চা রু শি ল্প- বালুর রং, পাতা-ফুল ছাড়া গাছ by মোবাশ্বির আলম মজুমদার
‘কুঁকড়ে আছি মনোটোনাস গর্ভে, ধাত্রী
আমায় কখন মুক্ত করবে’ কবি শাহিদ আনোয়ারের কবিতার পঙিক্তমালার সঙ্গে মিলে
যায় সৈয়দ ইকবালের চিত্রকর্ম।
শিল্পী নিজে গল্প লেখেন। দেশ ছেড়ে দীর্ঘ সময় কানাডায় বসবাস করছেন। কানাডার ১০টি একক প্রদর্শনীসহ এটি তাঁর ১৪তম প্রদর্শনী।
১০ সেপ্টেম্বর বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইন আর্টসে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনীতে মোট কাজের সংখ্যা ৫০। ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিক মাধ্যমের কাজে দেখা যায়, বুনট ও টেক্সচারই প্রধান। ক্যানভাসে ত্রিমাত্রিক ইফেক্ট দেওয়ার জন্য কানাডায় একরকম টেক্সচার মিডিয়া পাওয়া যায়। মডেলিং পেস্টের সঙ্গে বালু মিশিয়ে তিনি টেক্সচার তৈরি করেন। তাঁর ছবির বিষয় হয়ে ওঠে বৈশ্বিক উষ্ণতা আর মানুষের হূদয়বৃত্তিক অনুভূতি।
প্রদর্শনীর ‘টিয়ারস অব নেচার’ বা ‘প্রকৃতির কান্না’ শিরোনামের কাজগুলো একেবারে নতুন। এ শিরোনামে ১৯৯৫ সালে কানাডার মন্ট্রিলে তাঁর একক প্রদর্শনীও হয়েছিল। ছবির বিষয় প্রসঙ্গে শিল্পী বলেন, ‘আমার ছবির বিষয় কখনো একবার নিজের আবেগের স্তর, আবার কখনো বিশ্বসভ্যতার পরিবর্তন, প্রকৃতির ধ্বংসযজ্ঞ—এসব নিয়ে। মানুষ ক্রমে ধূসর মরুভূমির দিকে যাত্রা করছে। চিন্তাকে আঁকড়ে আছে বৈশ্বিক উষ্ণতার ক্ষত। সে জন্য আমার ছবির রঙে দেখা যায় বালুর রং। পাতা-ফুল ছাড়া গাছ।’
‘মাইন্ড দ্য গ্যাপ’ শিরোনামের দুটি বড় কাজে আছে নীল রঙের আধিক্য। দুটি ক্যানভাস পাশাপাশি অবস্থান করছে। দুই ক্যানভাসের একটিতে নারী এবং অন্যটিতে পুরুষের দেহভঙ্গি একে অপরের দিকে ছুটছে। এ যেন চিরন্তন টান। ক্যানভাসে হলুদরঙা চড়া রেখা ‘বিপৎসংকেত’ বোঝাতে ব্যবহার করেছেন ইকবাল। সুররিয়ালিস্টিক ধারার চিন্তার প্রকাশ স্পষ্ট এ দুই ক্যানভাসে।
‘লর্ড কৃষ্ণ উইথ রেড’ ছবিতে লাল রঙের ব্যবহার দেখা যায় জমিনের অনেকাংশে। আবার ‘রাধা ইন বৃন্দাবন’ চিত্রে নীল আর সবুজ রঙের জমিন তৈরির পর রাধার মুখ আঁকা হয়েছে গাঢ় রঙে।
সৈয়দ ইকবালের কাজে আছে রেখা, বুনট আর আকৃতির সখ্য—তিন বস্তুর সমন্বয়ের চেষ্টা তাঁর ছবিতে স্পষ্ট। গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চর্চারত এ শিল্পীর শিল্পকর্ম দর্শকদের নতুন বিষয় ও ভাবনার খোঁজ দেয়। প্রদর্শনী শেষ হয়েছে ১৯ সেপ্টেম্বর।
No comments