রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনে সংলাপের বিকল্প নেই by ড. মাহবুব উল্লাহ্
৪২
বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশ নিরবচ্ছিন্ন স্থিতিশীলতার মুখ খুব কমই দেখেছে। অথচ
এই নবীন রাষ্ট্রটির উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য স্থিতিশীলতা ছিল খুব
প্রয়োজনীয়। এই ৪২ বছর সময়ে বাংলাদেশ যেসব অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হয়েছে,
সেগুলো পাঠকদের কমবেশি জানা আছে। সেসব ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে এ লেখার
কলেবর বৃদ্ধি করা সঙ্গত হবে না। প্রশ্ন হল, কেন এসব অস্থিতিশীলতার ঘটনা
ঘটছে? এ বিষয়ে একাধিক তাত্ত্বিক বা একাডেমিক ব্যাখ্যা রয়েছে। প্রথমত, ১৯৭১
সালের ১৬ ডিসেম্বর যখন বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির উদ্ভব হয়, তখন দেশে কোনো বড়
বুর্জোয়ার অস্তিত্ব ছিল না। হাতেগোনা দু’-একজনের নাম করা যায়। কিন্তু
তাদেরও পুঁজির পরিমাণ আহামরি তেমন কিছু ছিল না। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের
পর আমার সঙ্গে বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদের কথা হয়েছিল। তিনি
পরবর্তীকালে দেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন
করেছিলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তান যদি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে
বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়, তাহলে এখানে সমাজতান্ত্রিক
অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কার্যত বিনা বাধায় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। কারণ
পূর্ব পাকিস্তানে বড় ভূস্বামী কিংবা বড় পুঁজিপতি নেই, যারা সমাজতান্ত্রিক
অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। অন্যদিকে পশ্চিম
পাকিস্তানে রয়েছে শক্তিশালী পুঁজিপতি ও ভূস্বামী শ্রেণী। এরা সমাজতন্ত্রের
জন্য বড় রকমের বাধা। কাজেই পূর্ব পাকিস্তানে অর্থাৎ যে ভূখণ্ড পরবর্তীকালে
বাংলাদেশ হয়েছে সেই ভূখণ্ডে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক শর্ত হচ্ছে
পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করা।
সেদিন আমি তার সঙ্গে একমত হতে পারিনি। আমার বক্তব্য ছিল, পুঁজির ধর্ম রক্তবীজের মতো। ক্ষুদ্র অবস্থা থেকে পুঁজি বিশাল আকার ধারণ করে এবং এর পরিসরও হয় বিস্তৃত। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জšে§র অব্যবহিত পর আমরা লক্ষ্য করেছি, কলকারখানা জাতীয়করণ করা সত্ত্বেও একে আশ্রয় করে বহু ব্যক্তি অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে। কলকারখানাগুলো রাষ্ট্রীয় মালিকানায় থাকা সত্ত্বেও এগুলোর কাঁচামাল ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করে এবং উৎপাদিত সামগ্রী বাজারজাতকরণের মাধ্যমে একশ্রেণীর সুযোগসন্ধানী প্রচুর অর্থবিত্ত কামাই করে নিয়েছে। সোজা কথায়, রাষ্ট্রীয় খাতকে ফোকলা করে একদল মানুষ বিত্তশালী হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের প্রথম ক’বছরে জিনিসপত্রের দুষ্প্রাপ্যতার সুযোগ গ্রহণ করে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। এছাড়াও ছিল চোরাচালান, ফটকা কারবারি, চাঁদাবাজি ও দখলবাজির তৎপরতা। সবকিছু মিলিয়ে রাষ্ট্রের বয়স যখন তিন কি সাড়ে তিন বছর, তখন এদেশে বহু কোটিপতির উদ্ভব ঘটে গেছে। এরা বিত্তবৈভব অর্জনের জন্য রাষ্ট্রকে ব্যবহার করেছে। অথবা রাষ্ট্রের আনুকূল্য পেয়েছে। লাইসেন্স পারমিটের ব্যবস্থা থাকার ফলে অনেকেই লাইসেন্স পারমিট ব্যবহার করে রেন্ট সিকিং করেছে। এভাবেও অনেকে বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছে। ওই সময় সরকারের সমাজতান্ত্রিক নীতির ফলে ব্যক্তিগত বিনিয়োগের ওপর যে ঊর্ধ্বসীমা ছিল, তা শিথিল করার জন্য ব্যবসায়ী মহলের পক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি করা হয়। ততদিনে এই শ্রেণীটি কোটি কোটি টাকার পুঁজির মালিক। সরকারও এই চাপের কাছে ১৯৭৫ সালের আগেই নতি স্বীকার করে। তখন থেকে বোঝা গেল, সময়ের দাবিতে শাসক দল সমাজতন্ত্রের কথা বললেও কার্যত তারা ছিল ব্যক্তি পুঁজিরই ধারক-বাহক।
রাষ্ট্রযন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য ব্যবহার করে পুঁজি ও অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার ধারা আজও অব্যাহত আছে। বৈদেশিক সাহায্যের অর্থ লুণ্ঠন, দুর্নীতি, ঋণখেলাপ, কর ফাঁকি, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে আন্ডার ইনভয়েসিং, ওভার ইনভয়েসিং, আদম ব্যবসা, চোরাচালান ও নারী পাচারের মাধ্যমে পুঁজির আদিম বিকাশের ধারা আজও অব্যাহত। কিন্তু এই বিকাশের জন্য রাষ্ট্রীয় সমর্থন ও সহযোগিতা অপরিহার্য শর্ত। এ কারণে রাষ্ট্রক্ষমতা করায়ত্ত করার জন্য প্রতিযোগিতা এবং খেয়খেয়ীও অব্যাহতভাবে চলছে। এই প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ কারণে একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় গেলে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য নানা কলাকৌশল করে। অন্যদিকে ক্ষমতাবহির্ভূতরা ক্ষমতা লাভের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। এভাবে রাজনৈতিক সংঘাত ও অস্থিরতা অনিবার্য হয়ে ওঠে। এ ধরনের ব্যাখ্যা প্রধানত যারা বামপন্থী মতবাদে বিশ্বাসী, তারাই দিয়ে থাকেন। তবে একথা স্বীকার করতেই হবে, আদিম পন্থায় অর্জিত পুঁজির একটি অংশ বিনিয়োগ ও উৎপাদনের চক্রে প্রবেশ করেছে। কিন্তু যারা বিনিয়োগ ও উৎপাদনে অন্যায় পথে অর্জিত পুঁজি খাটিয়েছে, তারা শ্রেণীগতভাবে এখনও শক্তি-সামর্থ্য অর্জন করতে পারেনি। ফলে সমাজ ও রাজনীতিতে তাদের ভূমিকা নিয়ামকের ভূমিকায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এখনও বিশাল অংকের অবৈধ পুঁজি অবৈধই থেকে গেছে। যাকে আমরা বলি কালো টাকা। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় যখন বিনিয়োগ ও উৎপাদনমুখী পুঁজি প্রাধান্য বিস্তার করে কর্তৃত্বের অবস্থানে আসবে, তখন রাজনীতিতে বর্তমানের মতো অস্থিরতা থাকবে না। পণ্ডিত প্রবর ব্যারিংটন মুর বলেছেন, বুর্জোয়া না থাকলে গণতন্ত্রও থাকে না। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের দুর্বলতার মূলে রয়েছে বিনিয়োগ ও উৎপাদনমুখী বুর্জোয়া না থাকা। ভারতে টাটা, বিড়লা ও ডালমিয়াদের মতো বুর্জোয়া গোড়ার কাল থেকে থাকার ফলে সেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শত দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও টেকসই হয়েছে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটি হচ্ছে, এলিটদের মধ্যে বাংলাদেশের আত্মপরিচয় নিয়ে সহমত না থাকা, বাঙালি ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ নিয়ে যে আদর্শগত দ্বন্দ্ব, সেই দ্বন্দ্বের ফলে এক পক্ষ অপর পক্ষকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এক্ষেত্রে বিবদমান পক্ষদ্বয় একে অপরকে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিনাশী বলে মনে করে। কিন্তু এ প্রশ্নে একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত বিভেদ ও দ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকবে। এই দ্বন্দ্বের ফয়সালার জন্য যে ধরনের যুক্তিনির্ভর ও বাস্তবধর্মী বিতর্কের প্রয়োজন, সেটি খুব কমই হচ্ছে। গণতন্ত্রের মর্মকথা হচ্ছে Reasoned argument. কিন্তু এ ধরনের Reasoned argument-এর জন্য যে ধরনের একাডেমিক আলোচনা ও গবেষণা হওয়া উচিত তার সামান্যই আমরা লক্ষ্য করি। এছাড়া পালাক্রমে এই দুই বিরোধী মতাদর্শের রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসার ফলে কার অবস্থান সঠিক এবং জনগণ ও বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য সহায়ক, সেটিও কিন্তু স্পষ্ট হচ্ছে না। কখনও মনে হয় জনগণ একটি অবস্থানের পক্ষে, আবার কখনও মনে হয় জনগণ অন্য একটি অবস্থানের পক্ষে। যতদিন এই অস্পষ্টতা বিদ্যমান থাকবে, ততদিন আমাদের সমাজদেহ থেকে অস্থিরতা ও দ্বন্দ্ব-সংঘাত লোপ পাবে না। আমার ব্যক্তিগত অবস্থান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের পক্ষে। এই অবস্থানের পক্ষে আমি আমার সীমিত সাধ্যমতো লেখালেখি করেছি। যারা এই অবস্থানের বিপক্ষে, তাদের সঙ্গে আমি Reasoned argument-এ লিপ্ত হতে প্রস্তুত আছি। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকেও আমরা আমাদের আত্মপরিচয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সংগ্রহ করতে পারি। এখন মিডিয়া অত্যন্ত শক্তিশালী। মানুষকে সচেতন করার ব্যাপারে মিডিয়া জোরালো ভূমিকা পালন করার ক্ষমতা রাখে। মিডিয়া যদি বাংলাদেশের আত্মপরিচয় সংক্রান্ত বিতর্ক সমানভাবে তুলে ধরে, তাহলে এর ফয়সালাও অনেক সহজ হতে পারে। বাংলাদেশও অস্থিরতার কবল থেকে মুক্তি পেতে পারে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মূলে প্রতিবেশী ভারতের হাত রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের ভারতীয় সাহায্য ও সমর্থনের বিষয়টি এদেশের সব নাগরিকই স্বীকার করে। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উদ্ভবের পর এই রাষ্ট্রটি কিভাবে ভারতের স্ট্র্যাটেজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে রক্ষা করবে, সে ব্যাপারটি ভারতীয় শাসককুলের প্রধান বিবেচ্য বিষয় হিসেবে কাজ করছে। এ কারণে অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে ৭ দফা গোপন চুক্তি করেছিল। পরবর্তীকালে ২৫ বছর মেয়াদি ভারত-বাংলাদেশ শান্তি-মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তি, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, সীমান্ত অস্থিরতা, সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্রোহী শান্তি বাহিনীকে সহযোগিতা প্রদান প্রভৃতি চাপ প্রয়োগ করে ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে নতজানু অবস্থান নিশ্চিত করতে চেয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিরোধে ভারত অনভিপ্রেতভাবে নাক গলিয়েছে। এর সাম্প্রতিকতম দৃষ্টান্ত হল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির দিল্লি সফরের সময় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী শক্তির সাফল্য কামনা করেন। সর্বোপরি ভারত হয়তো জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে শক্তিশালীরূপে দেখতে চায় না। কারণ জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সাফল্য বহুজাতিভিত্তিক ভারতেও একাধিক জাতিরাষ্ট্রের উদ্ভবের জন্য মনোস্তাত্ত্বিক ও বাস্তব অবস্থা তৈরি করবে। এ কারণে ভারতীয় শাসকদের কাছে শক্তিশালী বাংলাদেশের চেয়ে দুর্বল বাংলাদেশই কাম্য। এজন্য প্রচ্ছন্ন ও অপ্রচ্ছন্নভাবে ভারতকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে দেখা যায়।
বাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের জন্য এ মুহূর্তে ৬ মাস সময়ও হাতে নেই। অথচ এই নির্বাচন কী পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে সে ব্যাপারে শাসক দল ও বিরোধী দলের মধ্যে কোনো সমঝোতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। প্রধান বিরোধী দল ও তার মিত্ররা চাইছে নির্বাচনটি হতে হবে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। অন্যদিকে শাসক দল আওয়ামী লীগ ও তার মহাজোটের মিত্ররা বলছে, নির্বাচন হবে সংবিধানে বর্ণিত ব্যবস্থায়। অর্থাৎ দলীয় সরকারের অধীনে। অথচ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৫-৯৬ সালে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তুমুল আন্দোলন করেছিলেন। পরিণতিতে বিএনপি সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনে। এর ফলে যে নির্বাচন হয়, সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল। আজ আদালতের রায়ের দোহাই দিয়ে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান ছেঁটে ফেলা হয়েছে। সংবিধানের এই পরিবর্তন যখন আনা হয়, তখন আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ও প্রকাশিত হয়নি। পূর্ণাঙ্গ রায়টি লেখা হল সংক্ষিপ্ত রায়ের ১৬ মাস পর। সাবেক বিচারপতি খায়রুল হক রায়টি লিখলেন অবসর গ্রহণের দীর্ঘ সময় পর। অনেকে বলেন, বিচারালয়ের ইতিহাসে এটি অভূতপূর্ব। সে যাই হোক, রায়ে পরবর্তী ২ মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদের সম্মতিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করারও নির্দেশনা ছিল। এই নির্দেশনার কারণ ছিল রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য। রায়ের এই অংশটিকে শাসক দল আমলেই নিচ্ছে না। এমনকি তারা বিদ্যমান এই সংকট নিয়ে কোনো আলোচনার সুযোগ নেই বলে বক্তব্য, বিবৃতি দিচ্ছেন। প্রধান বিরোধী দল তার স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে। গত বাজেট অধিবেশনে বিরোধীদলীয় নেতা আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। অতি সম্প্রতিও তিনি আলোচনার কথা বলেছেন। কিন্তু শাসক দলের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। দেশে যখন কোনো রাজনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি হয় তখন আলোচনার মাধ্যমে তার নিষ্পত্তি করাই যুক্তিসঙ্গত। দেশের মানুষের জন্যও আলোচনার পথে সমাধান খোঁজা কল্যাণকর। একবার যদি আলোচনার সূত্রপাত হয়, তখন দেশের সুধী মহল নানারকম ফর্মুলা দিয়ে আলোচনাকে সহায়তা করতে পারে। কিন্তু আলোচনা না হওয়ার ফলে তারাও কোনো কার্যকর ভূমিকা নিতে পারছেন না। এই বিরোধ-সংঘাতের সুযোগে কিছু লোক বলার চেষ্টা করছে দুটি দলই নষ্ট। এই নষ্টদের বাদ দিয়ে তৃতীয় ধারা সৃষ্টি করতে হবে। কিন্তু যারা এই বক্তব্য হাজির করছেন, তারা এই মুহূর্তে দেশ চালানোর জন্য ন্যূনতমও শক্তি-সামর্থ্য রাখেন না। তাদের যদি আশু ক্ষমতার স্বাদ পেতে হয়, তাহলে কোনো অসাংবিধানিক ছত্রছায়ার অধীনেই সেই স্বাদ পেতে হবে। দেশের জন্য এটি হবে মারাÍক বিপর্যয়কর। সুতরাং দেশের জন্য সামান্যতম দরদ থাকলে দুটি পক্ষেরই উচিত আলাপ-আলোচনা করে সমস্যার সমাধান খোঁজা। জনগণ রক্তপাত ও সংঘাত দেখতে চায় না। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিদ্যমান বিরোধের সমাধান হলে দেশবাসী দুটি পক্ষকেই সাধুবাদ জানাবে। সেই সুদিনের অপেক্ষায় আছি।
ড. মাহবুব উল্লাহ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক
সেদিন আমি তার সঙ্গে একমত হতে পারিনি। আমার বক্তব্য ছিল, পুঁজির ধর্ম রক্তবীজের মতো। ক্ষুদ্র অবস্থা থেকে পুঁজি বিশাল আকার ধারণ করে এবং এর পরিসরও হয় বিস্তৃত। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জšে§র অব্যবহিত পর আমরা লক্ষ্য করেছি, কলকারখানা জাতীয়করণ করা সত্ত্বেও একে আশ্রয় করে বহু ব্যক্তি অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে। কলকারখানাগুলো রাষ্ট্রীয় মালিকানায় থাকা সত্ত্বেও এগুলোর কাঁচামাল ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করে এবং উৎপাদিত সামগ্রী বাজারজাতকরণের মাধ্যমে একশ্রেণীর সুযোগসন্ধানী প্রচুর অর্থবিত্ত কামাই করে নিয়েছে। সোজা কথায়, রাষ্ট্রীয় খাতকে ফোকলা করে একদল মানুষ বিত্তশালী হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের প্রথম ক’বছরে জিনিসপত্রের দুষ্প্রাপ্যতার সুযোগ গ্রহণ করে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। এছাড়াও ছিল চোরাচালান, ফটকা কারবারি, চাঁদাবাজি ও দখলবাজির তৎপরতা। সবকিছু মিলিয়ে রাষ্ট্রের বয়স যখন তিন কি সাড়ে তিন বছর, তখন এদেশে বহু কোটিপতির উদ্ভব ঘটে গেছে। এরা বিত্তবৈভব অর্জনের জন্য রাষ্ট্রকে ব্যবহার করেছে। অথবা রাষ্ট্রের আনুকূল্য পেয়েছে। লাইসেন্স পারমিটের ব্যবস্থা থাকার ফলে অনেকেই লাইসেন্স পারমিট ব্যবহার করে রেন্ট সিকিং করেছে। এভাবেও অনেকে বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছে। ওই সময় সরকারের সমাজতান্ত্রিক নীতির ফলে ব্যক্তিগত বিনিয়োগের ওপর যে ঊর্ধ্বসীমা ছিল, তা শিথিল করার জন্য ব্যবসায়ী মহলের পক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি করা হয়। ততদিনে এই শ্রেণীটি কোটি কোটি টাকার পুঁজির মালিক। সরকারও এই চাপের কাছে ১৯৭৫ সালের আগেই নতি স্বীকার করে। তখন থেকে বোঝা গেল, সময়ের দাবিতে শাসক দল সমাজতন্ত্রের কথা বললেও কার্যত তারা ছিল ব্যক্তি পুঁজিরই ধারক-বাহক।
রাষ্ট্রযন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য ব্যবহার করে পুঁজি ও অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার ধারা আজও অব্যাহত আছে। বৈদেশিক সাহায্যের অর্থ লুণ্ঠন, দুর্নীতি, ঋণখেলাপ, কর ফাঁকি, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে আন্ডার ইনভয়েসিং, ওভার ইনভয়েসিং, আদম ব্যবসা, চোরাচালান ও নারী পাচারের মাধ্যমে পুঁজির আদিম বিকাশের ধারা আজও অব্যাহত। কিন্তু এই বিকাশের জন্য রাষ্ট্রীয় সমর্থন ও সহযোগিতা অপরিহার্য শর্ত। এ কারণে রাষ্ট্রক্ষমতা করায়ত্ত করার জন্য প্রতিযোগিতা এবং খেয়খেয়ীও অব্যাহতভাবে চলছে। এই প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ কারণে একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় গেলে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য নানা কলাকৌশল করে। অন্যদিকে ক্ষমতাবহির্ভূতরা ক্ষমতা লাভের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। এভাবে রাজনৈতিক সংঘাত ও অস্থিরতা অনিবার্য হয়ে ওঠে। এ ধরনের ব্যাখ্যা প্রধানত যারা বামপন্থী মতবাদে বিশ্বাসী, তারাই দিয়ে থাকেন। তবে একথা স্বীকার করতেই হবে, আদিম পন্থায় অর্জিত পুঁজির একটি অংশ বিনিয়োগ ও উৎপাদনের চক্রে প্রবেশ করেছে। কিন্তু যারা বিনিয়োগ ও উৎপাদনে অন্যায় পথে অর্জিত পুঁজি খাটিয়েছে, তারা শ্রেণীগতভাবে এখনও শক্তি-সামর্থ্য অর্জন করতে পারেনি। ফলে সমাজ ও রাজনীতিতে তাদের ভূমিকা নিয়ামকের ভূমিকায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এখনও বিশাল অংকের অবৈধ পুঁজি অবৈধই থেকে গেছে। যাকে আমরা বলি কালো টাকা। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় যখন বিনিয়োগ ও উৎপাদনমুখী পুঁজি প্রাধান্য বিস্তার করে কর্তৃত্বের অবস্থানে আসবে, তখন রাজনীতিতে বর্তমানের মতো অস্থিরতা থাকবে না। পণ্ডিত প্রবর ব্যারিংটন মুর বলেছেন, বুর্জোয়া না থাকলে গণতন্ত্রও থাকে না। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের দুর্বলতার মূলে রয়েছে বিনিয়োগ ও উৎপাদনমুখী বুর্জোয়া না থাকা। ভারতে টাটা, বিড়লা ও ডালমিয়াদের মতো বুর্জোয়া গোড়ার কাল থেকে থাকার ফলে সেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শত দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও টেকসই হয়েছে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটি হচ্ছে, এলিটদের মধ্যে বাংলাদেশের আত্মপরিচয় নিয়ে সহমত না থাকা, বাঙালি ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ নিয়ে যে আদর্শগত দ্বন্দ্ব, সেই দ্বন্দ্বের ফলে এক পক্ষ অপর পক্ষকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এক্ষেত্রে বিবদমান পক্ষদ্বয় একে অপরকে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিনাশী বলে মনে করে। কিন্তু এ প্রশ্নে একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত বিভেদ ও দ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকবে। এই দ্বন্দ্বের ফয়সালার জন্য যে ধরনের যুক্তিনির্ভর ও বাস্তবধর্মী বিতর্কের প্রয়োজন, সেটি খুব কমই হচ্ছে। গণতন্ত্রের মর্মকথা হচ্ছে Reasoned argument. কিন্তু এ ধরনের Reasoned argument-এর জন্য যে ধরনের একাডেমিক আলোচনা ও গবেষণা হওয়া উচিত তার সামান্যই আমরা লক্ষ্য করি। এছাড়া পালাক্রমে এই দুই বিরোধী মতাদর্শের রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসার ফলে কার অবস্থান সঠিক এবং জনগণ ও বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য সহায়ক, সেটিও কিন্তু স্পষ্ট হচ্ছে না। কখনও মনে হয় জনগণ একটি অবস্থানের পক্ষে, আবার কখনও মনে হয় জনগণ অন্য একটি অবস্থানের পক্ষে। যতদিন এই অস্পষ্টতা বিদ্যমান থাকবে, ততদিন আমাদের সমাজদেহ থেকে অস্থিরতা ও দ্বন্দ্ব-সংঘাত লোপ পাবে না। আমার ব্যক্তিগত অবস্থান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের পক্ষে। এই অবস্থানের পক্ষে আমি আমার সীমিত সাধ্যমতো লেখালেখি করেছি। যারা এই অবস্থানের বিপক্ষে, তাদের সঙ্গে আমি Reasoned argument-এ লিপ্ত হতে প্রস্তুত আছি। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকেও আমরা আমাদের আত্মপরিচয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সংগ্রহ করতে পারি। এখন মিডিয়া অত্যন্ত শক্তিশালী। মানুষকে সচেতন করার ব্যাপারে মিডিয়া জোরালো ভূমিকা পালন করার ক্ষমতা রাখে। মিডিয়া যদি বাংলাদেশের আত্মপরিচয় সংক্রান্ত বিতর্ক সমানভাবে তুলে ধরে, তাহলে এর ফয়সালাও অনেক সহজ হতে পারে। বাংলাদেশও অস্থিরতার কবল থেকে মুক্তি পেতে পারে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মূলে প্রতিবেশী ভারতের হাত রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের ভারতীয় সাহায্য ও সমর্থনের বিষয়টি এদেশের সব নাগরিকই স্বীকার করে। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উদ্ভবের পর এই রাষ্ট্রটি কিভাবে ভারতের স্ট্র্যাটেজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে রক্ষা করবে, সে ব্যাপারটি ভারতীয় শাসককুলের প্রধান বিবেচ্য বিষয় হিসেবে কাজ করছে। এ কারণে অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে ৭ দফা গোপন চুক্তি করেছিল। পরবর্তীকালে ২৫ বছর মেয়াদি ভারত-বাংলাদেশ শান্তি-মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তি, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, সীমান্ত অস্থিরতা, সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্রোহী শান্তি বাহিনীকে সহযোগিতা প্রদান প্রভৃতি চাপ প্রয়োগ করে ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে নতজানু অবস্থান নিশ্চিত করতে চেয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিরোধে ভারত অনভিপ্রেতভাবে নাক গলিয়েছে। এর সাম্প্রতিকতম দৃষ্টান্ত হল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির দিল্লি সফরের সময় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী শক্তির সাফল্য কামনা করেন। সর্বোপরি ভারত হয়তো জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে শক্তিশালীরূপে দেখতে চায় না। কারণ জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সাফল্য বহুজাতিভিত্তিক ভারতেও একাধিক জাতিরাষ্ট্রের উদ্ভবের জন্য মনোস্তাত্ত্বিক ও বাস্তব অবস্থা তৈরি করবে। এ কারণে ভারতীয় শাসকদের কাছে শক্তিশালী বাংলাদেশের চেয়ে দুর্বল বাংলাদেশই কাম্য। এজন্য প্রচ্ছন্ন ও অপ্রচ্ছন্নভাবে ভারতকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে দেখা যায়।
বাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের জন্য এ মুহূর্তে ৬ মাস সময়ও হাতে নেই। অথচ এই নির্বাচন কী পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে সে ব্যাপারে শাসক দল ও বিরোধী দলের মধ্যে কোনো সমঝোতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। প্রধান বিরোধী দল ও তার মিত্ররা চাইছে নির্বাচনটি হতে হবে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। অন্যদিকে শাসক দল আওয়ামী লীগ ও তার মহাজোটের মিত্ররা বলছে, নির্বাচন হবে সংবিধানে বর্ণিত ব্যবস্থায়। অর্থাৎ দলীয় সরকারের অধীনে। অথচ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৫-৯৬ সালে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তুমুল আন্দোলন করেছিলেন। পরিণতিতে বিএনপি সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনে। এর ফলে যে নির্বাচন হয়, সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল। আজ আদালতের রায়ের দোহাই দিয়ে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান ছেঁটে ফেলা হয়েছে। সংবিধানের এই পরিবর্তন যখন আনা হয়, তখন আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ও প্রকাশিত হয়নি। পূর্ণাঙ্গ রায়টি লেখা হল সংক্ষিপ্ত রায়ের ১৬ মাস পর। সাবেক বিচারপতি খায়রুল হক রায়টি লিখলেন অবসর গ্রহণের দীর্ঘ সময় পর। অনেকে বলেন, বিচারালয়ের ইতিহাসে এটি অভূতপূর্ব। সে যাই হোক, রায়ে পরবর্তী ২ মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদের সম্মতিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করারও নির্দেশনা ছিল। এই নির্দেশনার কারণ ছিল রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য। রায়ের এই অংশটিকে শাসক দল আমলেই নিচ্ছে না। এমনকি তারা বিদ্যমান এই সংকট নিয়ে কোনো আলোচনার সুযোগ নেই বলে বক্তব্য, বিবৃতি দিচ্ছেন। প্রধান বিরোধী দল তার স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে। গত বাজেট অধিবেশনে বিরোধীদলীয় নেতা আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। অতি সম্প্রতিও তিনি আলোচনার কথা বলেছেন। কিন্তু শাসক দলের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। দেশে যখন কোনো রাজনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি হয় তখন আলোচনার মাধ্যমে তার নিষ্পত্তি করাই যুক্তিসঙ্গত। দেশের মানুষের জন্যও আলোচনার পথে সমাধান খোঁজা কল্যাণকর। একবার যদি আলোচনার সূত্রপাত হয়, তখন দেশের সুধী মহল নানারকম ফর্মুলা দিয়ে আলোচনাকে সহায়তা করতে পারে। কিন্তু আলোচনা না হওয়ার ফলে তারাও কোনো কার্যকর ভূমিকা নিতে পারছেন না। এই বিরোধ-সংঘাতের সুযোগে কিছু লোক বলার চেষ্টা করছে দুটি দলই নষ্ট। এই নষ্টদের বাদ দিয়ে তৃতীয় ধারা সৃষ্টি করতে হবে। কিন্তু যারা এই বক্তব্য হাজির করছেন, তারা এই মুহূর্তে দেশ চালানোর জন্য ন্যূনতমও শক্তি-সামর্থ্য রাখেন না। তাদের যদি আশু ক্ষমতার স্বাদ পেতে হয়, তাহলে কোনো অসাংবিধানিক ছত্রছায়ার অধীনেই সেই স্বাদ পেতে হবে। দেশের জন্য এটি হবে মারাÍক বিপর্যয়কর। সুতরাং দেশের জন্য সামান্যতম দরদ থাকলে দুটি পক্ষেরই উচিত আলাপ-আলোচনা করে সমস্যার সমাধান খোঁজা। জনগণ রক্তপাত ও সংঘাত দেখতে চায় না। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিদ্যমান বিরোধের সমাধান হলে দেশবাসী দুটি পক্ষকেই সাধুবাদ জানাবে। সেই সুদিনের অপেক্ষায় আছি।
ড. মাহবুব উল্লাহ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক
No comments