নতুন এডিপিতে অননুমোদিত ও বরাদ্দবিহীন ১১০০ প্রকল্প
চলতি ২০১০-১১ অর্থবছরের নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দবিহীন প্রায় এক হাজার ১০০ প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮০০ অননুমোদিত এবং ২৯২টি বিদেশি সাহায্য পেলে বাস্তবায়িত হবে। এসব প্রকল্প চলতি অর্থবছর থেকেই বাস্তবায়ন করার কথা বলা আছে।
এর বাইরে এডিপিতে বরাদ্দ পাওয়া নতুন প্রকল্প হচ্ছে মাত্র ৯৪টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৬৮টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১২টি এবং জাপানি ঋণ মওকুফ কর্মসূচির (জেডিসিএফ) আওতায় নেওয়া হয়েছে আরও ১৪টি প্রকল্প।
জানা গেছে, মূল এডিপি দলিলে নতুন প্রকল্প কম দেখানো হলেও অর্থবছরের শুরু থেকেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে (একনেক) প্রায় সপ্তাহেই গড়ে পাঁচটির বেশি প্রকল্প অনুমোদন পাচ্ছে। অনেক প্রকল্প অর্থও বরাদ্দ পাচ্ছে। ফলে এডিপিতে নতুন প্রকল্প কম নেওয়ার ঘোষণা থাকলেও শেষ পর্যন্ত এ ঘোষণা আর ঠিক থাকছে না।
যেমন, সদ্য সমাপ্ত ২০০৯-১০ অর্থবছরের মূল এডিপি দলিলে প্রকল্প রাখা হয়েছিল ৮৮৬টি। এর মধ্যে নতুন বরাদ্দ পাওয়া প্রকল্প ছিল মাত্র ৩৫টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৭৯৫টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ২০১টি এবং জেডিসিএফের আওতায় ৬৬টি। অথচ সংশোধিত এডিপিতে পুরো চিত্রই পাল্টে গেছে।
সংশোধিত ২০০৯-১০ অর্থবছরের এডিপি অনুযায়ী অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রকল্পের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬২টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৭৯৫, কারিগরি ২০১ ও জেডিসিএফের আওতায় প্রকল্পের সংখ্যা ৬৬টি। গত অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দবিহীন নতুন প্রকল্প রাখা ছিল ৪৯২টি এবং বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্তির সুবিধার্থে রাখা ছিল আরও ২২৭টি প্রকল্প।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে বিদেশি সাহায্য পাওয়ার সুবিধার্থে রাখা প্রকল্পের সংখ্যা খুব বেশি না বাড়লে অননুমোদিত এবং বরাদ্দবিহীন প্রকল্পের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। তবে নতুন এডিপিতে প্রথমবারের মতো এসব প্রকল্পের জন্য এক হাজার ২৫১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। একনেকে অনুমোদন পেলে এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত এসব প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হবে।
চলতি অর্থবছরের জন্য তৈরি এডিপির পরিমাণ সাড়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় মুদ্রা বরাদ্দের পরিমাণ ২৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। আর মূল এডিপিতে বরাদ্দ পাওয়া প্রকল্পের সংখ্যা রাখা হয়েছে ৯১৬টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৬৮৭টি, কারিগরি প্রকল্প ১৫৫টি এবং জেডিসিএফের আওতায় রাখা আছে ৭৪টি প্রকল্প।
সূত্র জানায়, মূলত দলের নেতা-কর্মীদের প্রকল্প গ্রহণের চাহিদা পূরণ করতে গিয়েই এডিপিতে অনুমোদনহীন প্রায় এক হাজার ১০০ প্রকল্প রাখা হয়েছে। সাধারণত, রাস্তা এবং ব্রিজ ও কালভার্ট তৈরির চাহিদাই থাকে বেশি। আর এ কারণেই নতুন এডিপিতে এ ধরনের প্রকল্পের সংখ্যাই বেশি। যেমন, বরাদ্দ ও অনুমোদনবিহীন প্রকল্পের মধ্যে ১২৩টিই রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প। এ ছাড়া বিদেশি সাহায্য পেলে তৈরি হবে আরও ২৯টি সড়ক খাতের প্রকল্প। আবার মূল এডিপিতে বাস্তবায়নাধীন সড়ক খাতের প্রকল্প রয়েছে ৯৬টি।
সূত্র জানায়, আগের রাজনৈতিক সরকারগুলোর মতোই নতুন এডিপিতে রাখা হয়েছে রাস্তা-সেতু-কালভার্ট বানানোর অসংখ্য প্রকল্প। এ ছাড়া রয়েছে কয়েকটি গুচ্ছ প্রকল্প। এসব গুচ্ছ প্রকল্প সুনির্দিষ্ট থাকে না। এ কারণে রাজনৈতিক তদবিরের অনেক প্রকল্প ঢুকে পড়ে এসব গুচ্ছ প্রকল্পে। এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি, পল্লী প্রগতি প্রকল্প, রুরাল লাইভলিহুড প্রকল্প, উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কে দীর্ঘ সেতু নির্মাণ, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো প্রকল্প, গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ইত্যাদি।
চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ ও অনুমোদনহীন নতুন প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু প্রকল্প হলো সারা দেশে দুই লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন দুটি খাদ্যগুদাম নির্মাণ, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় শেখ রাসেল এভিয়ারি ও ইকো স্থাপন, উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন সম্প্রসারণ প্রকল্প, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ ও রেকর্ড প্রণয়ন ও সংরক্ষণ প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প, বরিশাল বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, মংলা বন্দরের জন্য কনটেইনার হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, ভোমরা স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, খুলনা জেলা কারাগার স্থাপন, ১১টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নির্মাণ, ইন্দিরা রোড থেকে পান্থপথ পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে যানজট নিরসনে বিকল্প সড়ক নির্মাণ (সোনারগাঁও রেলক্রসিং থেকে মহাখালী রেলক্রসিং পর্যন্ত), বাংলাদেশ ফিল্ম সিটি প্রকল্প ইত্যাদি।
বিদেশি সাহায্য পাওয়া গেলে বাস্তবায়ন করা হবে এমন প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চর জীবিকায়ন কর্মসূচি দ্বিতীয় পর্যায়, আদর্শ গ্রাম-৩, কুষ্টিয়া ও জিলবাংলা সুগার মিলের বিএমআর, আশুগঞ্চে ৪৫০ ও ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী নদীতে ট্যানেল নির্মাণ, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ জাহাঙ্গীর গেট থেকে আগারগাঁও রোকেয়া সরণি পর্যন্ত ট্যানেল নির্মাণ, পদ্মা সেতুতে রেলওয়ে লিংক নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ, সোনাদিয়া দ্বীপে গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন, পাগলা/কেরানীগঞ্জ পানি শোধনাগার নির্মাণ, ঢাকার বছিলায় মোহাম্মদপুর এলাকায় জেনেভা ক্যাম্পের এক হাজার অবাঙালি পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য এক হাজার আটটি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প ইত্যাদি।
No comments