বিশেষজ্ঞ মত- মান নিশ্চিত করা জরুরি by নজরুল ইসলাম
স্বাধীন বাংলাদেশের ৪৩ বছরে পাকিস্তান আমলের ছয়টি সরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এ পর্যন্ত আরও ২৮টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত হয়েছে।
এখন দেশে মোট ৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। পাশাপাশি ৭৮টি
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও।
এর মূল কারণ জনসংখ্যা অনুপাতে উচ্চশিক্ষার
ক্ষেত্রে ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক অর্জন। এ সময়ে সামগ্রিকভাবে
শিক্ষিতের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ শতাংশে। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার মতো
বৈপ্লবিক ব্যবস্থার সুফল হিসেবে শিক্ষার হার বেড়েছে। এ জন্য বাংলাদেশের
সবগুলো সরকারকেই কৃতিত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি মেয়েদের জন্য উপবৃত্তি দেওয়ার
কারণে শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে খুবই প্রশংসনীয়ভাবে।
প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক—সব স্তরেই শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। উচ্চশিক্ষার চাহিদাও বেড়েছে বিপুলভাবে। সময়ের চাহিদা পূরণে চালু হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৯২ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট অনুসারে যাত্রা শুরু হয় উচ্চশিক্ষা খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ।
উচ্চশিক্ষায় পরিকল্পনা করতে হয় উন্নয়ন চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এবং দেশের চাহিদা বিবেচনা করা দরকার। তা না হলে বিশেষায়িত পেশার জন্য মানসম্পন্ন কর্মী পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। শিক্ষিত কর্মীরা হয়ে পড়বেন বেকার। এখন পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাজার চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে চেষ্টা করছে। অনেকে বাণিজ্যিক কারণে হয়তো কিছুটা বেশি চেষ্টা করছে। উচ্চশিক্ষাক্রম আগের তুলনায় অনেকটাই বাজারমুখী ও উন্নয়নমুখী। শিক্ষার্থী তথা অভিভাবকদের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। কিন্তু মান নিয়ে প্রশ্ন অবশ্যই রয়ে গেছে। বরং বলা উচিত, প্রশ্নটি এখন জোরালোভাবে উচ্চারিত হচ্ছে।
তিনটি বিষয়ের সমন্বয় হলেই মানসম্পন্ন শিক্ষিত কর্মী পাওয়া সম্ভব। বিষয় তিনটি হলো: শিক্ষায় প্রবেশাধিকার, আর্থিক সামর্থ্য ও গুণগত মান। গুণগত মানের ক্ষেত্রে মানসম্পন্ন শিক্ষার্থী, মানসম্পন্ন শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ও ভৌত সুযোগ-সুবিধা এবং শিক্ষা-ব্যবস্থাপনার মান সবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উচ্চমান শিক্ষার্থী প্রাপ্যতা নির্ভর করে প্রাক্-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মানের ওপর।
মান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনমতো বিনিয়োগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়িত্ব সর্বোচ্চ। বর্তমানে বাংলাদেশে জিডিপির যে পরিমাণ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা খুবই সামান্য। যেকোনো উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় যৎসামান্য।
শিক্ষকদের মান নিশ্চিত করতে শিক্ষক সম্মানী সম্মানজনক করতে হবে। হাতে গোনা কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মোটামুটি ভালো সম্মানী দেয়। কিন্তু বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই এটা সম্মানজনক এবং জীবন ধারণের উপযোগী নয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা অত্যন্ত সীমিত, প্রতিবেশী দেশগুলোর শিক্ষকদের বেতনের তুলনায়ও অনুল্লেখ্য। শিক্ষক সম্মানী বাড়ানোর পাশাপাশি অবশ্যই শিক্ষকদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত পক্ষপাতমুক্ত হওয়ার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
দেশের উচ্চশিক্ষা খাতে বেসরকারি উদ্যোগ উল্লেখযোগ্য। এখন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং সরকারের দায়িত্ব তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করা। এ জন্য ২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরোধিতা সত্ত্বেও পাস হওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন এবং প্রতিপালন করা উচিত। এখন অনেক বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ও বাংলাদেশে তাদের শাখা খুলতে আগ্রহী। তারা উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে চায়। প্রতিযোগিতামূলক বাজার এবং মানসম্পন্ন শিক্ষার কথা ভেবে সরকার এই বিষয়টিও ভাবতে পারে। মালয়েশিয়া, দুবাইসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শাখা খুলেছে। এটা সেসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা তৈরি করছে।
ফলে মানের ব্যাপারে উদ্যোগী হচ্ছে স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সম্প্রতি আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষা খাতে মানোন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে সহায়তার সুযোগ এসেছে। এসব সুযোগের সদ্ব্যবহার কাম্য। সবচেয়ে বড় কথা, সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অঙ্গীকার ও কর্মতৎপরতা ও উচ্চশিক্ষা সম্পৃক্ত সব মহলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ছাড়া মানসম্পন্ন শিক্ষা বাস্তবায়ন দুঃসাধ্য।
প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক—সব স্তরেই শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। উচ্চশিক্ষার চাহিদাও বেড়েছে বিপুলভাবে। সময়ের চাহিদা পূরণে চালু হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৯২ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট অনুসারে যাত্রা শুরু হয় উচ্চশিক্ষা খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ।
উচ্চশিক্ষায় পরিকল্পনা করতে হয় উন্নয়ন চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এবং দেশের চাহিদা বিবেচনা করা দরকার। তা না হলে বিশেষায়িত পেশার জন্য মানসম্পন্ন কর্মী পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। শিক্ষিত কর্মীরা হয়ে পড়বেন বেকার। এখন পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাজার চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে চেষ্টা করছে। অনেকে বাণিজ্যিক কারণে হয়তো কিছুটা বেশি চেষ্টা করছে। উচ্চশিক্ষাক্রম আগের তুলনায় অনেকটাই বাজারমুখী ও উন্নয়নমুখী। শিক্ষার্থী তথা অভিভাবকদের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। কিন্তু মান নিয়ে প্রশ্ন অবশ্যই রয়ে গেছে। বরং বলা উচিত, প্রশ্নটি এখন জোরালোভাবে উচ্চারিত হচ্ছে।
তিনটি বিষয়ের সমন্বয় হলেই মানসম্পন্ন শিক্ষিত কর্মী পাওয়া সম্ভব। বিষয় তিনটি হলো: শিক্ষায় প্রবেশাধিকার, আর্থিক সামর্থ্য ও গুণগত মান। গুণগত মানের ক্ষেত্রে মানসম্পন্ন শিক্ষার্থী, মানসম্পন্ন শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ও ভৌত সুযোগ-সুবিধা এবং শিক্ষা-ব্যবস্থাপনার মান সবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উচ্চমান শিক্ষার্থী প্রাপ্যতা নির্ভর করে প্রাক্-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মানের ওপর।
মান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনমতো বিনিয়োগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়িত্ব সর্বোচ্চ। বর্তমানে বাংলাদেশে জিডিপির যে পরিমাণ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা খুবই সামান্য। যেকোনো উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় যৎসামান্য।
শিক্ষকদের মান নিশ্চিত করতে শিক্ষক সম্মানী সম্মানজনক করতে হবে। হাতে গোনা কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মোটামুটি ভালো সম্মানী দেয়। কিন্তু বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই এটা সম্মানজনক এবং জীবন ধারণের উপযোগী নয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা অত্যন্ত সীমিত, প্রতিবেশী দেশগুলোর শিক্ষকদের বেতনের তুলনায়ও অনুল্লেখ্য। শিক্ষক সম্মানী বাড়ানোর পাশাপাশি অবশ্যই শিক্ষকদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত পক্ষপাতমুক্ত হওয়ার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
দেশের উচ্চশিক্ষা খাতে বেসরকারি উদ্যোগ উল্লেখযোগ্য। এখন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং সরকারের দায়িত্ব তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করা। এ জন্য ২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরোধিতা সত্ত্বেও পাস হওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন এবং প্রতিপালন করা উচিত। এখন অনেক বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ও বাংলাদেশে তাদের শাখা খুলতে আগ্রহী। তারা উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে চায়। প্রতিযোগিতামূলক বাজার এবং মানসম্পন্ন শিক্ষার কথা ভেবে সরকার এই বিষয়টিও ভাবতে পারে। মালয়েশিয়া, দুবাইসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শাখা খুলেছে। এটা সেসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা তৈরি করছে।
ফলে মানের ব্যাপারে উদ্যোগী হচ্ছে স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সম্প্রতি আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষা খাতে মানোন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে সহায়তার সুযোগ এসেছে। এসব সুযোগের সদ্ব্যবহার কাম্য। সবচেয়ে বড় কথা, সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অঙ্গীকার ও কর্মতৎপরতা ও উচ্চশিক্ষা সম্পৃক্ত সব মহলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ছাড়া মানসম্পন্ন শিক্ষা বাস্তবায়ন দুঃসাধ্য।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম
শিক্ষাবিদ, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান।
No comments