ভোটারদের ‘সত্যাগ্রহের’ অপ্রকাশিত সত্য by ফারুক ওয়াসিফ
এরকম এক কথা আছে যে, জনগণ যেমন সরকার তেমন। কথাখানি বাংলাদেশে আর সত্য মনে হয় না। অন্তত গত নির্বাচন দেখে এই অমত করতেই হচ্ছে।
নির্বাচনটি যে ‘ঐতিহাসিক’ তা নিয়ে কারও সন্দেহ নেই। ক্ষমতার মসনদ কার হলো তার নিরিখে নয়, কীভাবে এবং কোন অবস্থায় এমন ‘ঐতিহাসিক’ বিজয় এসেছে, তার বিচারে। জরুরি অবস্থা, জেল-জুলুম, ফৌজি হম্বিতম্বি মানুষকে খুব একটা উত্তেজিত করেনি। তারা বরং উপযুক্ত মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করেছে। ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮-এর মোক্ষম মুহূর্তে ভোটারের বেশে তারা তাদের ‘নীরব’ অ্যাকশনটি করে দিয়েছে। সেটাই ছিল তাদের এক ঢিলে দুই পাখি মারার কর্ম। একদিকে সেনা-সমর্থিত জরুরি অবস্থা অন্যদিকে রাজনীতি-আশ্রিত দুর্নীতিবাজ, ধর্ম ব্যবসায়ী, মিথ্যার ব্যাপারিদের জবাব দিয়ে দেওয়া। মাওলানা ভাসানীর ভাষায় ‘অলাইকুমআসসালাম’ বলে দেওয়া।
জরুরি অবস্থা অনেক ক্ষেত্রেই আইনের বরখেলাপ ঘটিয়েছিল। তার জবাবে মানুষ আইন অমান্য প্রতিবাদ তেমন হয়নি। এজন্যই একে বলছি, গান্ধির সত্যাগ্রহ বা শেখ মুজিবের অসহযোগ। আজকের সীমিত গণতন্ত্রের টাইট বাঁধনে অনেক ক্ষেত্রেই গণআন্দোলনের সুযোগ থাকে না। এরকম অবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে অপশাসন পাল্টানোর সুযোগ নিতে দেখা যাচ্ছে। আমেরিকা ও বাংলাদেশের গত নির্বাচন এর আদর্শ উদাহরণ। মানুষ মনের মতো সরকার পায়নি সত্য কিন্তু ‘যারে সইতে নারি’ তার বিদায় হয়েছে। এজন্যই তা ‘সত্যাগ্রহ’। কিন্তু কোন সত্যকে তারা সেদিন তুলে ধরেছিল? জনতার সেই সত্য আর জনতা-সমর্থিত সরকারের সত্য কি এখন এক দাগে এক মাপে মিলছে? দাগে দাগে মিলিয়ে দেখা যাক।
এক. ২৯/১২-র নির্বাচন সরাসরি ১/১১-এর খণ্ডন বা নেমেসিস। যে অবস্থা ও যে শক্তি একে ডেকে এনেছিল ২৯/১২-তে জনগণ তাদের অস্বীকার করেছে। নির্বাচনের আগে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) এক জরিপে দেখা যায়: ৮৭ ভাগ ভোটার মনে করে, যে দলেরই সরকার হোক নির্বাচিত সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের থেকে ভালভাবে দেশ চালাবে (http://asiafoundation.org)। নিশ্চয়ই দ্রব্যমূল্য বাড়া এবং ক্ষমতার অনেক কর্তাদের দুর্নীতি তাদের এটা ভাবতে বাধ্য করেছিল।
দুই. ১৯৫৬ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ মরণ-ধাক্কা খেয়েছিল, বিএনপি-জামায়াত জোট তেমন ধাক্কা না খেলেও, তাদের চালচলন বদলাতে হবেই, হুঁশিয়ারির সেই লাল পতাকা ভোটাররা উড়িয়ে দিয়েছেন। আওয়ামি লীগের হাতে এছ আরও প্রায় সাড়ে চার বছর, কিন্তু বিএনপির হাতে সেই সময় নেই, যদি পরের নির্বাচনে সবুজ কার্ড পাওয়ার আশা দলটি করে থাকে।
তিন. প্রমাণ হয়েছে ‘বিদেশি বন্ধুরা’ নয়, জনগণই বাংলাদেশি গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় সহায়। বিদেশিরা সমর্থন দিয়েছিল ১/১১-এর অনির্বাচিত সরকারকে। অথচ ২০০৮-এর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রমাণ হয় জনগণের ঝোঁক নির্বাচন ও রাজনীতিবিদদের দিকে। অতীতেও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো এবং তাদের আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এরশাদের সামরিক স্বৈরাচার, বিএনপি-জোটের দুই আমলের ‘সেনা-সমর্থিত’ সরকারকে সমর্থন দিয়ে তাদের মেয়াদ বাড়াতে সাহায্য করেছে বলে অভিযোগ আছে। অথচ ওই সব আমলেই বেশি হারে আইন-আদালতকে তুচ্ছ করা, দলীয়করণ এবং কালো টাকা ও দুর্বৃত্তদের প্রতিষ্ঠা তথা রাজনৈতিক ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি হয়েছে। খেয়াল করলে দেখা যাবে, এই সময়েই রাজনীতি থেকে সাধারণ মানুষ ক্রমশ পরিত্যক্ত হয়েছে।
চার. ‘সত্যাগ্রহ’ বা ‘ঐতিহাসিক’ কথাটা বাড়িয়ে বলা নয়। ভোটের দিন ভোট যাই সাভার অঞ্চলে। ঘুরে ঘুরে যা দেখি এককথায় ‘তীর্থযাত্রী’ ও ‘তীর্থদর্শন’। ভোটকেন্দ্রগুলো ছিল তীর্থস্থানের মতোই জনাকীর্ণ ও মুখর। পশ্চিমা দেশের মতো মানুষ কাজ সারার মতো ভোট দিয়েই চলে যাচ্ছে না। যিনি সকালে এসেছেন, তিনি দুপুর পর্যন্ত রয়ে যাচ্ছেন। যিনি দুপুরে খেয়েদেয়ে এসেছেন তিনি সন্ধ্যা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রের সামনের মাঠে বা চত্বরে বসে আড্ডা-আলোচনা ইত্যাদি করছেন। মহিলারা এসেছে সেজেগুজে—যেন ঈদ লেগেছে। ফতুল্লার পোশাক শ্রমিক ভোটের ছুটিতে সাভারের গেরুয়ায় গ্রামের বাড়িতে এসে বন্ধুবান্ধব নিয়ে ভোট দিতে বেরিয়েছেন। তাঁর কারখানার শ্রমিকরা অনেকেই নাকি ভোট দিতে বাসে-ট্রেনে-লঞ্চে করে দূরদূরান্তে গ্রামের বাড়ি গেছে। প্রাচীন লোকশ্রুতি আছে, ন্যায়ের পক্ষে নাকি গায়েবি জিন-ফেরেশতারা এসে যুদ্ধ করে দিয়ে যায়। এমনিতে যাঁদের সাড়াশব্দ কম পাওয়া যায়, দেশের সেই হতদরিদ্র মানুষরা সেই গায়েবি সৈনিকদের মতো নীরবে এসে নীরবে মহাজোটকে জয়যুক্ত করে দিয়ে গেছেন।
এই ভোটারদের বড় অংশই কিন্তু গ্রাম-শহরের গরিব মানুষ। সেদিক থেকে এই সরকার গরিব ও বঞ্চিতদের রায়ে আসা সরকার। গত এক যুগের লাগামছাড়া বাজার অর্থনীতি, দিশাহীন উন্নয়ন প্রকল্প ও রাষ্ট্রীয় লুটপাটের সর্বনাশা কার্যক্রমের বিরুদ্ধেও তাঁরা সেদিন একযোগে ‘না’ বলেছেন। যেহেতু ওই সময়টায় বিএনপি ক্ষমতায় ছিল সেহেতু খেসারতটা বিএনপিকেই দিতে হয়েছে বেশি। অস্ফুট হলেও এটা মুক্তবাজারি বাড়াবাড়ি, করপোরেট উন্নয়ন, রাজনৈতিক মাফিয়াতন্ত্র এবং যুদ্ধাপরাধী ও ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণের শ্রেণীসংগ্রামেরই প্রকাশ। ঠিক যেমন পূর্ব বাংলার দরিদ্র কৃষকেরা ১৯৪৬-এ জমিদার শ্রেণীর বিরুদ্ধে মুসলিম লীগের জোতদারদের জয়ী করেছিলেন, অনেকটা সেভাবেই। কিন্তু মুসলিম লীগ তাদের চরম হতাশ করেছিল। এ জন্যই তীব্র আশার শিখর থেকে সাধারণ মানুষ যদি আবার হতাশার খাদে পড়তে বাধ্য হলে বিজয়ীদের জন্য এর প্রতিক্রিয়া হবে ভয়াবহ। গতকালই এক বয়স্ক রিকশাচালককে বলতে শুনি, আওয়ামি লীগের মেরুদণ্ড গরিবরা, কিন্তু গরিবদের সঙ্গে কী লাগাইছে সরকার? তাঁর অভিযোগ ছিল, মোবাইল কোর্ট বসিয়ে রিকশাচালকদের হয়রানি করা বিষয়ে। এরকম আশাভঙ্গের স্বাদ স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার অনেকটা পেয়েছিল।
পাঁচ. প্রমাণ হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের সামাজিক ভিত্তি খুবই নাজুক। এই নির্বাচন জনবিচ্ছিন্ন উগ্রপন্থাকে প্রত্যাখ্যান করে তাকে রাজনৈতিক হুমকির পর্যায় থেকে আইনশৃঙ্খলা সমস্যার পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে। পাশ্চাত্যের বহু বিশ্লেষক, গবেষক ও কূটনীতিকের ‘বাংলাদেশ হবে পরবর্তী আফগানিস্তান’, ‘ককুন অব টেরর’ জাতীয় মুখস্থ বুলিকে নাকচ করে ভোটাররা প্রমাণ করেছেন, ধর্মীয় সহনশীলতা, নমনীয় ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতাই বাংলাদেশের জনগণের রাজনৈতিক মেজাজের মূল সুর। গণযুদ্ধ, গণ-অভ্যুত্থান এবং গণভোটই তাঁদের প্রধান রাজনৈতিক অস্ত্র। একাত্তর থেকে এ অবধি এর বাইরে প্রমাণ নেই। তাই দেখা গেল, পাকিস্তানের মতো পশ্চিমা হস্তক্ষেপ, আলজেরিয়ার মতো সরকারি দমন-পীড়ন, কিংবা মার্কিন-ব্রিটিশ প্রশিক্ষিত গোয়েন্দা ও তাদের যন্ত্রপাতি দিয়ে যা করা যানি, তা ভোটাররাই করে দিয়েছেন। এখনো দুর্নীতি, অগণতন্ত্র ও ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণই বড় রক্ষাকবচ। এবং এই জনগণ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মুসলিম ভোটার। দুঃখ যে, ওপর তলার অনেকেই এই মানুষের প্রতি আস্থা না রেখে ভরসা করেন আরো ওপরের ‘বিদেশি বন্ধুদের’। আমাদের বিভিন্ন সরকারও জনগণের এই উদার ধর্মনিরপেক্ষ সামাজিক চেতনার বিপরীত রাষ্ট্রীয় নীতি চাপিয়ে দিয়েছে। পঁচাত্তর-পরবর্তী পাশ্চাত্যের মদদপুষ্ট এসব সরকারই ইসলামের রাজনৈতিক অপব্যবহার বেশি করেছে। শেখ হাসিনাও কম যাননি। ২২ জানুয়ারি নির্বাচন সামনে রেখে তিনি তো খেলাফত মজলিশের সঙ্গে চুক্তিই করে ফেলেছিলেন! তার পরও প্রতিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোট ৫-১০ শতাংশ করে বেড়েছে। কারণ, তারা একেই মনে করেছে মন্দের ভালো। দুঃখ এই, ‘মন্দের ভাল’র বাইরে সত্যিকার বিকল্প এখনো দানা বাধেনি আর আশা এই, ‘মন্দের ভাল’ বাছতে বাছতে ‘ভাল’র ভাল জন্মানোর পরিবেশ হয়তো সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশি সমাজ মোটাদাগে গণতন্ত্রভক্ত এবং ধর্ম বিষয়ে প্রাণখোলা ও উদার, কিন্তু রাষ্ট্র তা নয়। বলা যায়, সমাজ ও রাষ্ট্রের এই বিরোধই বাংলাদেশের মূল সমস্যা। ‘বিদেশি বন্ধুদের’ প্রতি আবেদন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিজ থেকেই কায়েম থাকতে সক্ষম। হস্তক্ষেপ ও সবক নয়, আমাদের প্রয়োজন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু রাখায় নিঃশর্ত সহযোগিতা। তাতে আমাদের গণতন্ত্রের গণতন্ত্রায়ন সহজ না হোক, কিছু বাধা অন্তত কমবে। গত নির্বাচনের ‘সত্যাগ্রহের’ এটাও এক পরম সত্য।
ছয়. স্বাধীনতার রক্ষক দাবিদার আওয়ামী লীগ কিন্তু তাদের স্লোগান ও ইশতেহারে তাদের এসব বাহারি বুলির ব্যবহার কম করে সুফল পেয়েছে। কিছুটা পিছু হটে মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক আদর্শকে তারা সাংস্কৃতিক আদর্শে পরিণত করে নিয়েছে আরও আগে। উভয় জোটই কমবেশি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরাশক্তির মুখাপেক্ষী। তাহলেও বরাবরের মতো বিএনপি-জামায়াত ভারত বিরোধিতা ও ধর্মীয় আত্মপরিচয়ের রাজনীতি দিয়ে নিজেদের আলাদা দেখাতে চাইছে। কিন্তু এই কার্ড গত নির্বাচনে খুব একটা কাজ করেছে বলে মনে হয় না। এখন সরকার দিচ্ছে সুশাসন, দ্রব্যমূল্য কমানো ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রতিশ্রুতি আর বিএনপি জোট নিয়েছে সার্বভৌমত্ব রক্ষার অবস্থান। টিপাইমুখ, বিডিআর বিদ্রোহ, ট্রানজিট ইত্যাদি প্রশ্নে আওয়ামী লীগের কিছুটা নমনীয় ও ধীরে চলো নীতির সুযোগ নিতে চাইছে তারা। হারানো সমর্থন ফিরে পাওয়ায় এটাই তাদের বর্তমান কৌশল। নির্বাচনে প্রভাব না ফেললেও প্রতিকূল আঞ্চলিক পরিস্থিতির জন্য সার্বভৌমত্বের রাজনীতির আবেদন আপাতত বেশি বলেই মনে হচ্ছে। সরকার যদি এ ব্যাপারে সতর্ক ও স্বচ্ছ না হয়, তাহলে এটাই হতে পারে তার একিলিসের হিল অর্থাত্ সেই নাজুক জায়গা, যেখানে আঘাত করে তাকে ধরাশায়ী করা সম্ভব।
সাত. তৃতীয় দফায় নির্বাচিত হলে খালেদা জিয়া পরিবার ডায়নাস্টি বা রাজবংশ হিসেবে দাঁড়িয়ে যাওয়ার ভয় ছিল। সমর্থন তুলে নিয়ে নতুন ডায়নাস্টির পথে ভোটাররা কাঁটা বিছিয়ে দিয়েছে ভোটাররাই। একদিক থেকে ‘মাইনাস টু’ সফল কারণ দুই পরিবারের দুই তনয় ক্ষমতার বাইরে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। এদেশে যতবারই কোনো রাজনৈতিক পরিবার ডায়নাস্টি হতে গিয়েছে, ততবারই জনগণ তা রুখে দিয়েছেন। বায়াত্তরের পর মুজিব পরিবারের একচ্ছত্র ক্ষমতার তাপে জনসমর্থন উঠে যাওয়াতেই ঘাতকদের পক্ষে ষড়যন্ত্র সফল করা সম্ভব হয়েছিল। বিষয়টা যদি দুই নেত্রী বুঝতে পারেন, তাতে তাঁদের ও দেশের সবারই মঙ্গল।
উপসংহার: ভোটের দিন দেখেছিলাম, ক্যাডাররা ভোটকেন্দ্র থেকে দূরে দাঁড়িয়ে ভোটারদের তেল-তোয়াজ দিয়ে যাচ্ছে। আজ পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ভোটারের সারিতে যাঁরা সেদিন দাঁড়িয়েছেন, তার সঙ্গে ক্ষমতার সারিতে আজ যাঁরা দাঁড়িয়ে, তাদের মধ্যে দূরত্ব কেবলই বাড়ছে। জনগণের সত্যাগ্রহ আর ক্ষমতাসীনদের পালিত সত্য এক থাকছে না। গরিব মানুষ ‘ভদ্রলোক-বাবুদের’ ভোট দেয় বটে কিন্তু প্রয়োজন না মিটলে তাদের প্রত্যাখ্যান করতে দেরি করে না। জনগণ বদলানোর আগে শাসকদের খাসলতই বদলাতে হবে। কী অর্থনীতি কী রাজনীতি, সবখানেই জনগণ দায়িত্বশীল বলেই দেশটা চলছে এবং টিকে আছে। এই সত্য উপলব্ধি করতে হবে।
যে অতীত মৃত, তা ইতিহাস নয়। কেননা, ইতিহাস একমাত্র বর্তমানেই বেঁচে থাকে। সেই বর্তমানে গত নির্বাচনের ঐতিহাসিক শিক্ষা ও সত্য এখনো জাগ্রত। একইভাবে জাগ্রত জরুরি অবস্থার ক্ষত। প্রজাতন্ত্রে রাজশক্তি ও প্রজাশক্তির ভারসাম্য রাখার স্বার্থে এই দুইকেই মনে রাখা দরকার।
ফারুক ওয়াসিফ: সাংবাদিক।
farukwasif@yahoo.com
নির্বাচনটি যে ‘ঐতিহাসিক’ তা নিয়ে কারও সন্দেহ নেই। ক্ষমতার মসনদ কার হলো তার নিরিখে নয়, কীভাবে এবং কোন অবস্থায় এমন ‘ঐতিহাসিক’ বিজয় এসেছে, তার বিচারে। জরুরি অবস্থা, জেল-জুলুম, ফৌজি হম্বিতম্বি মানুষকে খুব একটা উত্তেজিত করেনি। তারা বরং উপযুক্ত মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করেছে। ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮-এর মোক্ষম মুহূর্তে ভোটারের বেশে তারা তাদের ‘নীরব’ অ্যাকশনটি করে দিয়েছে। সেটাই ছিল তাদের এক ঢিলে দুই পাখি মারার কর্ম। একদিকে সেনা-সমর্থিত জরুরি অবস্থা অন্যদিকে রাজনীতি-আশ্রিত দুর্নীতিবাজ, ধর্ম ব্যবসায়ী, মিথ্যার ব্যাপারিদের জবাব দিয়ে দেওয়া। মাওলানা ভাসানীর ভাষায় ‘অলাইকুমআসসালাম’ বলে দেওয়া।
জরুরি অবস্থা অনেক ক্ষেত্রেই আইনের বরখেলাপ ঘটিয়েছিল। তার জবাবে মানুষ আইন অমান্য প্রতিবাদ তেমন হয়নি। এজন্যই একে বলছি, গান্ধির সত্যাগ্রহ বা শেখ মুজিবের অসহযোগ। আজকের সীমিত গণতন্ত্রের টাইট বাঁধনে অনেক ক্ষেত্রেই গণআন্দোলনের সুযোগ থাকে না। এরকম অবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে অপশাসন পাল্টানোর সুযোগ নিতে দেখা যাচ্ছে। আমেরিকা ও বাংলাদেশের গত নির্বাচন এর আদর্শ উদাহরণ। মানুষ মনের মতো সরকার পায়নি সত্য কিন্তু ‘যারে সইতে নারি’ তার বিদায় হয়েছে। এজন্যই তা ‘সত্যাগ্রহ’। কিন্তু কোন সত্যকে তারা সেদিন তুলে ধরেছিল? জনতার সেই সত্য আর জনতা-সমর্থিত সরকারের সত্য কি এখন এক দাগে এক মাপে মিলছে? দাগে দাগে মিলিয়ে দেখা যাক।
এক. ২৯/১২-র নির্বাচন সরাসরি ১/১১-এর খণ্ডন বা নেমেসিস। যে অবস্থা ও যে শক্তি একে ডেকে এনেছিল ২৯/১২-তে জনগণ তাদের অস্বীকার করেছে। নির্বাচনের আগে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) এক জরিপে দেখা যায়: ৮৭ ভাগ ভোটার মনে করে, যে দলেরই সরকার হোক নির্বাচিত সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের থেকে ভালভাবে দেশ চালাবে (http://asiafoundation.org)। নিশ্চয়ই দ্রব্যমূল্য বাড়া এবং ক্ষমতার অনেক কর্তাদের দুর্নীতি তাদের এটা ভাবতে বাধ্য করেছিল।
দুই. ১৯৫৬ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ মরণ-ধাক্কা খেয়েছিল, বিএনপি-জামায়াত জোট তেমন ধাক্কা না খেলেও, তাদের চালচলন বদলাতে হবেই, হুঁশিয়ারির সেই লাল পতাকা ভোটাররা উড়িয়ে দিয়েছেন। আওয়ামি লীগের হাতে এছ আরও প্রায় সাড়ে চার বছর, কিন্তু বিএনপির হাতে সেই সময় নেই, যদি পরের নির্বাচনে সবুজ কার্ড পাওয়ার আশা দলটি করে থাকে।
তিন. প্রমাণ হয়েছে ‘বিদেশি বন্ধুরা’ নয়, জনগণই বাংলাদেশি গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় সহায়। বিদেশিরা সমর্থন দিয়েছিল ১/১১-এর অনির্বাচিত সরকারকে। অথচ ২০০৮-এর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রমাণ হয় জনগণের ঝোঁক নির্বাচন ও রাজনীতিবিদদের দিকে। অতীতেও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো এবং তাদের আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এরশাদের সামরিক স্বৈরাচার, বিএনপি-জোটের দুই আমলের ‘সেনা-সমর্থিত’ সরকারকে সমর্থন দিয়ে তাদের মেয়াদ বাড়াতে সাহায্য করেছে বলে অভিযোগ আছে। অথচ ওই সব আমলেই বেশি হারে আইন-আদালতকে তুচ্ছ করা, দলীয়করণ এবং কালো টাকা ও দুর্বৃত্তদের প্রতিষ্ঠা তথা রাজনৈতিক ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি হয়েছে। খেয়াল করলে দেখা যাবে, এই সময়েই রাজনীতি থেকে সাধারণ মানুষ ক্রমশ পরিত্যক্ত হয়েছে।
চার. ‘সত্যাগ্রহ’ বা ‘ঐতিহাসিক’ কথাটা বাড়িয়ে বলা নয়। ভোটের দিন ভোট যাই সাভার অঞ্চলে। ঘুরে ঘুরে যা দেখি এককথায় ‘তীর্থযাত্রী’ ও ‘তীর্থদর্শন’। ভোটকেন্দ্রগুলো ছিল তীর্থস্থানের মতোই জনাকীর্ণ ও মুখর। পশ্চিমা দেশের মতো মানুষ কাজ সারার মতো ভোট দিয়েই চলে যাচ্ছে না। যিনি সকালে এসেছেন, তিনি দুপুর পর্যন্ত রয়ে যাচ্ছেন। যিনি দুপুরে খেয়েদেয়ে এসেছেন তিনি সন্ধ্যা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রের সামনের মাঠে বা চত্বরে বসে আড্ডা-আলোচনা ইত্যাদি করছেন। মহিলারা এসেছে সেজেগুজে—যেন ঈদ লেগেছে। ফতুল্লার পোশাক শ্রমিক ভোটের ছুটিতে সাভারের গেরুয়ায় গ্রামের বাড়িতে এসে বন্ধুবান্ধব নিয়ে ভোট দিতে বেরিয়েছেন। তাঁর কারখানার শ্রমিকরা অনেকেই নাকি ভোট দিতে বাসে-ট্রেনে-লঞ্চে করে দূরদূরান্তে গ্রামের বাড়ি গেছে। প্রাচীন লোকশ্রুতি আছে, ন্যায়ের পক্ষে নাকি গায়েবি জিন-ফেরেশতারা এসে যুদ্ধ করে দিয়ে যায়। এমনিতে যাঁদের সাড়াশব্দ কম পাওয়া যায়, দেশের সেই হতদরিদ্র মানুষরা সেই গায়েবি সৈনিকদের মতো নীরবে এসে নীরবে মহাজোটকে জয়যুক্ত করে দিয়ে গেছেন।
এই ভোটারদের বড় অংশই কিন্তু গ্রাম-শহরের গরিব মানুষ। সেদিক থেকে এই সরকার গরিব ও বঞ্চিতদের রায়ে আসা সরকার। গত এক যুগের লাগামছাড়া বাজার অর্থনীতি, দিশাহীন উন্নয়ন প্রকল্প ও রাষ্ট্রীয় লুটপাটের সর্বনাশা কার্যক্রমের বিরুদ্ধেও তাঁরা সেদিন একযোগে ‘না’ বলেছেন। যেহেতু ওই সময়টায় বিএনপি ক্ষমতায় ছিল সেহেতু খেসারতটা বিএনপিকেই দিতে হয়েছে বেশি। অস্ফুট হলেও এটা মুক্তবাজারি বাড়াবাড়ি, করপোরেট উন্নয়ন, রাজনৈতিক মাফিয়াতন্ত্র এবং যুদ্ধাপরাধী ও ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণের শ্রেণীসংগ্রামেরই প্রকাশ। ঠিক যেমন পূর্ব বাংলার দরিদ্র কৃষকেরা ১৯৪৬-এ জমিদার শ্রেণীর বিরুদ্ধে মুসলিম লীগের জোতদারদের জয়ী করেছিলেন, অনেকটা সেভাবেই। কিন্তু মুসলিম লীগ তাদের চরম হতাশ করেছিল। এ জন্যই তীব্র আশার শিখর থেকে সাধারণ মানুষ যদি আবার হতাশার খাদে পড়তে বাধ্য হলে বিজয়ীদের জন্য এর প্রতিক্রিয়া হবে ভয়াবহ। গতকালই এক বয়স্ক রিকশাচালককে বলতে শুনি, আওয়ামি লীগের মেরুদণ্ড গরিবরা, কিন্তু গরিবদের সঙ্গে কী লাগাইছে সরকার? তাঁর অভিযোগ ছিল, মোবাইল কোর্ট বসিয়ে রিকশাচালকদের হয়রানি করা বিষয়ে। এরকম আশাভঙ্গের স্বাদ স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার অনেকটা পেয়েছিল।
পাঁচ. প্রমাণ হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের সামাজিক ভিত্তি খুবই নাজুক। এই নির্বাচন জনবিচ্ছিন্ন উগ্রপন্থাকে প্রত্যাখ্যান করে তাকে রাজনৈতিক হুমকির পর্যায় থেকে আইনশৃঙ্খলা সমস্যার পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে। পাশ্চাত্যের বহু বিশ্লেষক, গবেষক ও কূটনীতিকের ‘বাংলাদেশ হবে পরবর্তী আফগানিস্তান’, ‘ককুন অব টেরর’ জাতীয় মুখস্থ বুলিকে নাকচ করে ভোটাররা প্রমাণ করেছেন, ধর্মীয় সহনশীলতা, নমনীয় ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতাই বাংলাদেশের জনগণের রাজনৈতিক মেজাজের মূল সুর। গণযুদ্ধ, গণ-অভ্যুত্থান এবং গণভোটই তাঁদের প্রধান রাজনৈতিক অস্ত্র। একাত্তর থেকে এ অবধি এর বাইরে প্রমাণ নেই। তাই দেখা গেল, পাকিস্তানের মতো পশ্চিমা হস্তক্ষেপ, আলজেরিয়ার মতো সরকারি দমন-পীড়ন, কিংবা মার্কিন-ব্রিটিশ প্রশিক্ষিত গোয়েন্দা ও তাদের যন্ত্রপাতি দিয়ে যা করা যানি, তা ভোটাররাই করে দিয়েছেন। এখনো দুর্নীতি, অগণতন্ত্র ও ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণই বড় রক্ষাকবচ। এবং এই জনগণ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মুসলিম ভোটার। দুঃখ যে, ওপর তলার অনেকেই এই মানুষের প্রতি আস্থা না রেখে ভরসা করেন আরো ওপরের ‘বিদেশি বন্ধুদের’। আমাদের বিভিন্ন সরকারও জনগণের এই উদার ধর্মনিরপেক্ষ সামাজিক চেতনার বিপরীত রাষ্ট্রীয় নীতি চাপিয়ে দিয়েছে। পঁচাত্তর-পরবর্তী পাশ্চাত্যের মদদপুষ্ট এসব সরকারই ইসলামের রাজনৈতিক অপব্যবহার বেশি করেছে। শেখ হাসিনাও কম যাননি। ২২ জানুয়ারি নির্বাচন সামনে রেখে তিনি তো খেলাফত মজলিশের সঙ্গে চুক্তিই করে ফেলেছিলেন! তার পরও প্রতিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোট ৫-১০ শতাংশ করে বেড়েছে। কারণ, তারা একেই মনে করেছে মন্দের ভালো। দুঃখ এই, ‘মন্দের ভাল’র বাইরে সত্যিকার বিকল্প এখনো দানা বাধেনি আর আশা এই, ‘মন্দের ভাল’ বাছতে বাছতে ‘ভাল’র ভাল জন্মানোর পরিবেশ হয়তো সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশি সমাজ মোটাদাগে গণতন্ত্রভক্ত এবং ধর্ম বিষয়ে প্রাণখোলা ও উদার, কিন্তু রাষ্ট্র তা নয়। বলা যায়, সমাজ ও রাষ্ট্রের এই বিরোধই বাংলাদেশের মূল সমস্যা। ‘বিদেশি বন্ধুদের’ প্রতি আবেদন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিজ থেকেই কায়েম থাকতে সক্ষম। হস্তক্ষেপ ও সবক নয়, আমাদের প্রয়োজন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু রাখায় নিঃশর্ত সহযোগিতা। তাতে আমাদের গণতন্ত্রের গণতন্ত্রায়ন সহজ না হোক, কিছু বাধা অন্তত কমবে। গত নির্বাচনের ‘সত্যাগ্রহের’ এটাও এক পরম সত্য।
ছয়. স্বাধীনতার রক্ষক দাবিদার আওয়ামী লীগ কিন্তু তাদের স্লোগান ও ইশতেহারে তাদের এসব বাহারি বুলির ব্যবহার কম করে সুফল পেয়েছে। কিছুটা পিছু হটে মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক আদর্শকে তারা সাংস্কৃতিক আদর্শে পরিণত করে নিয়েছে আরও আগে। উভয় জোটই কমবেশি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরাশক্তির মুখাপেক্ষী। তাহলেও বরাবরের মতো বিএনপি-জামায়াত ভারত বিরোধিতা ও ধর্মীয় আত্মপরিচয়ের রাজনীতি দিয়ে নিজেদের আলাদা দেখাতে চাইছে। কিন্তু এই কার্ড গত নির্বাচনে খুব একটা কাজ করেছে বলে মনে হয় না। এখন সরকার দিচ্ছে সুশাসন, দ্রব্যমূল্য কমানো ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রতিশ্রুতি আর বিএনপি জোট নিয়েছে সার্বভৌমত্ব রক্ষার অবস্থান। টিপাইমুখ, বিডিআর বিদ্রোহ, ট্রানজিট ইত্যাদি প্রশ্নে আওয়ামী লীগের কিছুটা নমনীয় ও ধীরে চলো নীতির সুযোগ নিতে চাইছে তারা। হারানো সমর্থন ফিরে পাওয়ায় এটাই তাদের বর্তমান কৌশল। নির্বাচনে প্রভাব না ফেললেও প্রতিকূল আঞ্চলিক পরিস্থিতির জন্য সার্বভৌমত্বের রাজনীতির আবেদন আপাতত বেশি বলেই মনে হচ্ছে। সরকার যদি এ ব্যাপারে সতর্ক ও স্বচ্ছ না হয়, তাহলে এটাই হতে পারে তার একিলিসের হিল অর্থাত্ সেই নাজুক জায়গা, যেখানে আঘাত করে তাকে ধরাশায়ী করা সম্ভব।
সাত. তৃতীয় দফায় নির্বাচিত হলে খালেদা জিয়া পরিবার ডায়নাস্টি বা রাজবংশ হিসেবে দাঁড়িয়ে যাওয়ার ভয় ছিল। সমর্থন তুলে নিয়ে নতুন ডায়নাস্টির পথে ভোটাররা কাঁটা বিছিয়ে দিয়েছে ভোটাররাই। একদিক থেকে ‘মাইনাস টু’ সফল কারণ দুই পরিবারের দুই তনয় ক্ষমতার বাইরে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। এদেশে যতবারই কোনো রাজনৈতিক পরিবার ডায়নাস্টি হতে গিয়েছে, ততবারই জনগণ তা রুখে দিয়েছেন। বায়াত্তরের পর মুজিব পরিবারের একচ্ছত্র ক্ষমতার তাপে জনসমর্থন উঠে যাওয়াতেই ঘাতকদের পক্ষে ষড়যন্ত্র সফল করা সম্ভব হয়েছিল। বিষয়টা যদি দুই নেত্রী বুঝতে পারেন, তাতে তাঁদের ও দেশের সবারই মঙ্গল।
উপসংহার: ভোটের দিন দেখেছিলাম, ক্যাডাররা ভোটকেন্দ্র থেকে দূরে দাঁড়িয়ে ভোটারদের তেল-তোয়াজ দিয়ে যাচ্ছে। আজ পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ভোটারের সারিতে যাঁরা সেদিন দাঁড়িয়েছেন, তার সঙ্গে ক্ষমতার সারিতে আজ যাঁরা দাঁড়িয়ে, তাদের মধ্যে দূরত্ব কেবলই বাড়ছে। জনগণের সত্যাগ্রহ আর ক্ষমতাসীনদের পালিত সত্য এক থাকছে না। গরিব মানুষ ‘ভদ্রলোক-বাবুদের’ ভোট দেয় বটে কিন্তু প্রয়োজন না মিটলে তাদের প্রত্যাখ্যান করতে দেরি করে না। জনগণ বদলানোর আগে শাসকদের খাসলতই বদলাতে হবে। কী অর্থনীতি কী রাজনীতি, সবখানেই জনগণ দায়িত্বশীল বলেই দেশটা চলছে এবং টিকে আছে। এই সত্য উপলব্ধি করতে হবে।
যে অতীত মৃত, তা ইতিহাস নয়। কেননা, ইতিহাস একমাত্র বর্তমানেই বেঁচে থাকে। সেই বর্তমানে গত নির্বাচনের ঐতিহাসিক শিক্ষা ও সত্য এখনো জাগ্রত। একইভাবে জাগ্রত জরুরি অবস্থার ক্ষত। প্রজাতন্ত্রে রাজশক্তি ও প্রজাশক্তির ভারসাম্য রাখার স্বার্থে এই দুইকেই মনে রাখা দরকার।
ফারুক ওয়াসিফ: সাংবাদিক।
farukwasif@yahoo.com
No comments