আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের জেরা- অভিযোগ অস্বীকার মন্ত্রী-সাংসদদের by কাজী আনিছ
‘বিডিআর সদস্যদের দাবি-দাওয়া জেনেও
গুরুত্ব দেননি। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে সঠিকভাবে দায়িত্ব
পালন না করায় এত বড় ঘটনা ঘটেছে।’
পিলখানা হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের এমন জেরার মুখে পড়েন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বর্তমান ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী সাহারা খাতুন। আইনজীবীদের প্রশ্নের জবাবে সাহারা খাতুন বলেন, ‘এটা সত্য নয়।’
সাহারা খাতুন ছাড়াও পিলখানা হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, হুইপ মির্জা আজম, সাংসদ ফজলে নূর তাপস এবং তিন বাহিনীর তৎকালীন প্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জেরা করেন। আদালতের নথিতে থেকে তাঁদের ৯ জনের জেরা তুলে ধরা হলো।
সাহারা খাতুন: বিদ্রোহের আগে বিডিআরদের দাবি-দাওয়ার কথা আপনি জানতেন—আসামিপক্ষের আইনজীবীর এমন বক্তব্যে সাহারা খাতুন বলেন, ‘এটা সত্য নয়।’ তবে কয়েকজন বিডিআর কর্মকর্তা ও সদস্য তাঁর সাক্ষাৎপ্রার্থী ছিলেন বলে তাঁকে তাঁর এপিএস ঘটনার পর জানিয়েছেন।
ঘটনা কীভাবে জানলেন? জবাবে সাহারা বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে নয়টার দিকে জিগাতলার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে বিডিআর বিদ্রোহের খবর পান। এরপর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন যমুনায় গিয়ে দেখেন, প্রধানমন্ত্রী উদ্বিগ্ন ও বিচলিত।
ঘটনার পর তিনি বিডিআরের মহাপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন বলে জানান। আপনি দায়িত্বে অবহেলা করেছেন—এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সাহারা খাতুন বলেন, ‘এটা সত্য নয়।’
জাহাঙ্গীর কবির নানক: বিদ্রোহের আগে বিডিআর জওয়ানদের দাবি-দাওয়ার কথা আপনি জানতেন—এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘এটা সত্য নয়।’
জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার সময় তিনি ফোনে পিলখানায় গোলাগুলির খবর পেয়ে বিষয়টি হুইপ মির্জা আজমকে জানান এবং যমুনায় যাওয়ার কথা বলেন। এরপর তিনিও যমুনায় চলে যান। ডিএডি তৌহিদকে অহেতুক এ মামলায় জড়ানো হয়েছে? নানকের উত্তর, ‘এটা সত্য নয়।’
মির্জা আজম: মির্জা আজম বলেন, বিডিআর সদস্যরা যমুনায় এলে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের জিজ্ঞেস করেন, সেনা কর্মকর্তারা কেমন আছেন? বিডিআর সদস্যরা জবাব দেন, সবাই ভালো আছেন, একসঙ্গে আছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবীর প্রশ্ন: ঘটনার সময় তো সরকারের মধ্যে কোনো সমন্বয় ছিল না। উত্তর: সত্য নয়। প্রশ্ন: সরকার তিন বাহিনীর প্রধানকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিল? সত্য নয়। সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের অভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে? সত্য নয়।
কামরুল ইসলাম: আদালতে কামরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন সকাল ১০টার দিকে তিনি ফোনে খবর পেয়ে যমুনায় যান।
‘যমুনা থেকে ফোন এসেছিল?’ আসামির আইনজীবীর প্রশ্নের জবাবে কামরুল বলেন, ‘না, স্বেচ্ছায় গিয়েছিলাম।’
‘হত্যাকাণ্ড জেনেও প্রধানমন্ত্রী সাধারণ ক্ষমা করেছিলেন’—এমন প্রশ্নের জবাবে কামরুল বলেন, ‘এটা সত্য নয়।’
শেখ সেলিম: বিডিআর সদস্যদের দাবি-দাওয়ার কথা আগে জানতেন কি না, আসামিপক্ষের এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ২০০৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ছয়-সাতজন লোক তাঁর বাসায় যান। তাঁরা বিডিআরের লোক বলে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সমস্যার কথা বলেন। ‘দাবিগুলো নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন?’ সাংসদ সেলিম বলেন, ‘না, করিনি।’
ফজলে নূর তাপস: বিডিআর সদস্যদের দাবি-দাওয়ার কথা আপনি জানতেন—আসামিপক্ষের আইনজীবীর প্রশ্নের উত্তরে ফজলে নূর তাপস বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচনী প্রচারণাকালে কয়েকজন বিডিআর সদস্য পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার কথা তুলে ধরেন। তিনি ওই সময় দাবিগুলো প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছিলেন।
‘২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় আপনার ও প্রধানমন্ত্রীর নৈশভোজ ছিল। আপনি তা বাতিল করেছেন।’ এমন বক্তব্যের বিপরীতে সাংসদ তাপস বলেন, ‘আমি বাতিল করিনি।’
কালক্ষেপণ করে বহিরাগতদের দিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে—তাপস বলেন, ‘এটা সত্য নয়।’ তদন্তে আপনার হস্তক্ষেপের কারণে প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে গেছেন—তাপসের উত্তর, ‘এটা সত্য নয়।’
জয়নুল আবেদীন: এসএসএফের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জয়নুল আবেদীন আদালতে বলেন, খবর পেয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন যমুনায় চলে যান।
কেন গিয়েছিলেন? মেজর জেনারেলের উত্তর ‘নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য।’ তিনি বলেন, বিকেলে আলোচনার জন্য বিডিআর সদস্যরা এলে একটি কাগজে তাঁদের নাম লিখেন তিনি।
সরকারের নির্দেশে আপনি এ নামগুলো লিপিবদ্ধ করেছেন—মহাপরিচালকের উত্তর, ‘এটা সত্য নয়।’ বিডিআর সদস্যদের দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বাইরে যেতে বলেন।
আইজিপি: আইনজীবী জানতে চান পুলিশ বাহিনীকে কী কী নির্দেশ দিয়েছিলেন? পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকারের উত্তর ‘কৌশলগত কারণে সব কথা বলতে পারি না।’ ঘটনা শুনে কোনো জিডি করেছিলেন? ‘না’। ওই দিন পিলখানায় কী কী ঘটেছিল? সরাসরি কোনো জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছি।’
‘আপনি কোনো ঘটনাই জানেন না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আপনি তথ্য গোপন করেছেন।’ এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে হাসান মাহমুদ বলেন, ‘সত্য নয়।’
সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ: ‘সরকারের ভুল পদক্ষেপে সেনা কর্মকর্তারা হত্যার শিকার হয়েছেন’—আসামিপক্ষের আইনজীবীদের এমন বক্তব্য সত্য নয় বলে দাবি করেন তিনি।
‘মেয়ের স্বামী নিহত হওয়ার পর আপনি সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন’—সাবেক আইজির উত্তর ‘এটাও সত্য নয়।’
No comments