সাঁথিয়ায় সাম্প্রদায়িক হামলা
পাবনার সাঁথিয়ায় হিন্দু সমাজের মানুষের ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলা যেমন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আত্মবিশ্বাসে ফাটল, তেমনি তা বাংলাদেশের জনগণের অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যেও আঘাত। যারাই এই বিবাদের সৃষ্টি করুক না কেন, তারা ধর্ম, দেশ ও জাতির শত্রু। গত বছর রামুর বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধপল্লিতে পরিকল্পিতভাবে হামলার ছক প্রায় হুবহু সাঁথিয়া বাজারেও দেখা গেল। যথারীতি ফেসবুকে মহানবী (সা.)-এর নামে আপত্তিকর মন্তব্য ও কার্টুন প্রকাশের গুজব রটিয়ে একদল মানুষকে উত্তেজিত করে আরেক দল মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করা হলো। সকাল ১০টায় গুজব রটল, ১১টায় বিলি করা হলো কথিত ফেসবুক পেজের ছবির ফটোকপি। তারও এক ঘণ্টা পরে শুরু হলো হিন্দু বসতি ও মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর। সাঁথিয়া পাবনা জেলার গুরুত্বপূর্ণ বাজার এবং মহাসড়কের ওপর অবস্থিত। সেখানে সার্বক্ষণিক পুলিশ থাকার কথা। ঘটনার সূত্রপাত সকাল ১০টায় হলেও পুলিশের হস্তক্ষেপ ঘটতে কেন সাড়ে তিন ঘণ্টা লাগল?
জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের ভূমিকা তাই প্রশ্নবিদ্ধ। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের পাবনা জেলা শাখার সভাপতি চন্দন কুমার চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘এটি একটি ষড়যন্ত্র বলে আমাদের ধারণা।’ তাঁর কথাকে আমলে নেওয়া দরকার। উচ্চ আদালত ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন। গ্রেপ্তার ও বিচারের স্বার্থে সুষ্ঠু তদন্ত হতে হবে। রামুর ঘটনায় প্রকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্তে গাফিলতি দেখা গেছে, পুলিশের দায়িত্বহীনতারও শাস্তি হয়নি, সাক্ষী না পাওয়ার অজুহাতে আসামিরাও ছাড়া পাচ্ছে। রামুর বেলায় যদি ন্যায়বিচার হতো, তাহলে সাঁথিয়ার ঘটনা হয়তো ঘটতে পারত না। আজকের ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগে সবার হাতেই রয়েছে যোগাযোগের অবাধ সুযোগ। ফেসবুক, অনলাইন মাধ্যম, মোবাইল ফোন, ক্যামেরাসহ যেকোনো প্রযুক্তিকেই নিমেষে গণবিদ্বেষের হাতিয়ার বানানো সম্ভব এবং অনেক অর্বাচীন ও সুযোগসন্ধানী ব্যক্তি তা করেও থাকে। এ রকম নাজুক বাস্তবতায় সবাইকে সংযমী ও ধৈর্যশীল হতে হবে।
No comments