আসছে নতুন জুটির ছবি ‘ভালোবাসার রঙ’ by বিপুল হাসান
কোনো ছবিতে নবাগত নায়ক-নায়িকা থাকলেই ধরে নেওয়া হয়, ছবিটি কম বাজেটের। কারণ একদম নতুন হিরো-হিরোইনকে নিয়ে মোটা অংক বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে চান না কোনো প্রযোজকই। ঢালিউডের চলমান ব্যবসায়িক মন্দাভাবে শীর্ষ নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে তৈরি ছবি থেকেও মুনাফা দূরে থাক, আসল উঠে আসার নিশ্চয়তা দিতে পারছে কেউ। সেক্ষেত্রে নতুন মুখের ছবির পেছনে প্রযোজক মোটা অংকের বিনিয়োগ করবেন কোন ভরসায়!
‘ভালোবাসার রঙ’ ছবির মাধ্যমে ঢালিউডে অভিষেক হতে যাচ্ছে বাপ্পি চৌধুরী ও মাহিয়া মাহির। শাহীন সুমন পরিচালিত এ ছবিটি আগামী ৫ অক্টোবর মুক্তির আলো দেখবে। তবে ফিল্ম পাড়ায় ছবিটি এরই মধ্যে ব্যাপক আলোচিত। মানসম্পন্ন একটি ছবি নির্মাণের জন্য বিনিয়োগে কোনো কার্পণ্য করেনি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া।
বাংলাদেশে ‘ভালোবাসার রঙ’-ই প্রথম বাণিজ্যিক ছবি যা ধারণ করা হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির রেড ক্যামেরায়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান আর রাঙামাটির আউটডোরে ব্যয়বহুল লোকেশনে ছবিটির শুটিং হয়েছে। এতে স্পেশাল ইফেক্টের ব্যবহার দর্শকদের মন মাতিয়ে রাখবে।
অনেকটা অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য যে, ‘ভালোবাসার রঙে’র একটি আইটেম গানেই খরচ হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। ঢালিউডের কোনো ছবির একটি মাত্র গানের পেছনে এতো মোটা অংকের বিনিয়োগ এবারই প্রথম। বলিউডের এই সময়ে ট্র্যাডিশন অনুসরণ করে তৈরি করা এই আইটেম গানে কণ্ঠ দিয়েছেন মিলা। পর্দায় এ আইটেমে পারফর্ম করেছেন লাক্স তারকা বিপাশা।
‘ভালোবাসার রঙ’ নামটির মধ্যেই ইঙ্গিত আছে ছবিটির গল্পের। এতে মিস্টি এক প্রেমের গল্পের চিত্রায়ন করেছেন অসংখ্য হিট ছবির পরিচালক শাহীন-সুমন। পরিচালকদ্বয়ের মতে, “ব্যতিক্রমী চিন্তা-ভাবনা নিয়ে একটি ছবির পরিকল্পনা করার পর বাজেট স্বল্পতার কারণে হোঁচট খেতে হয়। ‘ভালোবাসার রঙ’ নিয়ে এই টেনশনে পড়তে হয়নি। ছবিটিকে মানসম্পন্ন করে তুলতে যেখানে যা প্রয়োজন, প্রযোজক সেই চাহিদা পূরণ করেছেন। স্বাভাবিক কারণে আমরাও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজটি করেছি।”
কেমন করেছেন ‘ভালোবাসার রঙ’ ছবিতে নতুন মুখের জুটি বাপ্পি ও মাহি? পরিচালক শাহীন-সুমন জানান, “কাজের প্রতি দুজনই ছিল যত্নবান ও মনোযোগী। নিজেদের সেরাটাই তারা দিয়েছেন ছবিতে।”
‘ভালোবাসার রঙ’ ছবিটি প্রসঙ্গে পরিচালক শাহিন-সুমন বাংলানিউজকে আরো বলেন, “আসলে এ ছবি নিয়ে এতো আলোচনা হচ্ছে যে এখানে নতুন করে আর বলার কিছু নেই। শুধু এটুকু বলবো, গতানুগতিক ফর্মুলা ভেঙে অসংখ্য নতুনত্ব যোগ করা হয়েছে এ ছবিতে। আমরা মনে করি এটি দর্শকদের সিনেমা হলে ফিরিয়ে আনার মতোই।”
এ ছবির মাধ্যমেই ঢালিউডের নতুন সম্ভাবনা নিয়ে অভিষেক হচ্ছে নায়িকা মাহিয়া মাহির। ছবিটিতে নিজের করা চরিত্র প্রসঙ্গে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “ছবির গল্পে আমার চরিত্রটি অনেকটা রংধনুর সাতরঙের মতোই। এতে আমি উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে। স্বাধীনচেতা-খেয়ালি। কখনো মায়াবি, কখনো জেদি। আমি যখন যা চাই, যে কোনো মূল্যে তা আমার পেতেই হবে। চরিত্রটির সঙ্গে আমি মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার অভিনয় দর্শকদের ভালো লাগলেই আমি স্বার্থক হবো।”
‘ভালোবাসার রঙ’ ছবির নবাগত নায়ক বাপ্পি চৌধুরী বললেন, “শুরুতে ছবির গল্প শুনে আমার কাছে সাদামাটা মনে হয়েছিল। পরে ছবিটির কাজ করতে গিয়ে দেখলাম, গল্পের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে প্রতিটি দৃশ্যেই আনা হয়েছে নতুনত্ব। প্রেমের মতো প্রাচীন ও চিরায়ত বিষয়কে এ ছবিতে নতুন ভঙ্গিতে উপস্থাপন করা হয়েছে। ইউনিটের প্রত্যেকের মধ্যেই আমি দেখেছি, আন্তরিকতার ছোঁয়া আর ভালো কিছু করার প্রত্যাশা।”
ছবিটিতে আরো অভিনয় করেছেন নায়করাজ রাজ্জাক, সুব্রত, কাবিলা, জেসমিন, রেবেকা, অমিত হাসানসহ অনেকে।
‘ভালোবাসার রঙ’ ছবিটি নিয়ে জাজ মাল্টিমিডিয়ার অন্যতম কর্ণধর শীষ মনোয়ার বলেন, “পুরাতন প্রথা ভেঙে নতুন কিছু উপহার দিতেই আমরা চলচ্চিত্রে এসেছি। আমরা এই সময়ের টিনেজ, শিক্ষিত এবং রুচিশীল দর্শকদের কথা মাথায় রেখে সিনেমা নির্মাণের পক্ষে। যারা ঘরে বসে বলিউড, হলিউডের ছবি দেখে তাদের কাছে আমরা ‘ভালোবাসার রঙ’কে পৌঁছে দিতে চাই। এ লক্ষ্যেই আমরা উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছি। পাশাপাশি খুব কম খরচে হলমালিকরাও যেন ছবিটি নিয়ে বেশি লাভ করতে পারেন সেরকম কিছু পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছি। আমরা দেশের প্রায় সবকটি সিনেমা হলে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করার বিশাল একটা পরিকল্পনা করেছি। ভালোবাসার রঙ দিয়েই সে যাত্রা শুরু হচ্ছে।”
ঢালিউডে প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করা দুই সফল জুটি হলো ‘নাঈম-শাবনাজ’ (চাঁদনি) ও ‘সালমান শাহ-মৌসুমী’ (কেয়ামত থেকে কেয়ামত)। এরপর অভিষেকে সাফল্যের সেই ধারা দীর্ঘদিন চোখে পড়েনি। বিগবাজেটের ছবি ‘ভালোবাসার রঙ’-এর মাধ্যমে টিনেজ জুটি হিসেবে বাপ্পি চৌধুরী আর মাহিয়া মাহি সেই ধারাবাহিকতা ফিরিয়ে আনতে পারেন কিনা, তার জন্য অপেক্ষা ৫ অক্টোবর ছবিটি মুক্তি পাওয়া পর্যন্ত।
No comments