প্রথম আলোর দেড় দশক
দৈনিক প্রথম আলোর আজ জন্মদিন। আজ থেকে ১৫ বছর আগে এই সংবাদপত্রটি যাত্রা শুরু করেছিল সর্বাঙ্গীণ সুন্দর এক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে। সেই স্বপ্নের ভিত আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মৌল আদর্শগুলো: গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সামাজিক সাম্য ও ন্যায়বিচার এবং অসাম্প্রদায়িকতা। দেড় দশক ধরে অগণিত পাঠক, সাংবাদিক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, পরিবেশক, এজেন্ট, হকারসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সক্রিয় সহযোগিতা, আন্তরিক সমর্থন ও ভালোবাসা পেয়ে প্রথম আলো আজ বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক। শুধু মুদ্রিত সংস্করণই নয়, প্রথম আলোর ইন্টারনেট সংস্করণও এখন বিশ্বের সর্বাধিক পঠিত বাংলা ওয়েব পোর্টালের মর্যাদা অর্জন করেছে।
পঞ্চদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই আনন্দময় মুহূর্তে আমরা সবাইকে জানাচ্ছি আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতাই প্রথম আলোর পেশাগত ও নৈতিক অঙ্গীকার। সরকার, রাজনৈতিক দল, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ রাষ্ট্র ও সমাজের সব ক্ষেত্র সম্পর্কে জনসাধারণকে নিয়মিতভাবে ওয়াকিবহাল রাখতে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সরবরাহ করা আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম-দুর্নীতি, সন্ত্রাস, ধর্মের নামে জঙ্গিবাদী সহিংসতাসহ যা কিছু রাষ্ট্র, সমাজ ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর, তথ্যনির্ভর সমালোচনার মাধ্যমে সেসবের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের দায়িত্ব পালনেও প্রথম আলো শুরু থেকেই সচেষ্ট। সাংবাদিকতার নৈতিক উৎকর্ষ ও পেশাদারি দক্ষতা অর্জনের প্রতিও আমরা সমানভাবে মনোযোগী। সাংবাদিকতার পাশাপাশি দুর্গত মানুষের ত্রাণ ও পুনর্বাসন, অ্যাসিডদগ্ধ নারীদের সহায়তা ও পুনর্বাসন, দরিদ্র কিন্তু মেধাবী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহযোগিতা, মাদক ও এইডসবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টি ইত্যাদি সামাজিক কর্মকাণ্ডও পরিচালনা করে প্রথম আলো। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দলীয় সংকীর্ণতা, বৈরিতা, অর্থ ও পেশিশক্তির ব্যবহারসহ নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। শিক্ষার হার বেড়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের ভর্তির ক্ষেত্রে মেয়েশিশুর হার বেড়েছে; শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে; বেড়েছে মানুষের গড় আয়ু ও সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা।
তবে রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও শাসনব্যবস্থার অনেক নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের আরও অগ্রগতির পথে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে থেকেই যাচ্ছে। আজ যে মুহূর্তে প্রথম আলোর পঞ্চদশ জন্মবার্ষিকী উদ্যাপিত হচ্ছে, বাংলাদেশ তখন এক জটিল রাজনৈতিক সংকটের মুখোমুখি। নির্বাচনকালীন সরকারপদ্ধতি নিয়ে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের মধ্যকার তীব্র মতবিরোধের অবসান এখনো ঘটেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার মধ্যে টেলিফোনে সংলাপ হওয়ার পরেও অচলাবস্থা নিরসনের আলামত স্পষ্ট হয়নি। বরং উভয় পক্ষ নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থেকে যাওয়ার ফলে শঙ্কা-উদ্বেগ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই বিরোধী জোটের টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল শুরু হয়েছে আজ থেকে। সামনের দিনগুলোর কথা ভেবে জাতি যারপরনাই উদ্বিগ্ন। কিন্তু এই অচলাবস্থা ও সংকট সমাধান-অতীত নয়। আমরা আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা করি, উভয় পক্ষের শুভচেতনার উদয় হবে। মুখোমুখি সংঘাতের ভয়াবহ পরিণতির ঝুঁকি তাঁরা অবশ্যই উপলব্ধি করবেন; একটি সমঝোতার পথ খুঁজে পেতে তাঁরা আলোচনায় বসবেন। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের বিকাশ ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের যে পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই পথ সে হারাবে না।
No comments