অর্থনীতি- গভীর গাড্ডায় ভারত by কুলদীপ নায়ার
ভারত যে অর্থনৈতিক গাড্ডায় পড়েছে, তা
দুনিয়ার লোক জেনে গেছে। যা এখনো সবাই জানে না তা হলো, এই ব্যাধির কারণ
রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ও অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরমের কিছু ভুল
সিদ্ধান্ত।
প্রণব মুখার্জি ওই সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছিলেন
অর্থমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে। আর ২০০৮
পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী থাকাকালে চিদাম্বরমও বেশ কিছু ভুল করেন।
মুখার্জি এখন রাষ্ট্রপতি ভবনের বিলাসবৈভবের মধ্যে বাস করছেন, আর চিদাম্বরম অর্থনীতি উদ্ধারের লম্বা লম্বা প্রতিশ্রুতির আড়ালে নিজেকে সুরক্ষিত রেখেছেন। কিন্তু দুজনই জবাবদিহির আওতায় পড়েন। তাঁদের বলা উচিত, কী কারণে তাঁরা অগ্র্রগতির ছন্দ নষ্ট করার মতো সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছিলেন। এই দুজন যেসব কুকীর্তি করেছেন, সরকারি কাজে স্বচ্ছতা নেই বলে খুব অল্প লোকই তা জানতে পারে।
মুখার্জির নেওয়া একটা সিদ্ধান্ত হলো ১২ হাজার কোটি রুপির কর আরোপ করা, যা ধার্য করার তারিখ থেকে অতীতের জন্যও প্রযোজ্য হবে। বিষয়টা সুপ্রিম কোর্টের মামলা পর্যন্ত গড়ায় এবং সেখানে সরকারের হার হয়। এরপর সরকার বিনিয়োগ আইন, ২০১২ পাস করার আগে একটা অধ্যাদেশ জারি করে। ওই অধ্যাদেশের ‘অতীতে প্রযোজ্য’ ধারাটি থাকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভয় পেয়ে যান। অথচ ভারতের তখন বিদেশি বিনিয়োগ খুবই প্রয়োজন ছিল। অনেক ছাড় দিয়েও ওয়ালমার্টকে ভারতের মাটিতে এখনো আনা যায়নি। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতে বিনিয়োগ করা বিরাট অঙ্কের অর্থ তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। মাত্র কয়েক সপ্তাহেই ২০০ বিলিয়ন ডলার পরিমাণ অর্থ চলে গেছে বলে জানানোও হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং পরিণতিটা আগাম চিন্তা করতে পারেননি। কার্যত ২০০৮ সালে চিদাম্বরমের তৈরি করা বিপর্যয় দেখে প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিজের হাতেই নিয়ে নেওয়া। অর্থনীতি বিষয়ে তাঁর দক্ষতার জন্যই সেটা করা উচিত হতো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কয়লামন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিং কোনো প্রতিশ্রুতি দেখাতে না পারলেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি বিনিয়োগের বিষয়ে ভালো করতে পারতেন।
ভারতের উচিত ছিল কয়লা আমদানি না করে আগের মতো কয়লা রপ্তানি করা। কয়লা খনির ব্লকগুলো বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির জন্য মনমোহন সিং ব্যক্তিগতভাবে হয়তো দায়ী নন। কিন্তু এই নয়ছয় থেকে ক্ষতি হয়ে যায় হাজারো কোটি রুপি। আসলে কী ঘটেছে, তার পূর্ণচিত্র কখনোই প্রকাশিত হয়নি; কারণ অনেকগুলো ফাইল খোয়া গেছে। সরকার ঘটনাটা সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্বীকারও করেছে। এ ব্যাপারে সরকারের ব্যবহূত ভাষা ছিল, ‘তথাকথিত ফাইলগুলো’।
কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইয়ের মতে, ১৫৭টি ফাইল খোয়া গেছে। জানা গেছে, সে ফাইলগুলোতে কয়লা ব্লক ইজারা বিষয়ে কিছু ছিল না, ছিল অনেকগুলো চিঠি। ফাইলগুলোর দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর হাতে ছিল না বলে তিনি এগুলো হারানোর দায় থেকে মুক্তি পেতে পারেন না। তিনি কয়লা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তখন। সিবিআইয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, যিনি আবার এই কেলেঙ্কারির তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন, বলেছেন যে প্রধানমন্ত্রীকেও এ ব্যাপারে ‘পরীক্ষা’ করা দরকার; তিনি ২০০৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নীতিনিষ্ঠা নিন্দার ঊর্ধ্বে বলেই কি তাঁর অধীন মন্ত্রণালয়ের কৃতকর্ম সম্পর্কে তিনি দায়মুক্তি পাবেন?
অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি করায় প্রধানমন্ত্রীর কিছু করণীয় ছিল; কিন্তু রাজনৈতিকভাবে দুর্বল বলে তিনি তা করতে পারেননি। তাঁর আরেকটি ভুল হলো, তিনি প্রণব মুখার্জির ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন এবং তাঁকে মন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত বেশ কটি কমিটির সভাপতি করেছিলেন। তাঁর ওপরই দিয়েছিলেন দুরূহ কিছু সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজার ভার। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুখার্জির নিজের মন্ত্রণালয়কে দেওয়ার মতো সময় ছিল না এবং পরিস্থিতির অবনতির শুরু সেখান থেকেই।
সংকট আরও বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে মূল্যস্ফীতি (১০ শতাংশ) ঘটার ফলে। গড়পড়তা একজন মানুষের আয় আগের জায়গায় থাকলেও, দ্রব্যমূল্যের ক্রমবৃদ্ধির ফলে আসলে তার আয় কমে যায়। জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে যায়।
গড়ে লোকসভার একটি আসনের জন্য অর্থ প্রয়োজন হয় ১০ কোটি রুপি। রাজনৈতিক দলগুলো অনেক আগে থেকেই নির্বাচনী তহবিলের জন্য ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। সুতরাং, কীভাবে তারা দুর্নীতির জন্য ব্যবসায়ীদের চ্যালেঞ্জ করবে? এ জন্যই প্রধান তথ্য কমিশনার যখন সিদ্ধান্ত দিলেন যে তথ্য অধিকারের বিধিবিধান রাজনৈতিক দলগুলোর কাজকর্মের বেলায়ও প্রযোজ্য হবে, তখন সব রাজনৈতিক দল একযোগে সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল; এটাই তাদের সুবিধাবাদিতার প্রমাণ।
আশু সমস্যা হলো, কীভাবে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরোনো যাবে। প্রধানমন্ত্রী সংসদে স্বীকার করেছেন, দেশ কঠিন সময়ের মুখোমুখি। ন্যায্যভাবেই বলা যায়, এর জন্য দায়ী হলো সরকার। সুশাসন ছিল না, নেতৃত্ব ছিল না, দিকনির্দেশনা ছিল না। জানা নেই, প্রধানমন্ত্রীর মনে সংস্কারের কোনো রূপরেখার কথা আছে কি না। তাঁকে অর্থনৈতিক নীতিগুলো নতুন করে তৈরি করতে হবে, যাতে কর্মসংস্থান হয়, জিনিসপত্রের দাম কমে এবং প্রবৃদ্ধি বাড়ে। প্রবৃদ্ধির হার এখন ফিরে গেছে পঞ্চাশ-ষাটের দশকের ৪ শতাংশের ঘরে। উৎপাদন স্থবির হয়ে গেছে, শিগগিরই তা বাড়ার সম্ভাবনা কম।
এ অবস্থায় নতুন করে নির্বাচন হলে ভাল হতো। তাতে করে বিনিয়োগকারীদের অনিশ্চয়তা দূর হতো এবং এত দিনে জনগণও নতুন নির্বাচিত সরকারে অভ্যস্ত হয়ে উঠত। কিন্তু বেশির ভাগ দলের সাংসদেরা, বিশেষ করে কংগ্রেসের সাংসদেরা তাঁদের পুরো মেয়াদটাই ভোগ করতে চান। কারণ, তাঁদের অনেকেই জানেন, তাঁরা হয়তো পুনর্নির্বাচিত হবেন না। রাজনৈতিক আকাশের মেঘ ভবিষ্যতের ওপর ছায়া ফেলছে। কোনো দলই যদি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায় (না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে হচ্ছে), তাহলে পরবর্তী সরকারও হবে জোট সরকার। সে ধরনের সরকার দেশের বিষয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধায় পড়বে। অথচ তা ছাড়া ভারত এই গভীর গাড্ডা থেকে উঠতে পারবে না। সব রাজনৈতিক দলের এখনই কিছু বিষয়ে একমত হওয়া উচিত। এবংতা নির্বাচনের আগেই। আমি হয়তো ভুল চিন্তা করছি। কিন্তু মনে হচ্ছে, সামনের বছরগুলোর জন্য ভারতের সাফল্যের গল্পটা মুখ থুবড়ে পড়তে যাচ্ছে।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
কুলদীপ নায়ার: ভারতের সাংবাদিক।
মুখার্জি এখন রাষ্ট্রপতি ভবনের বিলাসবৈভবের মধ্যে বাস করছেন, আর চিদাম্বরম অর্থনীতি উদ্ধারের লম্বা লম্বা প্রতিশ্রুতির আড়ালে নিজেকে সুরক্ষিত রেখেছেন। কিন্তু দুজনই জবাবদিহির আওতায় পড়েন। তাঁদের বলা উচিত, কী কারণে তাঁরা অগ্র্রগতির ছন্দ নষ্ট করার মতো সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছিলেন। এই দুজন যেসব কুকীর্তি করেছেন, সরকারি কাজে স্বচ্ছতা নেই বলে খুব অল্প লোকই তা জানতে পারে।
মুখার্জির নেওয়া একটা সিদ্ধান্ত হলো ১২ হাজার কোটি রুপির কর আরোপ করা, যা ধার্য করার তারিখ থেকে অতীতের জন্যও প্রযোজ্য হবে। বিষয়টা সুপ্রিম কোর্টের মামলা পর্যন্ত গড়ায় এবং সেখানে সরকারের হার হয়। এরপর সরকার বিনিয়োগ আইন, ২০১২ পাস করার আগে একটা অধ্যাদেশ জারি করে। ওই অধ্যাদেশের ‘অতীতে প্রযোজ্য’ ধারাটি থাকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভয় পেয়ে যান। অথচ ভারতের তখন বিদেশি বিনিয়োগ খুবই প্রয়োজন ছিল। অনেক ছাড় দিয়েও ওয়ালমার্টকে ভারতের মাটিতে এখনো আনা যায়নি। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতে বিনিয়োগ করা বিরাট অঙ্কের অর্থ তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। মাত্র কয়েক সপ্তাহেই ২০০ বিলিয়ন ডলার পরিমাণ অর্থ চলে গেছে বলে জানানোও হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং পরিণতিটা আগাম চিন্তা করতে পারেননি। কার্যত ২০০৮ সালে চিদাম্বরমের তৈরি করা বিপর্যয় দেখে প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিজের হাতেই নিয়ে নেওয়া। অর্থনীতি বিষয়ে তাঁর দক্ষতার জন্যই সেটা করা উচিত হতো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কয়লামন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিং কোনো প্রতিশ্রুতি দেখাতে না পারলেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি বিনিয়োগের বিষয়ে ভালো করতে পারতেন।
ভারতের উচিত ছিল কয়লা আমদানি না করে আগের মতো কয়লা রপ্তানি করা। কয়লা খনির ব্লকগুলো বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির জন্য মনমোহন সিং ব্যক্তিগতভাবে হয়তো দায়ী নন। কিন্তু এই নয়ছয় থেকে ক্ষতি হয়ে যায় হাজারো কোটি রুপি। আসলে কী ঘটেছে, তার পূর্ণচিত্র কখনোই প্রকাশিত হয়নি; কারণ অনেকগুলো ফাইল খোয়া গেছে। সরকার ঘটনাটা সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্বীকারও করেছে। এ ব্যাপারে সরকারের ব্যবহূত ভাষা ছিল, ‘তথাকথিত ফাইলগুলো’।
কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইয়ের মতে, ১৫৭টি ফাইল খোয়া গেছে। জানা গেছে, সে ফাইলগুলোতে কয়লা ব্লক ইজারা বিষয়ে কিছু ছিল না, ছিল অনেকগুলো চিঠি। ফাইলগুলোর দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর হাতে ছিল না বলে তিনি এগুলো হারানোর দায় থেকে মুক্তি পেতে পারেন না। তিনি কয়লা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তখন। সিবিআইয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, যিনি আবার এই কেলেঙ্কারির তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন, বলেছেন যে প্রধানমন্ত্রীকেও এ ব্যাপারে ‘পরীক্ষা’ করা দরকার; তিনি ২০০৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নীতিনিষ্ঠা নিন্দার ঊর্ধ্বে বলেই কি তাঁর অধীন মন্ত্রণালয়ের কৃতকর্ম সম্পর্কে তিনি দায়মুক্তি পাবেন?
অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি করায় প্রধানমন্ত্রীর কিছু করণীয় ছিল; কিন্তু রাজনৈতিকভাবে দুর্বল বলে তিনি তা করতে পারেননি। তাঁর আরেকটি ভুল হলো, তিনি প্রণব মুখার্জির ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন এবং তাঁকে মন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত বেশ কটি কমিটির সভাপতি করেছিলেন। তাঁর ওপরই দিয়েছিলেন দুরূহ কিছু সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজার ভার। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুখার্জির নিজের মন্ত্রণালয়কে দেওয়ার মতো সময় ছিল না এবং পরিস্থিতির অবনতির শুরু সেখান থেকেই।
সংকট আরও বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে মূল্যস্ফীতি (১০ শতাংশ) ঘটার ফলে। গড়পড়তা একজন মানুষের আয় আগের জায়গায় থাকলেও, দ্রব্যমূল্যের ক্রমবৃদ্ধির ফলে আসলে তার আয় কমে যায়। জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে যায়।
গড়ে লোকসভার একটি আসনের জন্য অর্থ প্রয়োজন হয় ১০ কোটি রুপি। রাজনৈতিক দলগুলো অনেক আগে থেকেই নির্বাচনী তহবিলের জন্য ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। সুতরাং, কীভাবে তারা দুর্নীতির জন্য ব্যবসায়ীদের চ্যালেঞ্জ করবে? এ জন্যই প্রধান তথ্য কমিশনার যখন সিদ্ধান্ত দিলেন যে তথ্য অধিকারের বিধিবিধান রাজনৈতিক দলগুলোর কাজকর্মের বেলায়ও প্রযোজ্য হবে, তখন সব রাজনৈতিক দল একযোগে সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল; এটাই তাদের সুবিধাবাদিতার প্রমাণ।
আশু সমস্যা হলো, কীভাবে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরোনো যাবে। প্রধানমন্ত্রী সংসদে স্বীকার করেছেন, দেশ কঠিন সময়ের মুখোমুখি। ন্যায্যভাবেই বলা যায়, এর জন্য দায়ী হলো সরকার। সুশাসন ছিল না, নেতৃত্ব ছিল না, দিকনির্দেশনা ছিল না। জানা নেই, প্রধানমন্ত্রীর মনে সংস্কারের কোনো রূপরেখার কথা আছে কি না। তাঁকে অর্থনৈতিক নীতিগুলো নতুন করে তৈরি করতে হবে, যাতে কর্মসংস্থান হয়, জিনিসপত্রের দাম কমে এবং প্রবৃদ্ধি বাড়ে। প্রবৃদ্ধির হার এখন ফিরে গেছে পঞ্চাশ-ষাটের দশকের ৪ শতাংশের ঘরে। উৎপাদন স্থবির হয়ে গেছে, শিগগিরই তা বাড়ার সম্ভাবনা কম।
এ অবস্থায় নতুন করে নির্বাচন হলে ভাল হতো। তাতে করে বিনিয়োগকারীদের অনিশ্চয়তা দূর হতো এবং এত দিনে জনগণও নতুন নির্বাচিত সরকারে অভ্যস্ত হয়ে উঠত। কিন্তু বেশির ভাগ দলের সাংসদেরা, বিশেষ করে কংগ্রেসের সাংসদেরা তাঁদের পুরো মেয়াদটাই ভোগ করতে চান। কারণ, তাঁদের অনেকেই জানেন, তাঁরা হয়তো পুনর্নির্বাচিত হবেন না। রাজনৈতিক আকাশের মেঘ ভবিষ্যতের ওপর ছায়া ফেলছে। কোনো দলই যদি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায় (না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে হচ্ছে), তাহলে পরবর্তী সরকারও হবে জোট সরকার। সে ধরনের সরকার দেশের বিষয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধায় পড়বে। অথচ তা ছাড়া ভারত এই গভীর গাড্ডা থেকে উঠতে পারবে না। সব রাজনৈতিক দলের এখনই কিছু বিষয়ে একমত হওয়া উচিত। এবংতা নির্বাচনের আগেই। আমি হয়তো ভুল চিন্তা করছি। কিন্তু মনে হচ্ছে, সামনের বছরগুলোর জন্য ভারতের সাফল্যের গল্পটা মুখ থুবড়ে পড়তে যাচ্ছে।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
কুলদীপ নায়ার: ভারতের সাংবাদিক।
No comments