিয়ে একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে দেশের শ্রমশক্তির সঙ্গে শিক্ষার সম্পর্ক এবং অর্থনীতিতে এর প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শ্রমবাজারটি কৃষি, শিল্প ও সেবা এই খাতে বিভক্ত। বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১৩ লাখ শ্রমিক নতুন করে যুক্ত হচ্ছেন। মোট শ্রমশক্তির সাড়ে ৮৮ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। মোট শ্রমশক্তির অর্ধেকই কৃষিশ্রমিক। শিল্প খাতে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ শ্রমিক কাজ করেন। ৩৫ শতাংশের বেশি কাজ করেন সেবা খাতে।
তবে কৃষি খাতের শ্রমিকেরাই তাঁদের পেশা পরিবর্তন করে অ-কৃষি খাত বিশেষ করে শিল্প খাতে এসে যুক্ত হচ্ছেন। এতে নিম্ন দক্ষতার পাশাপাশি নিম্ন মজুরির শ্রমিক ভিড়ছেন শিল্প খাতে। বিগত দেড় দশকে (১৯৯৫-২০১০) তৈরি পোশাক খাতে গড়ে ১২ শতাংশ হারে শ্রমিক বেড়েছে। আর গ্রামের নারীরা শহরে এসে পোশাক কারখানায় কাজ করছেন।
অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, দেশে এখন সবার জন্য শিক্ষাই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপযোগী মানবসম্পদ তৈরি।
এই যখন অবস্থা, তখন বিশ্বব্যাংক উদ্বেগজনক খবর দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে বাজেট বরং কমছে। বিগত চার অর্থবছরেই শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ কমছে। উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে ২০১০-১১ অর্থবছরে বাজেটের মোট ব্যয়ের ১৩ দশমিক ৯ শতাংশই বরাদ্দ ছিল শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে। এরপর ক্রমান্বয়ে তা কমতে কমতে চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১১ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। এর মধ্যে ২০১২-১৩ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে যথাক্রমে ১১ দশমিক ৫ এবং ১২ দশমিক ৪ শতাংশ বরাদ্দ ছিল।
আরও আশঙ্কার বিষয় হলো, উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বা বরাদ্দ যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, ২০০৮ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলো শিক্ষা খাতে গড়ে বাজেটের ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দ রেখেছে। ফলে আগামী ১০ বছরে উদীয়মান অর্থনীতিতে পরিণত হতে হলে বাংলাদেশকে মাধ্যমিক, কারিগরি, বৃত্তিমূলক, উচ্চশিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
বাংলাদেশের দক্ষতা উন্নয়নে পাঁচটি প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরেছে বিশ্বব্যাংক। প্রথমত, স্নাতক ডিগ্রিধারীদের নিম্নমানের শিক্ষার কারণে কর্মদক্ষতা গড়ে উঠছে না। দ্বিতীয়ত, বর্তমানে নিম্ন মজুরি-নিম্ন উৎপাদনশীলতার কারণে শ্রমিকের উচ্চ দক্ষতা তৈরি হচ্ছে না। কৃষি ও অ-কৃষির অনানুষ্ঠানিক খাতগুলোতে সহজেই শ্রমিকেরা যুক্ত হচ্ছেন। কারণ, এসব খাতের দক্ষতা অর্জনে শ্রমিকের খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না। তৃতীয়ত, শ্রমবাজারে প্রবেশের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর্যাপ্ত প্রতিষ্ঠানের অভাব। চতুর্থত, অনানুষ্ঠানিক খাতগুলো শ্রমবাজারের ৮৯ শতাংশ দখল করে আছে, তাই দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ কম। পঞ্চমত, শিক্ষিত ব্যক্তিদের দক্ষতা বাড়িয়ে চাকরির বাজারে প্রবেশের জন্য সুযোগ কম। এর ফলেও নিম্ন দক্ষতা-নিম্ন মজুরির চক্রে কর্মসংস্থান হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক মনে করে, আনুষ্ঠানিক শিক্ষাই চাকরির বাজারের পদ-পদবি নির্ধারণ করে। শিক্ষাই শ্রমিকের দক্ষতাসহ যোগ্যতা নিশ্চিত করে। শ্রমশক্তিতে শিক্ষিত শ্রমিক থাকলে এর প্রতিদান আসে বেশি। এতে শুধু শ্রমিকের আচরণগত দক্ষতাই প্রকাশ পায় না, উচ্চ উৎপাদনশীলতাও আনে। আর যা অদক্ষ শ্রমিকের সঙ্গে দক্ষ শ্রমিকের পার্থক্য তৈরি করে দেয়।
তবে দক্ষতার উন্নয়ন শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা দিয়ে হবে না। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও চাকরির বাজারের ধরনের ওপর নির্ভর করে শিক্ষিত ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ। কিন্তু বাংলাদেশে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও চাকরির বাজারেই সমস্যা রয়েছে যা শিক্ষাজীবন থেকে চাকরির বাজারে প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের শ্রমশক্তি জরিপ বিশ্লেষণ করে বলেছে, দেশে প্রায় পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ শ্রমিক রয়েছেন। এর মধ্যে দুই কোটি ৩২ লাখ বা ৪১ শতাংশের কোনো ধরনের শিক্ষাই নেই। আর এক কোটি ৩০ লাখ শ্রমিক প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি পার হননি। বাকিদের মধ্যে মাত্র ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন। আর দশমিক ২ শতাংশ শ্রমিকের রয়েছে কারিগরি ডিপ্লোমা ডিগ্রি।
সব মিলিয়ে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাত মিলিয়ে বাংলাদেশের মোট শ্রমিকের ৯৬ শতাংশের মাধ্যমিক শিক্ষা নেই। অর্থাৎ শ্রমবাজারে উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিদের অংশীদারি নিতান্তই কম। নারী-পুরুষনির্বিশেষে এই চিত্র উঠে এসেছে। মূলত জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরাই এই শ্রমশক্তির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। আর গ্রামের প্রায় অর্ধেক বা ৪৫ শতাংশ শ্রমিকের কোনো ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। এ চিত্র শহরে কিছুটা ভালো, শহরে এই হার ২৮ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংক মনে করে, এই শ্রমশক্তি নিয়ে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতে পারবে না বাংলাদেশ। স্বল্প দক্ষতা-অল্প মজুরি-কম উৎপাদনশীলতা-নিম্ন প্রবৃদ্ধির ফাঁদে আটকে গেছে বাংলাদেশ। কারণ, এখানে শ্রমিকেরা কম শিক্ষিত ও অদক্ষ, ফলে উৎপাদনশীলতা কম, আর দক্ষতার অভাবে মজুরি পানও কম। আর এ কারণে অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধিও কম।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ মনে করেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চশিক্ষার চাহিদা বাড়ে। উচ্চশিক্ষা ব্যক্তিগতভাবে লাভজনক হলেও অনেক সময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়তা করে না। উচ্চশিক্ষার ডিগ্রি যদি শুধু চাকরি পাওয়ার যোগ্যতার মাপকাঠি হয় কিন্তু উৎপাদনশীলতা না বাড়ায়, তাতে লাভ নেই। অনেক ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা কেবল অনুৎপাদনশীল খাতে অবৈধ আয়-রোজগারের সুবিধা করে দেয়।
বিশ্বব্যাংক গত মঙ্গলবার বাংলাদেশের শিক্ষা খাত নিয়ে একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে দেশের শ্রমশক্তির সঙ্গে শিক্ষার সম্পর্ক এবং অর্থনীতিতে এর প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শ্রমবাজারটি কৃষি, শিল্প ও সেবা এই খাতে বিভক্ত। বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১৩ লাখ শ্রমিক নতুন করে যুক্ত হচ্ছেন। মোট শ্রমশক্তির সাড়ে ৮৮ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। মোট শ্রমশক্তির অর্ধেকই কৃষিশ্রমিক। শিল্প খাতে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ শ্রমিক কাজ করেন। ৩৫ শতাংশের বেশি কাজ করেন সেবা খাতে।
তবে কৃষি খাতের শ্রমিকেরাই তাঁদের পেশা পরিবর্তন করে অ-কৃষি খাত বিশেষ করে শিল্প খাতে এসে যুক্ত হচ্ছেন। এতে নিম্ন দক্ষতার পাশাপাশি নিম্ন মজুরির শ্রমিক ভিড়ছেন শিল্প খাতে। বিগত দেড় দশকে (১৯৯৫-২০১০) তৈরি পোশাক খাতে গড়ে ১২ শতাংশ হারে শ্রমিক বেড়েছে। আর গ্রামের নারীরা শহরে এসে পোশাক কারখানায় কাজ করছেন।
অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, দেশে এখন সবার জন্য শিক্ষাই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপযোগী মানবসম্পদ তৈরি।
এই যখন অবস্থা, তখন বিশ্বব্যাংক উদ্বেগজনক খবর দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে বাজেট বরং কমছে। বিগত চার অর্থবছরেই শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ কমছে। উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে ২০১০-১১ অর্থবছরে বাজেটের মোট ব্যয়ের ১৩ দশমিক ৯ শতাংশই বরাদ্দ ছিল শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে। এরপর ক্রমান্বয়ে তা কমতে কমতে চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১১ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। এর মধ্যে ২০১২-১৩ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে যথাক্রমে ১১ দশমিক ৫ এবং ১২ দশমিক ৪ শতাংশ বরাদ্দ ছিল।
আরও আশঙ্কার বিষয় হলো, উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বা বরাদ্দ যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, ২০০৮ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলো শিক্ষা খাতে গড়ে বাজেটের ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দ রেখেছে। ফলে আগামী ১০ বছরে উদীয়মান অর্থনীতিতে পরিণত হতে হলে বাংলাদেশকে মাধ্যমিক, কারিগরি, বৃত্তিমূলক, উচ্চশিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
বাংলাদেশের দক্ষতা উন্নয়নে পাঁচটি প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরেছে বিশ্বব্যাংক। প্রথমত, স্নাতক ডিগ্রিধারীদের নিম্নমানের শিক্ষার কারণে কর্মদক্ষতা গড়ে উঠছে না। দ্বিতীয়ত, বর্তমানে নিম্ন মজুরি-নিম্ন উৎপাদনশীলতার কারণে শ্রমিকের উচ্চ দক্ষতা তৈরি হচ্ছে না। কৃষি ও অ-কৃষির অনানুষ্ঠানিক খাতগুলোতে সহজেই শ্রমিকেরা যুক্ত হচ্ছেন। কারণ, এসব খাতের দক্ষতা অর্জনে শ্রমিকের খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না। তৃতীয়ত, শ্রমবাজারে প্রবেশের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর্যাপ্ত প্রতিষ্ঠানের অভাব। চতুর্থত, অনানুষ্ঠানিক খাতগুলো শ্রমবাজারের ৮৯ শতাংশ দখল করে আছে, তাই দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ কম। পঞ্চমত, শিক্ষিত ব্যক্তিদের দক্ষতা বাড়িয়ে চাকরির বাজারে প্রবেশের জন্য সুযোগ কম। এর ফলেও নিম্ন দক্ষতা-নিম্ন মজুরির চক্রে কর্মসংস্থান হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক মনে করে, আনুষ্ঠানিক শিক্ষাই চাকরির বাজারের পদ-পদবি নির্ধারণ করে। শিক্ষাই শ্রমিকের দক্ষতাসহ যোগ্যতা নিশ্চিত করে। শ্রমশক্তিতে শিক্ষিত শ্রমিক থাকলে এর প্রতিদান আসে বেশি। এতে শুধু শ্রমিকের আচরণগত দক্ষতাই প্রকাশ পায় না, উচ্চ উৎপাদনশীলতাও আনে। আর যা অদক্ষ শ্রমিকের সঙ্গে দক্ষ শ্রমিকের পার্থক্য তৈরি করে দেয়।
তবে দক্ষতার উন্নয়ন শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা দিয়ে হবে না। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও চাকরির বাজারের ধরনের ওপর নির্ভর করে শিক্ষিত ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ। কিন্তু বাংলাদেশে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও চাকরির বাজারেই সমস্যা রয়েছে যা শিক্ষাজীবন থেকে চাকরির বাজারে প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
No comments