হিসাব মিলছে না জয়ের চমকের by কাজল ঘোষ
১৬ই সেপ্টেম্বরের দৈনিক আমাদের সময়ের
প্রধান শিরোনাম ছিল লক্ষ্য করার মতো। তারা সিলেটে পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনাকে ‘চমক’ দেখালো
ছাত্রলীগ বলে উল্লেখ করেছে।
প্রতিবেদক রিপোর্টের শুরুতেই
লিখেছেন, দশম সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কথিত-অস্বীকৃত চমক দেখানোর কথা ছিল
সজীব ওয়াজেদ জয়ের। তিনি চমক দেখাতে টঙ্গী, গাজীপুর, ভালুকা, ময়মনসিংহ ও
মুক্তাগাছাসহ বিভিন্ন পথসভায় নির্বাচনী বক্তব্য রেখেছেন। নৌকায় ভোট দিতে
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। যতটা না জয়ের আহ্বানে, তার চেয়ে অনেক
বেশি চমকে গেছে সিলেটের তথা সারা দেশের মানুষ স্থানীয় ছাত্রলীগের আচরণে।
শিরোনামটি নিশ্চয়ই জয়ের চোখ এড়ানোর কথা নয়। হয়তো এটি বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা।
কিন্তু বছরজুড়ে এই অনেক বিচ্ছিন্ন ঘটনাই ছাত্রলীগ-যুবলীগ ঘটিয়েছে। শুদ্ধ
রাজনীতিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে জয় কি ছাত্রলীগের সোনার ছেলেদের বিরুদ্ধে
কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। যখন লিখছি তখন পর্যন্ত তেমন
ঘোষণা আসেনি। নির্বাচন সামনে রেখে মায়ের পাশে থেকে সহযোগিতা করা যে কোন
সন্তানের অবশ্য কর্তব্য। জয় অবশ্যই এ জন্য ধন্যবাদ পেতে পারেন। একই কাজ
সুদূর লন্ডনে বসে তারেক রহমানও করছেন। পত্রিকান্তরে তাও জেনেছি। একজন
অসমাপ্ত বিপ্লব সম্পন্ন করার ডাক দিয়েছেন। অন্যজন নতুন ধারার রাজনীতি শুরু
করতে চাইছেন। আজকের লেখায় জয়ের ‘চমক’ নিয়ে দু-চারটি কথা বলতে চাই। গত
রমজানে যুবলীগের এক ইফতার মাহফিলে তিনি হঠাৎ বলে বসেন, আমার কাছে তথ্য আছে
আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে। এরপর থেকেই জয় আলোচনায়। মিডিয়ায় নানাভাবে
আসছেন তিনি। সংবাদকর্মী হিসেবে জয়ের এই চমক, মতবিনিময়, নতুন নতুন প্রচারণা
পদ্ধতির চোখ ধাঁধানো কৌশল নিয়ে কটি বিষয় না বললেই নয়- ১. শুধু কি রাতারাতি
বিলবোর্ডে ঢেকে দিয়ে নগরবাসীকে পরিবর্তনের দুনিয়ায় নেয়া যাবে। বরং
বিলবোর্ডের বাড়াবাড়ি রকমের প্রচারণায় দখলদারিত্বের মানসিকতার প্রকাশকেই মনে
করিয়ে দেয়। যা ইতিমধ্যে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ২. দিনবদলের
ইশতেহারে বর্ণিত দফাগুলোর মধ্যে যেগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি তার জবাব কি শুধুই
নতুন করে আবারও ক্ষমতায় আসার জোর প্রচারণা নাকি ইশতেহারের পূর্ণাঙ্গ
বাস্তবায়ন কেন সম্ভব হয়নি সেসবের যৌক্তিকতা তুলে ধরা? ৩. পদ্মা সেতুর মতো
বৃহৎ প্রকল্পের স্বপ্ন এ সরকারই দেখিয়েছে। যতদূর জানি, পদ্মাপাড়ের মানুষের এ
নিয়ে জোরালো কোন দাবি ছিল না। বিলাসী এই প্রকল্পের বাস্তবায়নে সরকারের
ব্যর্থতার দায় কি নিতে হবে না? ৪. পত্রিকাতেই দেখেছি, সোনালী ব্যাংক যেভাবে
লুট হয়েছে তা ঠিক হতে কমপক্ষে ৩০৯ বছর লাগবে। হলমার্ককে যে আড়াই হাজার
কোটি টাকা তুলে দেয়া হলো তার জবাব কি? এটা কি মহাজোট সরকারের সময় ঘটেনি।
কোথায় গেল এত টাকা, ব্যাংক যেন এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ফেরত পেতে পারে সে
ব্যবস্থা নেয়া হবে, উল্টো দুদক পরিচালনা পর্ষদকে দায় মুক্ত করেছে। ৫.
সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘরোয়া মতবিনিময়ে জয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মসজিদে যাওয়ার
পরামর্শ দিয়েছেন। যতদূর জানি, আওয়ামী লীগের নেতারা বরাবরই মসজিদে যান। নতুন
করে মসজিদে যাওয়ার পরামর্শে খোদ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেই মিশ্র
প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। পত্রিকায় প্রতিবেদন বেরিয়েছে, মসজিদে ড.
ইউনূসবিরোধী ৫ লাখ বুকলেট ছাড়া হচ্ছে। এটা কি চলমান চমকের অংশ তা নিয়েও
নানা আলোচনা। ৬. জয়ের ভাষারীতি নিয়েও নানা আলোচনা। তাহলো বাচনভঙ্গির জন্য
অনেক কথারই উল্টো অর্থ দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। যেমন, আমার কাছে খবর আছে আওয়ামী লীগ
আবার ক্ষমতায় আসবে, সরকারের সাফল্য তুলে ধরতে গিয়ে ‘মারাত্মক উন্নতি’,
মাদরাসার ছাত্রদের নিয়ে সামপ্রতিক একটি বক্তব্য, ‘তিন দিনের মধ্যেই চমক
দেখতে পাবেন’ বলার পরই আবার চমক দেখাব এমন কথা বলিনি বলে তা প্রত্যাহার
করা। শব্দ চয়নে অনেক সময়ই বাক্যের ব্যবহারে তা ইতিবাচক অর্থ না হয়ে
নেতিবাচক প্রকাশ ঘটছে। কোন কিছুকে অস্বীকার করে বাস্তবতা বিবর্জিত বক্তব্যে
আর যা-ই হোক মানুষের মন জয় করা যায় না। বরং ভুলগুলোকে বিনয়ের সঙ্গে মেনে
নেয়ার মতো বড় মহত্ত্ব আর কিছু হতে পারে না। শেষ করতে চাই, সজীব ওয়াজেদ জয়কে
ধন্যবাদ দিয়ে। কারণ, অনেক দেরিতে হলেও তিনি তৃণমূলে সাধারণ মানুষের কাছে
ছুটছেন। মানুষ কি চায় তা জানতে চাইছেন। এর মধ্য দিয়ে হয়তো তিনি নিজেকে
সত্যিকার পরিণত রাজনীতিকের ভূমিকায় এগিয়ে নেবেন।
kajal_gosh@yahoo.com
No comments