ক্রসফায়ারের চিত্রপ্রদর্শনীতে পুলিশের বাধাঃ সরকার কি ভয় পাচ্ছে
ভয় পাওয়া মানুষ তার চারদিকেই বিপদের গন্ধ পায়। ফলে সে নিজের অজান্তেই বিপদ বাড়িয়ে তোলে। ক্ষমতা গ্রহণের ১৪ মাস হতে না হতেই আওয়ামী মহাজোট সরকার ভয় পাওয়া মানুষের মতো আচরণ শুরু করেছে। ক্রসফায়ার নিয়ে রাজধানীতে এক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পুলিশ পাঠিয়ে বন্ধ করে দেয়া থেকে এমনটি মনে হওয়া মোটেই অস্বাভাবিক নয়।
সোমবার দুপুরে সাংবাদিকতায় বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে ধানমন্ডির দৃক গ্যালারির ব্যবস্থাপনায় পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া একাডেমি উদ্বোধন উপলক্ষে একটি ব্যতিক্রমী চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে উপস্থাপিত আলোকচিত্রগুলো ক্রসফায়ার নিয়ে প্রতীকধর্মী হলেও তাতে প্রকৃত ঘটনা ফুটে উঠেছিল। ফলে সিদ্ধান্ত আসতে দেরি হয়নি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভারতের স্বনামধন্য মানবাধিকার নেত্রী ও সাড়া জাগানো লেখক মহাশ্বেতা দেবীসহ দেশ-বিদেশের বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও মানবাধিকার কর্মীদের সামনেই পুলিশ গ্যালারির চারদিক ঘিরে ফেলে এবং গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ওপরের নির্দেশেই এমনটা করা হয়েছে বললেও পরে পুলিশ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নেয়ার কথা জানায়। তবে অতীতে কখনও চিত্রপ্রদর্শনীর জন্য পুলিশের বিশেষ শাখার অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন না হলেও এবারে কেন সে কথা তোলা হলো, এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। পুলিশের পক্ষ থেকে এমন প্রদর্শনী দেশে ‘অস্থিতিশীলতা’ সৃষ্টি করবে বলা হলেও উদ্যোক্তারা তা এক কথায় নাকচ করে দিয়ে বলেন, ১৯৯৩ সাল থেকে বিভিন্ন বিষয়ে চিত্র প্রদর্শনী করা হলেও কোনো সময়েই অরাজকতা সৃষ্টির নজির নেই। পুলিশি বাধার মুখে গ্যালারিতে হতে না পারলেও রাস্তার পাশে প্রদর্শনী শুরু হয় এবং সব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে ৩১ মার্চ পর্যন্ত তা চলবে বলে উদ্যোক্তারা জানান। ক্রসফায়ার নিয়ে এ ধরনের প্রদর্শনীর আয়োজন যেমন ব্যতিক্রমী তেমনি নির্বাচিত সরকারের পুলিশের এমন আচরণও অভূতপূর্ব সন্দেহ নেই।
র্যাব-পুলিশের হাতে আটক ব্যক্তিদের ক্রসফায়ারের নামে গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে কোনো প্রতিবাদেই কান দেয়নি সরকার। অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুঃশাসনের পর আওয়ামী মহাজোট সরকারের আমলে ক্রসফায়ারের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় জনমনে উদ্বেগের পাশাপাশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রতিবাদে সোচ্চার হলেও এই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড থেমে থাকেনি। উচ্চতর আদালতের হস্তক্ষেপও কোনো কাজে আসেনি। বরং ক্রসফায়ারে হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকারের ব্যাখ্যা দেয়ার শুনানির আগে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ ভেঙে দেয়ার ঘটনা সবাইকে হতবাক করেছে। এ থেকে মুখে যাই বলা হোক না কেন ক্রসফায়ার নিয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে যায়। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসনের কথা বলা হলেও সরকার যে তার পুরনো ধারাই আঁকড়ে রয়েছে সেটা বুঝতে কারও ভুল হয় না। উল্লেখ্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শুরু স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। তখন হাজার হাজার বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মী গুপ্ত হত্যার শিকার হন। পুলিশের হাতে আটক ব্যক্তিদের মৃতদেহ পাওয়া যেত এখানে-সেখানে। গ্রেফতারকৃত সিরাজ সিকদারকে গুলি করে হত্যার পর সংসদে দাঁড়িয়ে শেখ মুজিবের হুঙ্কার মানুষের মনে এখনও দুঃস্বপ্নের মতো জেগে ওঠে। বর্তমান সরকারও বিরোধী মত দলনে তেমনি পন্থা গ্রহণ করেছে, এটা কোনো গোপন বিষয় নয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলার ক্রমবর্ধমান ঘটনার পর চিত্রপ্রদর্শনী বন্ধ করে দেয়া থেকেই সরকারের আসল চেহারা প্রকাশ হয়ে পড়েছে। তবে ক্ষমতার দম্ভ আর দমন-পীড়নের ফল কখনও ভালো হয় না। জনরোষের ভয়ে ভীত শাসকদের করুণ পরিণতি বারবার দেখেছে এ দেশের মানুষ। সময় থাকতে সতর্ক না হলে বর্তমান সরকারও তার পুনরাবৃত্তি এড়াতে পারবে না, মনে রাখা দরকার।
র্যাব-পুলিশের হাতে আটক ব্যক্তিদের ক্রসফায়ারের নামে গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে কোনো প্রতিবাদেই কান দেয়নি সরকার। অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুঃশাসনের পর আওয়ামী মহাজোট সরকারের আমলে ক্রসফায়ারের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় জনমনে উদ্বেগের পাশাপাশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রতিবাদে সোচ্চার হলেও এই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড থেমে থাকেনি। উচ্চতর আদালতের হস্তক্ষেপও কোনো কাজে আসেনি। বরং ক্রসফায়ারে হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকারের ব্যাখ্যা দেয়ার শুনানির আগে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ ভেঙে দেয়ার ঘটনা সবাইকে হতবাক করেছে। এ থেকে মুখে যাই বলা হোক না কেন ক্রসফায়ার নিয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে যায়। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসনের কথা বলা হলেও সরকার যে তার পুরনো ধারাই আঁকড়ে রয়েছে সেটা বুঝতে কারও ভুল হয় না। উল্লেখ্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শুরু স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। তখন হাজার হাজার বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মী গুপ্ত হত্যার শিকার হন। পুলিশের হাতে আটক ব্যক্তিদের মৃতদেহ পাওয়া যেত এখানে-সেখানে। গ্রেফতারকৃত সিরাজ সিকদারকে গুলি করে হত্যার পর সংসদে দাঁড়িয়ে শেখ মুজিবের হুঙ্কার মানুষের মনে এখনও দুঃস্বপ্নের মতো জেগে ওঠে। বর্তমান সরকারও বিরোধী মত দলনে তেমনি পন্থা গ্রহণ করেছে, এটা কোনো গোপন বিষয় নয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলার ক্রমবর্ধমান ঘটনার পর চিত্রপ্রদর্শনী বন্ধ করে দেয়া থেকেই সরকারের আসল চেহারা প্রকাশ হয়ে পড়েছে। তবে ক্ষমতার দম্ভ আর দমন-পীড়নের ফল কখনও ভালো হয় না। জনরোষের ভয়ে ভীত শাসকদের করুণ পরিণতি বারবার দেখেছে এ দেশের মানুষ। সময় থাকতে সতর্ক না হলে বর্তমান সরকারও তার পুনরাবৃত্তি এড়াতে পারবে না, মনে রাখা দরকার।
No comments