আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমেই সিদ্ধান্তে আসতে হবে -তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা
সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের সময়ই দেশের রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের ধারণা ছিল, এটি একটি সাময়িক ব্যবস্থা। তিন-চার মেয়াদের পর পরিস্থিতির উন্নতি হলে আপনাআপনি এ ব্যবস্থার প্রয়োজন শেষ হবে বলে তখন সাধারণভাবে আশা করা হয়েছিল। দেখা যাচ্ছে তিন মেয়াদের পর এখন বাস্তবিকই বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার আর প্রয়োজন আছে কি না, তা নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু তিনি বলছেন নেতিবাচক অভিজ্ঞতার আলোকে। তাঁর মতে, তিনবার এ পদ্ধতি ব্যর্থ হওয়ায় এবং বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জরুরি অবস্থা জারি ও নির্ধারিত মেয়াদ তিন মাসের পরিবর্তে দুই বছর প্রলম্বিত হওয়ায় এ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা দরকার। তাঁর আলোচনার প্রস্তাবটি ঠিক, কিন্তু ব্যাখ্যাটি ভুল। আসলে ব্যর্থতা নয়, সাফল্যই মূল বিবেচ্য বিষয়। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন, সুষ্ঠু ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হয়েছে বলেই এখন এ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে কি না তা নিয়ে আলোচনা করা চলে।
এরশাদের সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আশির দশকে আন্দোলনের সময় প্রথম নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রকৃত জনদাবিতে পরিণত হয়। একানব্বইয়ে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল তারই ফসল। কিন্তু সেটা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা ছিল না। হয়তো এর প্রয়োজনও পড়ত না, যদি ১৯৯৪ সালে তত্কালীন বিএনপি সরকারের সময় মাগুরা উপনির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও সহিংসতা না হতো। এর পরই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সব বিরোধী দলের দেশজোড়া আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কায়েম করা হয়। সাধারণভাবে মানুষ বিশ্বাস করে, এর পর থেকে প্রতিটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুধু ২০০৬ সালের অক্টোবরে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিতর্কিত কিছু পদক্ষেপের কারণে প্রশ্ন দেখা দেয়। এর ফলে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আবির্ভাব ঘটে।
কিন্তু এটা অনস্বীকার্য যে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নির্বাচনী আইনের সংস্কার, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, ভোটার রেজিস্ট্রেশন প্রভৃতি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা লাভের ফলে এখন বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দাঁড়িয়েছে। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা আর আছে কি না তা নিয়ে চিন্তার অবকাশ সৃষ্টি হয়েছে।
তবে তিনটি শর্তের বিনিময়েই তা সম্ভব। প্রথমত, নির্বাচনকে প্রভাবিত করার যেকোনো কলাকৌশল থেকে ক্ষমতাসীন সরকারকে বিরত থাকার কার্যকর, বিশ্বাসযোগ্য ও দৃশ্যমান ব্যবস্থা। এ জন্য নির্বাচনের তিন মাস আগে সরকারের পদত্যাগ ও বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি ক্ষুদ্র মন্ত্রিসভার অধীনে সরকারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা। বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ ব্যবস্থাই প্রচলিত। দ্বিতীয়ত, নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা এবং নির্বাচনের সময় তার সর্বময় কর্তৃত্ব নিশ্চিত করা। আর তৃতীয়ত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এ প্রশ্নে দেশে প্রকৃত অর্থেই রাজনৈতিক সমঝোতা ও ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা।
দেশের বিশিষ্ট রাজনীতিবিজ্ঞানী, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হোক। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা থাকবে কি থাকবে না সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া এভাবেই শুরু হতে পারে।
এরশাদের সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আশির দশকে আন্দোলনের সময় প্রথম নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রকৃত জনদাবিতে পরিণত হয়। একানব্বইয়ে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল তারই ফসল। কিন্তু সেটা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা ছিল না। হয়তো এর প্রয়োজনও পড়ত না, যদি ১৯৯৪ সালে তত্কালীন বিএনপি সরকারের সময় মাগুরা উপনির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও সহিংসতা না হতো। এর পরই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সব বিরোধী দলের দেশজোড়া আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কায়েম করা হয়। সাধারণভাবে মানুষ বিশ্বাস করে, এর পর থেকে প্রতিটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুধু ২০০৬ সালের অক্টোবরে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিতর্কিত কিছু পদক্ষেপের কারণে প্রশ্ন দেখা দেয়। এর ফলে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আবির্ভাব ঘটে।
কিন্তু এটা অনস্বীকার্য যে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নির্বাচনী আইনের সংস্কার, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, ভোটার রেজিস্ট্রেশন প্রভৃতি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা লাভের ফলে এখন বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দাঁড়িয়েছে। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা আর আছে কি না তা নিয়ে চিন্তার অবকাশ সৃষ্টি হয়েছে।
তবে তিনটি শর্তের বিনিময়েই তা সম্ভব। প্রথমত, নির্বাচনকে প্রভাবিত করার যেকোনো কলাকৌশল থেকে ক্ষমতাসীন সরকারকে বিরত থাকার কার্যকর, বিশ্বাসযোগ্য ও দৃশ্যমান ব্যবস্থা। এ জন্য নির্বাচনের তিন মাস আগে সরকারের পদত্যাগ ও বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি ক্ষুদ্র মন্ত্রিসভার অধীনে সরকারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা। বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ ব্যবস্থাই প্রচলিত। দ্বিতীয়ত, নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা এবং নির্বাচনের সময় তার সর্বময় কর্তৃত্ব নিশ্চিত করা। আর তৃতীয়ত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এ প্রশ্নে দেশে প্রকৃত অর্থেই রাজনৈতিক সমঝোতা ও ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা।
দেশের বিশিষ্ট রাজনীতিবিজ্ঞানী, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হোক। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা থাকবে কি থাকবে না সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া এভাবেই শুরু হতে পারে।
No comments