শরৎ বৃথা বয়ে যায় by হাসান আজিজুল হক
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের
স্মৃতি-বিস্মৃতি দুই-ই ঘটে। আমার যেহেতু কিছুটা বয়স বেড়েছে, তাই
মাঝেমধ্যেই স্মৃতি এসে হানা দেয়, ফিরে ফিরে যাই শৈশবে।
যেমন
এই শরৎকালের কথা মনে এলে মনের মধ্যে বারবার জেগে ওঠে ছেলেবেলার নানা
স্মৃতি। আমার মনে হয়, বয়স বাড়ার সঙ্গে পৃথিবীতে মানুষ যত পুরোনো হতে
থাকে, তার কাছে ঋতুর বৈচিত্র্যও তত পুরোনো হতে শুরু করে। আমাদের দেশে
ঋতুগুলো একসময় খুব পরিষ্কারভাবে বিভক্ত ছিল। আর এখন বিষাক্ত পৃথিবীতে
প্রকৃতির ভারসাম্যহীনতার কারণে ঋতুর বিচিত্রতা তো তেমনভাবে বোঝাই যায়
না—কোন ঋতু যে কখন পার হয়, টেরই পাওয়া যায় না!
ছেলেবেলায় শরৎকাল আমি যে কী পছন্দ করতাম! শরতের নির্মল আকাশে থাকত ননি মাখানো মেঘ—মেঘটা পেঁজা তুলোর মতো ভেসে বেড়াত। মনে পড়ে, শরতের সময় যবগ্রামে আমাদের খামারবাড়িতেই কাটাতাম বিকেলগুলো। শেষ বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নামার ঠিক আগে আকাশের মেঘ সরে যেত, জ্বলে উঠত সন্ধ্যাতারা।
আমাদের গ্রামটা ছিল আদিগন্ত সবুজের সমুদ্র। শারদীয় ভোরে বাড়ি থেকে ছুটে বেরিয়ে যেতাম গ্রামে। মাঠভর্তি কাশফুলের আড়ালে চুপচাপ বসে থাকতাম—ভাবখানা এমন, যেন আমাকে কেউ দেখতে পাবে না।
শরতের সঙ্গে দুর্গাপূজাও শুরু হতো, ছুটি থাকত স্কুলে। ফলে মজাটা দ্বিগুণ হয়ে উঠত। আমাদের গ্রামে হিন্দুই ছিল বেশি। তাই শরৎ আসার আগ থেকেই গ্রামজুড়ে শুরু হতো দুর্গাপূজার ঢাক-গুড়গুড়। সারা বছর প্রতিমার যে খড়ের কাঠামোটি ঘরের এক কোনায় পড়ে থাকত, শরতে পূজার বাতাস পেয়ে সেটি পেয়ে যেত পূর্ণাঙ্গ প্রতিমার গড়ন—প্রতিমার খড়ের কাঠামোতে এক মাটি, দুই মাটি, খড়িমাটি—এভাবে শেষ পর্যায়ে হতো চক্ষুদান। আমাদের কাছে এ পর্বটি ছিল খুবই আকর্ষণীয়। রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে দেখতাম, প্রতিমার চক্ষুদান হচ্ছে—আকর্ণবিস্তৃত চোখ আঁকছেন শিল্পী—সেসব কী ভোলা যায়!
প্রতিবছরই শরৎ আসে। কিন্তু নানা কাজকর্মের চাপে এ ঋতুকে কি সেভাবে খেয়াল করা হয় এখন? তবে এখনো নীল আকাশে তাকিয়ে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ ভাসতে দেখলে আমার কেবল ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে। দুর্গাপূজার ঢাকের শব্দ শুনে মন বলে, ক্ষণিকের অতিথি হয়ে শরৎ বৃথা বয়ে যায়!
ছেলেবেলায় শরৎকাল আমি যে কী পছন্দ করতাম! শরতের নির্মল আকাশে থাকত ননি মাখানো মেঘ—মেঘটা পেঁজা তুলোর মতো ভেসে বেড়াত। মনে পড়ে, শরতের সময় যবগ্রামে আমাদের খামারবাড়িতেই কাটাতাম বিকেলগুলো। শেষ বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নামার ঠিক আগে আকাশের মেঘ সরে যেত, জ্বলে উঠত সন্ধ্যাতারা।
আমাদের গ্রামটা ছিল আদিগন্ত সবুজের সমুদ্র। শারদীয় ভোরে বাড়ি থেকে ছুটে বেরিয়ে যেতাম গ্রামে। মাঠভর্তি কাশফুলের আড়ালে চুপচাপ বসে থাকতাম—ভাবখানা এমন, যেন আমাকে কেউ দেখতে পাবে না।
শরতের সঙ্গে দুর্গাপূজাও শুরু হতো, ছুটি থাকত স্কুলে। ফলে মজাটা দ্বিগুণ হয়ে উঠত। আমাদের গ্রামে হিন্দুই ছিল বেশি। তাই শরৎ আসার আগ থেকেই গ্রামজুড়ে শুরু হতো দুর্গাপূজার ঢাক-গুড়গুড়। সারা বছর প্রতিমার যে খড়ের কাঠামোটি ঘরের এক কোনায় পড়ে থাকত, শরতে পূজার বাতাস পেয়ে সেটি পেয়ে যেত পূর্ণাঙ্গ প্রতিমার গড়ন—প্রতিমার খড়ের কাঠামোতে এক মাটি, দুই মাটি, খড়িমাটি—এভাবে শেষ পর্যায়ে হতো চক্ষুদান। আমাদের কাছে এ পর্বটি ছিল খুবই আকর্ষণীয়। রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে দেখতাম, প্রতিমার চক্ষুদান হচ্ছে—আকর্ণবিস্তৃত চোখ আঁকছেন শিল্পী—সেসব কী ভোলা যায়!
প্রতিবছরই শরৎ আসে। কিন্তু নানা কাজকর্মের চাপে এ ঋতুকে কি সেভাবে খেয়াল করা হয় এখন? তবে এখনো নীল আকাশে তাকিয়ে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ ভাসতে দেখলে আমার কেবল ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে। দুর্গাপূজার ঢাকের শব্দ শুনে মন বলে, ক্ষণিকের অতিথি হয়ে শরৎ বৃথা বয়ে যায়!
No comments