গল্প- বন্ধ্যাত্ব ও বিকেলের গাছ by সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম

সামনে বসে থাকা ছোটখাটো মানুষটা কাপে চুমুক দিতে দিতে যে প্রশ্ন করল, তাতে অন্য কেউ হলে চায়ের কাপসুদ্ধ পিরিচ আছাড় দিত অথবা উঠেই যেত।
রানু কোনোটাই করল না। চোখ ছোট করে লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে, এটা রসিকতা কি না। কিন্তু টুটুলের মুখ মানচিত্রের মতো। মনে হচ্ছে, সিরিয়াসলি জানতে চায়, এবার ফরিদপুরে গিয়ে রানু পানিতে পড়ে গিয়েছিল কি না। মেজাজ ঠিক রাখতে রানু কণ্ঠের শীতলতা যে পর্যায়ে নামিয়ে আনল, তার সঙ্গে ডিপ ফ্রিজের মাছের শরীরের তুলনা চলে। চিবিয়ে চিবিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কী দেখে মনে হলো, পড়ে গিয়েছিলাম?’

‘প্রায় বুকসমান পানিতে দাঁড়ানো তোমার একটা ছবি দেখলাম। সাঁতার তো জানো না, ছবি দেখে একটু ভয় পেয়েছিলাম।’
‘নদীতে পড়ে গেলে কেউ কানে কলমিফুল গুঁজে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে?’
‘হ্যাঁ, তাও তো ঠিক। তাহলে এবার ইচ্ছে করেই নেমেছিলে?’
‘না, ধাক্কা দিয়ে কেউ ফেলে দিয়েছিল। ভিজে গিয়েছি দেখে ভাবলাম, ফুল কানে দিয়ে ছবি তুলে ফেলি।’
‘যাহ্, রসিকতা করছ!’
‘“রসিকতা” শব্দটি এখনো আছে তাহলে এবং তা আমাদের মধ্যে দুর্ঘটনার মতো কখনো ঘটতে পারে?’
‘অফিসে কিছু হয়েছে? তোমার মেজাজ এত খারাপ কেন?’
‘মেজাজ খুবই ভালো। আমি অফিসে বসের ঝাড়ি খেতে খেতে তোমার মেসেজ পাব—জ্বর বেড়েছে, কখন ফিরব, ডিম কি ফ্রিজে, না চালের ড্রামে রেখেছি? আমার নিশ্চয়ই খুশিই হওয়ার কথা, তাই না?’
‘সরি, এভাবে আর মেসেজ পাঠাব না’ বলে টুটুল গোপনে ঢোঁক গিলল। আসলে সে রানুকে যে তার বাড়ি ফেরার প্রত্যাশা নিয়ে মেসেজ পাঠিয়েছে, ব্যাপারটা তা নয়। রিপ্লাই দেখে বুঝতে চাইছিল, হুট করে চলে আসার চান্স আছে কি না। টুটুল পরিস্থিতি হালকা করতে বলল, ‘ব্লু কিন্তু তোমার সঙ্গে খুব যায়। ইচ্ছে করলে মাঝেমধ্যে সালোয়ার-কামিজের বদলে এই কালারের শাড়ি পরতে পারো।’
রানু এক মুহূর্ত টুটুলের মুখের দিকে তাকাল, ‘রাইট, এখন থেকে তাহলে ব্লু শাড়ি পরেই অফিস করব। ব্লু নেইলপলিশ, ব্লু লিপস্টিক। ভালো হবে না?’
‘তুমি খুব খেপে আছ। থাক, রেস্ট নাও। আমি টুকটাক কাজ শেষ করি।’
‘যদি এই দয়াটা হয়!’
টুটুল কাপ-পিরিচগুলো তুলে ভেতরে নিয়ে গেল। নিজে চাকরি ছাড়ার পর থেকে সন্ধেয় রানু ফিরলে চা বানানোর কাজটা টুটুলই আগ্রহ নিয়ে করে। এতে রানুকে অন্তত একটু সার্ভিস দেওয়া হয়। আফটার-অল বাজারটা ওর টাকাতেই হচ্ছে। রানু অফিস থেকে ফিরলে দুকাপ চা বানায়, তারপর বারান্দায় নিয়ে আসে। কখনো কখনো টি-পটের পাশে একটা ফুল রাখতে ইচ্ছে করে, তবে ওর ভয়ে সেটা করে না। যাকে মুগ্ধ করার জন্য ফুল রাখা, সে যদি উল্টো বিরক্ত হয়ে ফুলের জীবনরহস্য নিয়ে ভাবা শুরু করে, তাহলে আর কী প্রয়োজন!
টুটুল এখনো বোঝে না, এই কঠিন ব্যক্তিত্বের মেয়ে কেন তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল! তার ধারণা, এ মেয়েকে বানানোর সময় ঈশ্বর উদাসীন ছিলেন। ‘তুমি মেয়ে আলাভোলা, নদী কীর্ত্তনখোলা’ বলার কোনো সুযোগ রানুর জন্য নেই। যা-ই হোক, ঈশ্বরের ভুলভ্রান্তি নিয়ে কথা বলা তার মতো বেকার স্বামীর মানায় না। চায়ের কাপ ধুতে ধুতে সে এসব ভাবল। রান্নাঘর থেকে গলা বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘আমি রাতের ভাত বসিয়ে দিই?’
‘যা ইচ্ছে করো। আমি রাতে খাব না। দয়া করে জ্বরটা বাড়িয়ে আমায় ঝামেলায় ফেলো না। রুগী নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে পারব না।’ রানু ভরা সন্ধ্যায় খটাশ করে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ল।
তাকে বিরক্ত না করে টিভি রুমে ঢুকে টুটুল চ্যানেল ঘোরাচ্ছে। একটি চ্যানেলে মা হলে কী কী করবেন এমন একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে, তাতে আবার লেগিংস পরে ধুমসি মতো এক মহিলা বোকা বোকা প্রশ্ন করছেন উপস্থিত চিকিৎসকদের। একবার রানুকে ডাকবে ভাবল। বিয়ের ছয় বছর পরও যখন তারা তিনজন হতে পারেনি, তখন থেকে আশপাশের মানুষের কথাগুলো খুব সুবিধেজনক অবস্থায় থাকছে না। টুটুলের পরিবার থেকেই কথা উঠছে বেশি। বউয়ের অত হাই প্রোফাইল চাকরি, ঝাঁজালো উত্তরের ভয়ে টুটুলের মা বউকে এড়িয়ে চলেন। কিন্তু টুটুলকে পেলেই শুরু হয় অভিযোগ। বউকে নিজের মুখে ঝাড়তে না পারার ক্ষোভে সেই অভিযোগ দুই গুণ-দশ গুণ হয়ে ওঠে। আল্লাহ কেন তাঁকে একটামাত্র পুত্রসন্তান দিয়েছেন, এ নিয়ে অশ্রুবর্ষণের ভেতর দিয়ে একসময় শেষ হয় ক্ষোভ। একমাত্র ছেলে হওয়ার কথা মনে করিয়ে অনেকবারই টুটুলকে বলেছেন, ‘বাবা, ত্যালে-জলে মিশে না। তুমি অল্প টাকা বেতনের চাকরি করো। এমন বউ তুমি আগলায় রাখতে পারবা না।’
এ ধরনের কথা খুব ইঙ্গিতপূর্ণ, কিন্তু টুটুল নিজে থেকে রানুকে কিছু বলার সাহস করেনি কখনো। তবে রানু কথায় কথায় যখন আলাদা থাকার কথা মনে করিয়ে দেয়, টুটুলের মনে হয়, খারাপ না, অন্তত যে মানুষের তার প্রতি কোনো উষ্ণতা নেই, তাকে আর জোর করে আটকে রাখা কেন। ঘরের ভেতর এমন বিযুক্ত থাকার চেয়ে ‘বিচ্ছেদ’ শব্দটি স্বতন্ত্রভাবে খারাপ নয়। রানু শেষ কবে সহজ সুরে কথা বলেছিল, টুটুলের মনে পড়ে না। এমনকি এখন কী করছে, কোথায় যাচ্ছে—এসব বলারও প্রয়োজন বোধ করে না সে। শুধু সন্তান প্রসঙ্গ এলে কিছুটা নরম হয়। একদিন মাঝরাতে হঠাৎ বলেছিল, ‘জানো টুটুল, কেন একটা বাচ্চা চাই—আমার কোনো কিছুই হান্ড্রেড পার্সেন্ট নিজের মনে হয় না।’
‘আমাকেও না?’
‘তোমাকে নিয়ে আমি ভাবি না।’
মনে মনে আহত হলেও ঘুরিয়ে প্রশ্ন করেছিল টুটুল, ‘কেন, তোমার চাকরি-লেখালেখি—এসবও নিজের না?’
‘নাহ্, কোনো কিছুই আপন মনে হয় না। শুধু নিজের অংশ একটা বাচ্চা হলেই হয়তো আক্ষেপটা কমবে। আমি তাকে আমার শৈশব দেব, আমার ভুল আর আমার সমস্ত রং...।’
এসব কথায় টুটুল চুপ করে থাকে। ইদানীং আর ইচ্ছে করলেও এমন মুহূর্তে রানুর চুলে হাত রাখা হয় না; হয়তো ওর ব্যক্তিত্বের দূরত্ব দিন দিন বেড়ে যাওয়ার কারণেই।
আগামীকাল রানুকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা। হরমোনে একটা ঝামেলার জন্য বেশ কিছুদিন ধরে ওষুধ খাচ্ছে, ধারণা করা হচ্ছে, এটাই মূল সমস্যা। আজ সারাক্ষণ রানুর কথা তার মাথায় ঘুরছে।
টুটুল আর মাদার কেয়ার প্রোগ্রাম দেখার জন্য ওকে ডাকল না। নিজেই ভাত বসিয়ে দিল। খুব আগ্রহ নিয়েই রানুর শাড়ি-স্যান্ডেলগুলো ঠিকঠাক করল। এসব কাজ যে সে পারে, আগে এটা তার ধারণাতেও ছিল না। সে কি এটা কোনো অপরাধ থেকে করছে? মনে মনে এতবার ভাবল, দুপুরে সুপ্রিয়া আসার কথাটা সে রানুকে বলবে, কিন্তু যদি সহজভাবে না নেয়, এই ভয়ে এড়িয়ে গেছে। কিন্তু গেটম্যানের ইনফর্ম করে দেওয়ার চান্স আছে ভেবে অস্বস্তি হচ্ছে। এরই মধ্যে বলে দেয়নি তো? এ জন্যই কি রানুর এত মেজাজ খারাপ? তবে সুপ্রিয়ারও হুট করে ওভাবে চলে আসা ঠিক হয়নি। কিন্তু এখানে তার নিজেরও ভূমিকা আছে ভেবেই এখন খারাপ লাগছে। ভেতরে ভেতরে তারও খানিকটা ইচ্ছে কি ছিল না! দুপুরে ধানমন্ডিতে দেখা হওয়ার কথা। কিন্তু সুপ্রিয়ার ফোন পেয়ে সে-ই তো জানিয়েছে, জ্বর বেড়েছে, বাইরে বের হতে কষ্ট হচ্ছে। সুপ্রিয়া এসেছিল ঘণ্টা দুয়েকের জন্য। টুটুল চা বানাতে চাইলে সে নিজেই রান্নাঘরে গেল। হাতে কাপ তুলে দিয়ে বসল মুখোমুখি।
‘খেয়েছ কিছু সকাল থেকে?’
‘ইচ্ছে করছে না। মুখটা তেতো লাগছে।’
‘বউ জানে তোমার জ্বর?’
‘ঠিক বলতে পারব না। আমি বলিনি, আর ও এত ব্যস্ত!’
‘জানি। রানুকে তো তুমি আমার আগে থেকে চেনো না।’
‘তা ঠিক। আমার বউ তো মোটে বছর ছয়েকের। তোমার ছোটবেলার বন্ধু।’
‘ও সব সময়ই একই রকম, নিজের কাজই আগে প্রায়োরিটি। এসএসসির সময় ওর ছোট ভাইয়ের অপারেশন। কী আশ্চর্য মেয়ে, নিজের ভাইটা দু-সপ্তাহ হাসপাতালে ছিল, একবারও দেখতে যায়নি, জানো!’
‘কী আশ্চর্য! কেন বলো তো? ও তো দেখি এখনো রিয়াজের সবকিছুর দায়িত্ব ক্যারি করে।’
‘হুম্, সেটা ওর রেসপনসিবিলিটি। বলেছিল, হাসপাতালে গেলে নিঃশ্বাস আটকে আসে। কিন্তু আমরা জানতাম, পড়ার ক্ষতি হবে বলে বেরোয়নি।’
‘বাদ দাও। তুমি কি আমার বউয়ের গল্প করতেই এসেছ? তোমার কী জরুরি কথা ছিল বলছিলে।’
সুপ্রিয়া মাথা নিচু করল। ‘আসলে ওকে স্ট্রিক্ট রেসপনসিবল মানুষই বলতে চেয়েছি, ছোট করতে চাইনি। আমার নিজের তেমন কোনো কথা নেই, তোমার সঙ্গে গল্প করতে চেয়েছি।’
‘খুব ব্যক্তিগত বলে জানতে চাইনি কখনো। কিন্তু সুপ্রিয়া, তিন বছরের মেয়ে নিয়ে কেন সেপারেশনে গেলে?’
‘উপায় ছিল না। জানো তো, সব মেনে নেওয়া যায়, শুধু নিজের পুরুষের অংশটা অন্যকে দেওয়া যায় না। আর যদি সেটা দিনের পর দিন ঘটতে থাকে, তবে কী করার থাকে বলো? উপেক্ষাও কি অত হাসিমুখে নেওয়া যায়?’
‘এখন কি তুমি ভালো আছ?’
‘ভালো-খারাপ জানি না, স্বস্তিটা আছে।’
‘কষ্ট পাও না স্বামীর জন্য?’
‘না, পাই না।’ কথাগুলো বলার পরই মুখটা নিচু করেছে সুপ্রিয়া। বোঝা যাচ্ছে, অসহায় অবস্থাটা দেখাতে চায় না। টুটুলের খুব মায়া হলো এই চঞ্চল সরল মেয়ের জন্য। এ মেয়ের সংসার করার ইচ্ছে ষোলো আনা, আবার স্বাবলম্বী হওয়ায় ইগোটাও বেশি।
‘তুমি এসব কথা তোমার বন্ধুকে বলেছ?’
‘না, ওর সময় নেই। জানো, খুব একা লাগে। অবশ্য ও থাকতেও লাগত।’ এবার টুটুলের মুখের দিকে তাকিয়েই বলল।
সুপ্রিয়ার মুখে রাজ্যের নিরানন্দ, অথচ চোখ দুটো কী চঞ্চল! টুটুল কী বলবে বুঝতে পারছিল না। তারও যে ভয়ানক একা লাগে—পুরুষ বলে এ কথাটা কাউকে কোনো দিন বলতে পারেনি। বিশেষত চাকরি ছাড়ার পর থেকে এই ঘরেই অধিকাংশ সময় কাটে। সারা দিন পর সন্ধ্যায় ঘরে ফিরেও রানুর ভেতর তার জন্য কোনো উত্তাপ থাকে না, এটা সে বোঝে।
সুপ্রিয়াকে ওই মুহূর্তে ঠিক কেমন মায়া নিয়ে ডেকেছিল মনে পড়ছে না, কিন্তু কণ্ঠে যে প্রশ্রয় ছিল, সে তো সত্যি। ওর চোখে পানি দেখে মনে হয়েছিল, বৃষ্টি আঁকার জন্য কেউ কাগজে এইমাত্র কয়েকটা জলের বিন্দু এঁকেছে, যেখানে আকাশভর্তি মেঘ। সুপ্রিয়া হু হু করে কেঁদেছে। টুটুলের মনে হলো, বন্ধু হিসেবে এ সময় ওর হাতটা না ধরা খুব অন্যায়। সুপ্রিয়াও হয়তো চেয়েছিল, তার হাত কেউ ধরুক। এসব ভাবতে ভাবতে চুলো থেকে ভাত নামাল টুটুল। রানুকে কয়েকবার ডাকাডাকির পরও সে উঠল না। শুধু পাশ ফিরতে ফিরতে আগের মতো শক্ত গলায় বলল, ‘আমি ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেছি। তোমারও কিছু টেস্ট লাগবে। কালকে টেস্টগুলো দিয়ে এসো। সন্ধ্যায় রিপোর্ট দেবে।’ আত্মসম্মানে বাধলেও এ কথার বাইরে যাওয়ার সাহস টুটুলের নেই। সে একা একা খেয়ে সব ঠিকঠাক করে শুয়ে পড়ল।
একটা দিন দ্রুতই শেষ হয়ে এল ল্যাবএইডের ডায়াগনোসিস রিপোর্টের বুথে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে। রানু ফোন করে জানিয়েছে, সে সরাসরি চেম্বারে চলে যাবে অফিস থেকে। টুটুল যেন দুজনের রিপোর্ট নিয়ে সময়মতো উপস্থিত থাকে।
ডাক্তারের রুম থেকে বের হওয়ার সময় টুটুলের খুব অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে। রানু কি এবার সত্যি সত্যি আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে? নিজে থেকে সে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারছে না। ধানমন্ডি থেকে আজিমপুর খুব দূরে নয়। রিকশা ঠিক করে দুজনই উঠে বসল। টুটুল খানিকটা কাঠ হয়ে আছে। ঢাকা কলেজ পার হওয়ার সময় রানু রিকশা থামাল।
টুটুল চুপ করে আছে। রানু নেমে গাছের দোকানগুলোর দিকে গেল। সে আজ সত্যি সত্যি ব্লু শাড়ি পরেছে। তার শ্যামলা রঙের ভেতর শাড়িটাকে লাগছে মেঘের মতো! রানুর হাতে একটা ফুলগাছ। রিকশায় উঠে ছোট্ট টবসমেত গাছটা টুটুলের হাতে দিল সে।
‘তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে টুটুল?’
‘না।’
‘মিথ্যে বোলো না।’
‘হচ্ছে, তবে তোমার জন্য। রানু, তুমি সত্যি ভাবতে পারো আমাদের একসঙ্গে থাকা নিয়ে। এমনিও তো আমার বিষয়ে তোমার আগ্রহ নেই।’
‘কী দেখে বুঝলে আগ্রহ নেই, ভরদুপুরে তোমাকে চা বানিয়ে খাওয়াইনি বলে?’
টুটুল চমকে গিয়েছে।
‘আমি বাড়ি না থাকলে কাউকে আসতে বললে আমাকে জ্বরের মেসেজের সঙ্গে ওটাও জানিয়ে রেখো।’
টুটুল চুপ করে আছে।
‘জানা থাকলে অন্যদের জবাব দিতে সুবিধে হয়।’
‘সরি রানু।’
‘টুটুল, আমার একটা প্রশ্নের জবাব দেবে?’
‘বলো, প্লিজ।’
‘আমার এমন হলে তুমি কি ছেড়ে যেতে আমাকে?’
‘না, রানু।’
‘তুমি যদি যেতেও আমি কিন্তু যাব না।’
টুটুলের চোখ ভিজে আসছে। রানু তার হাত ধরল। ‘টুটুল, প্রকৃতি নানাভাবে ব্যালেন্স করে। তুমি এত বেশি মায়াময় একটা মানুষ, সেটা খুব ইমব্যালেন্স। নেচার চাইছে না ঠিক তোমার একটা কপি থাকুক, তাই বাবা হওয়ার এই ক্ষমতাটা সে তোমাকে দেয়নি। কিন্তু এ কারণে যে অপূর্ণতা থাকবে, সেটা আমাদের দুজনেরই।’
টুটুল মনে মনে প্রত্যাশা করছে, বৃষ্টি আসুক—ঝুম বৃষ্টি। মনে হচ্ছে, সবকিছু জলরঙে আঁকা—রানুর শাড়ি, মুখ, রাস্তার বিলবোর্ড...চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। রানুর দিকে সে তাকাতে পারছে না। পাশে বসে থাকা কাঠখোট্টা মেয়েকে এভাবে দেখে ফেললে দুর্বল পুরুষের বৃষ্টির আশ্রয় ছাড়া পথ থাকে না।

No comments

Powered by Blogger.