আগে দ্বিপক্ষীয় সমস্যার সমাধান হোক- বিমসটেক ও রোহিঙ্গা সমস্যা
সাতটি দেশের সমন্বয়ে গঠিত বহুপক্ষীয়
কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার বঙ্গোপসাগরীয় উদ্যোগের (বিমসটেক) তৃতীয়
শীর্ষ সম্মেলন গতকাল মঙ্গলবার শেষ হয়েছে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে।
এই
সম্মেলনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিবৃতিসংবলিত প্রথাগত যুক্ত ঘোষণার
বাইরে কার্যকর সহযোগিতার দ্বার উন্মোচিত হবে কি না, তা নির্ভর করছে
সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সদিচ্ছার ওপর। বিশ্বের
বিভিন্ন এলকায় যখন আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হচ্ছে, তখন
দক্ষিণ এশীয় দেশগুলো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না পারস্পরিক
সন্দেহ-অবিশ্বাস, রাজনৈতিক টানাপোড়েন এবং বিদ্যমান সমস্যাগুলো জিইয়ে থাকার
কারণে।
পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার বিরোধ মীমাংসা না হওয়ায় তিন দশক বয়সী দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) প্রায় একটি অকার্যকর সংস্থায় পরিণত হয়েছে। আমরা চাই না বিমসটেকও একই পরিণতি লাভ করুক। এবারের সম্মেলনে ঢাকায় বিমসটেকের সচিবালয় স্থাপনের কাজ শুরু এবং সংস্থাটির প্রথম মহাসচিব নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে ইতিবাচক পদক্ষেপ। কিন্তু আমাদের এখানেই থেমে থাকলে চলবে না।
বিমসটেককে একটি কার্যকর আঞ্চলিক সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে হলে এর সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যকার বিরোধের নিষ্পত্তি জরুরি। বলার অপেক্ষা রাখে না যে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে রোহিঙ্গা সমস্যাটি বাংলাদেশের ওপর চেপে আছে। মিয়ানমারের রাজনৈতিক সমস্যা ও সহিংসতার কারণেই বিভিন্ন সময়ে তারা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। সরকারি হিসেবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ৩০ হাজার বলা হলেও প্রকৃত শরণার্থী তিন থেকে পাঁচ লাখ। এত বিপুলসংখ্যক শরণার্থীকে ঠাঁই দেওয়া জনবহুল বাংলাদেশের জন্য অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন ও বিরোধী দলের নেতা নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের তাগিদ দিয়েছেন এবং তাদের ফিরিয়ে নিতে বলেছেন। তাঁর এই তাগিদের জবাবে মিয়ানমারের নেতারা স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। বরং বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমারের নেতারা বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গারা তাঁদের দেশের নাগরিক নন বলে দায় এড়াতে সচেষ্ট থেকেছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। তাঁদের এই অসার দাবির ব্যাপারে বিশ্বসম্প্রদায় অবহিত হলেও তারা এমন ব্যবস্থা নিতে পারেনি বা নেয়নি, যাতে মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়।
বিমসটেকভুক্ত অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ুক, সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত হোক—সেটি আমাদেরও একান্ত কাম্য। কিন্তু সেই সহযোগিতা কোনোভাবেই রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যাটি পাশ কাটিয়ে হতে পারে না। সাম্প্রতিক কালে মিয়ানমারে যে গণতন্ত্রের ধারা সূচিত হয়েছে, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। একই সঙ্গে দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্ব অতীতের একগুঁয়েমি পরিহার করে অবিলম্বে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
No comments