জাতির বৃহত্তর স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে by কারার মাহমুদুল হাসান
সবকিছু
যদি ভালোয় ভালোয় চলে তবে আশা করা যায়, আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
জানুয়ারি ২০১৪-এর তৃতীয় সপ্তাহ অতিক্রম হওয়ার আগেই অনুষ্ঠিত হবে। তবে বোঝা
যাচ্ছে, এ নির্বাচন হবে বর্তমান সংসদে পাস করা পঞ্চদশ সংশোধনীর ভিত্তিতেই,
যা কিনা বর্তমান সংসদ ও চলমান মন্ত্রিসভা বহাল রেখেই অনুষ্ঠিত হতে হবে
মর্মে সর্বশেষ সংশোধিত (বর্তমান সরকারের আমলে) শাসনতন্ত্রে উল্লেখ আছে।
ক্ষমতাসীন মহাজোট অন্তত একটি সিদ্ধান্তে এখন পর্যন্ত অনড় যে, শাসনতন্ত্রের
বাইরে কোনো ধরনের অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক ধরনের অনির্বাচিত সরকারের
অধীনে কোনোমতেই নির্বাচন করা যাবে না। আর নির্বাচনের সময় বর্তমান সংসদ
সদস্যরা নিজ নিজ পদে বহাল থেকেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। উল্লিখিত
সংশোধনীটি প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে ফুল বেঞ্চে সাতজন
বিচারপতির মধ্যে চারজনের সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে ঘোষিত হয়েছিল, যদিও ওই রায়ে দেশ
ও জনগণের বৃহত্তর নিরাপত্তার স্বার্থে পরবর্তী আরও দুটি নির্বাচন
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে মর্মে দিকনির্দেশনা বা
পর্যবেক্ষণ ছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত মহাজোট সে দিকনির্দেশনা সংবলিত
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের অনেক আগেই সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করিয়ে নেয়
বিদ্যমান নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে। উল্লিখিত
বিষয়ে সামগ্রিক প্রক্রিয়ার বিষয়টি ২৮ অক্টোবর প্রথম আলোয় প্রকাশিত
‘নির্বাচন : কোন সংবিধান, কার সংবিধান’ শীর্ষক বদিউল আলম মজুমদারের নিবন্ধে
মোটামুটি বস্তুনিষ্ঠ তথ্যাদিসহ আলোচনা করা হয়েছে। এ থেকে জানা যায়, ২১
জুলাই ২০১০ সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবক্রমে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা
চৌধুরীকে চেয়ারম্যান এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে কো-চেয়ারম্যান করে মহাজোটের
অংশীদারদের মধ্য থেকে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয় (ওই কমিটিতে
বিএনপি অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানায়)। এ কমিটি মোট ২৭টি বৈঠক করে তিনজন
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি, ১০ জন আইনজীবী/বিশেষজ্ঞ, আওয়ামী লীগসহ জোটের
৬টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি (যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও জেনারেল এরশাদও
অন্তর্ভুক্ত ছিলেন), ১৮ জন বুদ্ধিজীবী, ১৮ জন সম্পাদক এবং সেক্টর কমান্ডারস
ফোরামের সঙ্গে বিশদ আলোচনা করে। ওই কমিটির ২৯ মার্চ ২০১১ তারিখে অনুষ্ঠিত
১৪তম সভায় বিদ্যমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অপরিবর্তিত রাখার বিষয়ে
ঐকমত্য পোষণ করা হয়। ওই বৈঠকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের নমস্য ব্যক্তিরা যথা-
সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, আবদুল মতিন খসরু, রাশেদ খান
মেনন, শিরীন শারমীন চৌধুরী, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত- সবাই তত্ত্বাবধায়ক
সরকারব্যবস্থা রাখার পক্ষে নীতিগতভাবে নিজ নিজ অভিমত অত্যন্ত জোরালোভাবে
প্রদান করেছিলেন। তারা কে কী বলেছিলেন তার সবই বদিউল আলম মজুমদারের নিবন্ধে
উল্লেখ আছে। কমিটির সর্বশেষ ২৭ এপ্রিল ২০১১ তারিখে অনুষ্ঠিত ২০তম সভায়
প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য যেভাবে লেখক তার লেখায় তুলে ধরেছেন তা এরকম :
‘অনির্বাচিত ও অগণতান্ত্রিক সরকার আর কেউ দেখতে চায় না। আর ৫৮ অনুচ্ছেদে
একটি সুযোগ থাকায় তা দিয়ে যাতে অন্য কিছু ঢুকে না যায়- সে লক্ষ্যে ৫৮
অনুচ্ছেদকে একটু সংশোধন করে এ সুযোগটি যাতে না থাকে (তা) বন্ধ করে একটি
টাইম ফ্রেম দিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করুন।’
উপরোক্ত বিবরণ থেকে এটা পরিষ্কারভাবে প্রতীয়মান, প্রধানমন্ত্রীসহ সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার সংস্কারের পক্ষেই সুপারিশ করেছেন, তা বাতিল করতে কেউ বলেননি। এরপর ১০ মে ২০১১ তারিখে সুপ্রিমকোর্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়। এ সংক্ষিপ্ত আদেশের পরও ২৯ মে ২০১১ কমিটি সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে একটি লিখিত সুপারিশ প্রণয়ন করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ৯০ দিনের মধ্যে সীমিত করে এবং বৈদেশিক চুক্তির ক্ষেত্রে পরবর্তী সংসদে এটি অনুমোদনের বিধান রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে বহাল রাখার পক্ষে ওই কমিটি সর্বসম্মতভাবে ২৯ মে ২০১১ সুপারিশ করে, যে কমিটির ১৫ জন সদস্যই মহাজোটের। এসবই ঐতিহাসিক ঘটনা।
উপরোক্ত সুপারিশ প্রণয়নের পরদিন ৩০ মে ২০১১ কমিটির সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সে সাক্ষাতের ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। এর আলোকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধন সম্পর্কিত একটি বিল মন্ত্রিসভা অনুমোদন করে (আদালতের পূর্ণ রায় লেখার প্রায় ১৫-১৬ মাস আগেই), যা ২৫ জুন ২০১১ সংসদে উত্থাপন করা হয়। এরপর ৩০ জুন সংসদে বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে সংশোধনীটি পাস হয়। এ থেকে জনগণ নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কি বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের অভিপ্রায়ের, না প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার প্রতিফলন! প্রশ্নটি রেখেছেন বদিউল আলম মজুমদার তার লেখা নিবন্ধে। তিনি বিগত আওয়ামী লীগ আমলের সুনামের অধিকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলামের গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত করে আরও প্রশ্ন রেখেছেন, শুধু পঞ্চদশ সংশোধনীর লেজিটিমেসিই নয়, এর আইনি বৈধতাও প্রশ্নবিদ্ধ। সংশোধনীটির মাধ্যমে (অনুচ্ছেদ ৭বি) সংবিধানের প্রায় এক-তৃতীয়াংশকেই অপরিবর্তনযোগ্য করে ফেলা হয়েছে। কিন্তু কোনো সংসদই পরবর্তী সংসদের হাত-পা বেঁধে দিতে পারে না (মাহমুদুল ইসলাম, কনস্টিটিউশনাল ল’ অব বাংলাদেশ, তৃতীয় সংস্করণ)। অন্যদিকে বাংলাদেশ শাসনতন্ত্রের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সুপ্রিমকোর্ট পঞ্চদশ সংশোধনী করতে বলেননি। আদালতের রায়ে কোথাও বলা নেই, যে সরকার আছে সে সরকারের অধীনেই দশম নির্বাচন হবে (দৈনিক ইত্তেফাক, ২৯.০৯.১৩)।
এ অবস্থায় সংশোধিত শাসনতন্ত্র অনুসরণে জানুয়ারির (২০১৪) তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে অনুষ্ঠেয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দুই পক্ষের তুমুল হানাহানির কারণে আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কি-না, আর নির্বাচন হলেও দেশে-বিদেশে তা গ্রহণযোগ্য হবে কি-না, সে প্রশ্ন দিন দিন জোরালো হচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের কারণে দেশের রাজনীতিতে ক্রমেই উত্তাপ বাড়ছে। হরতালসহ বিভিন্ন ধরনের হিংসাত্মক এবং ক্ষেত্রবিশেষে জানমাল বিনাশী ভয়ংকর ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে দেশের সামগ্রিক অবস্থা এক কথায় নাজুক রূপ ধারণ করে ঘন কালো অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ অবস্থায় ২৭ অক্টোবর ২০১৩ সন্ধ্যায় দুই প্রধান নেত্রীর ৩৭ মিনিটের ফোনালাপের পর সংলাপ শুরু হবে কি-না এবং শুরু হলেও সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কিনা, তা এখন আক্ষরিক অর্থেই অনিশ্চিত।
নির্বাচন কমিশন নিয়েও অনেক কথা রয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) একজন সৎ, ভদ্র ও নিষ্ঠাবান সাবেক আমলা, যিনি অত্যন্ত সুনাম ও সুখ্যাতি নিয়ে জীবনভর চাকরি করেছেন। চাকরি জীবনের প্রথমদিকে মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন। বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিষয়ে বর্ষীয়ান রাজনীতিক সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত (আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য) বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে মেরুদণ্ডহীন আখ্যায়িত করে বিরোধী দলের উদ্দেশে নসিহত করেছিলেন, মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) শক্তিশালী করতে তারা যেন এগিয়ে আসেন। তিনি আরও বলেছিলেন, সুষ্ঠুু নির্বাচনের জন্য জনগণের কাছে আস্থাশীল ও শ্রদ্ধাশীল নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন (দৈনিক ইত্তেফাক, ১৭.০১.১২)। বিরোধী দল বিএনপি সেনগুপ্তের আহ্বানে কোনো সাড়া দিয়েছিলেন কিনা, তা জানা যায়নি। তবে তারা এ নির্বাচন কমিশনকে সরকারের তল্পিবাহক হিসেবে আখ্যা দিয়ে নিরন্তর তাদের সমালোচনা করে চলেছেন এবং ইসিকে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের একজন সদস্য সাংবাদিকদের সামনে চেয়ার থেকে ‘লাফ’ দিয়ে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেন, ইসির মেরুদণ্ড সোজাই আছে। এ সবই আচানক ঘটনা বটে।
নির্বাচন কমিশনের অন্য একজন সদস্য মোহাম্মদ আবু হাফিজ সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে অত্যন্ত বাস্তবসম্মত কথা বলেছিলেন কয়েক সপ্তাহ আগে। তিনি বলেছিলেন, সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করলে সব রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীকে সমান সুযোগ দেয়া নির্বাচন কমিশনের জন্য অত্যন্ত কঠিন হবে। সংবিধান অনুযায়ী সংসদ রেখে নির্বাচন করার চেয়ে ভেঙে দেয়ার পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করা ইসির জন্য সহজ হবে। তবে সংসদ বহাল রেখে না ভেঙে নির্বাচন করা হবে তা এখনও অনিশ্চিত (আমাদের সময়, ০৯.০৯.১৩)।
এখন দেশবাসী গত চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেমনভাবে ভোট প্রদান করেছেন- সে বিষয়ে আত্মভোলা এ জাতির উদ্দেশে কিছু তথ্য প্রদান করতে চাই।
বিগত চারটি সংসদ নির্বাচনের ফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৯ম সাধারণ নির্বাচন (২০০৮) ছাড়া আগের তিনটি নির্বাচনে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রাপ্ত ভোটের হিসাবে প্রায় সমানসংখ্যক ভোট পেয়েও সংসদে বেশি আসন লাভের ফলে দল দুটি পর্যায়ক্রমে সরকার গঠন করেছিল। ১৯৯১-এর নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১,০৫,০৭,৫৪৯ (মোট প্রদত্ত ভোটের ৩০.৮১ ভাগ) ও ১,০২,৫৯,৮৬৬ (মোট প্রদত্ত ভোটের ৩০.০৮ ভাগ) এবং প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান তিন লাখের কম হলেও জয়ী হওয়া আসনের ব্যবধান ছিল ৫২টি। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে দুই বড় দলের প্রাপ্ত ভোটের (আওয়ামী লীগ : ৩৭.৪৪ ও বিএনপি ৩৩.৬০ ভাগ) বিপরীতে প্রাপ্ত আসনের ব্যবধান (মাত্র ৩০টি) মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল বলে ধরা যায়।
একইভাবে ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২,২৮,৩৩,৯৭৮ (মোট প্রদত্ত ভোটের ৮০.৯৭ ভাগ) এবং ২,২৩,৬৫,৫১৬ (মোট প্রদত্ত ভোটের ৪০.১৩ ভাগ)। এ নির্বাচনে দুই দলের প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান অনধিক পাঁচ লাখ হলেও প্রাপ্ত আসন সংখ্যার ব্যবধান দাঁড়ায় ১৩১টি।
সেনাসমর্থিত ভিন্ন ধাঁচের এক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মোট ২৬৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২৩০টি আসনে বিজয়ী হয় এবং প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল ৩,৩৫,৫৩,৯৭১ (মোট প্রদত্ত ভোটের ৪৮.০৬ শতাংশ)। অন্যদিকে ওই নির্বাচনে বিএনপি ২৫৯টি আসনে অংশ নেয় এবং সাকুল্যে ২৯টি আসনে জয়লাভ করে। এ দলের মোট প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল ২,২৬,৫১,৭২১ (মোট প্রদত্ত ভোটের ৩২.২৪ ভাগ)। আওয়ামী লীগের বিপরীতে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা বিবেচনায় বিএনপির অন্তত মোট ১২০টি বা তার চেয়েও বেশি আসনে জয়ী হওয়া হয়তোবা যৌক্তিক হতো। সে ভিন্ন প্রসঙ্গ।
তাছাড়া, ২০০৮-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এক চমকপ্রদ ও জনবান্ধব নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে। এতে উল্লিখিত ঘরে ঘরে চাকরি প্রদান, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, দেশের প্রতিটি ছোট-বড় নদী খনন ও সেগুলোকে সারা বছর নাব্য রাখা, নৌপথ উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন, স্বল্প খরচে যাতায়াত ও রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে রেলওয়ের ব্যাপক উন্নয়ন সাধন, রাজধানী ঢাকার পরিবহন সমস্যার সমাধান ও যানজটমুক্ত করার লক্ষ্যে ভূগর্ভস্থ রেললাইন নির্মাণ এবং সর্বোপরি নতুন চমক ‘ডিজিটাল’ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ইত্যাদি ঘোষণা নতুন ভোটার হওয়া প্রায় ৮০ ভাগ তরুণ-তরুণীকে আওয়ামী লীগকে ভোটদানে উদ্বুদ্ধ করে। সেই সঙ্গে দেশে প্রকৃত অংশীদারিত্বমূলক সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম, সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ ও মানবাধিকার নিশ্চিতকরণসহ বিভিন্ন অঙ্গীকার দেশের মানুষকে উৎসাহিত করেছিল আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে। এসব ঘোষণায় দেশের শিক্ষিত-কমশিক্ষিত আমজনতা বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, যার ফলে ওই নির্বাচনে দুই বড় দলের ভোটের ব্যবধান এক কোটিরও বেশি অতিক্রম করেছিল।
বিগত চারটি নির্বাচনে বড় দুই দলের প্রাপ্ত ভোটের চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে এ দুটি দলেরই কমবেশি প্রায় সমানসংখ্যক সমর্থক রয়েছে, যা মাঝে মধ্যে সীমিতভাবে হলেও ওঠানামা করে। তারপরও বলা যায়, জনগণ ভোটদানে কখনও বড় রকম ভুল করে না, যদি ভোটদান পদ্ধতি ও পরিবেশ যৌক্তিকভাবে ন্যায়সঙ্গত হয় এবং নির্বাচনকালীন সরকার যদি নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনায় সক্ষম হয়। তবে গত জুনে চারটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এবং সর্বশেষ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (গোপালগঞ্জের পর যাকে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গ বলে অভিহিত করা হয়) নির্বাচনের ফলাফল এবং সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জনমত জরিপে যে চিত্র উঠে এসেছে, তা বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত ১৪ দলের সরকারের জন্য অস্বস্তিকর বটে। তারপরও জাতির প্রত্যাশা, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে যা যা করার তার সবই করবেন। মহান আল্লাহ্ তায়ালা সবাইকে ধৈর্য ও সুমতি প্রদান করুন।
কারার মাহ্মুদুল হাসান : সাবেক সচিব ; প্রেসিডেন্ট, চার্টার্ড ইন্সটিটিউট অব লজিস্টিকস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট, বাংলাদেশ কাউন্সিল
উপরোক্ত বিবরণ থেকে এটা পরিষ্কারভাবে প্রতীয়মান, প্রধানমন্ত্রীসহ সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার সংস্কারের পক্ষেই সুপারিশ করেছেন, তা বাতিল করতে কেউ বলেননি। এরপর ১০ মে ২০১১ তারিখে সুপ্রিমকোর্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়। এ সংক্ষিপ্ত আদেশের পরও ২৯ মে ২০১১ কমিটি সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে একটি লিখিত সুপারিশ প্রণয়ন করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ৯০ দিনের মধ্যে সীমিত করে এবং বৈদেশিক চুক্তির ক্ষেত্রে পরবর্তী সংসদে এটি অনুমোদনের বিধান রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে বহাল রাখার পক্ষে ওই কমিটি সর্বসম্মতভাবে ২৯ মে ২০১১ সুপারিশ করে, যে কমিটির ১৫ জন সদস্যই মহাজোটের। এসবই ঐতিহাসিক ঘটনা।
উপরোক্ত সুপারিশ প্রণয়নের পরদিন ৩০ মে ২০১১ কমিটির সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সে সাক্ষাতের ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। এর আলোকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধন সম্পর্কিত একটি বিল মন্ত্রিসভা অনুমোদন করে (আদালতের পূর্ণ রায় লেখার প্রায় ১৫-১৬ মাস আগেই), যা ২৫ জুন ২০১১ সংসদে উত্থাপন করা হয়। এরপর ৩০ জুন সংসদে বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে সংশোধনীটি পাস হয়। এ থেকে জনগণ নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কি বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের অভিপ্রায়ের, না প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার প্রতিফলন! প্রশ্নটি রেখেছেন বদিউল আলম মজুমদার তার লেখা নিবন্ধে। তিনি বিগত আওয়ামী লীগ আমলের সুনামের অধিকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলামের গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত করে আরও প্রশ্ন রেখেছেন, শুধু পঞ্চদশ সংশোধনীর লেজিটিমেসিই নয়, এর আইনি বৈধতাও প্রশ্নবিদ্ধ। সংশোধনীটির মাধ্যমে (অনুচ্ছেদ ৭বি) সংবিধানের প্রায় এক-তৃতীয়াংশকেই অপরিবর্তনযোগ্য করে ফেলা হয়েছে। কিন্তু কোনো সংসদই পরবর্তী সংসদের হাত-পা বেঁধে দিতে পারে না (মাহমুদুল ইসলাম, কনস্টিটিউশনাল ল’ অব বাংলাদেশ, তৃতীয় সংস্করণ)। অন্যদিকে বাংলাদেশ শাসনতন্ত্রের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সুপ্রিমকোর্ট পঞ্চদশ সংশোধনী করতে বলেননি। আদালতের রায়ে কোথাও বলা নেই, যে সরকার আছে সে সরকারের অধীনেই দশম নির্বাচন হবে (দৈনিক ইত্তেফাক, ২৯.০৯.১৩)।
এ অবস্থায় সংশোধিত শাসনতন্ত্র অনুসরণে জানুয়ারির (২০১৪) তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে অনুষ্ঠেয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দুই পক্ষের তুমুল হানাহানির কারণে আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কি-না, আর নির্বাচন হলেও দেশে-বিদেশে তা গ্রহণযোগ্য হবে কি-না, সে প্রশ্ন দিন দিন জোরালো হচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের কারণে দেশের রাজনীতিতে ক্রমেই উত্তাপ বাড়ছে। হরতালসহ বিভিন্ন ধরনের হিংসাত্মক এবং ক্ষেত্রবিশেষে জানমাল বিনাশী ভয়ংকর ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে দেশের সামগ্রিক অবস্থা এক কথায় নাজুক রূপ ধারণ করে ঘন কালো অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ অবস্থায় ২৭ অক্টোবর ২০১৩ সন্ধ্যায় দুই প্রধান নেত্রীর ৩৭ মিনিটের ফোনালাপের পর সংলাপ শুরু হবে কি-না এবং শুরু হলেও সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কিনা, তা এখন আক্ষরিক অর্থেই অনিশ্চিত।
নির্বাচন কমিশন নিয়েও অনেক কথা রয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) একজন সৎ, ভদ্র ও নিষ্ঠাবান সাবেক আমলা, যিনি অত্যন্ত সুনাম ও সুখ্যাতি নিয়ে জীবনভর চাকরি করেছেন। চাকরি জীবনের প্রথমদিকে মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন। বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিষয়ে বর্ষীয়ান রাজনীতিক সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত (আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য) বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে মেরুদণ্ডহীন আখ্যায়িত করে বিরোধী দলের উদ্দেশে নসিহত করেছিলেন, মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) শক্তিশালী করতে তারা যেন এগিয়ে আসেন। তিনি আরও বলেছিলেন, সুষ্ঠুু নির্বাচনের জন্য জনগণের কাছে আস্থাশীল ও শ্রদ্ধাশীল নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন (দৈনিক ইত্তেফাক, ১৭.০১.১২)। বিরোধী দল বিএনপি সেনগুপ্তের আহ্বানে কোনো সাড়া দিয়েছিলেন কিনা, তা জানা যায়নি। তবে তারা এ নির্বাচন কমিশনকে সরকারের তল্পিবাহক হিসেবে আখ্যা দিয়ে নিরন্তর তাদের সমালোচনা করে চলেছেন এবং ইসিকে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের একজন সদস্য সাংবাদিকদের সামনে চেয়ার থেকে ‘লাফ’ দিয়ে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেন, ইসির মেরুদণ্ড সোজাই আছে। এ সবই আচানক ঘটনা বটে।
নির্বাচন কমিশনের অন্য একজন সদস্য মোহাম্মদ আবু হাফিজ সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে অত্যন্ত বাস্তবসম্মত কথা বলেছিলেন কয়েক সপ্তাহ আগে। তিনি বলেছিলেন, সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করলে সব রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীকে সমান সুযোগ দেয়া নির্বাচন কমিশনের জন্য অত্যন্ত কঠিন হবে। সংবিধান অনুযায়ী সংসদ রেখে নির্বাচন করার চেয়ে ভেঙে দেয়ার পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করা ইসির জন্য সহজ হবে। তবে সংসদ বহাল রেখে না ভেঙে নির্বাচন করা হবে তা এখনও অনিশ্চিত (আমাদের সময়, ০৯.০৯.১৩)।
এখন দেশবাসী গত চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেমনভাবে ভোট প্রদান করেছেন- সে বিষয়ে আত্মভোলা এ জাতির উদ্দেশে কিছু তথ্য প্রদান করতে চাই।
বিগত চারটি সংসদ নির্বাচনের ফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৯ম সাধারণ নির্বাচন (২০০৮) ছাড়া আগের তিনটি নির্বাচনে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রাপ্ত ভোটের হিসাবে প্রায় সমানসংখ্যক ভোট পেয়েও সংসদে বেশি আসন লাভের ফলে দল দুটি পর্যায়ক্রমে সরকার গঠন করেছিল। ১৯৯১-এর নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১,০৫,০৭,৫৪৯ (মোট প্রদত্ত ভোটের ৩০.৮১ ভাগ) ও ১,০২,৫৯,৮৬৬ (মোট প্রদত্ত ভোটের ৩০.০৮ ভাগ) এবং প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান তিন লাখের কম হলেও জয়ী হওয়া আসনের ব্যবধান ছিল ৫২টি। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে দুই বড় দলের প্রাপ্ত ভোটের (আওয়ামী লীগ : ৩৭.৪৪ ও বিএনপি ৩৩.৬০ ভাগ) বিপরীতে প্রাপ্ত আসনের ব্যবধান (মাত্র ৩০টি) মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল বলে ধরা যায়।
একইভাবে ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২,২৮,৩৩,৯৭৮ (মোট প্রদত্ত ভোটের ৮০.৯৭ ভাগ) এবং ২,২৩,৬৫,৫১৬ (মোট প্রদত্ত ভোটের ৪০.১৩ ভাগ)। এ নির্বাচনে দুই দলের প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান অনধিক পাঁচ লাখ হলেও প্রাপ্ত আসন সংখ্যার ব্যবধান দাঁড়ায় ১৩১টি।
সেনাসমর্থিত ভিন্ন ধাঁচের এক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মোট ২৬৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২৩০টি আসনে বিজয়ী হয় এবং প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল ৩,৩৫,৫৩,৯৭১ (মোট প্রদত্ত ভোটের ৪৮.০৬ শতাংশ)। অন্যদিকে ওই নির্বাচনে বিএনপি ২৫৯টি আসনে অংশ নেয় এবং সাকুল্যে ২৯টি আসনে জয়লাভ করে। এ দলের মোট প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল ২,২৬,৫১,৭২১ (মোট প্রদত্ত ভোটের ৩২.২৪ ভাগ)। আওয়ামী লীগের বিপরীতে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা বিবেচনায় বিএনপির অন্তত মোট ১২০টি বা তার চেয়েও বেশি আসনে জয়ী হওয়া হয়তোবা যৌক্তিক হতো। সে ভিন্ন প্রসঙ্গ।
তাছাড়া, ২০০৮-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এক চমকপ্রদ ও জনবান্ধব নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে। এতে উল্লিখিত ঘরে ঘরে চাকরি প্রদান, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, দেশের প্রতিটি ছোট-বড় নদী খনন ও সেগুলোকে সারা বছর নাব্য রাখা, নৌপথ উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন, স্বল্প খরচে যাতায়াত ও রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে রেলওয়ের ব্যাপক উন্নয়ন সাধন, রাজধানী ঢাকার পরিবহন সমস্যার সমাধান ও যানজটমুক্ত করার লক্ষ্যে ভূগর্ভস্থ রেললাইন নির্মাণ এবং সর্বোপরি নতুন চমক ‘ডিজিটাল’ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ইত্যাদি ঘোষণা নতুন ভোটার হওয়া প্রায় ৮০ ভাগ তরুণ-তরুণীকে আওয়ামী লীগকে ভোটদানে উদ্বুদ্ধ করে। সেই সঙ্গে দেশে প্রকৃত অংশীদারিত্বমূলক সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম, সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ ও মানবাধিকার নিশ্চিতকরণসহ বিভিন্ন অঙ্গীকার দেশের মানুষকে উৎসাহিত করেছিল আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে। এসব ঘোষণায় দেশের শিক্ষিত-কমশিক্ষিত আমজনতা বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, যার ফলে ওই নির্বাচনে দুই বড় দলের ভোটের ব্যবধান এক কোটিরও বেশি অতিক্রম করেছিল।
বিগত চারটি নির্বাচনে বড় দুই দলের প্রাপ্ত ভোটের চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে এ দুটি দলেরই কমবেশি প্রায় সমানসংখ্যক সমর্থক রয়েছে, যা মাঝে মধ্যে সীমিতভাবে হলেও ওঠানামা করে। তারপরও বলা যায়, জনগণ ভোটদানে কখনও বড় রকম ভুল করে না, যদি ভোটদান পদ্ধতি ও পরিবেশ যৌক্তিকভাবে ন্যায়সঙ্গত হয় এবং নির্বাচনকালীন সরকার যদি নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনায় সক্ষম হয়। তবে গত জুনে চারটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এবং সর্বশেষ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (গোপালগঞ্জের পর যাকে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গ বলে অভিহিত করা হয়) নির্বাচনের ফলাফল এবং সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জনমত জরিপে যে চিত্র উঠে এসেছে, তা বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত ১৪ দলের সরকারের জন্য অস্বস্তিকর বটে। তারপরও জাতির প্রত্যাশা, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে যা যা করার তার সবই করবেন। মহান আল্লাহ্ তায়ালা সবাইকে ধৈর্য ও সুমতি প্রদান করুন।
কারার মাহ্মুদুল হাসান : সাবেক সচিব ; প্রেসিডেন্ট, চার্টার্ড ইন্সটিটিউট অব লজিস্টিকস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট, বাংলাদেশ কাউন্সিল
No comments