একটি ক্ষমাপ্রার্থনা -সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি by এ জেড এম আবদুল আলী
আমার আজকের লেখাটি একজনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে একটি লেখা। আমি সত্যিকারের ক্ষমা প্রার্থী সদ্য পদত্যাগ করা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজের কাছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে আমি অন্য একটি পত্রিকায় লিখেছিলাম যে সোহেল তাজ তাঁর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ করতে গিয়ে যে রহস্য সৃষ্টি করেছেন, তা আমরা তাজউদ্দীন আহমদের পুত্রের কাছে থেকে আশা করিনি। তখন বিষয়টি সম্পর্কে আমার খবরের কাগজের কিছু লেখা ছাড়া আর কিছুই জানা ছিল না। এখন বেশ কয়েকজন মানুষ, যাঁরা আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠজন, এমন কিছু কথা বলেছেন আমাকে, যেসব শুনে মনে হচ্ছে, তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে সত্যিই পিতার আদর্শ সমুন্নত রেখেছেন। ভেতরের কিছু কিছু কথা শুনে এখন ভাবছি, যে কথাগুলো শোনা যাচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে সামান্য কিছুও যদি সত্যি হয়, তাহলে তিনি পদত্যাগ করে যোগ্য পিতার যোগ্য পুত্রের মতো যথার্থ কাজই করেছেন।
এ গুজবগুলোর সবই অল্প-বিস্তর যাচাই করা যেতে পারে। একটি গুজব হচ্ছে, সোহেল তাজ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর অনুমতি বা তাঁর মন্ত্রণালয়ের কারও সঙ্গে কোনো রকম পরামর্শ ছাড়াই ঢাকা শহরের ২৮-৩০টি থানাতে যাঁদের অফিসার-ইনচার্জ পদে বসানো হয়েছে, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই গোপালগঞ্জের লোক। সাংবাদিক ভাইদের কেউ কি খোঁজটি নিয়ে জানাতে পারবেন, এ অভিযোগটি সত্য না নেহাত একটি গুজব? কাজটি মোটেই অসম্ভব নয়। মহাপরিদর্শক পুলিশের দপ্তরে নথিপত্র দেখে যে কেউ এটি জানতে পারেন। কিন্তু গুজবটি যদি গুজব না হয়ে সত্যি হয়, তাহলে আজ চিন্তা এবং দুঃখের সীমা রইবে না। সোহেল তাজ পদত্যাগ করেছেন যথার্থই। কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা, আওয়ামী লীগের দিনবদলের অঙ্গীকারটি কোথায় থাকছে তাহলে? সেই পুরোনো ট্রাডিশন যদি চলতেই থাকে, তাহলে আর দিন বদলাল কোথায়?
শোনা যাচ্ছে, বেশ কিছু লোকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ছিল, সম্ভবত সরকারের অথবা আদালতের পক্ষ থেকে। এরই মধ্যে সাবেক চারদলীয় জোট সরকারের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুও ছিলেন। তাই তাঁকে বিদেশযাত্রার কালে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ইমিগ্রেশনের লোকজনেরা। ওঁর বেয়াই, শেখ হাসিনার একজন আত্মীয় ও আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা এ নিয়ে সোহেল তাজের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন। তাঁকে প্রকাশ্যে অপমান করা হয়েছে। এতে অপমানিত হয়ে, নিজের আদর্শের বিরুদ্ধে কোনো রকম আপস না করে তিনি পদত্যাগ করেছেন। একটি পত্রিকাকে তিনি বলেছেন যে তাঁর নিজস্ব ‘ডিগনিটি’ ও ‘প্রিন্সিপাল’ রক্ষার্থেই তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। পিতা যেমন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মতানৈক্যের কারণে নীরবে পদত্যাগ করে মন্ত্রিসভা থেকে বের হয়ে এসেছিলেন, তেমনি সোহেল তাজও তাই করেছেন। রাজনীতির পরিস্থিতি যদি এই হয়, তাহলে সেখানে তাজউদ্দীন আহমদের পুত্রের স্থান হবে কীভাবে।
নির্বাচনের পর সাত মাস পেরিয়ে গেল। কিন্তু দিন যে বদলাচ্ছে, তার খুব একটা প্রমাণ দেশবাসী পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীদের মধ্যে মারামারি-হানাহানি চলছেই। খবরের কাগজ খুললেই সেসব খবর পড়তে হচ্ছে। কাগজে দেখা গেল, কোনো একটি কলেজে মেয়েদের ছাত্রাবাসকে ছাত্রলীগ জোর করে ছেলেদের ছাত্রাবাসে পরিণত করেছে। থানাপুলিশ বা জেলা প্রশাসন, কেউই এসব পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারছে না। সরকার ভাবছে, অপরাধী, সে যে দলেরই হোক না কেন, তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের সামনে হাজির করতে নির্দেশ তো দেওয়াই হয়েছে। পুলিশ ভাবছে, সেই নির্দেশ সুস্পষ্ট নয়। তা না হলে এ ধরনের অপরাধ কমছে না কেন? এ পরিবেশে তানজিম আহমদ সোহেল তাজ যে নীরবে পদত্যাগ করে দেশের বাইরে চলে গেছেন, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে যে দিনবদলের অঙ্গীকার করা হয়েছে, তা কী করে সফল করা যায়, তা নিয়ে সবাই চিন্তিত। সেই চিন্তা নিশ্চয়ই সোহেল তাজেরও আছে। অথচ নিজে তাতে অংশ নিতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন, সেই বেদনায় বেদনার্ত হয়েই তিনি পদত্যাগ করেছেন। তবু যাঁরা তাঁকে ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য করেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই তাঁর কাছে থেকে কিছু শুনতে চান। তাঁদের সামনে তিনি একটু খুলে বললে বোধহয় ভালো করতেন। কে বা কারা তাঁকে তাঁর আদর্শ বা আত্মমর্যাদা নিয়ে কাজ করতে দেননি। কেন তিনি তাঁর জনগণের বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পারলেন না। অন্ততপক্ষে তিনি যদি এটুকু বলতেন যে তিনি মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেছেন বটে, কিন্তু সংসদ সদস্যপদ ত্যাগ করেননি। ওই পদে থেকেই তিনি তাঁদের কথা বলবেন, তাঁদের স্বার্থ রক্ষা করায় আপ্রাণ চেষ্টা করে যাবেন। তাঁর কাছে থেকে এটুকু শুনতে পেলেও তাঁর নির্বাচনী এলাকার মানুষজন আশ্বস্ত হতে পারতেন।
সোহেল তাজের এভাবে বিদায় অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। কোথায় কিছু গোলমাল হয়েছে, মনে করছেন তাঁরা। সরকারের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে আওয়ামী লীগ নিঃসন্দেহে কয়েকটি ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে সর্বশেষ পদক্ষেপটি নেওয়া হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে এক ব্রিগেড সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার মাধ্যমে। কিন্তু দু-একটি ঘটনা মানুষকে সন্দিহান করে তুলছে। সোহেল তাজের বিদায় গ্রহণ সে রকমই একটি ঘোষণা। তাঁর মতো একজন তরুণ নেতাকে দেশে রাখা গেল না কেন? কয়েকজন অপেক্ষাকৃত অল্পবয়স্ক নেতাকে আরও সামনের দিকে আনা হচ্ছে না কেন? আসাদুজ্জামান নূর, সাবের হোসেন চৌধুরী, ফজলে নূর তাপস এবং সোহেল তাজ প্রমুখের আরও একটু সামনে নিয়ে আসা হোক। এঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে উঠবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আমরা চাই, এ সরকার কমপক্ষে দুই টার্ম সরকারে থাকুক। তা না হলে তাদের হাতে নেওয়া অনেক কিছুই বিএনপি-জামায়াতের হাতে পড়ে ভেস্তে যাবে।
নবীন ও পুরোনো নেতৃত্বের সমন্বয়ে আওয়ামী লীগের নবজন্ম হোক, যা অতীতে হয়েছে। মানুষের এ সরকারের কাছে অনেক প্রত্যাশা। তাই তাঁরা এত বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী করে ক্ষমতায় বসিয়েছেন। সেখানে কোনো রকম দুর্নীতি বা মতানৈক্যের গন্ধ মানুষকে হতাশ করবে। সমস্যা অনেক এবং সেই তুলনায় সময় খুব একটা বেশি নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ কিন্তু এক-দুই-পাঁচ বছরে গড়ে উঠবে না। শিক্ষা এবং অসাম্প্রদায়িকতা দুটিই অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য বিষয়। এর মধ্যে আবার ধর্মীয় জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। খুব ঠান্ডা মস্তিষ্কে এবং দৃঢ় হাতে তাদের সামলাতে হবে। প্রতিবেশী দেশ, বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে না পারলে দেশের অগ্রগতি সম্ভব নয়। এই সম্পর্ক যাতে খারাপ হয়, সে ব্যাপারে উসকানি দেওয়ার মানুষের অভাব নেই। এবং তাতে প্রভাবান্বিত হয়ে আওয়ামী লীগেরও কেউ কেউ বেফাঁস মন্তব্য করছেন। আমাদের সার্বভৌমত্ব ছেলের হাতের মোয়া নয় যে কেউ থাবা মেরে তা কেড়ে নেবে। বিএনপি-জামায়াত কথায় কথায় আমাদের সেই ভয়ই দেখাচ্ছে। সেসব কথায় কান না দিয়ে সব সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সারতে হবে।
তাজউদ্দীন আহমদ কম কথা বলতেন এবং কাজ বেশি করতেন। তাঁর পুত্র তানজিম আহমদ সোহেল তাজও তাই করেছেন। এ মানুষগুলোকে মর্যাদা দিতে হবে। তাঁরা যাতে আস্থার সঙ্গে কাজ করতে পারেন, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করার কোনো বিকল্প নেই।
সোহেল তাজের কাছে তাই আমার এই ক্ষমা প্রার্থনা। তিনি কাজে ফিরুন, কেননা তাঁর মতো লোক বাংলাদেশের প্রয়োজন রয়েছে। মন্ত্রী হোন বা নাই হোন, তিনি সংসদে থেকে তাঁর কর্তব্য সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করুন—এই আমরা চাই।
এ জেড এম আবদুল আলী: অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা।
এ গুজবগুলোর সবই অল্প-বিস্তর যাচাই করা যেতে পারে। একটি গুজব হচ্ছে, সোহেল তাজ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর অনুমতি বা তাঁর মন্ত্রণালয়ের কারও সঙ্গে কোনো রকম পরামর্শ ছাড়াই ঢাকা শহরের ২৮-৩০টি থানাতে যাঁদের অফিসার-ইনচার্জ পদে বসানো হয়েছে, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই গোপালগঞ্জের লোক। সাংবাদিক ভাইদের কেউ কি খোঁজটি নিয়ে জানাতে পারবেন, এ অভিযোগটি সত্য না নেহাত একটি গুজব? কাজটি মোটেই অসম্ভব নয়। মহাপরিদর্শক পুলিশের দপ্তরে নথিপত্র দেখে যে কেউ এটি জানতে পারেন। কিন্তু গুজবটি যদি গুজব না হয়ে সত্যি হয়, তাহলে আজ চিন্তা এবং দুঃখের সীমা রইবে না। সোহেল তাজ পদত্যাগ করেছেন যথার্থই। কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা, আওয়ামী লীগের দিনবদলের অঙ্গীকারটি কোথায় থাকছে তাহলে? সেই পুরোনো ট্রাডিশন যদি চলতেই থাকে, তাহলে আর দিন বদলাল কোথায়?
শোনা যাচ্ছে, বেশ কিছু লোকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ছিল, সম্ভবত সরকারের অথবা আদালতের পক্ষ থেকে। এরই মধ্যে সাবেক চারদলীয় জোট সরকারের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুও ছিলেন। তাই তাঁকে বিদেশযাত্রার কালে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ইমিগ্রেশনের লোকজনেরা। ওঁর বেয়াই, শেখ হাসিনার একজন আত্মীয় ও আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা এ নিয়ে সোহেল তাজের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন। তাঁকে প্রকাশ্যে অপমান করা হয়েছে। এতে অপমানিত হয়ে, নিজের আদর্শের বিরুদ্ধে কোনো রকম আপস না করে তিনি পদত্যাগ করেছেন। একটি পত্রিকাকে তিনি বলেছেন যে তাঁর নিজস্ব ‘ডিগনিটি’ ও ‘প্রিন্সিপাল’ রক্ষার্থেই তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। পিতা যেমন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মতানৈক্যের কারণে নীরবে পদত্যাগ করে মন্ত্রিসভা থেকে বের হয়ে এসেছিলেন, তেমনি সোহেল তাজও তাই করেছেন। রাজনীতির পরিস্থিতি যদি এই হয়, তাহলে সেখানে তাজউদ্দীন আহমদের পুত্রের স্থান হবে কীভাবে।
নির্বাচনের পর সাত মাস পেরিয়ে গেল। কিন্তু দিন যে বদলাচ্ছে, তার খুব একটা প্রমাণ দেশবাসী পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীদের মধ্যে মারামারি-হানাহানি চলছেই। খবরের কাগজ খুললেই সেসব খবর পড়তে হচ্ছে। কাগজে দেখা গেল, কোনো একটি কলেজে মেয়েদের ছাত্রাবাসকে ছাত্রলীগ জোর করে ছেলেদের ছাত্রাবাসে পরিণত করেছে। থানাপুলিশ বা জেলা প্রশাসন, কেউই এসব পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারছে না। সরকার ভাবছে, অপরাধী, সে যে দলেরই হোক না কেন, তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের সামনে হাজির করতে নির্দেশ তো দেওয়াই হয়েছে। পুলিশ ভাবছে, সেই নির্দেশ সুস্পষ্ট নয়। তা না হলে এ ধরনের অপরাধ কমছে না কেন? এ পরিবেশে তানজিম আহমদ সোহেল তাজ যে নীরবে পদত্যাগ করে দেশের বাইরে চলে গেছেন, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে যে দিনবদলের অঙ্গীকার করা হয়েছে, তা কী করে সফল করা যায়, তা নিয়ে সবাই চিন্তিত। সেই চিন্তা নিশ্চয়ই সোহেল তাজেরও আছে। অথচ নিজে তাতে অংশ নিতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন, সেই বেদনায় বেদনার্ত হয়েই তিনি পদত্যাগ করেছেন। তবু যাঁরা তাঁকে ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য করেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই তাঁর কাছে থেকে কিছু শুনতে চান। তাঁদের সামনে তিনি একটু খুলে বললে বোধহয় ভালো করতেন। কে বা কারা তাঁকে তাঁর আদর্শ বা আত্মমর্যাদা নিয়ে কাজ করতে দেননি। কেন তিনি তাঁর জনগণের বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পারলেন না। অন্ততপক্ষে তিনি যদি এটুকু বলতেন যে তিনি মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেছেন বটে, কিন্তু সংসদ সদস্যপদ ত্যাগ করেননি। ওই পদে থেকেই তিনি তাঁদের কথা বলবেন, তাঁদের স্বার্থ রক্ষা করায় আপ্রাণ চেষ্টা করে যাবেন। তাঁর কাছে থেকে এটুকু শুনতে পেলেও তাঁর নির্বাচনী এলাকার মানুষজন আশ্বস্ত হতে পারতেন।
সোহেল তাজের এভাবে বিদায় অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। কোথায় কিছু গোলমাল হয়েছে, মনে করছেন তাঁরা। সরকারের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে আওয়ামী লীগ নিঃসন্দেহে কয়েকটি ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে সর্বশেষ পদক্ষেপটি নেওয়া হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে এক ব্রিগেড সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার মাধ্যমে। কিন্তু দু-একটি ঘটনা মানুষকে সন্দিহান করে তুলছে। সোহেল তাজের বিদায় গ্রহণ সে রকমই একটি ঘোষণা। তাঁর মতো একজন তরুণ নেতাকে দেশে রাখা গেল না কেন? কয়েকজন অপেক্ষাকৃত অল্পবয়স্ক নেতাকে আরও সামনের দিকে আনা হচ্ছে না কেন? আসাদুজ্জামান নূর, সাবের হোসেন চৌধুরী, ফজলে নূর তাপস এবং সোহেল তাজ প্রমুখের আরও একটু সামনে নিয়ে আসা হোক। এঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে উঠবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আমরা চাই, এ সরকার কমপক্ষে দুই টার্ম সরকারে থাকুক। তা না হলে তাদের হাতে নেওয়া অনেক কিছুই বিএনপি-জামায়াতের হাতে পড়ে ভেস্তে যাবে।
নবীন ও পুরোনো নেতৃত্বের সমন্বয়ে আওয়ামী লীগের নবজন্ম হোক, যা অতীতে হয়েছে। মানুষের এ সরকারের কাছে অনেক প্রত্যাশা। তাই তাঁরা এত বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী করে ক্ষমতায় বসিয়েছেন। সেখানে কোনো রকম দুর্নীতি বা মতানৈক্যের গন্ধ মানুষকে হতাশ করবে। সমস্যা অনেক এবং সেই তুলনায় সময় খুব একটা বেশি নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ কিন্তু এক-দুই-পাঁচ বছরে গড়ে উঠবে না। শিক্ষা এবং অসাম্প্রদায়িকতা দুটিই অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য বিষয়। এর মধ্যে আবার ধর্মীয় জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। খুব ঠান্ডা মস্তিষ্কে এবং দৃঢ় হাতে তাদের সামলাতে হবে। প্রতিবেশী দেশ, বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে না পারলে দেশের অগ্রগতি সম্ভব নয়। এই সম্পর্ক যাতে খারাপ হয়, সে ব্যাপারে উসকানি দেওয়ার মানুষের অভাব নেই। এবং তাতে প্রভাবান্বিত হয়ে আওয়ামী লীগেরও কেউ কেউ বেফাঁস মন্তব্য করছেন। আমাদের সার্বভৌমত্ব ছেলের হাতের মোয়া নয় যে কেউ থাবা মেরে তা কেড়ে নেবে। বিএনপি-জামায়াত কথায় কথায় আমাদের সেই ভয়ই দেখাচ্ছে। সেসব কথায় কান না দিয়ে সব সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সারতে হবে।
তাজউদ্দীন আহমদ কম কথা বলতেন এবং কাজ বেশি করতেন। তাঁর পুত্র তানজিম আহমদ সোহেল তাজও তাই করেছেন। এ মানুষগুলোকে মর্যাদা দিতে হবে। তাঁরা যাতে আস্থার সঙ্গে কাজ করতে পারেন, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করার কোনো বিকল্প নেই।
সোহেল তাজের কাছে তাই আমার এই ক্ষমা প্রার্থনা। তিনি কাজে ফিরুন, কেননা তাঁর মতো লোক বাংলাদেশের প্রয়োজন রয়েছে। মন্ত্রী হোন বা নাই হোন, তিনি সংসদে থেকে তাঁর কর্তব্য সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করুন—এই আমরা চাই।
এ জেড এম আবদুল আলী: অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা।
No comments