মাহে রমজানের পবিত্রতা -সিয়াম সাধনার মাস ধর্ম by মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
মাহে রমজানের পবিত্রতা, সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার্থে মুসলমানদের অবশ্যই সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আত্মাকে সংশোধন করে আত্মসংযম, শালীনতা ও সদাচরণ প্রদর্শনের অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। ইসলাম পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষার ওপর বিশেষভাবে দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। মহান আল্লাহ নিজে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন আর তিনি পরিচ্ছন্নতাই ভালোবাসেন। এ জন্য মাহে রমজানে মানুষের শরীর, পোশাক-পরিচ্ছদ ও পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। নবী করিম (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা অতি পবিত্র, তিনি পবিত্রতাকে পছন্দ করেন, তিনি পরিচ্ছন্ন এবং পরিচ্ছন্নতাকে ভালোবাসেন।’ (তিরমিজি)
ইসলাম তার অনুসারীদের সামগ্রিকভাবে সৌন্দর্যমণ্ডিত দেখতে চায়। তাই ধর্মপরায়ণ রোজাদার ব্যক্তির শরীর-মন, পোশাক-পরিচ্ছদ পরিচ্ছন্ন রাখার প্রয়োজন অত্যাবশ্যক। আরবিতে পরিচ্ছন্নতার প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘তাহারাত’, ‘নাজাফাত’ বা ‘জাকাত’-এর অর্থ পবিত্রতা, পরিষ্কার-পরিপাটি ও দুর্গন্ধমুক্ত নির্মল অবস্থা। ইসলামের পরিভাষায় বিশেষ পদ্ধতিতে অর্জিত দেহ, মন, পোশাক, স্থান বা পরিবেশের পবিত্রতা ও নির্মলতাকে পরিচ্ছন্নতা বলা হয়। হাদিস শরিফে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অর্ধেক বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ।’
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। মাহে রমজানে সুস্থ-সবল দেহ-মন নিয়ে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করা ও তা কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে শরীর, মন, পোশাক-পরিচ্ছদ ও পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন তথা পবিত্র রাখা। পোশাক পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা নির্দেশ জারি করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা প্রতি নামাজের সময় সুন্দর পরিচ্ছদ পরিধান করবে।’ (সূরা আল-আরাফ, আয়াত-৩১)
রমজান মাসে পোশাক-পরিচ্ছদ পবিত্র রাখা ইবাদতের ক্ষেত্রে ফরজ। দৈহিক রোগব্যাধি থেকে মুক্ত থাকতে হলে শরীরকে সব সময় পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়, দৈনন্দিন জীবনে রোজাদারদের কাপড়চোপড় ধৌত ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হয় এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পাত্র থেকে খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। নবী করিম (সা.)-এর অন্যতম সুন্নত হচ্ছে রমজান মাসে সেহির ও ইফতার তথা সব সময় পানাহারের আগে ও পরে হাত ধুয়ে নেওয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘তোমাদের কেউ ঘুম থেকে উঠে হাত তিনবার না ধুয়ে যেন কোনো পাত্রে হাত না ঢোকায়।’ (বুখারি ও মুসলিম) তিনি আরও বলেছেন, ‘নখ কাটা ফিতরাত তথা নবীদের সুন্নত।’ (আবু দাউদ)
আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা সম্বন্ধে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিকে সঠিক ও বিজ্ঞানসম্মত বলে প্রমাণ করে। পরিচ্ছন্নতার প্রথম পর্যায় শারীরিক পবিত্রতা। শরীর অপবিত্র-অপরিচ্ছন্ন থাকলে নানা ধরনের রোগ হয়। প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ বা মিসওয়াক না করলে দাঁতের মাড়িতে রোগ হয়ে অকালে দাঁত পড়ে যায়। প্রস্রাব-পায়খানা ভালোভাবে না হলে এবং নখ বড় রাখলে রোজাদারদের পেটের অসুখসহ বিভিন্ন রকম পীড়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রমজান মাসসহ সর্বাবস্থায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলে দেহ-মন ভালো থাকে, ধর্মীয় কাজে উদ্দীপনা আসে।
ইসলামের সব গুরুত্বপূর্ণ অত্যাবশ্যকীয় ইবাদত যেমন—নামাজ, রোজা, হজ, কোরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি কাজে শরীর, পোশাক ও স্থান পরিষ্কার ও পবিত্র হওয়া অপরিহার্য। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য প্রতিদিন পাঁচবার ওজু করতে ১৫ বার হাত, পা, নাক, মুখ, চোখ ও মাথা ধুতে হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) শরীর পরিষ্কার রাখতে ধর্মভীরুদের জোরালো তাগিদ দিয়ে বলেছেন, ‘আমি যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টদায়ক না মনে করতাম তাহলে প্রতি নামাজের ওজুর সঙ্গে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।’ (বুখারি) চুল, নখ ইত্যাদি বড় হলে দৃষ্টিকটু লাগে। তাই দৈহিক সৌন্দর্য রক্ষার জন্য এগুলো থেকে পরিচ্ছন্নতা অর্জন করতে হয়। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে যে একদা এলোমেলো চুলের অধিকারী এক ব্যক্তিকে দেখে নবী করিম (সা.) বললেন, ‘যার মাথার চুল আছে, সে যেন তার পরিচর্যা করে।’ (আবু দাউদ)
রোজাদারদের নামাজ কবুল হওয়ার জন্য পোশাক-পরিচ্ছদকে অবশ্যই পবিত্র রাখতে হবে। শরীর পাক, কাপড় পাক, জায়গা পাক—এগুলো হচ্ছে নামাজের পূর্বশর্ত। তা ছাড়া মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্মের প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত সমাজে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকের সঙ্গে ওঠাবসা, চলাফেরা ও মেলামেশা করতে হয়। বিভিন্ন রকম শারীরিক পরিশ্রম করতে মানুষের হাত-পা, দেহ ময়লা হয়ে যায়। পোশাক-পরিচ্ছদ অপরিষ্কার ও আবর্জনাযুক্ত থাকলে সমাজের কেউ তাকে সহজভাবে গ্রহণ করতে চায় না। তাই সামাজিক জীবনে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে হলে দেহ-মন, পোশাক-পরিচ্ছদ পরিচ্ছন্ন রাখা একান্ত জরুরি। যে রোজাদার ব্যক্তি ভেতরে-বাইরে পবিত্রতা অর্জন করে সে অবশ্যই সাফল্য লাভ করে। আর যারা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করে, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীকে ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরও ভালোবাসেন।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-২২২)
সমাজ জীবনে সুস্থ ও শান্তিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকার জন্য চাই সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। যেখানে সেখানে উন্মুক্ত স্থ্থানে ময়লা-আবর্জনা, কফ, থুথু ও মলত্যাগে পরিবেশ দূষিত হয়ে জনস্বাস্থ্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করে। এ জন্য বসতভিটা, রাস্তাঘাট, খোলা মাঠ, বাড়ির আঙিনা প্রভৃতি পরিবেশদূষণ ও আবর্জনামুক্ত রাখা একান্ত প্রয়োজন। এসব পারিপার্শ্বিক এলাকা অপরিচ্ছন্ন থাকলে মানবজীবন দুবির্ষহ হয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে এগুলো সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন থাকলে রোজাদার ব্যক্তির সানন্দে কাজ করতে, চলতে-ফিরতে মনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ আসে ও ইবাদত-বন্দেগিতে পরিতৃপ্তি লাভ করা যায়। এ মর্মে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ সুন্দর এবং সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন।’ (মুসলিম)
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইহকাল ও পরকালে সফলতা লাভের সহায়ক। মাহে রমজানে ধর্মপ্রাণ মানুষের শরীর, মন, পোশাক-পরিচ্ছদ ও পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টি, ইহলৌকিক কল্যাণ তথা সুস্থতা-সৌন্দর্য ও পারলৌকিক মুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রকৃত রোজাদার মুসলমান হিসেবে ইসলামের যথার্থ দিকনির্দেশনার আলোকে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সদা সচেতন থাকা আমাদের মানবিক, সামাজিক ও ঈমানি দায়িত্ব এবং অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। তাই পূত-পবিত্র পরিচ্ছন্ন দেহ-মন নিয়ে মহিমান্বিত রমজান মাসে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করে সমাজে একে অপরের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতা ও সহানুভূতির হাত সম্প্রসারিত করা উচিত।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
ইসলাম তার অনুসারীদের সামগ্রিকভাবে সৌন্দর্যমণ্ডিত দেখতে চায়। তাই ধর্মপরায়ণ রোজাদার ব্যক্তির শরীর-মন, পোশাক-পরিচ্ছদ পরিচ্ছন্ন রাখার প্রয়োজন অত্যাবশ্যক। আরবিতে পরিচ্ছন্নতার প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘তাহারাত’, ‘নাজাফাত’ বা ‘জাকাত’-এর অর্থ পবিত্রতা, পরিষ্কার-পরিপাটি ও দুর্গন্ধমুক্ত নির্মল অবস্থা। ইসলামের পরিভাষায় বিশেষ পদ্ধতিতে অর্জিত দেহ, মন, পোশাক, স্থান বা পরিবেশের পবিত্রতা ও নির্মলতাকে পরিচ্ছন্নতা বলা হয়। হাদিস শরিফে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অর্ধেক বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ।’
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। মাহে রমজানে সুস্থ-সবল দেহ-মন নিয়ে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করা ও তা কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে শরীর, মন, পোশাক-পরিচ্ছদ ও পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন তথা পবিত্র রাখা। পোশাক পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা নির্দেশ জারি করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা প্রতি নামাজের সময় সুন্দর পরিচ্ছদ পরিধান করবে।’ (সূরা আল-আরাফ, আয়াত-৩১)
রমজান মাসে পোশাক-পরিচ্ছদ পবিত্র রাখা ইবাদতের ক্ষেত্রে ফরজ। দৈহিক রোগব্যাধি থেকে মুক্ত থাকতে হলে শরীরকে সব সময় পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়, দৈনন্দিন জীবনে রোজাদারদের কাপড়চোপড় ধৌত ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হয় এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পাত্র থেকে খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। নবী করিম (সা.)-এর অন্যতম সুন্নত হচ্ছে রমজান মাসে সেহির ও ইফতার তথা সব সময় পানাহারের আগে ও পরে হাত ধুয়ে নেওয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘তোমাদের কেউ ঘুম থেকে উঠে হাত তিনবার না ধুয়ে যেন কোনো পাত্রে হাত না ঢোকায়।’ (বুখারি ও মুসলিম) তিনি আরও বলেছেন, ‘নখ কাটা ফিতরাত তথা নবীদের সুন্নত।’ (আবু দাউদ)
আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা সম্বন্ধে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিকে সঠিক ও বিজ্ঞানসম্মত বলে প্রমাণ করে। পরিচ্ছন্নতার প্রথম পর্যায় শারীরিক পবিত্রতা। শরীর অপবিত্র-অপরিচ্ছন্ন থাকলে নানা ধরনের রোগ হয়। প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ বা মিসওয়াক না করলে দাঁতের মাড়িতে রোগ হয়ে অকালে দাঁত পড়ে যায়। প্রস্রাব-পায়খানা ভালোভাবে না হলে এবং নখ বড় রাখলে রোজাদারদের পেটের অসুখসহ বিভিন্ন রকম পীড়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রমজান মাসসহ সর্বাবস্থায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলে দেহ-মন ভালো থাকে, ধর্মীয় কাজে উদ্দীপনা আসে।
ইসলামের সব গুরুত্বপূর্ণ অত্যাবশ্যকীয় ইবাদত যেমন—নামাজ, রোজা, হজ, কোরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি কাজে শরীর, পোশাক ও স্থান পরিষ্কার ও পবিত্র হওয়া অপরিহার্য। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য প্রতিদিন পাঁচবার ওজু করতে ১৫ বার হাত, পা, নাক, মুখ, চোখ ও মাথা ধুতে হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) শরীর পরিষ্কার রাখতে ধর্মভীরুদের জোরালো তাগিদ দিয়ে বলেছেন, ‘আমি যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টদায়ক না মনে করতাম তাহলে প্রতি নামাজের ওজুর সঙ্গে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।’ (বুখারি) চুল, নখ ইত্যাদি বড় হলে দৃষ্টিকটু লাগে। তাই দৈহিক সৌন্দর্য রক্ষার জন্য এগুলো থেকে পরিচ্ছন্নতা অর্জন করতে হয়। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে যে একদা এলোমেলো চুলের অধিকারী এক ব্যক্তিকে দেখে নবী করিম (সা.) বললেন, ‘যার মাথার চুল আছে, সে যেন তার পরিচর্যা করে।’ (আবু দাউদ)
রোজাদারদের নামাজ কবুল হওয়ার জন্য পোশাক-পরিচ্ছদকে অবশ্যই পবিত্র রাখতে হবে। শরীর পাক, কাপড় পাক, জায়গা পাক—এগুলো হচ্ছে নামাজের পূর্বশর্ত। তা ছাড়া মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্মের প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত সমাজে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকের সঙ্গে ওঠাবসা, চলাফেরা ও মেলামেশা করতে হয়। বিভিন্ন রকম শারীরিক পরিশ্রম করতে মানুষের হাত-পা, দেহ ময়লা হয়ে যায়। পোশাক-পরিচ্ছদ অপরিষ্কার ও আবর্জনাযুক্ত থাকলে সমাজের কেউ তাকে সহজভাবে গ্রহণ করতে চায় না। তাই সামাজিক জীবনে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে হলে দেহ-মন, পোশাক-পরিচ্ছদ পরিচ্ছন্ন রাখা একান্ত জরুরি। যে রোজাদার ব্যক্তি ভেতরে-বাইরে পবিত্রতা অর্জন করে সে অবশ্যই সাফল্য লাভ করে। আর যারা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করে, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীকে ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরও ভালোবাসেন।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-২২২)
সমাজ জীবনে সুস্থ ও শান্তিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকার জন্য চাই সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। যেখানে সেখানে উন্মুক্ত স্থ্থানে ময়লা-আবর্জনা, কফ, থুথু ও মলত্যাগে পরিবেশ দূষিত হয়ে জনস্বাস্থ্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করে। এ জন্য বসতভিটা, রাস্তাঘাট, খোলা মাঠ, বাড়ির আঙিনা প্রভৃতি পরিবেশদূষণ ও আবর্জনামুক্ত রাখা একান্ত প্রয়োজন। এসব পারিপার্শ্বিক এলাকা অপরিচ্ছন্ন থাকলে মানবজীবন দুবির্ষহ হয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে এগুলো সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন থাকলে রোজাদার ব্যক্তির সানন্দে কাজ করতে, চলতে-ফিরতে মনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ আসে ও ইবাদত-বন্দেগিতে পরিতৃপ্তি লাভ করা যায়। এ মর্মে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ সুন্দর এবং সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন।’ (মুসলিম)
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইহকাল ও পরকালে সফলতা লাভের সহায়ক। মাহে রমজানে ধর্মপ্রাণ মানুষের শরীর, মন, পোশাক-পরিচ্ছদ ও পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টি, ইহলৌকিক কল্যাণ তথা সুস্থতা-সৌন্দর্য ও পারলৌকিক মুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রকৃত রোজাদার মুসলমান হিসেবে ইসলামের যথার্থ দিকনির্দেশনার আলোকে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সদা সচেতন থাকা আমাদের মানবিক, সামাজিক ও ঈমানি দায়িত্ব এবং অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। তাই পূত-পবিত্র পরিচ্ছন্ন দেহ-মন নিয়ে মহিমান্বিত রমজান মাসে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করে সমাজে একে অপরের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতা ও সহানুভূতির হাত সম্প্রসারিত করা উচিত।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
No comments