আশ্রয়কেন্দ্র নয়, যেন নরক
বয়স ৪৭ ছুঁইছুঁই, কিন্তু দেখায় এর চেয়ে বেশি। শরীর ও চেহারা এরই মধ্যে ভেঙে গেছে। নুয়ে পড়া এ শরীর নিয়েই কুঁড়েঘরের চালের ছিদ্র বন্ধ করার চেষ্টা করছিলেন সালিক উসমান। মিন্দানাও দ্বীপের মাগুইদানাও প্রদেশের দাতু পিয়াং এলাকায় তালপাতা ও পলিথিনের ছাউনির আশ্রয়কেন্দ্রে স্ত্রী ও ১১ সন্তান নিয়ে বাস করছেন তিনি। বৃষ্টি পড়লেই ঘরের চালের ফুটো দিয়ে পানিতে ঘর ভেসে যায়। তাই ঘরের চালের ফুটো বন্ধ করছিলেন উসমান। আর গত এক বছরের দুঃসহ স্মৃতি আওড়াচ্ছিলেন।
‘এক বছরেরও বেশি সময় হয়েছে, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এই আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। গত আগস্টের ঘটনা; আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম। ভোরের দিকে হঠাত্ বিস্ফোরণ ঘটল। দৌড়ে পালালাম আমরা। এরপর এখানে এসে আশ্রয় নিই। শুধু আমরা নই, আমাদের মতো আরও তিন হাজার লোক এখানে মাথা গুঁজেছে।’
মিন্দানাও দ্বীপে ফিলিপাইনের বিদ্রোহী মোরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্ট (এমআইএলএফ) এবং সরকারি সেনাদের মধ্যে যুদ্ধের কারণে কেবল সালিক উসমানই নন, তাঁর মতো আরও ছয় লাখ ৫০ হাজার মুসলিম ও খ্রিষ্টান বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে এসেছে।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সালিক উসমান বলেন, ‘চোখের সামনে বসতঘর আগুনে পুড়ে যেতে দেখেছি। মোষের পাল ছুটে পালিয়েছে। যুদ্ধ আমার সব কেড়ে নিয়েছে।’
সালিক বলেন, ‘সেদিনের ঘটনার মাসখানেকের মধ্যে আমার এক বছরের ছেলে মারা যায়। এখানকার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এসে সে অসুখে পড়ে। তার ওপর নেই কোনো খাবার। খেতে না পেয়েই সে মারা গেছে। এটা আশ্রয়কেন্দ্র নয়, যেন নরক।’
মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদী এ গোষ্ঠীটি মিন্দানাওয়ে স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্রের দাবিতে লড়াই চালিয়ে আসছে সেই ১৯৭৮ সাল থেকে। বিদ্রোহীরা গত আগস্টে সরকারের সঙ্গে পাঁচ বছরের যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে। সে সময় সুপ্রিম কোর্ট তাদের জন্য আলাদা স্বাধীন ভূখণ্ড দিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর থেকেই তারা মিন্দানাও দ্বীপজুড়ে হামলা চালাতে শুরু করে। তাদের এ হামলার শিকার নিরীহ লাখো ফিলিপিনো।
প্রিয় ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন রাখমা কলোত। ৩১ বছর বয়সী এ মুসলিম নারী এ কেন্দ্রেই তাঁর পঞ্চম সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তিনি বলেন, সন্তানদের ভরণপোষণ নিয়ে তাঁকে প্রতিদিনই সংগ্রাম করতে হয়।
রাখমা কলোতের স্বামী ববি আশ্রয়কেন্দ্রের আশপাশেই রিকশা চালান, কিন্তু তাতে উপার্জন হয় না বললেই চলে। তাই প্রায় রাতেই তাঁদের সন্তানেরা অভুক্ত থেকে ঘুমিয়ে পড়ে। রাখমা কলোত বলেন, ‘গত একটা বছর এভাবেই আমাদের কেটেছে।’
আশ্রয়কেন্দ্রের দৈন্যদশা সম্পর্কে রাখমা বলেন, ‘ময়লা পানিতে কাপড়চোপড় ধুতে হয়, গোসলের কাজ সারতে হয়। শৌচাগারের অবস্থা সবচেয়ে করুণ। বস্তা ও কাপড় দিয়ে কোনো রকমে এই শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে। তাই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় আমরা এমন ভান করি, যেন আমাদের কেউ দেখতে পায় না।’
সরকার ও বিদ্রোহীরা আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে, এ খবরে রাখমা কলোত খুশি। কিন্তু তাঁর আশঙ্কা, এ দুই পক্ষ শেষমেশ যুদ্ধ থামাতে রাজি হবে না। ক্লান্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধে আমাদের ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আমরা যখন বাড়ি ফিরব, তখন কী নিয়ে আবার নতুন জীবন শুরু করব?’
গত এক বছরে উদ্বাস্তুদের অনেকে আবার মিন্দানাওয়ে ফিরেছে। কিন্তু এখনো আড়াই লাখ লোক বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে এবং তাদের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
‘এক বছরেরও বেশি সময় হয়েছে, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এই আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। গত আগস্টের ঘটনা; আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম। ভোরের দিকে হঠাত্ বিস্ফোরণ ঘটল। দৌড়ে পালালাম আমরা। এরপর এখানে এসে আশ্রয় নিই। শুধু আমরা নই, আমাদের মতো আরও তিন হাজার লোক এখানে মাথা গুঁজেছে।’
মিন্দানাও দ্বীপে ফিলিপাইনের বিদ্রোহী মোরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্ট (এমআইএলএফ) এবং সরকারি সেনাদের মধ্যে যুদ্ধের কারণে কেবল সালিক উসমানই নন, তাঁর মতো আরও ছয় লাখ ৫০ হাজার মুসলিম ও খ্রিষ্টান বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে এসেছে।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সালিক উসমান বলেন, ‘চোখের সামনে বসতঘর আগুনে পুড়ে যেতে দেখেছি। মোষের পাল ছুটে পালিয়েছে। যুদ্ধ আমার সব কেড়ে নিয়েছে।’
সালিক বলেন, ‘সেদিনের ঘটনার মাসখানেকের মধ্যে আমার এক বছরের ছেলে মারা যায়। এখানকার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এসে সে অসুখে পড়ে। তার ওপর নেই কোনো খাবার। খেতে না পেয়েই সে মারা গেছে। এটা আশ্রয়কেন্দ্র নয়, যেন নরক।’
মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদী এ গোষ্ঠীটি মিন্দানাওয়ে স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্রের দাবিতে লড়াই চালিয়ে আসছে সেই ১৯৭৮ সাল থেকে। বিদ্রোহীরা গত আগস্টে সরকারের সঙ্গে পাঁচ বছরের যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে। সে সময় সুপ্রিম কোর্ট তাদের জন্য আলাদা স্বাধীন ভূখণ্ড দিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর থেকেই তারা মিন্দানাও দ্বীপজুড়ে হামলা চালাতে শুরু করে। তাদের এ হামলার শিকার নিরীহ লাখো ফিলিপিনো।
প্রিয় ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন রাখমা কলোত। ৩১ বছর বয়সী এ মুসলিম নারী এ কেন্দ্রেই তাঁর পঞ্চম সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তিনি বলেন, সন্তানদের ভরণপোষণ নিয়ে তাঁকে প্রতিদিনই সংগ্রাম করতে হয়।
রাখমা কলোতের স্বামী ববি আশ্রয়কেন্দ্রের আশপাশেই রিকশা চালান, কিন্তু তাতে উপার্জন হয় না বললেই চলে। তাই প্রায় রাতেই তাঁদের সন্তানেরা অভুক্ত থেকে ঘুমিয়ে পড়ে। রাখমা কলোত বলেন, ‘গত একটা বছর এভাবেই আমাদের কেটেছে।’
আশ্রয়কেন্দ্রের দৈন্যদশা সম্পর্কে রাখমা বলেন, ‘ময়লা পানিতে কাপড়চোপড় ধুতে হয়, গোসলের কাজ সারতে হয়। শৌচাগারের অবস্থা সবচেয়ে করুণ। বস্তা ও কাপড় দিয়ে কোনো রকমে এই শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে। তাই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় আমরা এমন ভান করি, যেন আমাদের কেউ দেখতে পায় না।’
সরকার ও বিদ্রোহীরা আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে, এ খবরে রাখমা কলোত খুশি। কিন্তু তাঁর আশঙ্কা, এ দুই পক্ষ শেষমেশ যুদ্ধ থামাতে রাজি হবে না। ক্লান্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধে আমাদের ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আমরা যখন বাড়ি ফিরব, তখন কী নিয়ে আবার নতুন জীবন শুরু করব?’
গত এক বছরে উদ্বাস্তুদের অনেকে আবার মিন্দানাওয়ে ফিরেছে। কিন্তু এখনো আড়াই লাখ লোক বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে এবং তাদের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
No comments